
স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে ছাগল পালন কি?
ছাগলকে মাঠে না ছেড়ে সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় বাসস্থান, খাদ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থপানা অনুসারে ছাগল পালনের পদ্ধতিকে ষ্টল ফিডিংবলে।
কোন বয়েসের পাঠা স্টল ফিডিং এর জন্য উপযোগী?
স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে খামার করার উদ্দেশ্যে স্বাভাবিক ও রোগ মুক্ত ব্ল্যাক বেল জাতের ৬-১৫ মাস বয়সী ছাগী এবং ৫-৭ বয়সী পাঁঠা সংগ্রহ করতে হবে।
ছাগলের ঘর কেমন হবে?
স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে পালনের জন্য প্রতিটি বয়স্ক ছাগলের জন্য প্রায় ১০ বর্গ ফুট ঘরের জায়গা প্রয়োজন হয়।ঘরটি বাঁশের তৈরী হলে শীতের রাতে ঘরের বেড়া চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং মেঝেতে খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
কোন পদ্ধতিতে ছাগলকে ঘরে থাকতে অভ্যস্ত করতে হবে?
স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে পালনের জন্য সংগৃহীত ছাগলকে সংগ্রহের সাথে সাথেই সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় রাখ উচিৎ নয়। প্রথমে ছাগলকে দিনে ৬-৮ ঘন্টা চরিয়ে বাকী সময় আবদ্ধ অবস্থায় রেখে পর্যাপ্ত খাদ্য (ঘাস ও দানাদার) সরবরাহ করতে হবে | এভবে ১-২ সপ্তাহের মধ্যে চরানোর সময় পর্যায়ক্রমে কমিয়ে সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় রাখতে হবে | তবে ছাগল ছানাকে বাচ্চা বয়স থেকে আবদ্ধ অবস্থায় রাখলে এই ধরণের অভ্যস্ত করণের প্রয়োজন নেই।
ষ্টল ফিডিং পদ্ধতিতে, ছাগলের বাচ্চাকে কি খাওয়াতে হবে?
জন্মের পরপন্ই ছাগল ছানাকে পরিষ্কার করে শাল দুখ খাওয়াতে হবে | এক নাস বয়স পর্যন্ত ছাগল ছানাকে দিনে ১০-১২ বার দুধ খাওয়াতে হবে। বাচ্চার চাহিদার তুলনায় মা ছাগীতে দুধ কম থাকলে প্রয়োজনে অন্য ছাগীর দুধ বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া ছাগীর দুধ পাওয়া না গেলে বিকল্প দুধ বা মিক্ষ রিপ্লেসার খাওয়াতে হবে।দুধ খাওয়ানোর আগে ফিডার, নিপলসহ আনুষজিক জিনিসপত্র পানিতে ফুটিয়ে জীবানুমুক্ত করে নিতে হবে|
ছাগলের বাচ্চাকে কি পরিমাণ খাওয়াতে হবে?
এক হতে দেড় কেজি ওজনের একটি ছাগল ছানার দৈনিক ২৫০-৩০০ গ্রাম দুধ প্রয়োজন। ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে দুধের পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে।
বাচ্চার বয়স ২-৩ মাস হলে বাচ্চা দুধ খাওয়া ছেড়ে দিবে। সাধারণত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগীকে প্রয়োজনমত খাওয়ালে বাচ্চার প্রয়োজনীয় দুধ পাওয়া যায়। বাচ্চার ১ মাস বয়স হতে ধীরে ধীরে কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাদ্যে ভ্যন্ত করাতে হবে |
ষ্টল ফিডিং পদ্ধতিতে ছাগলের বাচ্চাকে কি পরিমাণ খাওয়াতে হবে?
ছাগল সাধারণত তার ওজনের ৪-৫% হারে খেয়ে থাকে | এই খাদ্যের মধ্যে ৬০-৮০% আঁশ জাতীয় খাবার (ঘাস, লতা, পাতা, খড় ইত্যাদি) এবং ২০-৪০% দানাদার খাবার (কুড়া, ভূষি, চাল, ভাল, ছোলা ইত্যাদি) থাকতে হবে | একটি বাড়ন্ত খাসীকে দৈনিক ২০০-২৫০ গ্রাম দানাদার খাবার প্রদান করতে হবে।
দুই থেকে তিন বাচ্চা বিশিষ্ট ২৫ কেজি ওজনের ছাগীর দৈনিক প্রায় ৩৫০-৪৫০ গ্রাম দানাদার খাদ্য প্রয়োজন হয় | একটি প্রাপ্ত বয়স্ক পাঁঠার দৈনিক ২০০-৩০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য প্রয়োজন।

ষ্টল ফিডিং পদ্ধাতিতে ছাগলকে কিভাবে ঘাস, খড় খাওয়াতে হবে?
ষ্টল ফিডিং পদ্ধতিতে একটি বাড়ন্ত খাসীকে দৈনিক ১.০-১.৫ কেজি কাঁচা ঘাস প্রদান করতে হবে। দুই থেকে তিন বাচ্চা বিশিষ্ট ২৫ কেজি ওজনের ছাগীকে দৈনিক ১.৫-২.৫ কেজি কাঁচা ঘাস এবং একটি প্রাপ্ত বয়স্ক পাঁঠাকে দৈনিক ১.৫-২.৫ কেজি কাঁচা ঘাস প্রদান করা প্রয়োজন। ঘাস পাওয়া না গেলে খড়কে ২-৩ ইঞ্চি পরিমান কেটে ইউরিয়া মোলাসেস দিয়ে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে |
কখন ছাগলকে খাসী করাতে হবে?
স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে ছাগল পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো অধিকতর মাংস উৎপাদন। তাই এ পদ্ধতির খামারে প্রজনন উপযোগী কয়েকটি পাঁঠা রেখে বাকী সব পুরুষ ছাগলকে খাসী করানো হয়ে থাকে। খাসী করানোর মাধ্যমে ছাগলের মাংস গন্ধমুক্ত ও সুস্বাদু হয়| খাসীকরণের ফলে চামড়ার গুনগত মানও বৃদ্ধি পায় | এর ফলে ছাগল শান্ত ও নম্র স্বভাবের হয় এবং অনেক ছাগল একত্রে পালন সহজতর হয়| ২-৪ সপ্তাহ বয়সে পাঁঠা বাচ্চাকে খাসী করানো উত্তম| খাসী করার জন্য বার্ডিজোস ক্যাস্ট্রেটর, রাবার রিং বা অন্ডকোষ কাটা পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে| খাসী করানোর পর ড্রাতস্থানে মাছি বা অন্য কোন পোকা বা আঠালি যেন না বসে সেজন্য টিংচার অব আয়োডিন দিয়ে পরিক্ষার করে সালফানিলামাইড পাউডার ছিটিয়ে দিতে হবে|
স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে ছাগল পাঁঠা ব্যবস্থাপনা কেমন হবে?
পাঁঠাকে যখন প্রজনন কাজে ব্যবহার করা হয় না তখন তাকে পর্যাপ্ত পরিমানে ঘাস খাওয়ালেই চলে| তবে প্রজনন কাজে ব্যবহারের সময় পাঁঠাকে ওজনভেদে ২০০-৫০০ গ্রাম পরিমান দানাদার খাবার দিতে হবে।
প্রজনন কার্যক্রমে সহায়তার জন্য প্রতিটি পাঁঠাকে দৈনিক ১০ গ্রাম পরিমান গাঁজানো ছোলা দেয়া প্রয়োজন|
কোন ভাবেই পাঁঠার শরীরে চর্বি জমতে দেয়া উচিৎ নয়। প্রয়োজনে দানাদার খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
ছাগলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কেমন হবে?
খামারের সব ছাগলকে বছরে কমপড়ো দুই বার (বর্ষা ও শীতের শুরন্নতে) কৃমিনাশক উঁষধ খাওয়াতে হবে।
ছাগলের মারাত্বক রোগ যেমন- পিপিআর, গোটপক্স হলে দ্রশ্নত নিকটস্থ প্রাণি হাসপাতাল বা ভেটেরিনারিয়ানের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া ছাগলের তড়কা, গলা ফুলা, এন্টারোটক্সিমিয়া, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া হতে পারে। সঠিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসার মাধ্যমে এ সকল রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব| ছাগলের টিকাদান কর্মসূচী অনুসরণ করলে অনেক রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
জৈব নিরাপত্তা কেমন হবে?
খামারে নতুন ছাগল আনার জন্য অবশ্যই রোগমুক্ত ছাগল সংগ্রহ করতে হবে এবং ১৫ দিন খামার থেকে দূরে অন্যত্র পর্যবেক্ষণ (কোয়ারেন্টাইন) করতে হবে।
কোন রোগ দেখা না দিলে ১৫ দিন পর পিপিআর ভ্যাক্সিন দিয়ে ছাগল খামারে অন্যান্য ছাগলের সাথে রাখা যাবে।
অসুস্থ ছাগলকে পালের অন্য ছাগল থেকে দ্রশ্নত অন্যত্র সরিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে | ছাগলের ঘর নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে |
সকল ছাগলকে বছরে ৫-৬ বার ০.৫% ম্যালাথায়ন দ্রবণে চুবিয়ে বহিঃপরজীবি মুক্ত রাখতে হবে। প্রজননশীল পাঁঠা ও ছাগীকে বছরে দুইবার ১.০-১.৫ মি-লি. ভিটামিন এ, ডি, ই ইনজেকশন দিতে হবে।
ষ্টল ফিডিং পদ্ধতিতে পালিত ছাগল বাজারজাতকরণ পক্রিয়া কেমন হবে?
সুষ্ঠ খাদ্য ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় ১২-১৫ মাসের মধ্যে খাসী ২০-২২ কেজি ওজনের হয় | এ সময় খাসী
বিক্রি করা যেতে পারে অথবা খাসীর মাংস প্রক্রিয়াজাত করেও বিক্রি করা যেতে পারে।
সুত্রঃ স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে ছাগল পালন, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সাভার, ঢাকা, মার্চ, ২০০৩।