🛑কুরআন এক জায়গায় বলছে ইবলিস ছিল জিন, আরেক জায়গায় বলছে সে ছিল ফেরেশতা। কুরআন কি পরস্পর বিরোধী কথা বলছে না?
বিস্তারিত প্রশ্ন-
কিন্তু নিচের আয়াতগুলো আমাদের বলছে শয়তান ছিল য়েরেশতাঃ
কুরআন ২:৩৪
“এবং যখন আমি হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো।”
কুরআন ৭:১১
“আমি ফেরেশতাদেরকে বলছি-আদমকে সেজদা কর তখন সবাই সেজদা করেছে, কিন্তু ইবলীস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না।”
কুরআন ১৫:৩০-৩১
“ফেরেশতারা সবাই মিলে সেজদা করল। কিন্তু ইবলীস-সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হতে স্বীকৃত হল না।”
কুরআন ২০:১১৬
“যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ তোমরা আদমকে সেজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সবাই সেজদা করল। সে অমান্য করল।”
কুরআন ৩৮:৭১-৭৪
“অতঃপর সমস্ত ফেরেশতাই একযোগে সেজদায় নত হল, কিন্তু ইবলীস; সে অহংকার করল এবং অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।”
এ আয়াত গুলো আমাদের বলছে ইবলিস ছিল ফেরেশতা।
কিন্তু নিচের আয়াতগুলো আমাদের বলছে সে ছিল জিনঃ
কুরআন ৭:১২
“আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বললঃ আমি তার চাইতে শ্রেষ্ট। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।”
কুরআন ১৮:৫০
“যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ আদমকে সেজদা কর, তখন সবাই সেজদা করল ইবলীস ব্যতীত। সে ছিল জিনদের একজন।”
কুরআন ৩৮:৭৬
“সে (ইবলিস) বললঃ আমি তার চেয়ে উত্তম আপনি আমাকে আগুনের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।”
এর জবাব কী হবে?
শয়তান জিন নাকি ফেরেশতা? কুরআন কি পরস্পর বিরোধী কথা বলছে?
ইবলিস বা অভিশপ্ত শয়তানের আরেক নাম আজাজিল। সকল ফেরেশতার নামের শেষে প্রায়ই “ঈল” থাকে। যেটা হিব্রু “এল” থেকে এসেছে। যেটা আল্লাহ্কে নির্দেশ করে। সকল ফেরেশতার নামই আল্লাহ্র গুণ বর্ণনা করে।
ইবলিস ছোট থাকতে যখন পৃথিবীতে বসবাস করত, তখন ফেরেশতাদেরকে আল্লাহ্ পাঠান জিন জাতিকে নির্মূল করতে, জিনরাও রুখে দাঁড়ায়। তবে সেটার ডিটেইলস এখানে অপ্রাসঙ্গিক। আমাদের যেটা জানা দরকার, সেটা হল, ধার্মিক জিনদেরকে ফেরেশতারা রেহাই দেয়… হযরত জিবরাঈল (আ) এক গুহায় শিশু ইবলিসকে দেখতে পান। তাঁকে দেখে তাঁর মনে মায়া জাগে। তিনি তাঁকে ফিরে আসার সময় নিয়ে আসেন আকাশে।
জিন ইবলিস ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, এবং সকল ফেরেশতার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে থাকে… হাজার বছর পরে দেখা যায়, জ্ঞানপিপাসু হওয়ার কারণে সে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব তাদের মধ্যে। তাই তাঁকে ফেরেশতা উপাধি দেয়া হয় আর তাঁর নতুন নাম দেয়া হয় আজাজিল (“আল্লাহ্ শক্তিদানকারী” in Hebrew) [(Hebrew: עֲזָאזֵל, Azazel; Arabic: عَزازِيل, Azāzīl)]
তাই সে জেনেটিকালি জিন হলেও সে ফেরেশতার সম্মান প্রাপ্ত ছিল। এরপর আদমকে সেজদার আদেশ অমান্য করার পর তাঁর না হয় ইবলিস বা অভিশপ্ত।
এখন আসা যাক কেন ফেরেশতাদেরকে সম্বোধন করলেও সেই আদেশ ইবলিসের উপরও প্রযোজ্য ছিল?
এর একটা কারণ তো বলা হয়ে গেছে, যে, ইবলিস ফেরেশতাও ছিল। আরেকটা কারণ হল-
আরবি ব্যাকরণে তাগ্লীব নামে একটা ব্যাপার আছে। এর মানে, যদি Majorityকে সম্বোধন করা হয় তবে Minorityও এতে সাড়া দেবে। যেমন, এক ক্লাসে ১০০ জনের মধ্যে ৯৯ জন ছেলে, একজন মেয়ে। যদি বলা হয়, আরবিতে, ছেলেরা দাঁড়াও, তবে, সেই মেয়েও উঠে দাঁড়াবে। এটাই তাগ্লীব। মেয়েকে আলাদাভাবে সম্বোধনের দরকার নেই।
সেভাবে, কুরআনে, আল্লাহ যখন ফেরেশতাদের ডাকলেন তখন আলাদাভাবে জিন ইবলিসকে ডাকার দরকার নেই।
যেহেতু ১৮:৫০ আমাদের জানায় ইবলিস আসলে জিন ছিল, এবং কুরআনের কোন আয়াতে আমাদের বলা নেই যে, ইবলিস আদৌ ফেরেশতা ছিল, তাই কুরআন মতে এ কথা সন্দেহাতীত যে, ইবলিস কোন ফেরেশতা নয়, জিন।
এবং কুরআনে কোন contradiction নেই।
আশা করি উত্তরটা পাওয়া গেছে।
আপনার আরও কোন প্রশ্ন থাকলে আপনি করতে পারেন। আমরা উত্তর দেবার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।