বিষয়: শরীর সুস্থ রাখার জন্য (৪টি মূল মন্ত্র), শরীরকে সুস্থ রাখার উপায়।
হ্যাশট্যাগ: # শরীরকে সুস্থ রাখার উপায়। #শরীর সুস্থ রাখার জন্য (৪টি মূল মন্ত্র)
একটা কথা তো সবার জানা, কোন চালু যন্ত্রও যদি ঠিকমতো তেল পানি দিয়ে পরিচর্যা করে সচল না রাখা যায় তাহলে সেটা কয়েকদিনের মধ্যেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। সুতরাং মানুষের দেহও এক যন্ত্র বিশেষ।
এতেও একদিকে যেমন খাদ্য প্রদানের দরকার আছে। অপরদিকে একে সচল আর সুস্থ্য রাখতে পরিমিত মাত্রার ব্যায়ামেরও দরকার।
তবে তুমি যতটা পরিশ্রম করবে ঠিক ততটা সময় তোমাকে ঘুমের মাধ্যমে বিশ্রাম নিতে হবে। শরীরকে সুস্থ বা সবল রাখতে ঘুমের বা বিশ্রামের কোন বিকল্প নেই।
বিশ্রামের মাধ্যমে শরীরকে তুমি পুনরায় কাজের জন্য চাঙ্গা করে তুলতে পার। এই কারণে ঘুম আমাদের জীবনে এক প্রাত্যহিক শারীরিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

শরীরকে সুস্থ রাখার উপায়-১: ঘুম
ঘুমের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময় বেছে নিতে হবে। রাতটাই ঘুমের জন্যে অধিক কার্যকর। যারা দিনে ঘুমায় তাদের মধ্যে একধরনের আলস্য কাজ করে থাকে। অনেকে বলে দিনে ঘুমালে নাকি রাতে খুব ভাল পড়াশোনা করা যায়। আমি এই কথার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আসলে দিনে ঘুমালে সন্ধ্যের দিকে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীরটা কেমন যেন আলস্যে ভরে থাকে। এই অবস্থায় পড়াশোনা করাটা কেমন যেন অতিরিক্ত বোঝার মতো মনে হয়।
সুতরাং দিনের বেলা ঘুমটাকে পরিহার করতে হবে।
তাছাড়া, তোমরা যারা স্কুল কলেজে পড়াশোনা কর, তাদের মধ্যে অনেকেই দিনের বেলা ঘুমানোর সময় পাওয়ার কথা কল্পনাই করতে পার না। কারণ ঐ সময়টায় তোমরা হয় স্কুল কিংবা কলেজে পড়াশোনায় ব্যস্ত থাক। এটা একটা ভাল লক্ষণ।
অনেকের মধ্যে ঘুমের প্রাবল্য লক্ষ্য করা যায়। তারা দেরি করে ঘুমাতে যায় আর দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে ‘বিশ্রামের আশায় ঘুমাতে গেছে কিন্তু তার কিছুতেই ঘুম আসছে না।
একটার পর একটা কৌশল অবলম্বন করার পরেও তার ঘুম আসছে না।
এগুলোর কোনটাই সুস্থ মানুষের স্বাভাবিক জীবনের লক্ষণ নয়।
মানুষের মধ্যে জাগ্রত এবং ঘুমন্ত এই দুটি চেতনা সবসময় কার্যকর থাকে। ব্রেনের জাগ্রত কেন্দ্র থেকে যে হরমোনের নিঃসরণ হয় তার মাত্রা বেশি থাকলে ঘুম আসে না।
আবার জাগ্রত কেন্দ্র সজাগ থাকলে হরমোনের নিঃসরণের মাত্রা অব্যহত থাকে। এই অবস্থায়ও ঘুম আসতে পারে না। সুতরাং এই অবস্থা যদি তোমার হয় অর্থাৎ ঘুমোতে যাবার পরেও যদি তোমার ঘুম না আসে তাহলে তুমি নিচের পদ্ধতি অবলম্বন করতে পার।
- ক) চোখ বন্ধ করে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করো এখন তুমি ঘুমোবে।
- খ) মনে মনে একটি মাঠ কল্পনা করে নাও।
- গ) কল্পনা করো মাঠে দিগন্তবিস্তৃত সবুজ ঘাস।
- ঘ) সেই মাঠে অসংখ্য ভেড়া বা ছাগল চরে বেড়াচ্ছে। ছাগলগুলো খুবই চঞ্চল। কোন কিছুতেই একজায়গায় স্থির থাকছে না। বারবার নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে।
- ঙ) তুমি সেই ছাগলগুলোকে গুনতে শুরু করো।
উপরের নিয়মে দেখবে তুমি কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছো। যদি উপরের নিয়মে তুমি ঘুমাতে না পার তাহলে নিচের পদ্ধতি অবলম্বন করতে পার।
- ক) চিৎ হয়ে শুয়ে দুই চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাব এখন তোমাকে ঘুমাতে হবে।
- খ) প্রথমে তোমার দুই পা শক্ত করো তারপর পায়ের পেশীতে ঢিলা দাও।
- গ) এবার তোমার দুই হাত শক্ত করো তারপর হাতের পেশীতে ঢিলা দাও।
- ঘ) সমস্ত শরীর শক্ত করো তারপর শরীরের যাবতীয় পেশীকে ঢিলা দাও।
- ঙ) এবার এক হাজারের উল্টো দিক থেকে গুনতে থাকো।
এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে দেখো, আশা করি তোমার ঘুমহীন রাতগুলো ভরে যাবে চমৎকার শান্তির বিশ্রামে।
তবে একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবে, ঘুমের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট পরিমিত মাত্রা থাকা অত্যন্ত জরুরী। রাতে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমিয়ে পড়া এবং সকাল ভোরে ঘুম থেকে ওঠা একটা অত্যন্ত ভাল অভ্যাস।
এতে করে ভোরের তাজা বাতাসে তোমার মানসিক শান্তি দৃঢ় হবে। শরীরটাও বেশ তরতাজা লাগবে। তাছাড়া ভোরের আবহাওয়ায় পড়াশোনা করলে সেই সময় পড়াশোনাটাও বেশ ভাল হয়। সহজে মুখস্ত হয় এবং কোন জটিল অংক তুমি এইসময় করে দেখো, সেই অংক বেশ সহজেই করতে পারবে তুমি।

শরীরকে সুস্থ রাখার উপায়-২: ব্যায়াম
ব্যায়ামের ক্ষেত্রে তুমি বিভিন্ন শরীরচর্চামূলক খেলাধূলাকে বেছে নিতে পার। তবে মনে রাখতে হবে সেই খেলাধূলা যেন অবসর সময়ে হয়। নতুবা খেলাধূলার দিকেই তোমার মন পড়ে থাকবে। বিভিন্ন খেলাধূলার মধ্যে ফুটবল, ক্রিকেট, দৌড় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
দৌড় একটি খুব ভাল ব্যায়াম। দৌড়ালে শরীরের সকল পেশী সঞ্চালিত হয়ে পেশীগুলোকে সতেজ আর দৃঢ় রাখে।
দৌড়ালে সবচেয়ে উপকার হয় পেটের। সকাল বেলা অর্থাৎ ভোর বেলার সময়টুকু দৌড়ের জন্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক। কারণ এইসময় রাস্তাঘাটে লোকজন বা গাড়ি ঘোড়ার চল কম থাকে।
এই ফাঁকা রাস্তায় তুমি ভোরের হাওয়ায় একদিন দৌড়ালেই এর মর্ম বুঝতে পারবে। প্রতিদিন অন্তত দুই মাইল দৌড়ানো উচিত। তুমি বাড়ি থেকে একমাইল দৌড়ে তারপর বাড়িতে দৌড়ে ফিরে আসলে মোট দুইমাইল দৌড়ানো হয়ে যাবে। ধীরে সুস্থে সমস্ত শরীরের পেশীকে আন্দোলিত করে দৌড়ানো ভাল।
অনেকে রাস্তায় দৌড়ানোর চাইতে ঘরের ভেতর একজায়গায় দাঁড়িয়ে দৌড়ানোর অভ্যাস করে থাকে। এটাও খুব একটা ভাল লক্ষণ। তুমি ইচ্ছে করলে এই প্রক্রিয়াতেও দৌড়ের কাজ করতে পার।
তবে খেয়াল রাখবে এই প্রক্রিয়াতে তোমার সমস্ত শরীরের পেশীগুলো যেন আন্দোলিত হয়। না হলে তোমার পরিশ্রমটা বৃথা যাবে।.

শরীরকে সুস্থ রাখার উপায়-৩: গোসল
গোসল করা প্রতিটি মানুষের জন্য অবশ্য কর্তব্য। গোসল করলে একদিকে যেমন শরীরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যায়। অপরদিকে গোসলের মাধ্যমে শরীরের জড়তা কেটে যায়।
এই গোসল যদি তুমি কোন নদী কিংবা পরিস্কার পানির পুকুরে করতে পার তাহলে খুব ভাল হয়।
এতে একদিক থেকে তোমার গোসল হবে সুন্দর অপরদিকে গোসলের সাথে সাথে তুমি সাঁতারের মাধ্যমে একটি ভাল ব্যায়ামের আশ্রয় নিতে পারবে।
এখানে সাঁতার বলতে আমি ফ্রি স্টাইল অর্থাৎ হাত পা ছুঁড়ে সাঁতার কাটাকে বোঝাচ্ছি। এই প্রক্রিয়ায় তুমি অনায়াসে সমস্ত শরীরকেই আন্দোলিত করতে পারবে।
দ্রুত হাঁটাটাও এক ধরনের ব্যায়াম। এই প্রক্রিয়ায় তুমি নিজের শরীরের সমস্ত পেশীগুলোকে আন্দোলিত করতে পার।
অনেকে ফুসফুসজনিত প্রদাহের কারণে দৌড়াতে পারে না। তাদের জন্য জোর হাঁটাটাও দৌড়ের মতোই কাজ দেবে। জোরে হাঁটার জন্যেও তুমি ভোরবেলাকে বেছে নিতে পার। কারণ এই সময় ভোরের তাজা শীতল বাতাস তোমার ফুসফুসকে সতেজ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

শরীরকে সুস্থ রাখার উপায়-৩: খাদ্য
তোমার হজমশক্তিতে কোনরকম বাধার সৃষ্টি করবে না। পেলাম আর খেলাম- এই ধরনের মানসিকতাকে সবসময় পরিহার করবে।
মনে রেখো, সবধরনের খাবারই যে তোমার শরীর সঠিকভাবে গ্রহণ করবে তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
সবসময় চেষ্টা করবে সুষম খাবার খেতে। আর খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে দিনে কিংবা রাতে একটা নির্দিষ্ট সময় বেছে নেবে। কোনক্রমেই দেরি কিংবা তাড়াহুড়ো করে খাবার খাবে না।
তোমার শরীর যদি স্থূলকায় হয় তাহলে চেষ্টা করবে শরীরটাকে স্লিম রাখার।
একটা কথা মনে রাখবে স্বাস্থ্য ভাল তাকেই বলে যে চিকন হলেও নিরোগ দেহ নিয়ে চলতে পারে। সুতরাং মোটা হলেই যে স্বাস্থ্য ভাল বলতে হবে তা কিন্তু নয়।
বরং মোটা হলেই তোমার শরীরে নানা রকম রোগ বাসা বাঁধতে পারে। আর রোগ হলে পড়াশোনা যে শিকেয় উঠবে এটাতো জানা কথা।
তাই শরীরটাকে নিরোগ রাখার জন্যে যা যা করা দরকার সেইমতো করবে।
কখনও রোগ হলে উপযুক্ত চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারও পরামর্শে ওষুধ খাবে না। এতে করে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। একজন যোগ্য চিকিৎসকই মানুষের দেহ সম্পর্কে অবহিত হয়ে থাকেন। সুতরাং তার পরামর্শ মতো ওষুধ গ্রহণ করা উচিত।