Skip to content

 

স্নায়ুতন্ত্র কি/কাকে বলে? স্নায়ুতন্ত্র কত প্রকার? মস্তিষ্ক (Brain), মেরুরজ্জু (Spinal cord), স্নায়ুকলা (Nervous tissue), প্রতিবর্তী ক্রিয়া (Reflex action) ও প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র (Peripheral nervous system) বিস্তারিত বর্ণনা।

স্নায়ুতন্ত্র কি/কাকে বলে? স্নায়ুতন্ত্র কত প্রকার? মস্তিষ্ক (Brain), মেরুরজ্জু (Spinal cord), স্নায়ুকলা (Nervous tissue), প্রতিবর্তী ক্রিয়া (Reflex action) ও প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র (Peripheral nervous system) বিস্তারিত বর্ণনা।

স্নায়ুতন্ত্র কি/কাকে বলে?

স্নায়ুতন্ত্র দেহের বিভিন্ন অঙ্গ এবং তন্ত্রের মধ্যে সমন্বয় করে, দেহের বিভিন্ন অংশে উদ্দীপনা বহন করে এবং দেহের উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে পরিবেশের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে।

স্নায়ুতন্ত্র কত প্রকার?

নীচে স্নায়ুতন্ত্রের শ্রেণীবিন্যাস নিচে দেওয়া হলো:

  • স্নায়ুতন্ত্র: কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র। 
  • কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র: মস্তিষ্ক, সুষুম্নাকান্ড।
  • প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র: করোটিকা-সুষুম্না স্নায়ু, স্বয়ংক্রীয় স্নায়ুতন্ত্র।
  • করোটিকা-সুষুম্না স্নায়ু: করোটিকা স্নায়ু,  সুষুম্না স্নায়ু।
  • স্বয়ংক্রীয় স্নায়ুতন্ত্র: সিম্প্যাথেটিক স্নায়ু, প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ু।

মন্তিক এবং মেরুমজ্জা (বা সুষুমাকাণ্ড) দিয়ে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র গঠিত। মস্তিষ্ক করোটিকার মধ্যে সুরক্ষিত থাকে

1. মস্তিষ্ক (Brain)

সুষুমাকাণ্ডের শীর্ষে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের যে স্ফীত অংশ করোটিকার মধ্যে অবস্থান করে, তাকে মস্তিষ্ক বলে। মস্তিষ্ক স্নায়ুতন্ত্রের পরিচালক। মস্তিষ্ক তিনটি অংশে বিভক্ত- অগ্রমস্তিষ্ক, মধ্যমস্তিষ্ক এবং পশ্চাত্মস্তিস্ক।

(a) অগ্রমস্তিষ্ক (Forebrain | Prosencephalon)

  • মস্তিষ্কের মধ্যে অপ্রমস্তিষ্ক বা সেরিব্রাম সবচেয়ে বড় অংশ। সেরিব্রামকে পুরুমস্তিষ্কও বলা হয়ে থাকে। সেরিব্রামের ডান ও বাম অংশ দুটি সম্পূর্ণভাবে বিভক্ত। দুটি অংশের মাঝখানে বিভেদক খাঁজ থাকায় এ বিভক্তি ঘটে। এদের সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার (Cerbral hemisphere) বলা হয়।
  • সেরিব্রামের ডান ও বাম হেমিস্ফিয়ারের মধ্যে খাঁজ থাকলেও এ দুটি অংশ একগুচ্ছ নিউরন দিয়ে সংযুক্ত থাকে, যার নাম কর্পাস ক্যালোসাম। বাম সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার দেহের ডান অংশ এবং ডান সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার দেহের বাম অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে। মস্তিক্ষের এ অংশটির উপরিভাগ ঢেউ তোলা। এটি মেনেনজেস নামক পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে।
  • সেরিব্রামের বাইরের স্তরের নাম কর্টেক্স। কর্টেক্স অসংখ্য নিউরনের কৌষদেহ দিয়ে গঠিত। এর রং ধূসর। তাই কর্টেক্সের অপর নাম গ্রে ম্যাটার (Gray matter) বা ধূসর পদার্থ। অপরদিকে, সেরিব্রামের গভীর স্তরটি গঠিত হয় ঐসব নিউরনের অ্যাক্সন দিয়ে, যা সাদা রঙের মায়েলিন (mayalin) আবরণে আবৃত। তাই সেরিব্রাল কর্টেক্সের গভীরে থাকে সাদা রঙের স্তর বা হোয়াইট ম্যাটার (White matter)।
  • সেরিব্রাম হলো প্রত্যেক অঙ্গ থেকে স্নায়ুতাড়না গ্রহণের এবং প্রত্যেক অঙ্গে স্নায়ুতাড়না প্রেরণের উচ্চতর কেন্দ্র। দেহ সঞ্চালন তথা প্রত্যেক কাজ ও অনুভূতির কেন্দ্র হলো সেরিব্রাম। এটি আমাদের চিন্তা, চেতনা, জ্ঞান, স্মৃতি, ইচ্ছা, বাকশক্তি ও ঐচ্ছিক পেশির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। কোন উদ্দীপকের প্রতি কী ধরনের সাড়া দিবে, সে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। সকল প্রাণীর মধ্যে মানুষের অর্থমস্তিক্ষের বিবর্তন সর্বাধিক অগ্রগামী এবং সবচেয়ে বিকশিত।

(b) মধ্যমস্তিষ্ক (Midbrain | Mesencephalon)

পশ্চাৎ মস্তিষ্কের উপরের অংশ হলো মধ্যমস্তিঙ্ক। এটি অর্থ ও পশ্চাৎ মস্তিষ্ককে সংযুক্ত করে। মধ্যমন্তিন্ত্রের পিছনে অবস্থিত নলাকৃতি বৃহৎ অংশের নাম পনস (Pons)। এটি সেরিবেলাম ও মেডুলা অবলংপাটার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। বিভিন্ন পেশির কাজের সমন্বয়সাধন ও ভারসাম্য রক্ষা করা মধ্যমস্তিষ্কের কাজ। দর্শন ও শ্রবণের ক্ষেত্রেও রয়েছে মধ্যমস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

চিত্রঃ মস্তিষ্কের লম্বচ্ছেদ

চিত্রঃ মস্তিষ্কের লম্বচ্ছেদ

(c) পশ্চাৎমস্তিস্ক (Hindbrain বা Rhombencephalon)

এটি সেরিবেলাম, পনস ও মেডুলা নিয়ে গঠিত।

(i) সেরিবেলাম (Cerebellum): পনসের পৃষ্ঠভাগে অবস্থিত খন্ডাংশটি সেরিবেলাম। এটি ডান এবং বাম দুই অংশে বিভক্ত। এর বাইরের দিকে ধূসর পদার্থের আবরণ এবং ভিতরের দিকে শ্বেত পদার্থ থাকে। সেরিবেলাম দেহের পেশির টান নিয়ন্ত্রণ, চলনে সমন্বয় সাধন, দেহের ভারসাম্য রক্ষা, দৌড়ানো এবং লাফানোর কাজে জড়িত পেশিগুলোর কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে।

(ii) পনস (Pons): মেডুলা অবলংপাটা এবং মধ্যমস্তিষ্কের মাঝখানে পনস অবস্থিত। এটি একগুচ্ছ স্নায়ুর সমন্বয়ে তৈরি।

(iii) মেভুলা অবলংপাটা (Medulla Oblongata): এটি মস্তিষ্কের সবচেয়ে পিছনের অংশ। এর সামনের দিকে রয়েছে পনস, পিছনের দিক সুষুম্নাকাণ্ডের উপরিভাগের সাথে যুক্ত।

মোট বারো জোড়া করোটিক স্নায়ুর (Cranial nerves) মধ্যে মেডুলা অবলংগাটা থেকে আট জোড়া করোটিক স্নায়ু উৎপন্ন হয়। এর স্নায়ু খাদ্য পলাধকরণ, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, পলবিল ইত্যাদির কিছু কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া এই স্নায়ুগুলো প্রবণ এবং ভারসাম্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের সাথে জড়িত।

চিত্রঃ মানুষের স্নায়ুতন্ত্র

চিত্রঃ মানুষের স্নায়ুতন্ত্র

মস্তিষ্ক থেকে বের হওয়া বারো জোড়া করোটিক স্নায়ু মাথা, ঘাড়, মুখমণ্ডল, মুখগহ্বর, জিহ্বা, চোখ, নাক, কান ইত্যাদি অঞ্চলে বিস্তৃত। স্নায়ুগুলো সংবেদী, মোটর অথবা মিশ্র প্রকৃতির।

2. মেরুরজ্জু (Spinal cord)

মেরুরজ্জু করোটির পিছনে অবস্থিত ফোরামেন ম্যাগনাম (Foramern magnum) নামক ছিদ্র থেকে কটিদেশের কশেরুকা পর্যন্ত বিস্তৃত। মেরুরজ্জু বা সুষুম্না কাণ্ড মেরুদণ্ডের কশেরুকার ভিতরের ছিদ্রপথে সুরক্ষিত থাকে।

মেরুরজ্জুতে শ্বেত পদার্থ এবং ধূসর পদার্থ থাকে। তবে এদের অবস্থান মস্তিষ্কের ঠিক উল্টো। অর্থাৎ শ্বেত পদার্থ থাকে বাইরে আর ভিতরে থাকে ধূসর পদার্থ। দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী ছিদ্র দিয়ে মেরুরজ্জ  থেকে 31 জোড়া মেরুরজ্জীয় স্নায়ু (Spinal nerves) বের হয়। এসব ঘাড়, গলা, বুক, পিঠ, হাত ও পায়ের স্নায়ু। এসব স্নায়ু মিশ্র প্রকৃতির।

3. স্নায়ুকলা (Nervous tissue)

যে কলা দেহের সব ধরনের সংবেদন ও উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং তা পরিবহনের মাধ্যমে উদ্দীপনা অনুসারে উপযুক্ত প্রতিবেদন সৃষ্টি করে, সেটাই স্নায়ুটিস্যু বা স্নায়ুকলা। বহুসংখ্যক স্নায়ুকোষ বা নিউরনের সমন্বয়ে স্নায়ুটিস্যু গঠিত। নিউরনই স্নায়ুতন্ত্রের গঠন এবং কার্যক্রমের একক।

নিউরনের গঠন:

প্রতিটি নিউরন দুটি অংশ নিয়ে গঠিত— কোষদেহ এবং প্রলম্বিত অংশ।

(a) কৌষদেহ (Cell body):

প্লাজমামেমব্রেন, সাইটোপ্লাজম আর নিউক্লিয়াস নিয়ে গঠিত নিউরনের গোলাকার, তারকাকার, অথবা ডিম্বাকার অংশ কোষদেহ নামে পরিচিত। এখানে সাইটোপ্লাজমে মাইটোকন্ড্রিয়া, গলজ্জিবস্তু, লাইসোজোম, চর্বি, গ্লাইকোজেন, রঞ্জক কর্ণাসহ অসংখ্য নিসঙ্গ দানা থাকে।

(b) এসম্বিত অংশ:

কোষদেহ থেকে সৃষ্ট শাখা-প্রশাখাকেই প্রলম্বিত অংশ বলে। প্রলম্বিত অংশ দুধরনের:

(i) C (Dendron): কোষদেহের চারদিকের শাখাযুক্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রলম্বিত অংশকে ডেনড্রন বলে। ডেনড্রন থেকে যে শাখা বের হয় তাদের ডেনড্রাইট বলে। একটি নিউরনে ডেনড্রন সংখ্যা শূন্য থেকে শতাধিক পর্যন্ত হতে পারে। ডেনড্রাইট অন্য নিউরন থেকে স্নায়ু তাড়না গ্রহণ করে।

(ii) আ্যক্সন (Axon): কোষদেহ থেকে অ্যাক্সন উৎপন্ন বেশ লম্বা তক্ষুটির নাম অ্যাক্সন। এর চারদিকে পাতলা আবরণটিকে নিউরিলেমা বলে। নিউরিলেমা এবং অ্যাক্সনের মধ্যবর্তী অঞ্চলে স্নেহ পদার্থের একটি স্তর থাকে। একে মায়েলিন (Myelin) বলে। অ্যাক্সনের শেষ মাথা অ্যাক্সন টারমিনালে বিভক্ত হয়ে যায়, এবং এই টারমিনালগুলো দিয়ে সিন্যাপস মারফত অন্য নিউরনের ডেনড্রাইটে স্নায়ু তাড়না প্রেরণ করা হয়।

চিত্রঃ একটি নিউরন

চিত্রঃ একটি নিউরন

বহুসংখ্যক অ্যাক্সন ও ডেনড্রাইট মিলিত হয়ে স্নায়ু গঠন করে।

নিউরিসেমা আবরণটি অবিচ্ছিন্ন নয়। নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর এটি সাধারণত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকে। শুধু এই বিচ্ছিন্ন অংশে নিউরিলেমার সাথে অ্যাক্সনের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ ঘটে। এই আবরণীবিহীন অংশগুলো র্যানভিয়ান্নের পর্ব (Node of Ranvier) নামে পরিচিত। অ্যাক্সনের মূল অক্ষের আবরণীকে অ্যাক্সলেমা (Axolema) বলে।

চিত্রঃ স্নায়ু তাড়নার প্রবাহ

চিত্রঃ স্নায়ু তাড়নার প্রবাহ

একটি নিউরনের অ্যাক্সনের টারমিনালের সাথে দ্বিতীয় একটি নিউরনের ডেনড্রাইট সরাসরি যুক্ত থাকে না। এই সূক্ষ্ম ফাঁকা সংযোগস্থলকে সিন্যাপস (Synapse) বলে। প্রকৃতপক্ষে পর পর অবস্থিত দুটি নিউরনের সন্ধিস্থল হলো সিন্যাপস। অ্যাক্সন টারমিনাল সিন্যাপসের মধ্য দিয়ে তড়িৎ রাসায়নিক (Electro chemical) পদ্মতিতে স্নায়ু তাড়না প্রবাহিত হয়।

সিন্যাপসে নিউরোহিউমার নামক তরল পদার্থ থাকে। কোনো একটি নিউরনের মধ্য দিয়ে স্নায়ু তাড়না প্রবাহিত হয়ে সিন্যাপস অতিক্রম করে পরবর্তী নিউরনে যায়। অর্থাৎ এর ভিতর দিয়ে স্নায়ু উদ্দীপনা বা স্নায়ু তাড়না একদিকে পরিবাহিত হয়। মানুষের মস্তিষ্কে প্রায় একশত বিলিয়ন নিউরন রয়েছে এবং প্রতিটি নিউরন অন্য সাত থেকে দশ হাজার নিউরনের সাথে সিন্যাপস সংযোগ সমন্বয় করে থাকে।

চিত্রঃ মেরুরজ্জুর প্রস্থচ্ছেদ

চিত্রঃ মেরুরজ্জুর প্রস্থচ্ছেদ

নিউরনের প্রধান কাজ উদ্দীপনা বহন করা। অনুভূতিৰাহী বা সংবেদী নিউরন গ্রাহক অঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে এবং মোটর বা আজ্ঞাবাহী নিউরন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে কার্যকরী অঙ্গে উদ্দীপনা প্রেরণ করে।

4. প্রতিবর্তী ক্রিয়া (Reflex action)

প্রতিবর্তী ক্রিয়া বলতে উদ্দীপনার আকস্মিকতা এবং তার কারণে স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়াকে বোঝায়। হঠাৎ করে আঙ্গুলে সুচ ফুটলে অথবা হাতে গরম কিছু পড়লে আমরা দ্রুত হাতটি উদ্দীপনার স্থান থেকে সরিয়ে নিই, এটি প্রতিবর্তী ক্রিয়ার ফল।

আমরা চাইলেও প্রতিবর্তী ক্লিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। প্রতিবর্তী ক্রিয়া মূলত সুষুম্নাকাণ্ড দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়, মস্তিষ্ক দিয়ে নয়। অর্থাৎ যেসব উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া মস্তিষ্ক দিয়ে না হয়ে সুষুম্নাকান্ড দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে প্রতিবর্তী ক্রিয়া বলে।

অসতর্কভাবে সেলাই করার সময় আঙ্গুলে সূঁচ ফুটলে তাৎক্ষণিকভাবে হাত অন্যত্র সরে যাওয়ার প্রতিবর্তী ক্রিয়াটি এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়:

  1. আঙ্গুলে সুচ ফুটার সময় আঙ্গুলের ত্বকে অবস্থিত সংবেদী নিউরন ব্যথার উদ্দীপনা গ্রহণ করে। এখানে ত্বক গ্রাহক অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।
  2. আঙ্গুলের ত্বক থেকে এ উদ্দীপনা সংবেদী নিউরনের অ্যাক্সনের মাধ্যমে স্নায়ুকাণ্ডের ধূসর অংশে পৌঁছায়।
  3. স্নায়ুকাণ্ডের ধূসর অংশে অবস্থিত সংবেদী নিউরনের অ্যাক্সন থেকে তড়িৎ রাসায়নিক পদ্ধতিতে উদ্দীপনা মধ্যবর্তী বা রিলে নিউরনের মাধ্যমে মোটর বা আজ্ঞাবাহী স্নায়ু কোষের ডেনড্রাইটে প্রবেশ করে।
  4. অজ্ঞাবাহী স্নায়ুর অ্যাক্সনের মাধ্যমে এ উদ্দীপনা পেশিতে প্রবেশ করে।
  5. উদ্দীপনা পেশিতে পৌঁছালে পেশির সংকোচন ঘটে। ফলে উদ্দীপনাস্থল থেকে হাত দ্রুত আপনা-আপনি সরে যায়।
চিত্রঃ মানবদেহের প্রতিবর্তী চক্র

চিত্রঃ মানবদেহের প্রতিবর্তী চক্র

মল্লিক্ষ থেকে 12 জোড়া এবং মেরুমজ্জা বা সুষুম্নাকান্ত থেকে 31 জোড়া স্নায়ু বের হয়ে আসে এবং সুখ থেকে সূক্ষ্মতর শাখায় বিভক্ত হয়ে সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোকে একত্রে প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র বলে। মল্লিক্ষ থেকে উৎপন্ন করোটিক স্নায়ু চোখ, নাক, কান, জিহ্বা, দাঁত, মুখমণ্ডল, হৃৎপিণ্ড, পাকস্থলী প্রভৃতি অঙ্গের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। মেরুরজ্জু থেকে উদ্ভূত স্নায়ুগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চালনা করে এবং দেহের বাকি অংশ থেকে যাবতীয় অনুভূতি মস্তিক্ষে বয়ে নিয়ে যায়।

1. স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র (Autonomic nervous system)

যেসব অঙ্গের উপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, সেগুলো স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র দিয়ে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। দেহের ভিতরের অঙ্গগুলো, যেমন: হৃৎপিণ্ড, অত্র, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয় ইত্যাদির কাজ স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র দিয়ে পরিচালিত হয়। এসব তন্ত্রের কার্যকারিতার উপর মস্তিষ্ক ও মেরুরজ্জুর প্রত্যক্ষ প্রভাব না থাকায় এরা অনেকটা স্বাধীন এবং স্বভন্নভাবে আপন কর্তব্য সম্পাদন করে।

2. উদ্দীপনা সঞ্চালন (Transmission of Impulse)

পরস্পর সংযুক্ত অসংখ্য নিউরন তন্তুর ভিতর দিয়ে উদ্দীপনা বা তাড়না শেষ পর্যন্ত মস্তিষ্কে পৌঁছায়। প্রতি সেকেন্ডে এর বেগ প্রায় 100 মিটার তবে স্নায়ুর ধরনভেদে এর তারতম্য হতে পারে। পরিবেশ থেকে যে সংকেত স্নায়ুর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছে তাকে স্নায়ু তাড়না বা উদ্দীপনা বলে। নিউরনের কার্যকারিতার ফলে উদ্দীপনা প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলোতে সঞ্চালিত হয়। এটি মাংসপেশিতে সঞ্চালিত হলে পেশি সংকুচিত হয়ে সাড়া দেয়। ফলে প্রয়োজনমতো দেহের বিভিন্ন অঙ্গ সঞ্চালিত হয়। এই তাড়না প্রন্থিতে পৌঁছালে সেখানে রস ক্ষরিত হয়। অনুভূতিবাহী স্নায়ু উত্তেজিত হলে সেই উত্তেজনা মস্তিষ্কের দিকে অগ্রসর হয়ে যন্ত্রণাবোধ, স্পর্শজ্ঞান, দর্শন এ ধরনের অনুভূতি উপলব্ধি করায়।

চিত্ৰঃ উদ্দীপনা সঞ্চালন প্রক্রিয়া

চিত্ৰঃ উদ্দীপনা সঞ্চালন প্রক্রিয়া

স্নায়ু তাড়না কীভাবে কাজ করে তা একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝানো যায়। মনে কর, শিক্ষক শ্ৰুতলিপি দিচ্ছেন এবং তুমি লিখছ। এক্ষেত্রে পুস্তক থেকে প্রতিফলিত আলো শিক্ষকের চোখের রেটিনায় উদ্দীপনা জাগালে স্নায়ু তাড়নার সৃষ্টি হয়। এটা চোখের স্নায়ু দিয়ে মস্তিষ্কের দৃষ্টিকেন্দ্রে পৌঁছে। সেখান থেকে এ তাড়না পর পর চিন্তাকেন্দ্র, স্মৃতিকেন্দ্র প্রভৃতি হয়ে মুখমণ্ডলের ঐচ্ছিক পেশিকে নির্দেশ দেয়। মুখের পেশি সংকুচিত প্রসারিত হয়ে হয়ে সাড়া দেয়। এখানে শিক্ষকের কথা বলার পেশিগুলো হলো প্রধান সাড়া অঙ্গ।

মানুষের কথা বাতাসে শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি করে। এই শব্দ তরঙ্গ ছাত্রের কানের পর্দায় উদ্দীপনা জাগায়, যা শ্রবণস্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের প্রবণকেন্দ্রে পৌঁছে। সেখান থেকে তাড়না ছাত্রের স্মৃতিকেন্দ্র, চিন্তাকেন্দ্র প্রভৃতি হয়ে মোটরস্নায়ুযোগে ছাত্রের হাতের ঐচ্ছিক পেশিতে পৌঁছে। নির্দেশে সাড়া দিয়ে হাতের পেশি লিখতে থাকে। এখানে ছাত্রের পেশি হলো প্রধান সাড়া অঙ্গ।

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!