বিষয়: শোয়া এবং ঘুমের সুন্নাত, আদব ও বিধি-নিষেধ সমূহ।
হ্যাশট্যাগ: #শোয়া এবং ঘুমের সুন্নাত, আদব ও বিধি-নিষেধ সমূহ।
শোয়া এবং ঘুমের সুন্নাত, আদব ও বিধি-নিষেধ সমূহঃ
১. ইশার নামাযের পর গল্প-শুজব বা দুনিয়াবী কাজ-কর্ম কিংবা দুনিয়াবী কথা-বার্তায় লিপ্ত না হয়ে যথাশীঘ্র সম্ভব ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়া সুন্নাত। এ সুন্নাত পালন করলে শেষ রাতে তাহাজ্জুদের জন্য উঠা সহজ হয় কিংবা অন্ততঃ ফজরের নামাযের জন্য সহজেই ঘুম ভাঙ্গে। ইশার পর ঘুমানোর পূর্বে অপ্রয়োজনীয় দুনিয়াবী কথা-বার্তা বলা মাকরূহ। দুনিয়াবী প্রয়োজনীর কথা বা দ্বীনী কথা বলা যায়।
২. ঘুম পড়ার পূর্বে পেশাব-পায়খানার জরূরত থেকে ফারেগ হয়ে নেয়া উত্তম।
৩. ঘুমানোর পূর্বে চেরাগ/বাতি ও আগুন নিভিয়ে দেয়া সুন্নাত।
৪. ঘুমানোর পূর্বে খাদ্য-খাবার ও পানির পাত্র ঢেকে দেয়া সুন্নাত। ঢাকার জন্য কোন পাত্র না পেলে অন্ততঃ একটা লাঠি দিয়ে হলেও ঢেকে রাখবে।
৫. মেসওয়াক করে ঘুমানো সুন্নাত।
৬. উযূ অবস্থায় ঘুমানো সুন্নাত।
৭, উভয় চোখে তিনবার করে সুরমা লাগানো সুন্নাত।
৮. পূর্বে থেকেই বিছানো রয়েছে (যাতে ধুলা-বালি থাকার সম্ভাবনা) এমন বিছানা হলে তিনবার সে বিছানা ঝেড়ে নেয়া সুন্নাত।
৯. শোয়ার আগে কাপড় পাল্টানো সুন্নাত।
১০.খুব বেশী নরম বিছানায় না ঘুমানো উত্তম।
১১.দরজার চৌকাঠের উপর কিংবা যে ছাদে রেলিং বা ঘেরা নেই তাতে শোয়া নিষেধ।
১২.সূরা-আলিফ লাম মীম সাজদা (২১ পারা দ্রঃ) তিলাওয়াত করা সুন্নাত।
১৩.সূরা-মূলক তিলাওয়াত করা সুন্নাত।
১৪.আয়াতুল কুরছী পাঠ করা সুন্নাত।
১৫.সূরা-বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করা সুন্নাত।
১৬.তাসবীহে ফাতেমী অর্থাৎ ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আল-হামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বা ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া সুন্নাত।
১৭.কালিমায়ে তইয়্যেবা পড়া সুন্নাত।
১৮.দুরূদ শরীফ পড়া সুন্নাত।
১৯.তিনকুল (সূরাঃ এখলাস, ফালাক ও নাছ) পড়ে হাতে ফুঁক দিয়ে সমস্ত শরীরে বুলানো। এভাবে তিনবার করা সুন্নাত।
২০. সূরা কাফিরূন পড়া সুন্নাত।
২১. তিনবার এস্তেগফার পড়া এবং গোনাহ থেকে তওবা করা।
২২. ঘুমানোর পূর্বে ওছিয়াতের প্রয়োজন থাকলে তা করা।
২৩.মুর্দার মাথা কবরে যে দিকে রাখা হয় সে দিকে মাথা রেখে শোয়া (যেমন আমাদের দেশের জন্য উত্তর দিকে মাথা দিয়ে শোয়া) সুন্নাত।
২৪.প্রথমে অন্ততঃ কিছুক্ষণ ডান হাত ডান গালের নীচে রেখে ডান কাতে শোয়া সুন্নাত।
২৫. ডান হাত গালের নীচে রেখে এই দোয়া পড়বে-
اللهم قني عذابك يوم تبعث عبادك
অর্থঃ হে আল্লাহ, যেদিন তোমার বান্দাদেরকে তুমি পুনরুত্থিত করবে, সেদিন তোমার আযাব থেকে আমাকে রক্ষা কর।
২৬. এই দোয়া পড়ে শোয়া সুন্নাত-
اللهم باسمك أموت والحيى
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি তোমারই নামে বাঁচি ও মরি।
অথবা
باسمك ربي وضعت جنبي وبك أرفعه إن أمسكت نفسي فاغفر لها وان أرسلتها فاحفظها بما تحفظ به عبادك الصالحين
অর্থঃ হে আমার প্রতিপালক, আমি তোমার নামে আমার পার্শ্বদেশ রাখলাম এবং তোমার কুদরতে আবার তা উঠাব। আর এ অবস্থায় যদি আমার আৱাকে ধরে রাখ (অর্থাৎ, মৃত্যু ঘটাও), তাহলে আবার মাগফেরাত কর। আর যদি তাকে ছেড়ে দাও (অর্থাৎ, জীবিত রাখ), তাহলে তার তত্ত্বাবধান করো যেভাবে তোমার নেক বান্দাদের ক্ষেত্রে তুমি তার তত্ত্বাবধান করে থাক।
২৭.সর্বশেষে এই দোয়া পড়বে। তাহলে ঐ ঘূমে মৃত্যু হলে ঈমানের সাথে মৃত্যু হবে।
اللهم إني أسلمت نفسي إليك، وفوضت أمري إليك، ووجهت وجهي إليك، والجات ظهري إليك، رغبة ورهبة إليك، لا ملجأ ولا منجى منك إلا إليك، امنت بكتابك الذي أنزلت وبنبيك الذي أرسلت
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি আমার আৱাকে তোমার কাছে সোপর্দ করলাম, আমার মনোযোগ তোমার প্রতি নিবদ্ধ করলাম, আমার বিষয় তোমার উপর ন্যাস্ত করলাম এবং তোমার প্রতি আগ্রহ ও তোমার ভয় সহকারে আমার পৃষ্ঠদেশ তোমার আশ্রয়ে রাখলাম, তুমি ছাড়া কোন আশ্রয়ের স্থান নেই, কোন পরিত্রাণ লাভের জায়গা নেই। আমি ঈমান আনলাম তোমার কিতাবের প্রতি যা তুমি নাযিল করেছ; আর তোমার নবীর প্রতি, যাকে তুমি রাসূল রূপে প্রেরণ করেছ।
২৮.উপুড় হয়ে শোয়া নিষেধ।
২৯.এক পা খাড়া করে তার উপর অপর পা রেখে চিত হয়ে এমন ভাবে শয়ন করবে না, যাতে সতর খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সতর না খুললে ক্ষতি নেই ৷ (তুমি)
৩০. যিকির করতে করতে ঘুমানো উত্তম।
৩১. শোয়ার পর ঘুম না আসলে পড়বে-
أعوذ بكلمات الله التامة من غضبه وعقابه وشر عباده ومن همزات الشياطين وأن يحضرون
অর্থঃ আল্লাহর সমস্ত কালামের ওছীলা দিয়ে আমি তাঁর ক্রোধ, তাঁর শাস্তি, তাঁর বান্দাদের অনিষ্টকারিতা, শয়তানদের উস্কানী এবং আমার কাছে তাদের হাজির হওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
অথবা পড়বে-
اللهم غارت النجوم ، وهذات العيون ، أنت حي قيوم ، لا تأخذك سنة ولا نوم، يا حي عينى يا قيوم!أهدى ليلى وائم عینی
অর্থঃ হে আল্লাহ! নক্ষত্র দূরে চলে গিয়েছে, চোখগুলো আরাম লাভ করেছে, আর তুমি চিরঞ্জীব, স্ব-প্রতিষ্ঠ ও সবকিছু সংরক্ষণকারী, তোমাকে তন্দ্ৰা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। হে চিরঞ্জীব, হে আত্মপ্রতিষ্ঠ সংরক্ষণকারী! এই রাতে আমাকে আরাম দাও, আমার চোখে ঘুম দাও।
৩২.ঘুম থেকে উঠে হস্তদ্বয় দ্বারা মুখমণ্ডল ও চক্ষুদ্বয় হালকাভাবে মর্দন করবে, যাতে ঘুমের প্রভাব কেটে যায়।
৩৩. ঘুম থেকে উঠে তিনবার আল-হামদু লিল্লাহ বলা সুন্নাত।
৩৪. ঘুম থেকে উঠে তিনবার কালিমায়ে তইয়্যেবা পড়া সুন্নাত।
৩৫. ঘুম থেকে উঠে এই দোয়া পড়া সুন্নাত-
الحمد لله الذي أحيانا بعد ما أماتنا واليه النشور
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে মৃত্যু (অর্থাৎ, নিদ্রা) তাঁর কাছেই দানের পর আবার জীবিত (অর্থাৎ, জাগ্রত) করেছেন এবং আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।
* তাহাজ্জুদের জন্য উঠলে এই দোয়া পড়বে-
اللهم لك الحمد أنت قيم السموات والأرض ومن فيهن ، ولك الحمد أنت نور السموات والأرض ومن فيهن ، ولك الحمد أنت ملك السّموات والأرض ومن فيهن ، ولك الحمد أنت الحق ووعدك الحق ولقائك حق وقولك حق والجنة حق والنار حق والنبيون حق ومحمد حق والساعة حق ـ اللهم لك أسلمت وبك أمنت وعليك توكلت واليك أنبت وبك خاصمت وإليك حاكمت ، فاغفر لي ما قدمت وما أخرت وما أسررت وما أعلنت ـ أنت المقدم وأنت المؤخر ، لا إله إلا أنت ولا اله غيرك
* তাহাজ্জুদের জন্য উঠলে নিম্নোক্ত আয়াত সমূহও পাঠ করবে-
إن في خلق السموات والأرض واختلاف الليل والنهار لايت لأولى الالباب ـ الذين يذكرون الله قياما وقعودا وعلى جنوبهم ويتفكرون في خلق السموت والأرض ربنا ما خلقت هذا باطلا سبحنك فقنا عذاب النار ـ ربنا إنك من تدخل النار فقد أخزيته وما للظلمين من انصار – ربنا إننا سمعنا مناديا ينادى للايمان أن أمنوا بربكم فأمنا ربنا فاغفر لنا ذنوبنا وكفر عنا سيئاتنا وتوفنا مع الابرار
৩৬.ঘুম থেকে উঠে মেসওয়াক করা সুন্নাত।
৩৭.ঘুম থেকে উঠে উযূ করা উত্তম।
৩৮.ইশার নামাযের পূর্বে ঘুমানো নিষেধ। তবে একান্ত অসুবিধা বশতঃ ঘুমাতে হলে ইশার নামাযের জন্য জাগ্রত করার লোক নির্ধারিত করে নিয়ে ঘুমানো যেতে পারে।
৩৯.আসরের পরও ঘুমাবে না।
৪০.সুযোগ হলে দুপুরে খাওয়ার পর কায়লূলাহ করা অর্থাৎ, কিছুক্ষণ শুয়ে থাকা সুন্নাত, ঘুম আসুক বা না আসুক।
৪১.এক কাপড়ের (এক কাঁথা বা এক লেপের) নীচে দুইজন পুরুষ বা দুই জন মেয়ে লোক শয়ন করা বড়ই খারাপ এবং লজ্জার কথা।
সমাপ্ত: শোয়া এবং ঘুমের সুন্নাত, আদব ও বিধি-নিষেধ সমূহ।
সূত্র: আহকামে যিন্দেগী।