Skip to content

 

Wait...❤😘 Show love? ⬇⬇⬇

সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের দিকনির্দেশনা, সন্তান প্রতিপালনে নববী আদর্শ, সন্তান প্রতিপালনে মা বাবার কর্তব্য, সন্তান প্রতিপালনের সঠিক গাইডলাইন, সন্তান প্রতিপালনে মা বাবার আদর্শ পদ্ধতি, ইসলামে সন্তান প্রতিপালন

সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের দিকনির্দেশনা, মা বাবার কর্তব্য, সঠিক গাইডলাইন, নববী আদর্শ পদ্ধতি
Table of contents

বিষয়: সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের দিকনির্দেশনা, সন্তান প্রতিপালনে নববী আদর্শ, সন্তান প্রতিপালনে মা বাবার কর্তব্য, সন্তান প্রতিপালনের সঠিক গাইডলাইন, সন্তান প্রতিপালনে মা বাবার আদর্শ পদ্ধতি, ইসলামে সন্তান প্রতিপালন।
হ্যাশট্যাগ: #সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের দিকনির্দেশনা #সন্তান প্রতিপালনে নববী আদর্শ #সন্তান প্রতিপালনে মা বাবার কর্তব্য #সন্তান প্রতিপালনের সঠিক গাইডলাইন #সন্তান প্রতিপালনে মা বাবার আদর্শ পদ্ধতি #ইসলামে সন্তান প্রতিপালন।

(১) সন্তান প্রতিপালনে: শিশুর শারীরিক ও স্বাস্থ্যগত পরিচর্যা

* সন্তান জন্মলাভ করার পরপরই তাকে গোসল দিবে। প্রথমে লবণ পানি দিয়ে তারপর খালেস পানি দিয়ে গোসল করাবে, তাহলে ফোড়া, গোটা ইত্যাদি অনেক ব্যাধি থেকে শিশু মুক্ত থাকবে। এরপর শরীরে বেশী ময়লা থাকলে কয়েক দিন পর্যন্ত এরূপ লবণ পানি দিয়ে গোসল করাবে; অন্যথায় শুধু খালেস পানি দিয়ে গোসল করাবে।

* গোসলের পর অন্ততঃ চার/পাঁচ মাস পর্যন্ত তেল মালিশ করা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

* ভেজা কাপড় দিয়ে শিশুর নাক, কান, গলা, মাথা ভালভাবে পরিষ্কার করবে।

* মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য খুবই উপকারী।

* দুধমায়ের দুধ খাওয়াতে হলে সুস্থ, সবল ও জওয়ান দুধমাতা নির্বাচন করতে হবে। যে মায়ের বাচ্চার বয়স ছয় সাত মাসের বেশী হয়নি- এরূপ মহিলার দুধ তাজা হয়ে থাকে, এরূপ মহিলাকে দুধমাতা নির্বাচন করা ভাল।

* শিশুকে খারাপ দুধ খাওয়াবে না। যে দুধ এক ফোটা নখের উপর রাখলে সাথে সাথে প্রবাহিত হয় বা মোটেই প্রবাহিত হয় না বা যে দুধের উপর মাছি বসে না সেটাই খারাপ দুধ। আর যে দুধ সামান্য প্রবাহিত হয়ে থেমে যায় সেটা ভাল দুধ।

* দুধ পান করানোর পূর্বে মধু বা চিবানো খেজুর প্রভৃতি মিষ্ট দ্রব্য আঙ্গুলে লাগিয়ে শিশুর গালে লাগিয়ে দিয়ে তারপর দুধপান করানো ভাল।

* শিশুদেরকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়ালে তাদের স্বাস্থ্য খারাব হবে।

* শিশুদেরকে নিজে বা কোন সমঝদার ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির দ্বারা খাওয়াবে, যাতে বে আন্দাজ খেয়ে তাদের রোগ-ব্যাধি দেখা না দেয়, কিংবা পাকস্থলী দুর্বল হয়ে না যায়।

* ছোট শিশুদেরকে বার বার এ পাশ ওপাশ করে শোওয়াবে, যাতে এক দিকে বেশীক্ষণ দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়ে ট্যারা হয়ে না যায়, কিংবা এক পাশে বেশীক্ষণ শুয়ে মাথা বাঁকা হয়ে না যায়।

* শিশুদেরকে সকলের কোলে যাওয়ার অভ্যাস করাবে, যাতে শিশু একজনের উপর নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে। অন্যথায় তার অবর্তমানে শিশুর অসুবিধা হতে পারে।

* পেশাব পায়খানার পর শিশুকে শুধু মুছে দেয়া যথেষ্ট নয় বরং পেশাব পায়খানার পর তৎক্ষণাৎ পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে দিতে হবে। প্রয়োজনে হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে হবে।

* বাচ্চাকে বেশী কোলে রাখবে না, তাতে বাচ্চা দুর্বল হয়ে যেতে পারে বরং সম্ভব হলে কিছু কিছু দোলনায় ঝুলানো ভাল।

* শোয়ানো বা কোলে নেয়ার সময় শিশুর মাথা কিছুটা উঁচুতে রাখবে।

* শিশুদেরকে নির্দিষ্ট সময় খাওয়ানোর অভ্যাস করানো ভাল, তাতে স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।

* শিশুদেরকে বিশেষ কোন এক ধরনের খাদ্যের প্রতি অভ্যস্ত করে তুলবে না বরং মৌসুমী সব ধরনের খাদ্য খাওয়াবে, তাহলে অভ্যাস ভাল হবে।

* টক দ্রব্য বেশী খাওয়াবে না।

* একবার খাওয়ানোর পর হজম হওয়ার পূর্বে অন্য খাবার দিবে না। কিংবা এত বেশী খাওয়াবে না যা হজম হতে পারবে না।

* সক্ষম হওয়ার পর শিশুদেরকে নিজের হাতে নিজের খাবার খেতে অভ্যস্ত করে তুলবে।

* খাওয়ার পূর্বে ভালভাবে হাত পরিষ্কার করে দিবে।

* শিশুদেরকে তাকিদ করবে যেন কেউ কোন খাবার দিলে মাতা-পিতাকে না দেখিয়ে তারা না খায়।

* শিশুদেরকে ঢিলে ঢালা পোশাক পরিধান করাবে।

* দুধ ছাড়ানোর সময় হলে এবং দুধের বাইরে বাড়তি খাবার শুরু করলে খেয়াল রাখতে হবে যেন শক্ত কিছু না চিবায়, অন্যথায় দাঁত উঠতে মুশকিল হবে এবং দাঁত চিরতরে দুর্বল হয়ে যাবে।

* বাচ্চাদের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে যেন নিজের কাজ নিজে করে।

* বাচ্চাদেরকে কিছুটা হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা-চলা করা, দৌড়া- দৌড়ি করা ইত্যাদিতে অভ্যস্ত করাবে, তাহলে স্বাস্থ্য ভাল থাকবে এবং অলসতা আসবে না।

* কিছুটা খেলাধূলা ও ফুর্তির সুযোগ দিবে, তাহলে মন ও স্বাস্থ্য উভয়টার উপকার হবে।

* বাচ্চাদেরকে মাজন মেসওয়াক ব্যবহারে অভ্যস্ত করে তুলবে।

* বাচ্চাদেরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবে।

* ভাল খাবার ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী খাদ্য খাবার দিবে, তবে বিলাসিতায় যেন অভ্যস্ত হয়ে না পড়ে।

* বদ নজর লাগলে নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করে বাচ্চাকে ফুঁক দিবে কিংবা লিখে বেঁধে দিবে।

وان يكاد الذين كفروا ليزلفونك بأبصارهم لما سمعوا الذكر ويقولون إنه لمجنون وما هو إلا ذكر للعلمين

* শিশুদেরকে দু’বছরের বেশী দুধ পান করানো যাবে না। শিশুর দুর্বলতার ক্ষেত্রে ইমাম আবূ হানীফার মতে আড়াই বৎসর বয়স পর্যন্ত দুধ পান করানো যেতে পারে, তারপর অবশ্যই দুধ ছাড়াতে হবে। এরপরও দুধ পান করানো সকলের ঐক্যমতে হারাম।

* বাচ্চার দুধ ছাড়ানো মুশকিল হলে সুরা বুরূজ লিখে বেঁধে দিলে সহজেই দুধ ছেড়ে দিবে।

* সময় মত শিশুর দাঁত না উঠলে সূরা ক্বাফ (২৬ পারা)-এর শুরু থেকে الخروج পর্যন্ত লিখে তা ধুয়ে পানি পান করালে সহজে দাঁত উঠবে।

* মেয়েলোকের দুধ কমে গেলে সূরা হুজুরাত (২৬ পারা) লিখে তা ধুয়ে পান করালে দুধ বৃদ্ধি পাবে।

(২) সন্তান প্রতিপালনে: শিশুর মানসিক পরিচর্যা

* শিশু কিশোরদের সামনে বা তাদের সাথে কথাবার্তা ও আচার-আচরণ এমন হওয়া উচিত যাতে তাদের মনে খারাপ প্রতিক্রিয়া না হয় বরং ভাল প্রতিক্রিয়া হয়। মনে রাখতে হবে শিশু অবুঝ হলেও, তারা কোন কথা ও আচরণ পূর্ণ উপলব্ধি করতে না পারলেও তার ভাল বা মন্দ প্রতিক্রিয়া তাদের মনে পড়বে এবং তাদের মন-মানসিকতা গঠনে সেটা ভূমিকা রাখবে। শিশুর মন ভিডিও-র ন্যায়, যা কিছুই তার সামনে বলা হবে বা করা হবে তার একটা চিত্র শিশুর মনে অংকিত হয়ে যাবে। যদিও সে এখন তা প্রকাশ করতে সক্ষম নয়, কিন্তু ভবিষ্যতে যখন সে প্রকাশ করতে সক্ষম হবে তখন দেখা যাবে শিশুকালে যেসব চিত্র তার মনে অংকিত হয়ে ছিল এখন তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। তাই শিশুর সামনে অবলিলায় সব কিছু বলা বা করা যাবে না বরং শধু এমন সব কিছুই তার সামনে বলতে বা করতে হবে যাতে তার মন-মানসিকতা ভাল এবং উন্নত হয়ে উঠে। এ পর্যায়ে উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হল।

* জন্মের সময় শিশুর (ছেলে হোক বা মেয়ে হোক উভয়ের) কানে আযান ও ইকামতের শব্দগুলো বলবে (ডান কানে আযানের শব্দাবলী এবং বাম কানে ইকামতের শব্দাবলী); তাহলে একটা ফায়দা এ-ও হবে যে তার মনে ঈমানের শক্তি সৃষ্টি হবে।

* অবুঝ শিশুর জাগ্রত থাকা অবস্থায় তার সামনেও মাতা-পিতা অশ্লীল কথা-বার্তা ও যৌন আচরণে লিপ্ত হবে না। সেরূপ করলে শিশুর মধ্যে নির্লজ্জতা সৃষ্টি হতে পারে।

* শিশুর সাথে অনাদর ও অবহেলার আচরণ করবে না, তাহলে তাদের মন নিষ্ঠুর ও বিকারগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে।

* শিশুকে আদর সোহাগ করতে করতে হবে পরিমিত। মাত্রাহীন আদর সোহাগ করলে তারা লাগামহীন হয়ে যেতে পারে।

* শিশুদেরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করালে তাদের পরিচ্ছন্ন মানসিকতা গঠিত হবে। অন্যথায় তাদের মধ্যে নোংরা থাকার মানসিকতা সৃষ্টি হবে।

* শিশু কিশোরদেরকে যতদূর সম্ভব নিজের কাজ নিজের হাতে করতে অভ্যস্ত করাবে, তাহলে তারা আত্মনির্ভরশীল মনোভাবাপন্ন হয়ে গড়ে উঠবে

* শিশু কিশোরদেরকে অতি বেশী জাঁকজমক ও বিলাসিতায় লালন-পালন করলে তাদের মধ্যে বিলাসী মনোভাব সৃষ্টি হয়।

* শিশুদের সব জিদ ও সব দাবী পূরণ করতে নেই, তাহলে তাদের মধ্যে একগুঁয়েমি ও হটকারিতার মনোভাব সৃষ্টি হয়। তাই তাদের সব জিদ ও সব দাবী পূরণ করতে নেই। বিশেষ ভাবে অন্যায় জিদ ও অন্যায় দাবী পূরণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। আবার তাদের কোন দাবীই যদি পূরণ করা না হয়, তাহলে তাদের মন ছোট হয়ে যাবে এবং তারা সংকীর্ণ মানসিকতার অধিকারী হবে। তাই তাদের দারী পূরণ করার ক্ষেত্রে খুব ভেবে চিন্তে কাজ করতে হবে।

* অবাধ্য ও দুশ্চরিত্র শিশুদের সঙ্গে খেলাধূলা করতে দিবে না। অন্যথায় তাদের চরিত্রের কুপ্রভাব ওদের মনে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই শিশুদের খেলার সাথী নির্বাচনের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।

* ছেলেদেরকে মেয়েদের সংগে একত্রে খেলাধুলা করতে দিলে ছেলেদের মধ্যে মেয়েলীপনা বা পর্দাহীনতার মনোভাব দেখা দিতে পারে।

* শিশুদেরকে বাঘের ভয়, শিয়ালের ভয়, ভূতের ভয় ইত্যাদি দেখাবে না, তাহলে তারা ভীরু প্রকৃতির হয়ে যেতে পারে।

* শিশুরা অন্যায় করলে আল্লাহ্র ভয় দেখাবে, জাহান্নামের আযাবের ভয় দেখাবে, তাহলে তাদের মনে খোদাভীরুতা সৃষ্টি হবে। আর তাদের অন্যায় কাজে বাধা না দিলে অন্যায়কে তারা ন্যায় বলে ভাবতে শিখবে।

* ভাল কাজের জন্য আল্লাহ্র খুশি হওয়ার কথা এবং জান্নাতের নেয়ামত লাভের কথা শোনালে তাদের মনে পরকালের চিন্তা গড়ে উঠতে সহায়ক হবে।

* প্রত্যেকটা পদে পদে আল্লাহ সব কিছুই দেখেন ও জানেন-এ বিষয়টা তাদের সামনে তুলে ধরলে তাদের মধ্যে খোদামুখী চেতনা গড়ে উঠবে।

* শিশুদেরকে নেককার লোকদের কাহিনী শুনালে তাদের মধ্যে নেককার হওয়ার চেতনা সৃষ্টি হবে এবং বীর বাহাদুরের কাহিনী শুনালে তাদের মধ্যে বীরত্বের মনোভাব জাগ্রত হবে।

* শিশুদেরকে তাগিদ সহকারে অভ্যস্ত করাবে তারা যেন মুরব্বী ছাড়া কারও নিকট কিছূ না চায় কিংবা কেউ কিছু দিলে মুরব্বীর অনুমতি ব্যতীত যেন গ্রহণ না করে। এরূপ না করলে তাদের মনে লোভ-লালসা জন্ম নিবে।

* গরীব মিসকীনকে দান-সদকা করতে হলে শিশুদের হাত দ্বারা সেটা দেওয়াবে, তাহলে শিশুদের মধ্যে দানশীলতা সৃষ্টি হবে।

* শিশুরা ভাল কাজ করলে বা ভাল লেখা পড়া করলে তাদেরকে সামান্য পুরষ্কার প্রদান করবে এবং সাবাশী প্রদান করবে, তাহলে ভাল কাজের প্রতি তাদের উৎসাহ সৃষ্টি হবে। এর বিপরীত মন্দ কাজ করলে অবস্থা অনুযায়ী সামান্য তিরস্কার ও সামান্য শাস্তি প্রদান করবে, তাহলে তাদের মনে বদ্ধমূল হয়ে যাবে যে, এটা মন্দ। তবে মনে রাখতে হবে খুব বেশী সাবাশী দেয়া বা খুব বেশী পুরষ্কৃত করা ঠিক নয়, তাহলেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। পক্ষান্তরে খুব বেশী শাস্তি দিলে তারা খিটখিটে বা জেদী হয়ে যেতে পারে বা বেশী তিরষ্কৃত করলে নিজের ব্যাপারে তার অনাস্থা জাগতে পারে। বস্তুতঃ সাবাশী বা পুরষ্কার দান, কিংবা তিরস্কার ও শাস্তি প্রদানের বিষয়টি অত্যন্ত নাজুক- এ ব্যাপারে খুব বিবেচনা সহকারে মেপে মেপে পদক্ষেপ নিতে হবে।

* শিশুদেরকে কোন খাদ্য খাবার দিলে তারা যেন সকলের মধ্যে বন্টন করে দিয়ে সকলে মিলে খায়- এরূপ অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। তাহলে তাদের মধ্যে স্বার্থপরতার মনোভাব সৃষ্টি হবে না।

* শিশুদের জন্য আদর্শ শিক্ষক নির্বাচন করতে হবে, তাহলে তারা আদর্শবান হওয়ার চেতনা লাভ করবে।

(৩) সন্তান প্রতিপালনে: শিশুদের আদর সোহাগ প্রসঙ্গ

* বাচ্চাদের আদর সোহাগ করা সুন্নাত। পরিমিত আদর সোহাগ থেকে বঞ্চিত হলে বাচ্চাদের মানসিকতা বিকৃত হয়ে যেতে পারে।

* বাচ্চাদেরকে আদর সোহাগ খুব বেশী করা তাদের জন্য ক্ষতিকর 1 এতে তারা লাগামহীন হয়ে যেতে পারে।

* আদর করে ছেলেকে আব্বু ডাকা এবং মেয়েকে আম্মু ডাকা জায়েয, এতে কোন ক্ষতি নেই ৷

* আদর সোহাগ করতে গিয়ে শিশুদেরকে খোঁচা দেয়া, আঁচড় দেয়া বা কোনরূপ উত্যক্ত করা হলে প্রকৃত পক্ষে এর দ্বারা যদি শিশুর মানসিক কষ্ট হয় বলে বোঝা যায়, তাহলে এরূপ করা জায়েয নয়।

* আদর সোহাগ করে নাম বিকৃত করে ডাকা ঠিক নয়।

(৩) সন্তান প্রতিপালনে: সন্তানের নাম রাখা

* ভাল অর্থপূর্ণ নাম রাখা উচিত, কারণ নামের অর্থের আছর হয়ে থাকে।

* সব চেয়ে উত্তম নাম আব্দুল্লাহ, তারপর আব্দুর রহমান। যে সকল নামের শুরুতে আব্দ এবং শেষে আল্লাহ তা’আলার নামসমূহের যে কোন একটি থাকে এই প্রকারের নাম রাখাও উত্তম। আল্লাহ তা’আলার নাম সমূহের ব্যাপারে আলাদা পোষ্ট রয়েছে,উপরের সার্স বক্স লিখে সার্স করলে পেয়ে যাবেন।

* আম্বিয়া, সাহাবা এবং ওলী আউলিয়া ও বুযুর্গদের নামের অনুরূপ নাম রাখাও উত্তম।

* মেয়েদের নাম হুজুর (সাঃ)-এর বিবি, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা এবং অন্যান্য নেককার বিবিদের নামের অনুরূপ রাখবে।

* কারও নাম অপছন্দনীয় রাখা হলে তার নাম বদলে ভাল নাম রাখবে। হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারও নাম অপছন্দনীয় হলে তার নাম বদলে ভাল নাম রেখে দিতেন।

* একাধিক নাম রাখা জায়েয। তবে ভাল নামটি কাগজে কলমে রেখে বাজে অর্থহীন আর একটি ডাক নাম রেখে সেই নামে ডাকার যে প্রচলন আজকাল দেখা যায় তা কাম্য নয়। একাধিক নাম রাখলে প্রত্যেকটি নামই ভাল নাম হওয়া উচিত I

* সপ্তম দিবসে সন্তানের নাম রাখা মোস্তাহাব।

(৩) সন্তান প্রতিপালনে: সন্তানকে কাপড়-চোপড়, খাদ্য-খাবার ও টাকা-পয়সা ইত্যাদি প্রদান করা সম্পর্কে কতিপয় নীতি

* সন্তানকে কাপড়-চোপড় দিবে তাদেরকে মালিক বানানোর নিয়তে নয় বরং তারা শুধু ব্যবহার করবে এই নিয়তে। মালিক নিজে থাকবে। কেননা অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান যার মালিক হয়ে যায় সেটা আর কাউকে দেয়া যায় না, নিজে মালিক থাকলে পুরাতন হওয়ার পর অন্য কাউকে দিয়ে দেয়া যাবে। ছোট ছেলে মেয়েরা যার মালিক হয়ে যায় তা অন্য কাউকে একেবারে দিয়ে দেয়া বা কর্জ স্বরূপ দেয়াও জায়েয নয়।

* ছোট ছেলে মেয়েকে দেখে আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবরা যে টাকা দিয়ে থাকে মাতা-পিতাই তার মালিক। অবশ্য যদি কেউ স্পষ্টতঃই বাচ্চাকে দেয়া উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করে বা বাচ্চার ব্যবহারের জিনিস দেয় তাহলে বাচ্চাই তার মালিক।

* প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য যে পোশাক ব্যবহার করা নিষিদ্ধ অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদেরকেও সেরূপ পোশাক প্রদান করা নিষিদ্ধ।

* ছেলেদেরকে সাদা পোশাক পরিধান করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে এবং রং চংয়ের পোশাকের প্রতি অনুৎসাহিত করবে এই বলে যে, এরূপ পোশাক মেয়েলী পোশাক, তুমি মাশাআল্লাহ পুরুষ ছেলে ইত্যাদি।

* সন্তানকে খাদ্য খাবার প্রদানের বিষয়ে পূর্বে শিশুদের স্বাস্থ্যগত পরিচর্যা শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণনা পেশ করা হয়েছে।

* সন্তানকে অতিরিক্ত বিলাসী খাদ্য খাবার ও বিলাসী পোশাক প্রদান করবে না, এতে তাদের অভ্যাস খারাপ হয়ে যাবে।

* সন্তানদেরকে অবৈধ বস্তু ক্রয়ের জন্য টাকা-পয়সা প্রদান করা জায়েয নয়; যেমন পটকা ও আতসবাজী ক্রয়ের জন্য।

* সব সন্তানকেই একই মানের জিনিস ও কাপড় চোপড় দেয়া কর্তব্য, বিনা কারণে বৈষম্য করা মাকরূহ।

* সন্তানদেরকে টাকা-পয়সা, জায়গা-জমি ইত্যাদি হাদিয়া দিলে সকলকে সমান দেয়া কর্তব্য (উত্তম)। তবে কোন সন্তান যদি তালেবে ইল্ম হয়, দ্বীনের খাদেম হয় বা উপার্জনে অক্ষম হয়, তাহলে তাকে কিছু বেশী দেয়া হলে তাতে কোন দোষ নেই।

* সন্তানদের যদি নিজস্ব সম্পদ থাকে, তাহলে তার ভরণ-পোষণ ও ব্যয়ভার তার সম্পদ থেকে হতে পারে। এমতাবস্থায় মাতা-পিতার উপর উক্ত সন্তানের ভরণ-পোষণ ও ব্যয়ভার বহন করা ওয়াজিব নয়। অনুরূপভাবে সন্তান বালেগ এবং উপার্জন করতে সক্ষম হলে তার ভরণ-পোষণও আইনতঃ মাতা-পিতার উপর ওয়াজিব নয়। আর সন্তান যদি নাবালেগ হয় এবং তার নিজস্ব কোন সম্পদ না থাকে কিংবা বালেগ হলেও সে আয় উপার্জন করতে সক্ষম না হয় এবং তার নিজস্ব সম্পদ না থাকে, এমতাবস্থায় পিতা জীবিত থাকলে উক্ত সন্তানের ভরণ-পোষণ শুধু পিতার উপর ওয়াজিব, মাতার উপর ওয়াজিব নয়। আর পিতা জীবিত না থাকলে মাতার উপর ওয়াজিব এবং রক্ত সম্পর্কের নিকট আত্মীয় থাকলে সকলের উপর এ দায়িত্ব বন্টিত হবে।

* সন্তানকে দূধ পান করানোর মাসায়েল সম্পর্কে জানার জন্য দেখুন ‘সন্তানের অধিকার’ নামক পোষ্টিটি। (ماخوذ از تربیت اولا و و بہشتی زیور )

(৪) সন্তান প্রতিপালনে: সন্তান ও শিশুদের শিক্ষা বিষয়ক নীতি ও মাসায়েল

* শিশুকে সর্বপ্রথম কালিমায়ে তাইয়্যেবা শিক্ষা দিবে।

* নিয়মিত লেখা-পড়া শুরু করানোর পূর্বেও সময় সুযোগে তার ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী ঈমানের কথা এবং ভাল মন্দ সম্পর্কে শিক্ষা দিবে এবং মৌখিকভাবে দু’আ দুরূদ ইত্যাদি শিখাবে।

* শিশুদেরকে মাতা-পিতা ও দাদার নাম এবং বাড়ির ঠিকানা অবশ্যই শিক্ষা দিবে। যাতে খোদা নাখাস্তা হারিয়ে গেলে অন্যরা তাকে সেই পরিচয় অনুযায়ী পৌছে দিতে পারে।

* সর্বপ্রথম প্রয়োজনীয় দ্বীনী শিক্ষা দেয়া এবং কুরআন পাঠ শিক্ষা দেয়া কর্তব্য।

* কত বয়স থেকে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে লেখাপড়া শুরু করাতে হবে- এ ব্যাপারে কুরআন হাদীছে স্পষ্ট কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে সাত বৎসর বয়স থেকেই সন্তানকে নামায পড়ার নির্দেশ দিতে বলা হয়েছে। হযরত আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) বলেনঃ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের জন্য অর্থাৎ, নামাযের জন্য যখন সাত বৎসর বয়সকে নির্ধারণ করা হয়েছে এর থেকে আমার মনে হয় এ বয়সটাই নিয়মতান্ত্রিক লেখা পড়া করানোর উপযুক্ত সময়। স্কুল কলেজে পড়ানো এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়ার শর্ত ও প্রয়োজন অপ্রয়োজন সম্বন্ধে পূর্বেই একটি বিস্তারিত পোষ্ট লিখা হয়েছে।

* শিশুদের শিক্ষা দানের জন্যও আদর্শ ও নেককার শিক্ষক নির্বাচন করা উত্তম। যতদূর সম্ভব বিজ্ঞ, দক্ষ ও পারদর্শী শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষাদান করানো প্রয়োজন, তাহলে সন্তানও তদ্রূপ বিজ্ঞ হয়ে গড়ে উঠবে। শুধু সস্তা শিক্ষক খোঁজা হলে শুরু থেকেই শিশুর শিক্ষার মান বিগড়ে যাবে, তারপর সংশোধন করা কঠিন হয়ে পড়বে।

* নিয়মতান্ত্রিক লেখা-পড়া শুরু হওয়ার পর মামুলী ছুটি ব্যতীত বারবার ছুটি দেয়া চলবে না। তবে নিতান্ত জরূরত হলে ভিন্ন কথা।

* কঠিন পাঠগুলো সকালের দিকে এবং সহজ পাঠগুলো বিকালের দিকে পড়াবে। কেননা বিকালে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন কঠিন পাঠ দেয়া হলে তার মধ্যে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

* শিশুদের পড়ার সময় ও পাঠের পরিমাণ আস্তে আস্তে বৃদ্ধি করবে। যেমন প্রথম দিকে এক ঘন্টা করে তারপর দুই ঘন্টা করে। এমনিভাবে তার স্বাস্থ্য ও শক্তি অনুসারে সময় ও পাঠের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে থাকবে, এক সঙ্গেই সারা দিন লেখা-পড়ার চাপ দিলে একদিকে ক্লান্তিবশতঃ সে পড়া চুরি করতে শুরু করবে, অপরদিকে ধারণ ক্ষমতার উপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে তার স্মৃতি শক্তি ও মেধায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে।

* সন্তানদেরকে আয় উপার্জন করার মত একটা জ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যা অবশ্যই শিক্ষা দিবে। এটা সন্তানের হক।

* শিশুদেরকে কথা-বার্তা, চলা-ফেরা, উঠা-বসা, পান-আহার, সালাম-কালাম ইত্যাদির আদব-কায়দা ও চরিত্র শিক্ষা দেয়া মাতা-পিতার দায়িত্ব।

(৫) সন্তান প্রতিপালনে: সন্তানের দাবী দাওয়া ও জিদ পূরণ করার বিষয়ে কতিপয় নীতি ও মাসায়েল

* সন্তানের বৈধ দাবী দাওয়া কিছু কিছু পূরণ করতে হয়, অন্যথায় তাদের মন ছোট হয়ে যায়।

* সন্তানের সব জিদ পূরণ করতে নেই, তাহলে তাদের মধ্যে একগুঁয়েমী ও হঠকারিতার মনোভাব সৃষ্টি হয়। বিশেষতঃ সন্তান যদি কোন অবৈধ বিষয়ের জন্য দাবী করে বা জিদ ধরে তাহলেও তা করা জায়েয নয়- হারাম। এরূপ জিদ থেকে বিরত না হলে প্রয়োজনে তাকে শাসন করতে হবে।

* যেটা দেয়ার ইচ্ছা নেই, সন্তানকে ভুলানোর জন্য বা থামানোর জন্য এরূপ কোন বিষয়ের ওয়াদা করা নিষেধ। এটাও মিথ্যার শামিল। এরূপ কোন ওয়াদা করে ফেললে তা পূরণ করা জরুরী হয়ে পড়ে, যদি কোন অবৈধ বিষয়ের ওয়াদা না হয়ে থাকে।

(৬) সন্তান প্রতিপালনে: শিশুদের শাসন করার পদ্ধতি ও মাসায়েল

* অনেক সময় নম্র কথায় এবং নম্র আচরণে শিশুর সংশোধন নাও হতে পারে। এরূপ মুহূর্তে কঠোরতা অবলম্বন ও শাসনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। প্রয়োজনের মুহূর্তে কঠোরতা অবলম্বন পূর্বক শাসন না করা খেয়ানত।

* শাসন ও শাস্তি প্রদানের কয়েকটা পদ্ধতি হতে পারে যথা :

(১) তিরস্কার করা (২) ধমক দেয়া (৩) কড়া কথা বলা। (৪) হাত বা লাঠি দ্বারা মারা (৫) আঁটক করে রাখা (৬) কান ধরে উঠা-বসা করানো (৭) ছুটি বন্ধ করে দেয়া। এই শেষোক্ত শাস্তিই সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি। শিশুদের মনে এর যথেষ্ট প্রভাব পড়ে।

* মারধর অতিরিক্ত করা হলে, উঠতে বসতে লাথি জুতা করতে থাকলে শিশুরা নির্লজ্জ হয়ে যায় এবং মারের ভয় তাদের অন্তর থেকে উঠে যায়। তারপর তাকে শাসন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই মারধর-এর ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করা অন্যায়। ফোকাহায়ে কেরাম স্পষ্টভাবে বলেছেনঃ যে মারপিট দ্বারা হাত ভেঙ্গে যায়, চামড়া ফেটে যায় বা চামড়ায় দাগ পড়ে যায়, সেরূপ মারপিট করা নিষিদ্ধ ৷ কোন পিতা বা উস্তাদ এরূপ মারধর করলে তিনি শাস্তির যোগ্য। মনে রাখতে হবে- অতিরিক্ত শাস্তি প্রদান করা জুলুম ৷

* মারধরের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করা থেকে বাঁচার উপায় হল রাগের মুহূর্তে মারধর না করা। কেননা রাগের মুহূর্তে ব্যালেন্স ঠিক থাকে না। রাগ ঠান্ডা হওয়ার পর কতটুকু অন্যায় এবং তার জন্য কতটুকু কিভাবে শাস্তি দেয়াটা উপযোগী তা চিন্তা-ভাবনা করে শাস্তি দিতে হবে। হাদীছেও রাগাম্বিত অবস্থায় বিচার করতে নিষেধ করা হয়েছে। খুব বেশী রাগ এসে গেলে রাগ দমন করার পদ্ধতি উপর আমল করবে। 

* কখনও অতিরক্ত শাস্তি দেয়া হয়ে গেলে শাস্তি দেয়ার পর তাকে আদর সোহাগ করে, অনুগ্রহ করে খুশি করে দিবে।

* বকাবকি ও ভর্ৎসনা করার ক্ষেত্রেও সীমা অতিক্রম করবে না, লাগামহীন ভাবে মুখে যা আসে বলবে না, বরং পূর্বে চিন্তা করে নিবে কি কি শব্দ প্রয়োগ করা সমীচীন।

(৭) সন্তান নেককার হওয়ার আমল: সন্তানকে সু-চরিত্রবান ও দ্বীনদার বানানোর তরীকা

* একটা সু-সন্তান লাভ করার জন্য এবং সন্তানকে সু-চরিত্রবান ও দ্বীনদার বানানোর জন্য মাতা-পিতার অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। সন্তানের জন্মের পূর্বে থেকেই শুরু করতে হবে সন্তানকে ভাল বানানোর ফিকির ও প্রচেষ্টা, আর সেই ফিকির ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত। এই

ফিকির ও প্রচেষ্টার একটা মোটামুটি রূপরেখা নিম্নে প্রদান করা হলঃ

* একটা সু-সন্তান পেতে হলে একটা সৎ ও ভাল নারীকে বিবাহ করতে হবে। ভাল নারীর গর্ভেই ভাল সন্তানের আশা বেশী করা যায়।

* মাতা-পিতা উভয়কেই হালাল খাবার গ্রহণ করতে হবে। কেননা হারাম খাদ্য থেকে সৃষ্ট বীর্যের মধ্যে খারাপ আছর হতে পারে, আর তার থেকে সৃষ্ট সন্তানের মধ্যেও তার প্রভাব থেকে যেতে পারে।

* স্ত্রী সহবাসের সময় সহবাসের সুন্নাত ও আদব সমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখবে।

* সু-সন্তানের জন্য আল্লাহ্র কাছে নিম্নোক্ত দু’আ করবে-

رب هب لي من لدنك ذرية طيبة إنك سميع الدعاء

অর্থ : হে আমার প্রতিপালক, তুমি আমাকে নিজ অনুগ্রহে পবিত্র বংশধর দান কর। অবশ্যই তুমি দু’আ শ্রবণকারী। (সূরা আলে ইমরানঃ ৩৮)

* সন্তান গর্ভে আসার পর মায়ের চিন্তা-ভাবনা, মায়ের মন-মানসিকতা ও মায়ের আচার-আচরণ সবকিছুর প্রভাব পড়ে থাকে গর্ভস্থ সন্তানের উপর। তাই সন্তান গর্ভে আসার পর মাকে সব কু-চিন্তা ও পাপের চিন্তা পরিহার করতে হবে এবং নেক চিন্তা ও ভাল চিন্তা ভাবনা রাখতে হবে, তাহলে সন্তানের উপর তার সু-প্রভাব পড়বে।

* সন্তান জন্ম নেয়ার পর তাকে গোসল দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তার ডান কানে আযানের শব্দগুলো এবং বাম কানে ইকামতের শব্দগুলো শুনাবে। এতে করে শুরু থেকেই তার মনে আল্লাহ, আল্লাহ্র রাসূলের নাম কালিমা ইবাদতের সু-প্রভাব পড়বে। যদিও সে তখন আযান ইকামতের মর্ম বুঝতে সক্ষম নয় তবুও তার সু-প্রভাব পড়বে।

* অতঃপর কোন দ্বীনদার বুযুর্গ দ্বারা খেজুর বা কোন মিষ্টান্ন দ্রব্য চিবিয়ে তার সামান্যটা নব জাতকের তালুতে লাগিয়ে দিবে। (এটাকে বলা হয় ‘তাহনীক’।) এটা করা সুন্নাত। এতে করে বুযুর্গের মুখের লালার মাধ্যমে বুযুর্গীর সু-প্রভাব নবজাতকের মধ্যে প্রবেশ করবে।

* শিশুর একটা সুন্দর নাম রাখবে।

* শিশুকে মা ব্যতীত অন্য কোন দুধমাতার দুধ পান করালে দ্বীনদার পরহেযগার ও সু-স্বভাবের অধিকারী মহিলার দুধ পান করাবে। কেননা, দুধের মাধ্যমে দুধদাত্রীর স্বভাব, চরিত্র, মন-মানসিকতা ও চিন্তা-চেতনার প্রভাব ছড়িয়ে থাকে ৷

* শিশুর মন-মানসিকতা ও মেজায প্রকৃতি যেন ভাল হয়ে ওঠে তার জন্য পূর্বে “শিশুর মানসিক পরিচর্যা” শীর্ষক পরিচ্ছেদে যা কিছু বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলোর উপর আমল করতে হবে।

* শিশুকে সুশিক্ষা প্রদান করতে হবে। এর জন্য পূর্বে সন্তান ও শিশুর শিক্ষা বিষয়ক যে নীতিমালা বর্ণনা করা হয়েছে তার উপর আমল করতে হবে।

* শিশুকে প্রয়োজনে শাসন করতে হলে শাসন করার সুষ্ঠ পদ্ধতি ও মাসায়েল অনুযায়ী শাসন করতে হবে।

* কিছুটা বুঝ হওয়ার পর থেকেই প্রত্যেকটা পদে পদে ধীরে ধীরে শিশুকে আদব-কায়দা শিক্ষা দিতে থাকতে হবে এবং অন্যায় ত্রুটি হলে সংশোধন করে দিতে হবে। প্রয়োজনে তম্বীহ ও মুনাছেব শাস্তিও দিতে হবে।

* সাত বৎসর বয়স থেকেই শিশুকে নামাযের হুকুম দিবে এবং পুরুষ ছেলে হলে জামআতের সাথে নামায পড়তে অভ্যস্ত করাবে। দশ বৎসর বয়স হলে প্রয়োজনে মারপিট করে হলেও নামায পড়াতে হবে।

* শিশুদেরকে রোযা রাখানোর ক্ষেত্রে সাত বৎসরের কোন সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি, সে যখন যে কয়টা রোযা রাখতে সক্ষম হবে তখন তার দ্বারা তা রাখাতে হবে। শিশুর নামায, রোযা ইত্যাদি ইবাদত ও আখলাক-চরিত্র গঠনের ব্যাপারে জননীকেই বেশী খেয়াল রাখতে হবে, কেননা তার কাছেই সন্তানরা বেশী সময় কাটায়।

* প্রতিদিন ঘরে একটা নির্ধারিত সময়ে দ্বীনী কথা-বার্তা আলোচনার বা দ্বীনী কিতাব তালীমের সিলসিলা জারী রাখতে হবে। এতে সন্তানদের সাথে সাথে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও উপকার হতে থাকবে। রাতে শুতে যাওয়ার পূর্বে এর জন্য সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে, তখন সকলের সময় অবসর থাকে। প্রথম দিকে সকলে তালীম শুনতে না চাইলেও তালীম করে যেতে হবে, আস্তে আস্তে সকলে শুনতে অভ্যস্তও হবে এবং আছরও হতে থাকবে।

* শুরু থেকেই সতর্ক থাকতে হবে, যেন খারাপ সাথীদের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক গড়ে উঠতে না পারে। অধিকাংশতঃ কুসংসর্গ থেকেই সন্তানরা কুপথে ধাবিত হয়।

* সন্তানদেরকে মুসলমানদের সাথে, বিশেষভাবে গরীব সৎ মুসলমানদের সাথে উঠা-বসা করতে অভ্যস্ত করাবে।

* সন্তানকে অভ্যস্ত করাবে তারা যেন কোন কাজ গোপনে না করে। কেননা গোপনে সে এমন কাজই করবে যেটাকে সে অন্যায় বলে মনে করে, এভাবে গোপনে কাজ করতে অভ্যস্ত হওয়ার অর্থ অন্যায় কাজে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া।

* হালাল সম্পদ দ্বারা সন্তানের ভরণ-পোষণ করবে। হারাম সম্পদের দ্বারা কুস্বভাব ও শরী’আত বিরুদ্ধ চেতনা জন্ম নেয়। পক্ষান্তরে হালাল সম্পদের দ্বারা সৎ স্বভাব ও নেক চরিত্রের বুনিয়াদ গঠিত হয়।

* সন্তানকে যৌন বিষয়ক ও প্রেম প্রীতি বিষয়ক বই পত্র ও নভেল নাটক পড়তে বা দেখতে দিবে না।

* মনে রাখতে হবে- সন্তানের প্রথম বয়সই তার এছলাহের উপযুক্ত সময়। প্রথমে নষ্ট হয়ে গেলে পরে তার এছলাহ অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ে। প্রথম দিকে অবুঝ সন্তান বলে অবহেলা করে ছেড়ে দিলে পরবর্তীতে অনুতপ্ত হতে হয়।

* সন্তানদের সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রথম সন্তানকেই অধিক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। কেননা পরবর্তী সন্তানরা প্রায়শঃই প্রথম জনের অনুকরণ করে থাকে।

* সন্তানের অধিকার পূর্ণ মাত্রায় আদায় করবে। সন্তানের অধিকার বিষয়ে আলাদা একটি পোষ্ট রয়েছে।

(৮) নেক সন্তান লাভের দোয়া

* সন্তান যেন নেককার হয়- অসৎ না হয়, তার জন্য আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা ও দু’আ করতে থাকবে। কুরআন ও হাদীছ থেকে এরূপ কয়েকটি দুআ নিম্নে পেশ করা হলঃ

رب اجعلني مقيم الصلوة ومن ذريتي ربنا وتقبل دعاء ۔ (1)

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমাকে এবং আমার বংশধরকে নামায কালিমা করনে ওয়ালা বানাও। হে আমার রব, আমার দু’আ কবূল কর। (সূরা ইব্রাহীমঃ ৪০)

ربنا هب لنا من أزواجنا وذريتنا قرة أعين واجعلنا للمتقين إماما ۔ (2)

অর্থঃ হে আমাদের রব, আমাদের বিবি ও সন্তানদেরকে আমাদের জন্য সুখের বানাও এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের অগ্রণী বানাও। (সূরা ফুরকানঃ ৭৪)

اللهم أصلح لي في ذريتي إني تبت إليك واني من المسلمين – (3)

অর্থঃ হে আল্লাহ আমার সন্তানদের এছলাহ করে দাও। আমি তোমার দিকে ধাবিত হয়েছি এবং আমি আনুগত্যকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

اللهم بارك لنا في أزواجنا وذريتنا وثب علينا إنك أنت التواب الرحيم ۔ (4)

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমাদের বিবি ও সন্তানদের মধ্যে বরকত দান কর এবং আমাদের তওবা কবূল কর। তুমিই তো তওবা কবূলকারী, অতি দয়ালু।

اللهم إني أسئلك من صالح ما تؤتى الناس من المال والأهل والولد غير ضال ولا مضل ۔ (5)

অর্থঃ হে আল্লাহ, তুমি মানুষকে যে ভাল সন্তান, সম্পদ ও বিবি দান করে থাক, আমি তোমার নিকট তদ্রূপের প্রার্থনা করছি, বিভ্রান্ত বা অন্যকে বিভ্রান্তকারী সন্তান ও বিবি নয়।

اللهم إني أعوذبك من ولد يكون على وبالا ۔ (6)

অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট এমন সন্তান থেকে পানাহ চাই যা আমার জন্য বিপদের কারণ হবে।

(৯) সন্তান প্রতিপালনে: কোন ক্রমেই অবাধ্য সন্তানকে সুপথে আনতে না পারলে তখন কি করণীয়?

* সন্তানকে সুপথে আনার চেষ্টা করা মানুষের আয়ত্বের মধ্যে, কিন্তু সে চেষ্টার ফলাফল মানুষের আয়ত্বাধীন নয়। অনেক সময় হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও সন্তান সুপথে না আসতে পারে এবং তার কারণে মাতা-পিতার পেরেশানীর অন্ত না থাকতে পারে। এরূপ মুহূর্তে পিতা-মাতার করণীয় হল :

১. চেষ্টা অব্যাহত রাখবে, কিন্তু ফলাফল লাভের অপেক্ষায় থাকবে না; অর্থাৎ, তারা যেমন চায় সন্তান তেমনই হয়ে যাবে- এই অপেক্ষায় থাকবে না, তাহলে পেরেশানী কমে যাবে।

২. সন্তান সুপথে আসছে না এ জন্য স্বভাবতঃ যে কষ্ট ও দুঃখ হবে তার কারণে ছওয়াব হবে- এই বিশ্বাস রাখবে, তাহলেও মনে একটু তৃপ্তি পাওয়া যাবে। মনে রাখবে যে, এভাবেও হয়ত আল্লাহ আমার গোনাহ মোচন ও ছওয়াব লাভের পথ করে দিয়ে আমার প্রতি অনুগ্রহ করছেন।

৩. সন্তানের সুমতি ও হেদায়েত হোক এ জন্য সর্বদা দু’আ করতে থাকবে।

৪. এরূপ সন্তানের কপাল ধরে الشهيد (আশ-শাহীদু) আল্লাহর নামের শব্দটি পাঠ করবে কিংবা এক হাজার বার পড়ে সন্তানকে দম করবে, আল্লাহ্র ইচ্ছা হলে সন্তান ফরমাবরদার হয়ে যাবে।

(১০) সন্তান প্রতিপালনে: সতীনের সন্তান বা স্ত্রীর ভিন্ন ঘরের সন্তানের জন্য যা করণীয়

সতীনের সন্তান বা স্ত্রীর ভিন্ন ঘরের সন্তান বৈবাহিক সম্পর্কের আত্মীয়দের অন্তর্ভূক্ত।

কাজেই আত্মীয়দের যা হক ও অধিকার রয়েছে তাদের বেলায়ও তা পালন করতে হবে।

বরং অনেক আলেমের মতে বৈবাহিক সম্পর্কের আত্মীয় আর রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়দের হক একই রকম।

এমতে নিজের সন্তানের জন্য যা যা করণীয় সতীনের সন্তান বা স্ত্রীর ভিন্ন ঘরের সন্তানের জন্যও তা-ই করণীয়।

বিশেষতঃ সতীন যদি মারা যায় তাহলে সৎ মাকে এ কথা চিন্তা করে দেখতে হবে যে, আমি সতীনের সন্তানের সাথে দুর্ব্যবহার করলে খোদা নাখাস্তা আমার সন্তান ছোট থাকা অবস্থায় আমার মৃত্যু হলে অন্য সতীন ঘরে এসে আমার সন্তানের প্রতিও দুর্ব্যবহার করতে পারে।

স্ত্রীর ভিন্ন ঘরের সন্তানের বেলায় স্বামীকেও অনুরূপ ভেবে দেখতে হবে।

এরূপ ভাবনা মনে উপস্থিত রাখলে সতীনের সন্তান ও স্ত্রীর ভিন্ন ঘরের সন্তানকে নিজের সন্তানের মত বরণ করে নেয়া সহজ হবে এবং দুর্ব্যবহারের মনোভাব জাগ্রত হবে না বরং করুণার মনোভাব জাগ্রত হবে।

সমাপ্ত: সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের দিকনির্দেশনা, সন্তান প্রতিপালনে নববী আদর্শ, সন্তান প্রতিপালনে মা বাবার কর্তব্য, সন্তান প্রতিপালনের সঠিক গাইডলাইন, সন্তান প্রতিপালনে মা বাবার আদর্শ পদ্ধতি, ইসলামে সন্তান প্রতিপালন।
সূত্র: আহকামে যিন্দেগী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!