Skip to content

 

রাসুল (দঃ) স্ব শরীরে রওজামুবারকে জীবিত আছেন?

রাসুল (দঃ) স্ব শরীরে রওজামুবারকে জীবিত আছেন?

🛑ভ্রান্ত বিশ্বাস :- রাসুল (দঃ) স্ব শরীরে রওজামুবারক -এ জীবিত আছেন।

🔷খন্ডন :- মুসলিম সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা বিশ্বাস করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুবরণ করেন নি, বরং তিনি জীবিত। এটি একটি ভ্রান্ত বিশ্বাস।

প্রকৃত সত্য হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের এই দুনিয়াবী জগত থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু পরকালীন জগতে তিনি জীবিত।

তবে পরকালীন সেই জীবন দুনিয়াবী জীবনের মত নয়। এটি হচ্ছে দুনিয়াবী জীবন ও পুনরুত্থানের পরবর্তী জীবনের মধ্যবর্তী একটি সময় যাকে আমরা সাধারণত বারযাখের জগত বা কবরের জগত বলে থাকি। কবরের সেই জগতে তিনি বিশেষভাবে জীবিত, যেমন শহীদরা বিশেষভাবে জীবিত থাকে। তবে তিনি যে মৃত্যুবরণ করেছেন এ কথা বিশ্বাস করা আবশ্যক।

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ আর আপনার পূর্বে কোন মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে? [সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৩৪]

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ নিশ্চয় তুমি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল। [সূরা যুমার, আয়াত ৩০]

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ আর মুহাম্মাদ একজন রসূল ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা কি পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুতঃ কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন। [সূরা আল ইমরান, আয়াত ১৪৪]

পবিত্র কুরআনে আরো কিছু আয়াত আছে যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় রাসূলকে মৃত্যু দান করেছেন। তাছাড়া সাহাবাগণ মৃত্যুর পর তাঁকে গোসল করিয়েছেন, কাফনের কাপড় পড়িয়েছেন, তাঁর উদ্দেশ্যে জানাজার সলাত আদায় করেছেন এবং তাঁকে কবরে দাফন করেছেন। যদি রাসূলুল্লাহ দুনিয়াবী এই জগতে জীবিত থাকতেন অর্থাৎ যদি তিনি মৃত্যুবরণ না করতেন তাহলে সাহাবাগণ এরূপ কাজ কখনও করতেন না, যেরূপ কাজ মৃত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে।

ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট তাঁর পিতার উত্তরাধিকার চেয়েছিলেন কারণ তিনি এ কথা মেনে নিয়েছিলেন যে, তাঁর পিতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুবরণ করেছেন। সাহাবাগণের মধ্য থেকে কেউ ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহার এরূপ মানসিকতার বিরোধিতা করেননি। বরং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, নবীগণের কোন উত্তরাধিকারী হয় না।

সাহাবাগণ সর্বসম্মতিক্রমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর একজন খলীফা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেন এবং আবু বকর (রাঃ)-কে তাদের খলীফা হিসেবে মনোনীত করেন। যদি রাসূলুল্লাহ মৃত্যুবরণ না করতেন তাহলে সাহাবাগণ এরূপ কাজ কখনও করতেন না। এটি প্রমাণ করে যে, সাহাবাগণ এ ব্যাপারে একমত ছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুবরণ করেছেন।

বারযাখ তথা কবরের জগত হচ্ছে এক ভিন্ন জগত। নবী-রাসূল ও শহীদগণ বারযাখের জগতে জীবিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “নবীগণ জীবিত, তারা তাদের কবরে সালাত আদায় করেন”। [মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং ৩৪২৫] শাইখ নাসির উদ্দিন আলবানী রহিমাহুল্লাহ হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। [সিলসিলাতুস সহীহা, হাদীস নং ৬২১]

আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “মিরাজের রাতে আমি যখন লাল টিলার নিকট দিয়ে মূসা (আঃ)-কে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি তাঁর কবরে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন”। [সহীহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, হাদিস নং ৪৪৮]

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না”। [সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৪]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “কোন ব্যক্তি আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করলে আমার রূহ ফেরত দেয়া হয় এবং আমি তার প্রতি সালামের উত্তর দেই”। [আবু দাউদ, হাদিস নং ২০২১]

এ সমস্ত আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, নবী-রাসূল ও শহীদগণ তাদের পরকালীন জগতে জীবিত অবস্থায় আছেন। তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, মৃত ব্যক্তি দুনিয়ার মানুষের কোন কথা শুনতে পায় না। শুধুমাত্র আল্লাহ চাইলে কাউকে কোন কথা শুনাতে পারেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “জীবিত আর মৃত সমান নয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শ্রবণ করান। যারা কবরে রয়েছে তাদেরকে আপনি শুনাতে পারবেন না”। [সূরা ফাতির, আয়াত ২২]

রাসূল (সাঃ) এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠালে তা তিনি সরাসরি শুনতে পান না, বরং ফেরেশতাদের মাধ্যমে তাঁর নিকট তা পৌঁছানো হয়। মৃত ব্যক্তি কখনো দুনিয়াতে আসতে পারে না এবং দুনিয়ার মানুষের কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না। সে জন্যই সাহাবাগণ কখনো নবী কারীম (সাঃ) এর কবরের কাছে গিয়ে কোন কিছু আবদার করেন নি। মূলত কবরের নিকট গিয়ে মৃত ব্যক্তির নিকট কিছু প্রার্থনা করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত যা মানুষকে ইসলামের গন্ডি থেকে বের করে দেয়।

এ সম্পর্কে শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদের ফতোয়া পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুনঃ

https://islamqa.info/en/21524

Tags:
[ #ভ্রান্তি #অপব্যাখ্যা #সংশয় #প্রশ্ন #জিজ্ঞাসা #উত্তর ]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!