বিষয়: 20টি স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য তথা স্ত্রীর অধিকারসমূহ।
হ্যাশট্যাগ: #স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য #স্ত্রীর অধিকারসমূহ।
20টি স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য তথা স্ত্রীর অধিকারসমূহ
১. হালাল মাল দ্বারা স্ত্রীর ভরণ-পোষণ দেয়া স্বামীর উপর ওয়াজিব। পোষণ বা পোশাকের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রদান করা বা প্রতি ঈদে কিংবা বিবাহ-শাদী ইত্যাদি উপলক্ষে থাকা সত্ত্বেও নতুন পোশাক দেয়া স্বামীর কর্তব্য নয়। দিলে তার অনুগ্রহ। স্বামীর স্বচ্ছলতা যেরূপ সেই মানের ভরণ-পোষণ দেয়া কর্তব্য। স্ত্রীর হাত খরচার জন্যেও পৃথকভাবে কিছু দেয়া উচিত, যাতে সে তার ছোটখাট এমন সব প্রয়োজন পূরণ করতে পারে যেগুলো সব সময় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। তবে অবাধ্য হয়ে স্বামীর ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলে তার ভরণ-পোষণ পাওয়ার অধিকার থাকে না।
২. স্বামীর স্বচ্ছলতা থাকলে স্ত্রীর জন্য চাকর নওকরের ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর ওয়াজিব। অবশ্য স্বচ্ছলতা না থাকলে তখন স্ত্রীকেই রান্না-বান্না (নিজের জন্য এবং স্বামীর সন্তানাদির জন্যেও) ইত্যাদি কাজ করতে হবে, এটা তখন তার দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। আর যদি স্ত্রী অসুস্থ্যতার কারণে বা আমীর-উমরা প্রভৃতি বড় ঘরের কন্যা হওয়ার কারণে নিজে করতে সক্ষম না হয়, তহলে স্বামীর দায়িত্ব প্রস্তুত খাবার ক্রয় করে আনা বা অন্য কোন স্থান থেকে বা অন্য কারও মাধ্যমে পাকানোর ব্যবস্থা করা।
৩. স্ত্রীর বসবাসের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী পৃথক ঘর বা অন্ততঃ পৃথক রূম পাওয়া স্ত্রীর অধিকার। স্ত্রী যদি পৃথক থাকার কথা বলে এবং স্বামীর মাতা- পিতা বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে একই ঘরে থাকতে খুশি খুশি রাজী না থাকে, তাহলে তার ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর ওয়াজিব। অন্ততঃ একটা পৃথক কামরা তাকে দিতে হবে, যেখানে সে তার মাল-আসবাব তালাবদ্ধ রেখে হেফাজত করতে পারে বেং স্বাধীনভাবে একান্তে স্বামীর সাথে মনোরঞ্জন করতে পারে। উল্লেখ্য যে, শ্বশুর-শাশুড়ীর খেদমত করা স্ত্রীর উপর আইনতঃ ওয়াজিব নয়, করলে তার ছওয়াব আছে। বরং এ খেদমতের দায়িত্ব তার স্বামীর; সে নিজে করতে না পারলে লোক দ্বারা করাবে। তাও না পারলে এবং একান্ত অনন্যোপায় অবস্থায় স্ত্রীর মাধ্যমে করাতে চাইলে তখন স্ত্রীর সেটা করার দায়িত্ব এসে যায়। নতুবা স্বাভাবিক অবস্থায় স্ত্রী আন্তরিক ভাবে না চাইলেও জবরদস্তী তাকে স্বামীর মাতা- পিতার অধীন করে রাখা, জোর জবরদস্তী মাতা-পিতার সাথে একান্নভুক্ত রাখা এবং জোর জবরদস্তী তার দ্বারা মাতা-পিতার খেদমত করানো উচিত নয়। এটা স্তীর প্রতি জুলুম। তবে স্ত্রীরও মনে রাখা উচিত যে, একান্ত ঠেকা অবস্থা না হলে স্বামীকে তার মাতা-পিতা ও ভাই- বোন থেকে পৃথক করে নিয়ে তাদের মনে কষ্ট দেয়াও উচিত নয়। ( زوجین
৪. স্ত্রীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা।
৫. স্ত্রীর চরিত্রের ব্যাপারে অহেতুক সন্দেহ বা কুধারণা না রাখা। (আবার একেবারে অসতর্কও না থাকা উচিত।)
৬. হায়েয নেফাস প্রভৃতির বিধান ও দ্বীনী মাসায়েল শিক্ষা করে স্ত্রীকে তা শিক্ষা দেয়া, নামায রোযা প্রভৃতি ইবাদত করা ও দ্বীনের উপর চলার জন্য স্ত্রীকে তাগিদ দেয়া এবং বিদআত, রছম প্রভৃতি শরী’আত বিরুদ্ধ কাজ থেকে তাকে বাধা দেয়া স্বামীর কর্তব্য।
৭. প্রয়োজন অনুপাতে স্ত্রীর সাথে সংগম করা। প্রতি চার মাস অন্ততঃ একবার স্ত্রীর সাথে যৌন সংগম করা স্বামীর উপর ওয়াজিব।
৮. স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত তার সাথে আযল না করা। (অর্থাৎ, যৌন সংগম কালে যোনির বাইরে বীর্যপাত না করা।)
৯. স্ত্রীর মাতা-পিতা, ভাই, বোন প্রভৃতি রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়-স্বজনের সাথে তাকে দেখা সাক্ষাত করতে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করা। তবে যাতায়াতের ভাড়া দেয়া স্বামীর আইনতঃ কর্তব্য নয়, দিলে সেটা তার অনুগ্রহ বলে বিবেচিত হবে। মাতা-পিতার সঙ্গে সপ্তাহে একবার সাক্ষাৎ করতে চাইলেও দিবে এবং অন্যান্য মাহরাম আত্মীয়দের সঙ্গে বৎসরে একবার। তবে মাতা-পিতা যদি কন্যার কাছে আসতে পারার মত হয় কিংবা মাতা-পিতা বা কোন আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার মধ্যে বেপর্দা হওয়ার বা অন্য কোন রকম ফেতনার আশংকা থাকে তাহলে এরূপ অবস্থায় স্বামী স্ত্রীকে যেতে বাধা দিতে পারে (P/ Ull) এরূপ ক্ষেত্রে মাতা-পিতা ও আপনজন এসে তাকে দেখে যাবে। তাতেও কোন অকল্যাণের সম্ভাবনা থাকলে তাদেরকে স্ত্রীর কাছে আসতে না দেয়ার অধিকার রয়েছে স্বামীর। সেরূপ ক্ষেত্রে তারা দুর থেকে দেখে ও কথা বলে যেতে পারে। (প্রাগুক্ত)
১০. স্ত্রীর সাথে কৃত যৌন সংগম প্রভৃতি গুপ্ত বিষয় অন্যত্র প্রকাশ না করা। এটাও স্ত্রীর অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।
১১. পারিবারিক শান্তি শৃংখলা রক্ষার স্বার্থে যে ক্ষেত্রে স্ত্রীকে সংশোধনমূলক কিছুটা প্রহার করার অনুমতি স্বামীকে দেয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রেও স্বামী সীমালংঘন করতে পারবে না। অর্থাৎ, প্রকাশ্য স্থানে দাগ পড়ে যাবে এমনভাবে স্ত্রীকে মারতে পারবে না বা প্রচণ্ডভাবেও মারপিট করতে পারবে না। এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার জন্য খামারিয়ান.কম এ আলাদা পোষ্ট রয়েছে।
১২. বিনা কারণে স্ত্রীকে তালাক না দেয়া। স্ত্রীর যেনা, মিথ্যা, বাতিল মতবাদে বিশ্বাস, ফাসেকী প্রভৃতি কারণে তালাক দেয়া হলে স্বামীর অন্যায় হয় না। পক্ষান্তরে অনন্যোপায় অবস্থা ব্যতীত স্ত্রীরও স্বামীর কাছ থেকে তালাক চেয়ে নেয়া অন্যায়।
১৩.স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য অন্ততঃ কিছুক্ষণ নির্জনে তাকে সময় দেয়া, তার সঙ্গে হাসিফুর্তি করা স্বামীর কর্তব্য। যাতে সেও মনোরঞ্জন করতে পারে, মনের কথা বলতে পারে সুবিধা-অসুবিধার কথা জানাতে পারে এবং একাকিত্বের কষ্ট লাঘব করতে পারে। এরূপ সময় দিতে না পারলে তার সমমনা কোন নারীকে তার নিকট আসা-যাওয়া বা রাখার ব্যবস্থা করবে। মোটকথা, ঘরে পর্দার মধ্যে থেকেও যেন স্ত্রী তার মনের খোরাক পায় তার জন্য শরী’আতের গণ্ডির মধ্যে থেকে ব্যবস্থা করতে হবে।
১৪. রাত্রে স্ত্রীর নিকট শয়ন করাও স্ত্রীর অধিকার I
১৫. স্ত্রীদের নায-না এবং মান-অভিমান করারও অধিকার রয়েছে।
১৬. স্ত্রীর ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা, যতক্ষণ সীমালংঘনের পর্যায়ে না যায় এবং তার পক্ষ থেকে কষ্ট পেলে ছবর করা এবং নীরব থাকা। তবে এক্ষেত্রে ভারসাম্যতা রক্ষা করতে হবে অর্থাৎ, প্রয়োজন বোধে স্ত্রীকে মোনাছেব মত তম্বীহ করতে হবে।
১৭. স্ত্রীর সঙ্গে কথা-বার্তা বলা এবং তাকে খুশি রাখাও স্বামীর কর্তব্য এবং এটাও স্ত্রীর অধিকার।
১৮. মহর স্ত্রীর অধিকার। স্বামীর উপর মহর প্রদান করা ফরয। স্বামী মহর প্রদান করা ব্যতীত মৃত্যু বরণ করলে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে স্ত্রীর মহর আদায় করা হবে।
১৯. স্ত্রীর প্রতি অবিচার না করা। পুরুষ তার কর্তৃত্ব সুলভ ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোন ভাবেই স্ত্রীর প্রতি জুলুম অবিচার করতে পারবে না।
২০. একাধিক স্ত্রী থাকলে ভরণ, পোষণ, রাত্রি যাপন প্রভৃতি বিষয়ে তাদের মধ্যে সমতা রক্ষা করা ওয়াজিব। তবে মনের টান কারও প্রতি কম বেশী থাকলে সেটার জন্য স্বামী দায়ী নয়, কেননা সেটা তার এখতিয়ার বহির্ভূত বিষয়।
সমাপ্ত: 20টি স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য তথা স্ত্রীর অধিকারসমূহ।
সূত্র: আহকামে যিন্দেগী।