বিষয়: সমাজনীতি: সমাজ গঠন, শান্তি শৃংখলা প্রতিষ্ঠায় করণীয়, নেতার গুণাবলী এবং নেতার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
হ্যাশট্যাগ: #সমাজ গঠন, #সমাজে শান্তি শৃংখলা প্রতিষ্ঠা #নেতার গুণাবলী #নেতার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
সমাজ সংসার ও নতুন সমাজ গঠনের জন্য যা যা করণীয়
১. সমাজের কুসংস্কার, বেদআত, রছম ও প্রচলিত অনৈসলামিক ধ্যান-ধারণার প্রতি সমাজ সদস্যদের বীতশ্রদ্ধ করে তুলতে হবে।
২. সেই সাথে সাথে ইসলামের নির্ভেজাল ও শাশ্বত আদর্শ এবং ইসলামী মূল্যবোধ সমাজের সামনে তুলে ধরতে হবে।
৩. বিজাতীয় সভ্যতা সংস্কৃতির প্রভাব থেকে সমাজকে দূরে রাখার সর্বপ্রযত্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. ইসলামী মূল্যবোধ ও আদর্শের আলোকে ব্যক্তি গঠন পূর্বক তাদেরকে আদর্শের নমুনা হিসেবে সমাজের সামনে দাঁড় করাতে হবে। তাহলে নমুনা সামনে পেয়ে সমাজ সদস্যগণ অনুরূপ হওয়াকে সহজবোধ করবে এবং অনুরূপ হওয়ার বাস্তব অনুপ্রেরণা লাভ করবে।
সমাজে শান্তি শৃংখলা প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করণীয়
শান্তি মূলতঃ অশান্তি দূর হওয়ার নাম, আর বিশৃংখলা দূর করার নাম হল শৃংখলা বিধান। অতএব সামাজিক অশান্তি ও বিশৃংখলার কারণ যা যা, তার প্রতিকার করলেই সমাজে শান্তি ও শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত হবে। নিম্নে এই সামাজিক অশান্তি ও বিশৃংখলার কারণ কি কি এবং তার প্রতিকার ব্যবস্থা কি তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করা হল।
১. প্রত্যেকের যা দায়িত্ব সে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে শুধু অধিকার আদায়ে সোচ্চার হলে পারস্পরিক সংঘর্ষ ও অশান্তির সূচনা হয়। এর প্রতিকারের জন্য সকলকে দায়িত্ব সচেতন করে তুলতে হবে এবং নিজের অধিকারের চেয়ে অন্যের অধিকারকে প্রাধান্য দেয়ার মনোভাব এবং নিজের অধিকার আদায় না হওয়ার ক্ষেত্রে ধৈর্য ও সহনশীল হওয়ার মনোভাব জাগ্রত করতে হবে।
২. সুষ্ঠু নেতৃত্বের অভাব : মানুষে মানুষে স্বার্থ নিয়ে সংঘাত লাগলে তা নিরসনের জন্য এবং সমাজকে সুষ্ঠু লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে পরিচালনার জন্য সুষ্ঠু নেতৃত্বের প্রয়োজন। অন্যথায় সামাজিক অশান্তি ও বিশৃংখলা রোধ করা সম্ভব হয় না। তাই এমন নেতার প্রয়োজন যার মধ্যে নেতৃত্বের সব গুণাবলী বিদ্যমান থাকবে এবং যিনি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবেন। নেতার গুণাবলী এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য কি কি এ সম্পর্কে পরবর্তী পরিচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে।
৩. নৈতিক অবক্ষয়ের ফলেও সমাজে অশান্তি ও বিশৃংখলা দেখা দেয়। এর প্রতিকারের জন্য সমাজ শিক্ষায় নৈতিকতাকে গুরুত্ব সহকারে স্থান দিতে হবে।
৪. সামাজিক অপরাধ : চুরি, ডাকাতি, মদ, জুয়া, নেশা প্রভৃতি সামাজিক অপরাধের মোকাবিলা ও তা প্রতিহত করতে না পারলে সমাজে শান্তি ও শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এ সম্পর্কে পরবর্তীতে আলোচনা করা হয়েছে।
৫. শ্রেণী বৈষম্য এবং তার ফলে সৃষ্ট দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও সংঘাত সামাজিক অশান্তির একটি অন্যতম কারণ। এর প্রতিকারের জন্য ইসলামের বৈষম্যহীন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আইনের আশ্রয় গ্রহণের কোন বিকল্প নেই।
৬. ইসলামের দেয়া সামাজিক রীতি-নীতি, মানবাধিকার প্রভৃতি লংঘন করলে সমাজে অশান্তি দেখা দেয়। এক কথায় মানুষের কৃতকর্মের দরুণই সমাজে অশান্তি দেখা দেয়।
নেতার গুণাবলী
নেতৃত্বের জন্য যেসব গুণ অপরিহার্য, নেতাকে যেসব গুণাবলী অর্জন করতে হবে, তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা পেশ করা হল-
১. নেতার মধ্যে নেতৃত্বের মোহ থাকতে পারবে না। সে কাজ করবে দেশ ও জাতির স্বার্থে, ব্যক্তি স্বার্থে নয়। নেতৃত্বের প্রতি মোহ থাকলে মানুষ ব্যক্তি স্বার্থ ত্যাগ করে বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার তাগিদে কাজ করতে পারে না।
২. নেতার মধ্যে বিনয় থাকতে হবে। কথা-বার্তা, আচার-আচরণে বিনয় না থাকলে বরং অহংকার থাকলে সেরূপ নেতাকে কেউ মনে প্রাণে গ্রহণ করতে চায় না।
৩. সমস্যা ও সংকটের মুহূর্তে নেতাকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে দলীয় সদস্যরা নেতাকে স্বার্থপর বা ভীরু ভাবতে না পারে কিংবা নিজেদেরকে যেন তারা অসহায় না ভাবে।
৪. অনুসারী ও দলীয় সদস্যদের প্রতি সহানুভূতি থাকতে হবে এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধা ও আশা-আকাংখার খোঁজ-খবর রাখতে হবে।
৫. ভালবাসা দিতে ও ভালবাসা নিতে পারার গুণ থাকতে হবে। এরূপ হলে নেতার উপস্থিতি কর্মী ও দলীয় সদস্যদের কাছে কাম্য হবে এবং নেতা কর্মীদের মন জয় করতে পারবেন।
৬. নেতার মধ্যে বুদ্ধিমত্তা এবং সমস্যা ও তার সমাধান সম্বন্ধে পরিজ্ঞান থাকতে হবে, যাতে তিনি পরিবেশ, পরিস্থিতি ও সমস্যার নানা দিক বিশ্লেষণ পূর্বক যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
৭. নেতাকে আদর্শস্থানীয় হতে হবে, যাতে তার স্বভাব-চরিত্র ও নীতি নৈতিকতা দেখে তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হয় এবং অনুসারীরা আদর্শচ্যুত হওয়ার দুঃসাহস না পায়। কেননা এরূপ নেতার নিকট আদর্শহীনতা প্রশ্রয় পাবে না।
৮. নেতা চরমপন্থী হবেন না, নিজস্ব মতামত চাপিয়ে দেয়ার জন্য গোঁ ধরবেন না বরং প্রয়োজনের তাগিদে মূল আদর্শ বহাল রেখে নীতি নির্ধারণ ও পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে আপোষের মনোভাব নিয়ে চলবেন।
নেতার দায়িত্ব ও কর্তব্য
১. দলীয় সদস্যদের ঐক্য বজায় রাখা। যাতে দলীয় সদস্য ও সমাজ সভ্যগণ ঐক্যহীনতার ফলে বিপন্ন হয়ে না যায়।
২. নেতা তার কাজকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কর্মীদেরকে কাজের অনুপ্রেরণা যোগাবেন এবং তাদের মনোবল বৃদ্ধি করবেন।
৩. নেতাকে বাস্তবমুখী কর্মসূচী প্রণয়ন করতে হবে, যাতে দল ও সমাজের আশা-আকাংখার প্রতিফলন ঘটে এবং পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ না হয়।
৪.. নেতাকে শুধু প্রতিভার অধিকারী হলে চলবে না বরং সেই সাথে সাথে সযত্নে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
৫. নেতাকে যোগ্য উত্তরসূরী গড়ে যেতে হবে, যেন তার অবর্তমানেও কাজের ধারা অক্ষুণ্ন থাকে এবং অব্যাহত গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে।
৬. নেতৃত্ব যেহেতু জনগণের আমানত, তাই নেতাকে জবাবদিহিতার চেতনা নিয়ে কাজ করতে হবে।
৭. বহুমুখী লোকদেরকে নিয়ে নেতাকে চলতে হয়, অনেক অবান্তর ও উল্টাপাল্টা সমালোচনার সম্মুখীনও তাকে হতে হয়, নেতাকে তাই ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে এবং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টির সাথে চলতে হবে।
সামাজিক অপরাধ প্রতিকারের জন্য যা যা করণীয়
১. ইসলামী আইনে বিভিন্ন অপরাধের যে শাস্তি রয়েছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তার যথার্থ প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. আইন মানার জন্য মানসিকতা গঠন করতে হবে এবং আইন মানার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
৩. জনসমক্ষে শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে। যাতে অনুরূপ অপরাধ সংঘটনে জনগণের মনে ভীতির সঞ্চার হয় এবং এভাবে অপরাধ হ্রাস পেতে থাকে।
৪. তড়িৎ আইন প্রয়োগ করতে হবে। আইন প্রয়োগে বিলম্ব বা দীর্ঘসূত্রিতা অন্যান্য অনেক ক্ষতির পাশাপাশি অপরাধ বিরোধী চেতনা সৃষ্টির ক্ষেত্রে শাস্তির ভূমিকাকে হ্রাস করে দেয়।
৫. অপরাধীদেরকে সৎ ও ভাল মানুষের সাহচর্যে এবং নীতি- নৈতিকতার পরিবেশে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. অপরাধের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে অপরাধবিরোধী মানসিকতা গঠন করতে হবে।
৭. কেউ নেশা জাতীয় অপরাধে জড়িত হলে ক্রমান্বয়ে ধীরে ধীরে তার সে অভ্যাস ছাড়াতে হবে।
পঞ্চায়েত/গ্রামের গণ্য মান্য ব্যক্তি বর্গ/গ্রাম প্রধান/ কোন সামাজিক অপরাধের কি শাস্তি দিতে পারেন?
* শরী’আতে যেনা, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি বিভিন্ন অপরাধের বিভিন্ন শাস্তির বিধান রয়েছে, তবে আইনত : এই শাস্তি প্রয়োগ করতে পারে ইসলামী কাজী বা হাকিম। যেখানে ইসলামী আদালত নেই সেখানে পঞ্চায়েত বা বেসরকারীভাবে নির্বাচিত বিচারকমণ্ডলী শরী—আত নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করার অধিকার রাখেন না। তারা সমীচীন মনে করলে অপরাধীকে তম্বীহ স্বরূপ সমাজ থেকে এক ঘরে করে রাখতে পারেন অর্থাৎ, অপরাধীর সাথে ক্রয়- বিক্রয়, উঠা-বসা, চলা-ফেরা ও মেলা-মেশা বন্ধ রাখার শাস্তি প্রয়োগ করতে পারেন কিংবা তম্বীহ স্বরূপ কিছু চড় থাপ্পড় বা দু’ চারটা বেত্রাঘাতও করতে পারেন। কিন্তু তারা শরী’আত নির্ধারিত শাস্তি ৮০/১০০ দোত্রা মারা কিংবা রজম (প্রস্তুরাঘাত) করার অধিকার রাখেন না।
* কোন অপরাধের কারণে আর্থিক জরিমানা করা জায়েয নয়। করলে সে অর্থ তাকে ফেরত দিতে হবে কিংবা তার মর্জি ও সন্তুষ্টি অনুযায়ী সে অর্থ ব্যয় করতে হবে।
সমাপ্ত: সমাজনীতি: সমাজ গঠন, শান্তি শৃংখলা প্রতিষ্ঠায় করণীয়, নেতার গুণাবলী এবং নেতার দায়িত্ব ও কর্তব্য।