বিষয়: সিজদায়ে সাহুর মাসায়েল, সিজদায়ে সাহু করার নিয়ম, সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব ওয়াজিব হবার কারণ কয়টি কি কি? নামাযের মধ্যে রাকআত নিয়ে সন্দেহ হলোে তার মাসায়েল।
সিজদায়ে সাহুর মাসায়েল
সিজদায়ে সাহুর কখন করতে হয়?
* নামাযের ওয়াজিবগুলোর মধ্যে কোন একটি বা কয়েকটি ভুলে ছুটে গেলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়। এর বিস্তারিত তালিকা নিচে বলা হলো।
সিজদায়ে সাহুর করতে ভুলে গেলে করণীয় কী?
সিজদায়ে সাহু করতেও ভুলে গেলে নামায আবার পড়া ওয়াজিব।
সিজদায়ে সাহু কখন করা যায় না?
কোন ফরয ছুটে গেলে বা কোন ওয়াজিব ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলেও নামায আবার পড়তে হবে- সিজদায়ে সাহু দিলে চলবে না।
সিজদায়ে সাহু করার নিয়ম
সিজদায়ে সাহু করার নিয়ম হলোঃ
শেষ রাকআতে তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু …) পড়ে ডান দিকে সালাম ফিরাবে, তারপর নিয়ম মত দুটো সাজদা করে আবার তাশাহ্হুদ, দুরূদ ও দোয়ায়ে মাছূরা পড়ে উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবে।
সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব ওয়াজিব হবার কারণ কয়টি কি কি?
◆ ভুলবশতঃ এক রাকআতে দুই রুকূ বা তিন সাজদা করে ফেললে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
◆ ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকআতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা/কিরাত মিলাতে ভুলে গেলে শেষের দুই রাকআতে সূরা/কিরাত মিলাবে বা যে কোন এক রাকআতে সূরা/ কিরাত মিলাতে ভুলে গেলে শেষের যে কোন এক রাকআতে সূরা/কিরাত মিলাবে এবং উভয় অবস্থায় সিজদায়ে সাহু করবে। এ নিয়মে শেষের দুই রাকআত বা এ রাকআতে সূরা/কিরাত মিলাতেও যদি ভুলে যায় তবুও সিজদায়ে সাহু করলে নামায হয়ে যাবে।
◆ সূরা ফাতিহা পড়ে কোন্ সূরা মিলাবে এই চিন্তা করতে করতে যদি চুপ চাপ অবস্থায় তিনবার সুবহানাল্লাহ বলা পরিমাণ সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, তাহলোে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। এমনিভাবে নামাযের যে কোন স্থানে ভুলে বা চিন্তা করার কারণে কোন ফরয বা ওয়াজিব আদায় করতে তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্ব হয়ে যায়, তাহলোে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
◆ তিন বা চার রাকআত বিশিষ্ট ওয়াজিব বা ফরয বা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাযের দ্বিতীয় রাকআতে তাশাহ্হুদ এর পর ভুলবশতঃ দুরূদ পড়া শুরু করলে যদি অর্ধেক পর্যন্ত বা আরও বেশী পড়ে ফেলে তাহলোে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। এর কম পড়লে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। তবে সুন্নাতে গায়র মুআক্কাদা ও নফলে (তদ্রূপ জুমুআর পরের সুন্নাতে) প্রথম বৈঠকে দুরূদ পড়াও জায়েয আছে; কাজেই তাতে দুরূদ পড়লে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না।
◆ যে কোন নামাযের প্রথম বৈঠকে ভুলে পূর্ণ তাশাহ্হুদ দুই বার পড়লে বা তার এতটুকু অংশ দ্বিতীয়বার পড়লে যা তিন তাসবীহ পরিমাণ হয়ে যায় তাতে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
◆ তাশাহ্হুদের স্থলে ভুলে ছানা বা দোয়ায়ে কুনূত বা সূরা ফাতিহা পড়লে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
◆ দোয়ায়ে কুনূতের স্থলে সূরা ফাতিহা বা তাশাহহুদ পড়লে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় না।
◆ ভুলে সূরা ফাতিহার স্থলে তাশাহ্হুদ পড়লে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
◆ মাছবূক ইমামের সাথে সালাম ফিরিয়ে ফেললে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
◆ ইমামের জন্য যে সব নামাযে কিরাত চুপে চুপে পড়া ওয়াজিব, তাতে যদি ইমাম ছোট তিন আয়াত পরিমাণ উচ্চস্বরে পড়ে বা উচ্চস্বরের নামাযে তিন আয়াত পরিমাণ চুপে চুপে পড়ে, তাহলোে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
◆ ফরয নামাযের প্রথম বৈঠক না করেই যদি তৃতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়াতে উদ্যত হয় এবং শরীরের নীচের অর্ধেক সোজা হওয়ার পূর্বে বসে পড়ে, তাহলোে সিজদায়ে সহো করতে হবে না। আর নীচের অর্ধেক সোজা হয়ে গেলে আর বসবে না-তৃতীয় বা চতুর্থ রাকজাত পড়ে শেষ বৈঠকে সিজদায়ে সাহু করবে। সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর বসে তাশাহ্হুদ পড়লে গোনাগা হবে তবে নামায হয়ে যাবে এবং সিজদায়ে সহো করতে হবে।
◆ সুন্নাত বা নফল নামাযের প্রথম বৈঠক না করে ভুলে উঠে গেলে তৃতীয় রাকআতের সাজদা না করা পর্যন্ত স্মরণ আসলে বসে যাবে। আর তৃতীয় রাকআতের সাজদা করার পর স্মরণ এল বসবে না- চার রাকআত পূর্ণ করে বসবে এবং এই উভয় অবস্থায় সিজদায়ে সাহু করলে নামায হয়ে যাবে।
◆ ফরয নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ পড়ার পর ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে শরীরের নীচের অর্ধেক সোজা হওয়ার পূর্বে বসে পড়লে সাজাদয়ে সাহো করতে হবে না। আর নীচের অর্ধেক সোজা হয়ে গেলেও বসে যাবে, এমনকি ঐ রাকআতের সাজদা করার আগ পর্যন্ত স্মরণ এলেও বসে পড়বে এবং বসে সাথে সাথে সিজদায়ে সাহু করবে। আর যদি ঐ রাকআতের সাজদা করার পর স্মরণ হয় তাহলোে আরও এক রাকআত মিলাবে; তাহলোে প্রথম দুই/চার রাকআত ফরয এবং শেষ দুই রাকআত নফল হবে। এ অবস্থায় সিজদায়ে সাহুও করতে হবে। আর যদি ঐ রাকআতে সালাম ফিরায় এবং সিজদায়ে সাহু করে তাহলোেও নামায হবে কিন্তু অন্যায় হবে। এ অবস্থায় প্রথম দুই/চার রাকআত ফরয হবে এবং শেষের এক রাকআত বৃথা যাবে।
◆ শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পূর্বে ভুলে উঠে গেলে শরীরের নীচের অর্ধের সোজা হওয়ার পূর্বে বসে পড়লে সিজদায়ে সাহু করতে হবে না। আর নীচের অর্ধেক সোজা হওয়ার পর স্মরণ এলেও বসে পড়বে এমনকি আর এক রাকআতের সাজদা করার আগ পর্যন্ত স্মরণ এলেও বসে পড়বে এবং সিজদায়ে সাহু করবে। কিন্তু আর এক রাকআতের সাজদা করে ফেললে আর বসবে না বরং আরও এক রাকআত মিলাবে এবং শেষে সিজদায়ে সাহু করবে না। এ অবস্থায় সব রাকআত নফল হয়ে যাবে, ফরয পুনরায় পড়তে হবে।

নামাযের মধ্যে রাকআত নিয়ে সন্দেহ হলোে তার মাসায়েল
◆ যদি নামাযের মধ্যে এরূপ সন্দেহ হয় যে, প্রথম রাকআত না কি দ্বিতীয় রাকআত? তাহলোে যে দিকে মন ঝুঁকবে সে দিককে গ্রহণ করবে। যদি কোন এক দিক মন না ঝুঁকে তাহলোে এক রাকআতই (অর্থাৎ, কমটাই) ধরতে হবে কিন্তু এই প্রথম রাকআতে বসে তাশাহ্হুদ পড়বে, কেননা হতে পারে প্রকৃত পক্ষে এটাই দ্বিতীয় রাকআত। দ্বিতীয় রাকআতেও বসে তাশাহ্হুদ পড়বে, তৃতীয় রাকআতেও বসে তাশাহ্হুদ পড়বে, (কেননা, হতে পারে প্রকৃত পক্ষে এটাই চতুর্থ রাকআত) তারপর চতুর্থ রাকআতে সিজদায়ে সাহু করবে।
◆ যদি কারও সন্দেহ হয় যে, দ্বিতীয় রাকআত না তৃতীয় রাকআত, তার হুকুমও এরূপ- যদি মন কোন দিকে না ঝুঁকে তাহলোে দ্বিতীয় রাকআত ধরে নিবে এবং এই রাকআতে বসে তাশাহ্হুদ পড়বে এবং এটা বেতর নামায হলোে এ রাকআতেও দোয়ায়ে কুনূত পড়বে। তৃতীয় রাকআতেও বসবে। তারপর চতুর্থ রাকআতে সিজদায়ে সাহু সহকারে নামায শেষ করবে।
◆ যদি কারও সদ্দেহ হয় যে, তৃতীয় রাকআত না চতুর্থ রাকআত, তাহলোে তার হুকুম অনুরূপ- কোন দিকে মন না ঝুঁকলে তিন রাকআত ধরে নিবে কিন্তু এই তৃতীয় রাকআতেও বসে তাশাহ্হুদ পড়তে হবে। তারপর চতুর্থ রাকআতে সিজদায়ে সাহু সহকারে নামায শেষ করবে।
◆ যদি নামায শেষ করার পর সন্দেহ হয় যে, এক রাকআত কম রয়ে গেল কি-না? তাহলোে এই সন্দেহের কোন মূল্য দিবে না, নামায হয়ে গেছে। অবশ্য যদি সঠিক ভাবে স্মরণ আসে যে, এক রাকআত কম রয়ে গেছে তাহলোে দাঁড়িয়ে আর এক রাকআত পড়ে নিবে এবং সিজদায়ে সাহু সহকারে নামায শেষ করবে। কিন্তু যদি ইতিমধ্যে এমন কোন কাজ করে থাকে যাতে নামায ভঙ্গ হয়ে যায় (যেমন কেবলা থেকে ঘুরে বসে থাকা বা কথা বলে থাকা ) তাহলোে নতুন নিয়ত বেঁধে সম্পূর্ণ নামায দোহরায়ে পড়তে হবে। আর প্রথম অবস্থায়ও নতুন ভাবে নামায দোহরায়ে নেয়া উত্তম-জরুরী নয়।
বিঃ দ্রঃ রাকআতের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হওয়ার ব্যাপার যদি কারও ক্ষেত্রে কদাচিৎ হয়ে থাকে তাহলোে তার ক্ষেত্রে পূর্বোল্লিখিত নিয়ম প্রযোজ্য হবে না বরং তাকে নতুন নিয়ত বেধে নামায পড়তে হবে।
◆ সিজদায়ে সাহু করার পরও যদি সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়ার মত আবার কোন ভুল হয়, তাহলোে পুনর্বার সিজদায়ে সাহু করতে হবে না- ঐ পূর্বের সাজদাই যথেষ্ট হবে।
◆ সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ সিজদায়ে সাহু করে, তাহলোে নামায হয়ে যাবে কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে এরূপ করা ঠিক নয়।
◆ সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও যদি সিজদায়ে সাহু না করে উভয় সালাম ফিরিয়ে ফেলে, তারপর কোন কথা বলার পূর্বে বা নামায ভঙ্গ হয়- এমন কোন কিছু করার পূর্বে সিজদায়ে সাহুর কথা স্মরণ হয় তাহলোে তখনই যদি ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সিজদায়ে সাহু করে তারপর তাশাহুদ, দুরূদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নেয়, তবুও নামায হয়ে যাবে।
◆ শেষ বৈঠকে দুরূদ শরীফ পড়ার পর বা দোয়ায়ে মাছুরা পড়ার পর সালাম ফিরানোর পূর্বে যদি সিজদায়ে সাহুর কথা স্মরণ হয় তখনই সিজদায়ে সাহু করে নিবে।
সমাপ্ত: সিজদায়ে সাহুর মাসায়েল, সিজদায়ে সাহু করার নিয়ম, সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব ওয়াজিব হবার কারণ কয়টি কি কি? নামাযের মধ্যে রাকআত নিয়ে সন্দেহ হলোে তার মাসায়েল।
সূত্র: আহকামে যিন্দেগী।