⭐⭐⭐⭐⭐ (100%) হজ্জ এর A টু Z সকল নিয়ম, হজ্জ কত প্রকার? কি কি? কোন হজ্জে কি কি করতে হয়? কি কি করা যায় না? হজ্জের সকল নিয়মনীতি ও মাসায়েল
হজ্জ ও উমরার ফযীলত:
* রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে হজ্জ গোনাহ এবং খারাবী থেকে পবিত্র হয়, জান্নাতই হল তার পুরস্কার। (বোখারী ও মুসলিম)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ এক উমরার পর আর এক উমরা করলে দুই উমরার মধ্যবর্তী সব গোনাহ মোচন হয়ে যায়। (প্রাগুক্ত)
* রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ্জ করে এবং হজ্জের প্রাক্কালে অশ্লীল কথা কাজ ও পাপ থেকে বিরত থাকে, সে মায়ের পেট থেকে জন্ম গ্রহণের দিনের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে। (প্রাগুক্ত)
* রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ একাধারে হজ্জ ও উমরা করতে থাক। এটা পাপ ও দরিদ্রতাকে এমনভাবে মিটিয়ে দেয় যেমন আগুন লোহার ময়লা দূর করে দেয়। (তিরমিযী, নাসায়ী)
কাদের উপর হজ্জ ফরয:
* যার নিকট মক্কা শরীফ থেকে হজ্জ করে ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারের আবশ্যকীয় খরচ বাদে মক্কা শরীফ যাতায়াতের মোটামুটি খরচ পরিমাণ অর্থ থাকে তার উপর হজ্জ ফরয। ব্যবসায়িক পণ্য এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমির মূল্য এ অর্থের হিসেবে গণ্য করতে হবে।
* মেয়েলোকের জন্য নিজ স্বামী বা নিজের কোন বিশ্বস্ত দ্বীনদার মাহরাম পুরুষ ব্যতীত হজ্জে যাওয়া দুরস্ত নয়। শুধু এমন কোন কোন মহিলা থাকা যথেষ্ট নয়, যার সাথে তার মাহরাম পুরুষ রয়েছে।
* অন্ধের উপর হজ্জ ফরয নয় যত ধনই থাকুক না কেন।
* নাবালেগের উপর হজ্জ ফরয হয় না। নাবালেগ অবস্থায় হজ্জ করলেও বালেগ হওয়ার পর সম্বল হলে পুনরায় হজ্জ করতে হবে।
হজ্জ ফরয হওয়ার পর না করা বা বিলম্ব করা:
* হজ্জ ফরয হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে সেই বৎসরই হজ্জ করা ওয়াজিব, বিনা ওজরে দেরী করা পাপ। ছেলে মেয়ের বিবাহ শাদী দেয়ার জন্যে বা বাড়ি তৈরী করার জন্যে বিলম্ব করা কোন গ্রহণযোগ্য ওজর নয়। শেষ বয়সে হজ্জ করব- এরূপ ধারণাও ভুল। বরং বয়স থাকতে হজ্জ করতে গেলেই হজ্জের ক্রিয়াদি ভালভাবে আদায় করা সহজ হয়।
* হজ্জ ফরয হওয়ার পর আলস্য করে বিলম্ব করলে এবং পরে গরীব বা শক্তিহীন হয়ে গেলেও ঐ ফরয তার যিম্মায় থেকে যাবে-মাফ হবে না, যে কোন উপায়ে তাকে হজ্জ করতে হবে বা মৃত্যুর পূর্বে বদলী হজ্জের ওছিয়াত করে যেতে হবে।
* মাতা-পিতার হজ্জের পূর্বে সন্তান হজ্জ করতে পারে না- এই ধারণা ভুল। অতএব এ ধারণার বশবর্তী হয়ে হজ্জে বিলম্ব করা গ্রহণযোগ্য ওজর নয়।
* হজ্জ ফরয হওয়া সত্ত্বেও যে হজ্জ না করে মৃত্যুবরণ করে, তার জন্য ভীষণ আযাবের সংবাদ দেয়া হয়েছে। এরূপ লোক সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছেঃ সে ইয়াহুদী হয়ে মরুক বা নাছারা হয়ে মরুক।
হজ্জের সফরের আদবসমূহ:
১. নিয়ত খালেছ করে নিবেন অর্থাৎ, একমাত্র আল্লাহ্কে রাজি খুশি করার নিয়ত রাখবেন। নাম শোত, দেশ ভ্রমন, আবহাওয়া পরিবর্তন, হাজী উপাধি অর্জন ইত্যাদি নিয়ত রাখবেন না।
২. খাঁটি অন্তরে তওবা করতে হবে। অর্থাৎ, কৃত গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে, এখনই গোনাহ বর্জন করতে হবে এবং ভবিষ্যতে গোনাহ না করার পাকাপোক্ত নিয়ত করতে হবে। কারও টাকা-পয়সা বা সম্পদের হক নষ্ট করে থাকলে তার ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিতে হবে। পাওনাদার জীবিত না থাকলে তাদের উত্তরাধীকারীদের থেকে তার নিষ্পত্তি করে নিতে হবে। সেরূপ কারও সন্ধান না পেলে পাওনাদারের সওয়াবের নিয়তে পাওনা পরিমাণ অর্থ তার পক্ষ থেকে দান করে দিতে হবে। কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে তার থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে।
৩. মাতা-পিতা জীবিত থাকলে এবং তাদের খেদমতে থাকার প্রয়োজন থাকলে তাদের এজাযত ব্যতীত নফল হজ্জে গমন করা মাকরূহ। খেদমতের প্রয়োজন থাকলে ফরয হজ্জে এজাযত ব্যতীত যাওয়া মাকরূহ নয়, যদি পথ ঘাট নিরাপদ থাকে। মাতা পিতারও উচিত এজাযত দিয়ে দেয়া।
৪. সফর থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত সময়ের জন্য পরিবার পরিজন ও অধীনস্থদের প্রয়োজনীয় খরচাদির ব্যবস্থা করে যেতে হবে।
৫. কোন ঋণ নগদ আদায় করার থাকলে পাওনাদারের অনুমতি গ্রহণ করবেন। তার অনুমতি ব্যতীত হজ্জে গমন করা মাকরূহ। তবে যদি কাউকে ঋণ আদায়ের দায়িত্ব অর্পন করে যাওয়া যায়, এবং পাওনাদারগণ তাতে সম্মত থাকে, তাহলে অনুমতি ব্যতীতও যাওয়া মাকরূহ হবেনা। আর ঋণ যদি নগদ আদায় করার না হয়, বরং মেয়াদ বাকী থাকে এবং মেয়াদের পূর্বেই হজ্জ থেকে ফিরে আসার হয়, তাহলে সেই পাওনাদারের অনুমতি গ্রহণ ব্যতীতও হজ্জে গমনে কোন অসুবিধা নেই। তবে পাওনা দাওনা সম্পর্কিত একটি তালিকা তৈরী করে রেখে যাবেন।
৬. নিজের কাছে কারও থেকে ধার করা জিনিস বা কারও আমানত থাকলে তা মালিককে বুঝিয়ে দিয়ে যাওয়া চাই।
৭. সফরে গমনের পূর্বে কোন বিচক্ষণ অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাথে সফরের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি সম্পর্কে পরামর্শ করে নিন।
৮. উত্তম সফরসঙ্গী নির্বাচন করুন। পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আলেম হলে উত্তম হয়, যার কাছে প্রয়োজনে হজ্জের মাসায়েল ইত্যাদি জেনে নেয়া যাবে। আলেম না পেলে অন্ততঃ একজন অভিজ্ঞ দ্বীনদার হাজীকে সফরসঙ্গী বানানোর চেষ্টা করবেন।
৯. হজ্জের মাসায়েল শিক্ষা করে নিবেন। হজ্জের মাসায়েল শিক্ষা করাও ফরয। দোয়া কালামের ফযীলত আছে, তবে দোয়া কালামের উপর জোর দিতে যেয়ে জরুরী মাসায়েল থেকে অমনোযোগী ও উদাসীন হওয়া চাইনা। হজ্জ ও উমরা সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য মাসায়েলের কিতাবও সাথে রাখা চাই। যাতে প্রয়োজনের মুহূর্তে কিতাব দেখে নেয়া যায়। অনেকে তওয়াফ, ইত্যাদির দোয়া মুখস্ত করতে পারেননা বলে হতাশ হন। হতাশ হওয়ার কিছু নেই, একান্ত মুখস্ত করতে না পারলে এসব দোয়া ব্যতীতও হজ্জ হয়ে যাবে। তবে এসব দোয়া সুন্নাত বা মুস্তাহাব, তাই সম্ভব হলে হিম্মত করে আমল করার চেষ্টা করুন।
১০. হজ্জ উমরার সফর একটি বরকতময় সফর। এ সফরে সফরের যাবতীয় সুন্নাত আদব ইত্যাদি আমল করা চাই। সফরের সুন্নাত ও আদব সমূহ সম্পর্কে জানার জন্য খামারিয়ান.কম এ সার্চ দিয়ে দেখুন, এ বিষয়ে আলাদা একটি পোষ্ট রয়েছে।
উমরাতে যা যা করতে হয়:
* সাধ্য থাকলে জীবনে একবার উমরা করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। তিনটা আমলের সমষ্টিকে উমরা বলা হয়। যথাঃ
১। ইহরাম বাধা।
২। বায়তুল্লাহর তওয়াফ করা। এটাকে তওয়াফে উমরা বলা হয়।
৩। সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সায়ী করা।
৪। সায়ী করার পর হলক (মাথা মুণ্ডন) করে বা কছর (চুল ছোট) করে ইহরাম খুলতে হয়।
কোন প্রকার হজ্জ করা উত্তম:
* হজ্জ তিন প্রকার (১) হজ্জে ইফ্রাদ (২) হজ্জে কেরান (৩) হজ্জে তামাত্তু। এর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হজ্জে কেরান, তারপর হজ্জে তামাত্তু তারপর হজ্জে ইফ্রাদ। উল্লেখ্য, হজ্জে কেরানে দীর্ঘ দিন ইহরাম বাধা অবস্থায় থাকতে হয় এবং দীর্ঘ দিন ইহরামের বিধি-নিষেধ মেনে চলা বেশ কঠিন, তাই অধিকাংশ হাজীকেই হজ্জে তামাত্তু করতে দেখা যায়। তবে ইহরাম বাধা থেকে নিয়ে হজ্জ পর্যন্ত সময়টুকু কম হলে যেমন যিলহজ্জ মাসে মক্কা পৌঁছা হলে তখন হজ্জে কেরান করাই সমীচীন।
বিঃ দ্রঃ বিভিন্ন প্রকার হজ্জের মাসায়েল পড়ে মনে রাখতে অসুবিধে বোধ করলে আপনি যে প্রকার হজ্জ করতে চান শুধু সে সম্পর্কেই পড়ুন। প্রত্যেক প্রকার হজ্জে যা যা করতে হয় তা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বর্ণনা করা হল।
ইফরাদ হজ্জে যা যা করতে হয়:
হজ্জের মাস সমূহের মধ্যে শুধু মাত্র হজ্জের এহরাম বেধে হজ্জ সমাপন করাকে হজ্জে ইফরাদ বা ইফরাদ হজ্জ বলে।
১। হজ্জের ইহরাম বাধতে হবে। এটা ফরয।
২। বায়তুল্লার তওয়াফ করতে হবে। এটাকে তওয়াফে কুদূম বলে। এটা সুন্নাত।
৩। ৮ই যিলহজ্জ যোহর থেকে ৯ই যিলহজ্জ ফজর পর্যন্ত মিনায় অবস্থান ও পাঁচ ওয়াক্ত নামায সেখানে আদায় করা সুন্নাত।
৪। ৯ই যিলহজ্জ আরাফায় অবস্থান করতে হবে। এটা হজ্বের বেশি ফরয।
৫। ৯ই যিলহজ্জ দিবাগত রাত মুযদালিফায় অবস্থান করতে হবে। এই অবস্থান ওয়াজিব।
৬। ১০ই যিলহজ্জ মিনায় এসে জামরায়ে আকাবায় (বড় শয়তানে) কংকর নিক্ষেপ করতে হবে। এটাও ওয়াজিব।
৭। তারপর কুরবানী করা। ইফরাদ হজ্জকারীর জন্য কুরবানী ওয়াজিব নয় ঐচ্ছিক; কুরবানী না করলেও চলবে।
৮। মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম খুলতে হবে। মাথা মুণ্ডন বা চুল খাটো করে ছাঁটা ওয়াজিব।
৯। তওয়াফে জিয়ারত করতে হবে। এটা ফরয। তওয়াফে জিয়ারত সম্পর্কে
১০। তওয়াফে জিয়ারতের পর সায়ী করা ওয়াজিব। ইফরাদ হজ্জকারীর জন্য এই সায়ী তওয়াফে জিয়ারতের পর করা উত্তম। তওয়াফে কুদুমের পরও এই সায়ী করে নেয়া যায়। তওয়াফে কুদূমের পর এই সায়ী করে থাকলে তওয়াফে জিয়ারতের পর আর করতে হবেনা।
১১। ১১ ও ১২ই জিলহজ্জ মিনায় প্রতিদিন তিন জামরায় কংকর নিক্ষেপ করতে হবে। এটাও ওয়াজিব।
১২। সর্বশেষে মক্কা থেকে বিদায় নেয়ার সময় বিদায়ী তওয়াফ করলে হজ্জে ইফরাদের কার্যাবলী শেষ হবে। এই বিদায়ী তওয়াফ করা ওয়াজিব।
কেরান হজ্জে যা যা করতে হয়:
হজ্জের মাস সমূহে এক সাথে উমরা ও হজ্জ উভয়টির এহরাম বেধে প্রথমে উমরা পালন করে এহরাম না খুলে ঐ একই ইহরামে হজ্জ সমাপন করাকে হজ্জে কেরান বা কেরান হজ্জ বলে।
১। প্রথমে উমরা ও হজ্জ উভয়টার নিয়তে ইহরাম বাধবে। ইহরাম বাধা ফরয।
২। বায়তুল্লায় প্রবেশ করে তওয়াফে উমরা বা উমরার তওয়াফ আদায় করবে। এই তওয়াফ ফরয।
৩। তওয়াফের পর উমরার সায়ী করবে। এই সায়ী ওয়াজিব।
৪। তারপর তওয়াফে কুদূম করবে। মীকাতের বাইরে থেকে মক্কায় প্রবেশকারীদের জন্য এই তওয়াফ সুন্নাত।
৫। তারপর সায়ী করবে। এই সায়ী ওয়াজিব। কেরানকারীর জন্য এই সায়ী এখানেই করে নেয়া উত্তম। না করলে তওয়াফে জিয়ারতের পর এই ওয়াজিব সায়ী আদায় করতে হবে।
৬। ৮ই যিলহজ্জ যোহর থেকে ৯ই যিলহজ্জ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামায মিনায় থেকে আদায় করবে। এটা সুন্নাত।
৭। ৯ই যিলহজ্জ সূর্য ঢলা থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত উকূফে আরাফা (আরাফায় অবস্থান) করবে। এটা হজ্জের অন্যতম ফরয।
৮। ৯ই যিলহজ্জ দিবাগত রাত উকৃফে মুযদালিফা (মুযদালিফায় অবস্থান ) করবে। এটা ওয়াজিব। উকূফে মুযদালিফার মাসায়েল সম্পর্কে জানার জন্য
৯। ১০ই যিলহজ্জ মিনায় এসে জামরায় আকাবায় (বড় শয়তানে) কংকর নিক্ষেপ করবে। এই কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব।
১০। তারপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
১১। তারপর মাথা মুণ্ডিয়ে বা চুল ছোট করে এহরাম খুলবে। এই মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করা ওয়াজিব। এ সম্পর্কিত মাসায়েল জানার জন্য দেখুন
১২। তওয়াফে জিয়ারত করা ফরয।
১৩। ১১ ও ১২ যিলহজ্জ প্রতিদিন তিন জামরাতে কংকর নিক্ষেপ করবে।
১৪। বিদায়ী তওয়াফ করবে। এই বিদায়ী তওয়াফ ওয়াজিব। মক্কা থেকে বিদায় নেয়ার সময় বিদায়ী তওয়াফ করলে হজ্জে কেরানের কার্যাবলী শেষ হবে।
তামাত্তু হজ্জে যা যা করতে হয়:
হজ্জের মাস সমূহে প্রথমে শুধু উমরার ইহরাম বেধে উমরা পালন করে ইহরাম খুলে ফেলা। তারপর হজ্জের সময় পুনরায় হজ্জের এহরাম বেধে হজ্জ পালন করা-একে বলে হজ্জে তামাত্তু বা তামাত্তু হজ্জ।
১। প্রথমে শুধু উমরার নিয়তে ইহরাম বাধতে হবে। এই ইহরাম ফরয। ইহরামের মাসায়েল সম্পর্কে এই পোষ্টেই আলেচনা আছে।
২। বায়তুল্লায় প্রবেশ করে উমরার তওয়াফ করতে হবে। এই তওয়াফ উমরার ফরয।তওয়াফের মাসায়েল সম্পর্কে নিতে তুলে খরা হয়েছে।।
৩। তারপর উমরার সায়ী করতে হবে। এই সায়ী ওয়াজিব। সায়ীর মাসায়েল সম্পর্কে নিম্নে কথা আছে।।
৪। তারপর মাথা মুণ্ডন করে চুল ছোট করে উমরার ইহরাম খুলতে হবে। এই মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা ওয়াজিব। এ সম্পর্কিত মাসায়েল জানার এই পোষ্টটি শেষ অবধি পড়ুন।।
৫। তারপর ৮ই যিলহজ্জ হজ্জের উদ্দেশ্যে ইহরাম বাধতে হয়। ইহরাম বাধা হজ্জের একটি ফরয। এই ইহরাম মক্কা শরীফে থেকেই বাধা হবে।
৬। ৮ই যিলহজ্জ মিনায় গমন করে সেখানে থেকে যোহর, আসর, মাগরিব, ইশা এবং ৯ই যিলহজ্জের ফজর সর্বমোট এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া সুন্নাত।
৭। ৯ই যিলহজ্জ উকূফে আরাফা বা আরাফার ময়দানে অবস্থান করতে হবে। এই উকূফে আরাফা হজ্জের একটি অন্যতম ফরয। আরাফায় গমন ও অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত মাসায়েল এই পোষ্টে বলা আছে।।
৮। ৯ই যিলহজ্জ দিবাগত রাত উকূফে মুযদালিফা বা মুযদালিফায় অবস্থান করতে হবে। এটা ওয়াজিব। উকৃফে মুযদালিফার বিস্তারিত মাসায়েল সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
৯। ১০ই যিলহজ্জ মিনায় এসে জামরায়ে আকাবায় (বড় শয়তানে) কংকর নিক্ষেপ করতে হবে। এটা ওয়াজিব। কংকর নিক্ষেপের বিস্তারিত মাসায়েল জানার জন্য আরও নিচে যেতে হবে।
১০। তারপর কুরবানী করতে হবে। এটা ওয়াজিব।
১১। তারপর মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করতে হবে। এটা ওয়াজিব। এ সম্পর্কিত মাসায়েল জানার জন্য নিচে দেখুন।
১২। তওয়াফে জিয়ারত করতে হবে। এটা ফরয। তওয়াফে জিয়ারতের মাসায়েল সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা আছে।
১৩। তওয়াফে জিয়ারত-এর সায়ী করতে হয়। এই সায়ী ওয়াজিব।
১৪। ১১ ও ১২ই যিলহজ্জ মিনায় প্রত্যেক দিন তিন জামরায় কংকর নিক্ষেপ করতে হবে। এটা ওয়াজিব। এ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা আছে।
১৫। সর্বশেষে বিদায়ী তওয়াফ করতে হবে। এই বিদায়ী তওয়াফ করা ওয়াজিব। মক্কা থেকে বিদায় নেয়ার সময় এই বিদায়ী তওয়াফ করার মাধ্যমেই তামাত্তু হজ্জের কার্যাবলী সমাপ্ত হবে। বিদায়ী তওয়াফের মাসায়েল সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা আছে।
ইহরামের মাসায়েল:
* ইহরামের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান পূর্বক (পুরুষের জন্য) হজ্জ অথবা উমরা কিংবা হজ্জ ও উমরা উভয়টির নিয়ত করে তালবিয়া পড়া এবং বায়তুল্লাহ শরীফের তওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সায়ী করার পর মাথা মুণ্ডন করে বা চুল ছোট করে মুক্ত হওয়া পর্যন্ত অবস্থাকে ইহরাম বলে।
কোথা থেকে ইহরাম বাধবেন:
হজ্জ বা উমরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে মীকাত অর্থাৎ, শরী’আত কর্তৃক এহরাম বাধার নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করার পূর্বেই ইহরাম বেধে নেয়া জরুরী। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান প্রভৃতি পূর্বাঞ্চলীয় লোকদের জন্য এই নির্ধারিত স্থানটি হল ইয়ালামলাম (মক্কা থেকে দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত একটি পাহাড়ের নাম)। সামুদ্রিক জাহাজযোগে হজ্জ যাত্রীগণ এ স্থান বরাবর অতিক্রম করার পূর্বে অবশ্যই এাম বেধে নিবেন। প্লেন এ স্থান বরাবর রেখা কখন অতিক্রম করে তা টের পাওয়া কঠিন; তাই প্লেন যোগে হজ্জ বা উমরার উদ্দেশ্যে মক্কা গমনকারীর জন্য প্লেনে আরোহণের পূর্বেই ইহরাম বেধে নেয়া উচিত। বিমানবন্দরে যেয়ে বা হাজী ক্যাম্প থেকে বা বাসা থেকে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে বাসায় বা মসজিদে যে কোন স্থানে এহরাম বাধা যায়।
* যারা মদীনা শরীফ আগে যাওয়ার ইচ্ছা করবেন তারা বিনা এহরামেই রওয়ানা হবেন। মদীনা জিয়ারতের পর যখন মক্কা শরীফ-এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন, তখন মদীনা শরীফ থেকে মক্কা শরীফ গমনকরীদের মীকাত যেহেতু যুলহুলাইফা তাই যুলহুলাইফা নামক স্থান (বর্তমানে “বীরে আলী” নামে পরিচিত) থেকে বা মদীনায় থেকেই ইহরাম বেধে মক্কা শরীফ রওয়ানা হবেন।
* যারা মক্কা শরীফে থেকে নফল উমরা করতে চান ইহরাম বাধার জন্যে তাদেরকে হারামের সীমানার বাইরে যেয়ে এহরাম বেধে আসতে হবে। এর জন্য সবচেয়ে উত্তম স্থান হল তানয়ীম। বর্তমানে সেখানে মসজিদে আয়েশা নামক একটি মসজিদ আছে। তাই মসজিদে আয়েশায় গিয়ে ইহরাম বেধে এসে নফল উমরা করবেন। জে’রানা নামক স্থান থেকেও ইহরাম বেধে আসা যায়।
ইহরাম বাধার নিয়ম:
* ইহরাম বাধার ইরাদা হলে প্রথমে ক্ষৌরকার্য করে নিন-নখ কাটুন, বগল ও নাভির নীচের পশম পরিষ্কার করুন। এগুলো মোস্তাহাব। মাথা মুণ্ডানোর অভ্যাস থাকলে মাথা মুণ্ডিয়ে নিন অন্যথায় চুল আঁচড়িয়ে নিন। স্ত্রী সম্ভোগ করাও মোস্তাহাব।
* তারপর এহরামের নিয়তে গোসল করুন, না পারলে উযূ করে নিন। এটা সুন্নাত। ভালভাবে শরীরের ময়লা দূর করবেন।
* তারপর সেলাই বিহীন (ফাড়া) লুঙ্গি পরিধান করুন অর্থাৎ, একটা চাদর পরিধান করুন এবং একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে নিন। এখন ডান বগলের নীচে দিয়ে পরবেন না। ইহরামের কাপড় সাদা রংয়ের হলে উত্তম। পুরুষের জন্য এহরামের অবস্থায় শরীরের পরিমাপে সেলাই করা হয়েছে-এমন কাপড় পরিধান করা নিষিদ্ধ। মহিলাগণ যে কোন পোশাক পরিধান করতে পারেন। ইহরামের কাপড় নতুন বা পরিষ্কার হওয়া উত্তম।
* তারপর সুগন্ধি লাগিয়ে নিন। এটা সুন্নাত।
* তারপর ইহরামের নিয়তে দুই রাকআত নফল নামায পড়ে নিন। এটা সুন্নাত। এই দুই রাকআতের মধ্যে প্রথম রাকআতে সূরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা এখলাস পড়া উত্তম। এই নামায মাথায় টুপি সহকারে (বা মাথা ঢেকে)ই পড়তে হয়। নামাযের নিষিদ্ধ বা মাকরূহ ওয়াক্তে ইহরাম বাধতে হলে ইহরামের নামায না পড়েই ইহরাম বাধতে হয়।
* নামাযের পর টুপি খুলে রেখে কেবলামুখী থেকেই ইহরামের নিয়ত করতে হবে। বসে বসেই নিয়ত করা উত্তম এবং নিয়ত মুখেও উচ্চারণ করা উত্তম।
* শুধু উমরার ইহরাম হলে এভাবে নিয়ত করুন-
বাংলায়ঃ হে আল্লাহ, আমি উমরা করতে চাই, তুমি আমার জন্য তা সহজ করে দাও এবং কবূল কর।
* শুধু হজ্জের ইহরাম হলে এভাবে নিয়ত করুন-
বাংলায়ঃ হে আল্লাহ, আমি হজ্জ করতে চাই, তুমি আমার জন্য তা সহজ করে দাও এবং আমার থেকে তা কবূল কর।
* উমরা ও হজ্জ উভয়টার ইহরাম হলে এভাবে নিয়ত করুন-
বাংলায়ঃ হে আল্লাহ, আমি হজ্জ ও উমরা উভয়টার নিয়ত করছি, তুমি সহজ
করে দাও এবং কবূল কর।.
* তারপর তালবিয়া পড়ুন। তালবিয়া পড়া সুন্নাত, তবে নিয়তের সাথে একবার তালবিয়া বা যে কোন যিকির থাকা শর্ত। তালবিয়া জোর আওয়াজে পড়া সুন্নাত এবং তিনবার পড়া সুন্নাত। মহিলাদের জন্য তালবিয়া জোর আওয়াজে পড়া নিষিদ্ধ, তারা এতটুকু শব্দে পড়বে যে নিজের কানে শোনা যায়। তালবিয়া আরবীতেই পড়া উত্তম। তালবিয়া এই-
তালবিয়া আরবীতে উচ্চারণঃ লব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারীকা লাক।
তালবিয়া বাংলাতেঃ আমি হাজির হে আল্লাহ, আমি হাজির। আমি হাজির, কোন শরীক নেই তোমার, আমি হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নেয়ামত তোমারই, আর সকল সাম্রাজ্যও তোমার, কোন শরীক নেই তোমার।
বিঃ দ্রঃ নিয়ত ও তালবিয়া পাঠ করার পর ইহরাম বাধা সম্পন্ন হয়ে গেল।
* তারপর দুরূদ তবে এই দোয়া করা উত্তম, দরুদ শরীফ পড়ুন এবং যা ইচ্ছা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন। এখানে একটি সংক্ষিপত?ভাবে দোয়া নমুনা দেওয়া হলো-
বাংলায়ঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট চাই তোমার সন্তুষ্টি এবং জান্নাত। আর তোমার অসন্তোষ ও জাহান্নাম থেকে তোমার কাছে পানাহ চাই।
* মহিলাগণ হায়েয নেফাসের অবস্থায় থাকলে নামায না পড়ে শুধু নিয়ত করে এবং তালবিয়া পড়ে নিলেই ইহরাম শুরু হয়ে যাবে। ইহরামের অবস্থায় যা যা করা উত্তম:
* ইহরামের অবস্থায় অধিক পরিমাণে তালবিয়া পড়তে থাকা উত্তম। বিশেষতঃ গাড়ীতে উঠতে, গাড়ী থেকে নামতে, কোন উঁচু স্থানে উঠতে, নীচু স্থানে নামতে, প্রত্যেক নামাযের পর ইত্যাদি মুহূর্তে তালবিয়া পড়া মোস্তাহাব। তালবিয়া পুরুষগণ জোর আওয়াজে পড়বেন, তবে এত জোরে নয় যেন নিজের বা কোন নামাযীর বা ঘুমন্ত মানুষের অসুবিধা হয়।
* ঘর থেকে বের হওয়ার সময়, প্রবেশের সময়, সাক্ষাতের সময়, বিদায়ের সময়, উঠতে-চলতে-বসতে, সকাল-সন্ধ্যায়, মোট কথা যে কোন ভাবে অবস্থার পরিবর্তন হলে সে সময়ে তালবিয়া পড়া মোস্তাহাব।
* তালবিয়ার শব্দগুলো বলাই সুন্নাত।
এহরাম অবস্থায় যা যা নিষিদ্ধ:
* পুরুষের জন্য শরীরের পরিমাপে বানানো হয়েছে- এমন সেলাই যুক্ত পোশাক নিষিদ্ধ। যেমন জামা, পায়জামা, টুপি, গেঞ্জি, মোজা, সোয়েটার ইত্যাদি। মহিলাদের জন্য হাত মোজা, পা মোজা, অলংকার পরিধান করা জায়েয, তবে না করা উত্তম।
* ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত পুরুষের জন্য মাথা ও চেহারা এবং মহিলাদের জন্য শুধু চেহারা ঢাকা নিষিদ্ধ! মহিলাদের জন্য মাথা ঢাকা রাখা ওয়াজিব। পুরুষগণ কান ও গলা ঢাকতে পারেন।
* এমন জুতা/স্যাণ্ডেল পরিধান করা নিষিদ্ধ, যাতে পায়ের মধ্যবর্তী উঁচু হাড় ঢাকা পড়ে যায়। মহিলাগণ এরূপ জুতা/স্যাণ্ডেল পরিধান করতে পারেন।
* সর্ব প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। সুগন্ধি যুক্ত সাবান ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ।
* নখ, চুল, পশম কাটা ও কাটানো নিষিদ্ধ।
* স্থল ভাগের প্রাণী শিকার করা বা সে কাজে কোন রূপ সহযোগিতা করা নিষিদ্ধ। তবে মশা, মাছি, ছারপোকা, সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি কষ্টদায়ক প্রাণী মারা জায়েয।
* স্ত্রী সহবাস বা এতদসম্পর্কিত কোন আলোচনা, চুমু দেয়া এবং শাহওয়াত (উত্তেজনা) সহকারে স্পর্শ করা নিষিদ্ধ।
* ঝগড়া বিবাদ করা বা কোন গোনাহের কাজ করা নিষিদ্ধ। এগুলো এমনিতেও নিষিদ্ধ; এহরামের অবস্থায় আরও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
* উকুন মারা নিষিদ্ধ।
বিঃ দ্রঃ মহিলাদের জন্য চেহারা ঢাকা নিষিদ্ধ-এর অর্থ এই নয় যে, চেহারা সম্পূর্ণ খোলা রাখতে হবে যাতে পর পুরুষে চেহারা দেখতে পায়, বরং এর অর্থ হল চেহারার সাথে নেকাব বা কোন কাপড় লাগিয়ে রাখা নিষিদ্ধ। তাদের জন্য ইহরামের অবস্থায় পর্দাও করা জরুরী, আবার চেহারায় কোন কাপড় বা নেকাব লাগানোও নিষিদ্ধ। এর উপায় হল তারা চেহারার সাথে লাগতে না পারে এমন কিছু কপালের উপর বেধে তার উপর নেকাব ঝুলিয়ে দিবে ৷ মহিলাগণ এ ব্যাপারে গাফিলতি করে থাকেন, এরূপ করা চাইনা।
ইহরাম অবস্থায় যা যা মাকরূহ:
* শরীরের ময়লা পরিষ্কার করা মাকরূহ। চুল বা দাড়ি বা শারীরে সাবান লাগানো মাকরূহ।
* চুল বা দাড়িতে চিরুনি করা মাকরূহ।
* এমন ভাবে চুলকানো মাকরূহ যাতে চুল, পশম বা উকুন পড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। এরূপ আশংকা হয় না- এমন আস্তে চুলকানো জায়েয।
* এমন ভাবে দাড়ি খেলাল করা মাকরূহ যাতে দু’একটা দাড়ি খসে পড়ার আশংকা হয়।
* ইহরামের কাপড় সেলাই করে বা গিরা কিংবা পিন ইত্যাদি দিয়ে আঁটকানো মাকরূহ, তবে কোমরে বেল্ট বাধা জায়েয। টাকার থলি রাখাও জায়েয।
* বালিশের উপর মুখ দিয়ে উপুড় হয়ে শয়ন করা মাকরূহ।
* সুগন্ধিযুক্ত খাদ্য যদি পাকানো না হয় তাহলে তা খাওয়া মাকরূহ। পাকানো হলে মাকরূহ নয়।
* শাহওয়াতের (উত্তেজনার) সাথে স্ত্রীর লজ্জাস্থান দেখা মাকরূহ।
* নাক গাল কাপড় দিয়ে ঢাকা মাকরূহ, তবে হাত দিয়ে ঢাকা যায়।
* ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়া মাকরূহ।
* এলাচি, লঙ্গ বা সুগন্ধিযুক্ত তামাক/জর্দা সহকারে পান খাওয়া মাকরূহ।
মক্কা ও হারাম শরীফে প্রবেশের সুন্নাত ও আদব সমূহ:
* জেদ্দার পথে মক্কা শরীফে আসতে গেলে মক্কা শরীফের প্রায় দশ মাইল দুরে হুদায়বিয়া নামক স্থান (বর্তমান নাম শুমাইসিয়া) অবস্থিত, সম্ভব হলে এখানে দুই রাকআত নামায পড়ে দোয়া করুন। এখনই আপনি মক্কার সীমানায় অর্থাৎ, আল্লাহর দরবারের বিশেষ সীমানায় প্রবেশ করতে যাচ্ছেন; তাই অত্যন্ত বিনয় ও আদবের সাথে তওবা ইস্তেগফার করতে করতে এবং তালবিয়া পড়তে পড়তে প্রবেশ করুন।
* মসজিদে হারামের উত্তর দিক অর্থাৎ, জান্নাতুল মুআল্লার দিক থেকে প্রবেশ করা মোস্তাহাব।
* মক্কা মুকাররমায় প্রবেশের পূর্বে গোসল করা মোস্তাহাব। তবে আজকাল গাড়ী ড্রাইভারগণ পথিমধ্যে সময় দেন না, তাই জেদ্দার থেকেই সম্ভব হলে এ গোসল সেরে নেয়া যেতে পারে।
* মক্কা মুকাররমায় এসে মাল-সামান বন্দোবস্ত করা ইত্যাদি জরুরী কাজ থাকলে তা সেরে যথা সম্ভব দ্রুত মসজিদে হারামে হাজির হওয়া মোস্তাহাব।
* মসজিদে হারামের যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করা যায়, তবে “বাবুস সালাম” নামক দরজা দিয়ে প্রবেশ করা মোস্তাহাব। এ দরজাটি সাফা মারওয়ার মাঝে অবস্থিত। প্রবেশের সময়, এমনিভাবে ভিতরে গিয়ে মসজিদে প্রবেশের ও মসজিদে অবস্থানের যে সুন্নাত ও আদব রয়েছে (এ সম্পর্কে khamarian.com এ আলাদা পোষ্ট রয়েছে, সার্স বাটতে ক্লিক করে খুঁজে নিয়ে পড়ুতে পারবেন) তার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
* প্রবেশ করার সময় তালবিয়া পড়তে পড়তে আল্লাহরঁ আজমত ও বড়ায়ী মনে জাগ্রত রেখে অত্যন্ত বিনয় ও খুশু খুযুর সাথে প্রবেশ করুন ও পড়ুন।
* প্রবেশের সময় কা’বা শরীফ প্রথমে নজরে আসলেই তখন তিনবার “আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইলাল্লাহু “ i এরপর দাঁড়িয়ে বুক পর্যন্ত হাত তুলে আপনার আবেগ থেকে যে দু’আ আসে আল্লাহর কাছে তা প্রার্থনা করুন। এ মুহূর্ত দু’আ কবূল হওয়ার একটি বিশেষ মুহূর্ত। এ মুহূর্তে এ দোয়াটি পড়াও মোস্তাহাব-
বাংলায়ঃ আমি এই গৃহের রবের কাছে পানাহ চাই ঋণী হওয়া, দরিদ্র হওয়া, মন সংকুচিত হওয়া এবং কবরের আযাব থেকে।
* বায়তুল্লাহ (কা’বা শরীফ) প্রথমে নজরে আসার সময় পারলে এ দোয়াটিও পড়ুন-
اللهم زد هذا البيت تشريفا وتعظيما وتكريما ومهابة ، وزد من شرفة وكرمة معن حمية والختمرة تشريفا وتكريما وتعظيما وبرا ، اللهم أنت چه السلام ومنك السلام فعينا ربنا بالسلام
* মসজিদে হারামে প্রবেশ করে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা পড়তে হলে পড়ুন নতুবা তওয়াফ শুরু করুন। এখানে দুখূলুল মসজিদ (দুই রাকআত) পড়া নিয়ম নয়। তবে তওয়াফ করতে গেলে ফরয নামায কাযা হওয়ার বা জামা’আত ছুটে যাওয়ার বা মোস্তাহাব ওয়াক্ত চলে যাওয়ার আশংকা হলে তওয়াফের স্থলে দুই রাকআত দুখূলুল মসজিদ পড়ে নেয়া চাই, যদি মাকরূহ ওয়াক্ত না হয়।
তওয়াফের নিয়ম ও মাসায়েল
* তওয়াফ শুরু করার পূর্ব মুহূর্তে চাদরের ডান অংশকে ডান বগলের নীচে দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের উপর রেখে দিন। এরূপ করাকে ‘এজতেবা’ বলে ৷ সম্পূর্ণ তওয়াফে এরূপ রাখতে হবে। এই এজতেবা করা সুন্নাত। তওয়াফ অবস্থা ব্যতীত অন্য কোন সময় এজতেবা’ করবেন না। যে তওয়াফের পর সায়ী নেই সে তওয়াফেও এজতেবা’ করবেন না। নফল তওয়াফের পর যেহেতু সায়ী নেই, তাই নফল তওয়াফেও এজতেবা’ হবে না।
* অতঃপর কা’বা শরীফের দিকে ফিরে হাজরে আসওয়াদকে ডান দিকে রেখে দাঁড়ান অর্থাৎ, হাজরে আসওয়াদ বরাবর মসজিদে হারামের গায়ে যে সবুজ বাতি আছে সেটাকে পিছনে ডান পার্শ্বে রেখে এমনভাবে দাঁড়ান, যেন হাজরে আসওয়াদ ডান কাঁধ বরাবর থাকে এবং এ পর্যন্ত যে তালবিয়া পড়ে আসছিলেন তা পড়া বন্ধ করুন। এই ইহরাম শেষ হওয়া পর্যন্ত আর তালবিয়া পড়বেন না। তবে কেরান ও ইফরাদ হজ্জকারী তওয়াফ সায়ীর পর থেকে আবার তালবিয়া চালু করবেন।
* তারপর তওয়াফের নিয়ত করুন। নিয়ত করা শর্ত। শুধু এতটুকু নিয়ত করলেই যথেষ্ট যে, হে আল্লাহ! আমি তোমার ঘর তওয়াফ করার নিয়ত করছি, তুমি তা সহজ করে দাও এবং কবূল কর। তবে কোন্ তওয়াফ-উমরার তওয়াফ, না তওয়াফে জিয়ারত না বিদায়ী তওয়াফ না নফল তওয়াফ? ইত্যাদি নির্দিষ্ট করে নিয়ত করা উত্তম।
* নিয়ত করতে চাইলে এভাবে করা যায়-
বাংলায়ঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার ঘরের তওয়াফ করার নিয়ত করছি, তুমি সহজ করে দাও এবং কবূল করে নাও।
* নিয়ত করার পর বায়তুল্লাহ্ দিকে ফেরা অবস্থায়ই ডান দিকে এতটুকু চলুন যেন হাজরে আসওয়াদ ঠিক আপনার বরাবর হয়ে যায়। অতঃপর নামাযের তাকবীরে তাহরীমার ন্যায় দুই হাত কান পর্যন্ত (মহিলাগণ সিনা পর্যন্ত) উঠিয়ে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করে পড়ুন-
بسم الله الله أكبر لا إله إلا الله ولله الحمد ، والصلوة والسلام على رسول الله ـ اللهم إيمانام بك ، وتصديقام بكتابك ، ووفاءم بعهدك ، واتباعا لسنة نبيك محمد صلى الله تعالى عليه وسلم
* তারপর হাত নামিয়ে ফেলুন।
* তারপর ধাক্কাধাক্কি করে কাউকে কষ্ট দেয়া ছাড়া সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদকে চুমু দিন। এই চুমু দেয়া সুন্নাত। তিনবার চুমু দেয়া মোস্তাহাব। চুমুতে যেন শব্দ না হয়। প্রতিবার চুমু দেয়ার পর মাথা হাজরে আসওয়াদের উপর রাখাও মোস্তাহাব। ভিড়ের কারণে চুমু দেয়া সম্ভব না হলে হাত দ্বারা হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করে হাতে চুমু দিন। তাও সম্ভব না হলে কোন লাঠি থাকলে তা দ্বারা স্পর্শ করে তাতে চুমু দিন। তাও সম্ভব না হলে দুই হাতের তালু দিয়ে হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে দুই হাতেই চুমু খান। হাত দ্বারা ইশারা করার সময় হাত এতটুকু উঠাবেন যে, হাতের তালু হাজরে আসওয়াদের দিকে থাকবে এবং হাতের পিঠ চেহারার দিকে থাকবে। এ সময় নিম্নোক্ত দু’আ পড়ুন-
الله أكبر لا إله إلا الله والحمد لله ، والصلوة على سيد المصطفى صلى الله عليه وسلم
তবে উল্লেখ্য যে, আজকাল অনেকে হাজরে আসওয়াদ, মুলতাযাম, রুক্নে ইয়ামানী প্রভৃতি স্থানে সুগন্ধি মেখে গিয়ে থাকেন তাই ইহরামের অবস্থায় যে তাওয়াফ হয় তাতে সরাসরি এ সব স্থান স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। আরও মনে রাখা দরকার যে, হাজ্রে আসওয়াদের চতুর্পার্শ্বে যে রূপার বেষ্টনী রয়েছে তাতে চুমু দেয়া বা মাথা কিংবা হাত রাখা জায়েয নয়। চুমু দেয়ার পর পা শক্ত রেখে একটু ডান দিকে ঘুরুন। এখন কা’বা শরীফ আপনার বাম দিকে হয়ে যাবে। এভাবে কা’বা শরীফ বাম দিকে রেখে তওয়াফ আরম্ভ করতে হবে। কখনও যেন বুক কা’বা শরীফের দিকে ফিরিয়ে তওয়াফ না হয়। দুই এক কদমও যেন এমন না হয়। এমন হলে সেই পরিমাণ জায়গা পিছে এসে কা’বা শরীফকে বাম দিকে রেখে পুনরায় সামনে অগ্রসর হবেন। তওয়াফের সময় কা’বা শরীফের দিকে দৃষ্টিও ফেরাবেন না। তওয়াফের সাত চক্করের মধ্যে প্রথম তিন চক্করে বীরের ন্যায় বুক ফুলিয়ে কাঁধ দুলিয়ে ঘন ঘন কদম ফেলে কিছুটা দ্রুত গতিতে চলতে হবে। এরূপ করাকে ‘রমল’ বলা হয়। রমল করা সুন্নাত। তবে যে তওয়াফের পর সায়ী নেই সে তওয়াফে রমলও নেই ৷ রমল ও এজতেবা শুধু পুরুষের জন্য-মহিলাদের জন্য নয়।
* তওয়াফ হাতীমের বাইরে দিয়ে করা ওয়াজিব।
* ভিড় না থাকলে এবং কাউকে কষ্ট দেয়া না হলে পুরুষের জন্য যথা সম্ভব বায়তুল্লাহর কাছাকাছি দিয়ে তওয়াফ করা উত্তম। মহিলাদের জন্য পুরুষদের থেকে দূরে থেকে, এমনিভাবে তাদের জন্য রাতে তওয়াফ করা উত্তম।
* প্রথম চক্করে রুক্নে ইয়ামানীতে (কা’বা শরীফের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে) পৌঁছার পূর্বে বিভিন্ন দু’আ পড়া হয়ে থাকে; রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সে সব দোয়া বর্ণিত নেই- তবে সে সব দু’আ পড়া যায় বা অন্য যে কোন দোয়া করা যায়, যে কোন যিকির করা যায়। সাত চক্করে এরকম বিভিন্ন দোয়া বর্ণিত আছে, সবগুলো সম্পর্কেই এ কথা। দোয়া কিতাব দেখেও পড়া যায়।
* রুকনে ইয়ামানীতে পৌঁছে সম্ভব হলে দুই হাতে কিংবা শুধু ডান হাতে রুক্নে ইয়ামানী স্পর্শ করা মোস্তাহাব। চুমু খাবেননা বা হাতের দ্বারা স্পর্শ করে তাতে চুমু খাবেননা বা স্পর্শ করা সম্ভব না হলে দূর থেকে ইশারাও করবেননা।
* তারপর রুকনে ইয়ামানী থেকে হাজরে আসওয়াদের কোণে যাওয়া পর্যন্ত নিম্নোক্ত দোয়া পড়া মোস্তাহাব। প্রত্যেক চক্করেই এই স্থানে এ দোয়াটি পড়তে হয়।
ربنا اتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار يا عزيز يا غفار يا رب العلمين
* তারপর হাজরে আসওয়াদ বরাবর পৌঁছলে এক চক্কর পূর্ণ হয়ে গেল।
* এখন সম্ভব হলে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে আসওয়াদে চুমু খাবেন বা হাতে বলে আবার পূর্বের নিয়মে হাজরে স্পর্শ করে বা ইশারা করে হাতে চুমু খাবেন। প্রত্যেক চক্করের শুরুতেই এভাবে চুমু খাবেন, তবে প্রথম বারের ন্যায়-হাত কান পর্যন্ত উঠাবেন না, এটা শুধু তওয়াফ শুরু করার সময়েই করতে হয়। তবে চুমু খাওয়ার জন্য হাত দ্বারা ইশারা করতে হলে পূর্বের নিয়মে তা করবেন। চুমু খাওয়ার পর দ্বিতীয় চক্কর শুরু করবেন এবং পূর্বের ন্যায় রুক্নে ইয়ামানীতে সম্ভব হলে হাত দ্বারা স্পর্শ করবেন। তারপর রব্বানা আতিনা পড়তে পড়তে হাজরে আসওয়াদ বরাবর পৌঁছবেন, এভাবে দ্বিতীয় চক্কর পূর্ণ হয়ে গেল, এভাবে সাত চক্কর শেষ হওয়ার পর আবার হাজরে আসওয়াদে পূর্বের মত চুমু খাবেন। এটা হবে অষ্টম বার চুমু খাওয়া। এখন আপনার তওয়াফ শেষ হল। এখন চাদরের এজতেবা খুলে ডান কাঁধ ঢেকে নিন।
* সম্পূর্ণ তওয়াফ উযূ অবস্থায় হতে হবে। প্রথম চার চক্কর পর্যন্ত উযূ ছুটে গেলে উযূ করে আবার প্রথম থেকে তওয়াফ শুরু করতে হবে। আর যদি চার চক্করের পর উযূ ছুটে, তাহলে উযূ করে আবার প্রথম থেকেও তওয়াফ শুরু করা যায়, কিংবা যেখান থেকে উযূ ছুটেছে সেখান থেকেও বাকীটা পূর্ণ করে নেয়া যায়। তওয়াফে হায়েয নেফাস অবস্থা থেকেও পবিত্র হতে হবে।
* তওয়াফ শেষ করার পর যদি বেশী ভীড় ও ধাক্কাধাক্কি না হয়, তাহলে হাজরে আসওয়াদ ও কা’বা ঘরের দরজার মধ্যবর্তী স্থানকে (এ স্থানকে ‘মুল্তাযাম’ বলা হয়।) আঁকড়ে ধরবেন, বুক এবং চেহারা দেয়ালের সাথে লাগাবেন এবং উভয় হাত উপরে উঠিয়ে দেয়ালে স্থাপন করে খুব কাকুতি মিনতি সহকারে দোয়া করবেন। এটা দোয়া কবূলের স্থান। এ স্থানে এরূপ দোয়া করা সুন্নাত।
* তারপর কা’বা শরীফের দরজা মোবারকের চৌকাঠ ধরে খুব দোয়া করুন। সম্ভব হলে গেলাফ আঁকড়ে ধরে খুব কান্নাকাটি করুন। তবে এহরাম অবস্থায় থাকলে এসব স্থানে সতর্ক থাকতে হবে যেন কা’বা শরীফের গেলাফ মাথায় না লাগে। এমনিভাবে এসব সুন্নাত আদায় করতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে কাউকে কষ্ট দেওয়া অন্যায়, কেননা কাউকে কষ্ট দেয়া হারাম। এরূপ কষ্ট পাওয়ার আশংকা থাকলে এসব ছেড়ে দিতে হবে। মহিলাদের পর্দা ও শালীনতা রক্ষার স্বার্থেও এ থেকে এবং কা’বা শরীফের দরজা মোবারকের চৌকাঠ ধরে দোয়া করা থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ মোস্তাহাব আদায় করার চেয়ে পর্দার ফরয রক্ষা করা বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
* তারপর দুই রাকআত নামায পড়া ওয়াজিব, এটাকে সালাতুত্তাওয়াফ বা তওয়াফের নামায বলে। এই নামায ‘মাকামে ইবরাহীম’-এর পিছনে পড়া মোস্তাহাব। ভীড়ের কারণে সেখানে পড়া সম্ভব না হলে আশে পাশে পড়ে নিবেন তাও সম্ভব না হলে দূরবর্তী যেখানে সম্ভব পড়ে নিবেন। তখন নিষিদ্ধ বা মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে তওয়াফ শেষ হওয়ার সাথে সাথে এ নামায পড়ে নেয়া সুন্নাত। আর তখন নিষিদ্ধ ওয়াক্ত বা মাকরূহ ওয়াক্ত হলে তখন পড়বেননা বরং পরে সহীহ ওয়াক্তে পড়ে নিতে হবে। মাকামে ইবরাহীমের দিকে যাওয়ার সময় এই পড়তে পড়তে যাবেন-
واتخذوا من مقام إبراهيم مصلی
* এই নামাযে প্রথম রাকআতে সূরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূর এখলাস পড়ুন। এই নামাযের পরও দোয়া কবূল হয়ে থাকে। ‘মাকামে ইবরাহীম’ একটি বেহেশতী পাথরের নাম, যার উপর দাঁড়িয়ে হযরত ইবরাহীম (আঃ) কা’বা শরীফের উঁচু দেয়াল নির্মাণ করেছিলেন। তখন প্রয়োজন অনুসারে এ পাথরটি আপনা আপনি উপরে নীচে উঠানামা করত। এ পাথরের গায়ে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর কদম মুবারকের চিহ্ন রয়েছে। পাথরটি কা’বা শরীফের পূর্ব দিকে একটি পিতলের জালির মধ্যে রাখা অবস্থায় সংরক্ষিত আছে।
* তওয়াফের দুই রাকআত নামায পড়ার পর যমযম কুয়ার নিকট গিয়ে যমযমের পানি পান করা এবং দোয়া করা মোস্তাহাব। এটাও দোয়া কবূল হওয়ার স্থান। (উল্লেখ্যঃ আজকাল যমযম কুয়ার নিকটে যাওয়া যায়না, সেক্ষেত্রে আশপাশ থেকেই যমযমের পানি পান করে নিন।)
* যমযমের পানি কা’বা শরীফের দিকে মুখ করে পান করা মোস্তাহাব I এ পানি দঁড়িয়ে বসে উভয় ভাবে পান করা যায় ( ৬৮)। যমযমের পানি পান করার সময় নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে হয়-
বাংলায়ঃ অর্থঃ হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট চাই উপকারী জ্ঞান এবং প্রশস্ত রিযিক, আর সব রোগ-ব্যাধি থেকে শেফা।
* এ পর্যন্ত তওয়াফ ও তার আনুষঙ্গিক কার্যাবলী সম্পন্ন হল।
সায়ীর নিয়ম ও মাসায়েল
সাফা ও মারওয়া নামক দু’টি পাহাড়ের মাঝে বিশেষ নিয়মে সাতটা চক্কর দেয়াকে সারী বলা হয়।
* তওয়াফ ও তার আনুষঙ্গিক কার্যাবলী শেষ করার পর সায়ী করার উদ্দেশ্যে ছাফা পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হওয়ার পূর্বে হাজরে আসওয়াদকে তওয়াফে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী চুমু দিয়ে যাবেন। এটা মোস্তাহাব। এটা হবে নবম চুমু দেয়া।
* তওয়াফের পর বিলম্ব না করেই সায়ী করা সুন্নাত।
* সায়ী করার জন্য ‘বাবুস সাফা’ অর্থাৎ, সাফা দরজা দিয়ে বের হওয়া মোস্তাহাব। অন্য যে কোন দরজা দিয়ে বের হওয়া জায়েয। মনে রাখতে হবে
এখান থেকে বের হওয়ার সময় মসজিদ থেকে বের হওয়ার নিয়ম ও
দোয়াগুলোও আমল করতে হবে। তার জন্য দেখুন ১৭৫ পৃষ্ঠা।
* তারপর সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী গিয়ে এই দু’আ পড়া মোস্তাহাব-
أبدأ بما بدا الله به إن الصفا والمروة من شعائر الله
* সাফা পাহাড়ের এতটুকু উঁচুতে উঠবেন যেন বাবুস সাফা দিয়ে কা’বা শরীফ নজরে আসে, এর চেয়ে বেশী উপরে উঠা নিয়মের খেলাফ বরং এতটুকুই উপরে উঠা সুন্নাত।
* কা’বা শরীফ নজরে আসলে কা’বার দিকে নজর করে দোয়া করার সময় যে রকম হাত উঠানো হয় সে রকম করে দুই হাত কাঁধ বরারব উঠিয়ে কান পর্যন্ত হাত উঠানো ভুল এবং সুন্নাতের খেলাফ) তিন বার আওয়াজ সহকারে নিম্নোক্ত দোয়া পড়ুন। এটা মোস্তাহাব।
الحمد لله الله أكبر لا اله الا الله
* তারপর আস্তে দুরূদ শরীফ পাঠ করে নিজের জন্য এবং সকলের জন্য দোয়া করুন। এটাও দোয়া কবূল হওয়ার স্থান।
* সায়ীর নিয়ত করে নেয়াও উত্তম।
* অতঃপর দোয়া কালাম পাঠ করতে করতে মারওয়ার দিকে অগ্রসর হোন। যথাসম্ভব মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে সায়ী করার চেষ্টা করবেন। স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকুন। মাঝখানে সবুজ দুই স্তম্ভ নজরে পড়বে, এই স্তম্ভদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানটুকু পুরুষের জন্য কিছুটা দ্রুত গতিতে চলা সুন্নাত-একেবারে দৌড়ে নয় ৷ নারীগণ এ স্থানেও স্বাভাবিক গতিতে চলবেন। এ সময় নিম্নোক্ত দোয়া পড়ুন-
বাংলায়ঃ হে আমার রব, তুমি ক্ষমা কর এবং রহমত দান কর, তুমিতো সবচেয়ে বেশী মর্যাদাশালী। সর্বচেয়ে বড় মেহেরবান!
* পুরুষগণ ভীড়ের কারণে দ্রুত চলা সম্ভব না হলে ভীড় কমার অপেক্ষা করবেন। এই মধ্যবর্তী স্থানটুকু পার পাওয়ার পর আবার স্বাভাবিক গতিতে চলতে চলতে মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছান। মারওয়া পাহাড়ের সামান্য উঁচুতে উঠে কা’বামুখী হয়ে পূর্বের ন্যায় হাত উঠিয়ে তিনবার নিম্নোক্ত দোয়া পড়ুন এবং অন্যান্য দোয়া করুন। এই মারওয়া পাহাড়েও বেশী উপরে উঠা নিষেধ।
الحمد لله الله أكبر لا اله الا الله
* সাফা থেকে এই মারওয়া পর্যন্ত আপনার এক চক্কর হয়ে গেল। আবার এখান থেকে সাফা পর্যন্ত পূর্বের নিয়মে যাবেন তাতে দ্বিতীয় চক্কর হয়ে যাবে। এভাবে সাত চক্কর দিবেন, তাতে মারওয়ার উপর এসে আপনার সপ্তম চক্কর শেষ হবে। সাফা থেকে আবার সাফা পর্যন্ত এক চক্কর হিসেব করবেন না, তাতে চৌদ্দ চক্কর হয়ে যাবে- সেটা ভুল।
* মহিলাগণ মাসিক অবস্থায় সায়ী করতে পারেন। তবে পবিত্র হওয়ার পরই সায়ী করা সুন্নাত।
* সায়ীর চক্কর কয়টা হল এ নিয়ে সন্দেহ হলে কমটা ধরে নিয়ে বাকীটা পুর্ণ করতে হবে।
* উপরে দ্বিতীয় তলায় এবং ছাদেও সায়ীর জন্য ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানেও সায়ী করা যেতে পারে।
* সায়ীর সপ্তম চক্কর শেষ হওয়ার পর মসজিদে হারামের ভিতর এসে দুই রাকআত নফল নামায পড়া মোস্তাহাব, যদি মাকরূহ ওয়াক্ত না হয়। এ পর্যন্ত আপনার সায়ীর কার্যাবলী শেষ হল। যদি এটা আপনার উমরার সায়ী হয়ে থাকে তাহলে এখন আপনি মাথা মুণ্ডন করে বা চুল ছেঁটে ইহরাম খুলতে পারেন।
মাথা মুণ্ডন করা বা চুল ছাঁটার মাসায়েল
* এহরাম খোলার জন্য মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছাঁটা ওয়াজিব। মাথা মুণ্ডানোকে ‘হলক’ এবং চুল ছাঁটাকে ‘কছর’ বলা হয়। চুল ছাঁটার চেয়ে মাথা মুণ্ডানো উত্তম।
* মাথার কম পক্ষে এক চতুর্থাংশ চুল মুন্ডালে বা ছাঁটালে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে তবে তা মাকরূহ তাহরীমী। বরং পুরো মাথা মুন্ডানো বা পুরো মাথার চুল ছাঁটাই মোস্তাহাব বা উত্তম।
* মহিলাদের জন্য মাথা মুন্ডানো হারাম। তারা কছর করবেন অর্থাৎ, চুল ছাঁটাবেন।
* চুল ছাঁটার ক্ষেত্রে চুলের লম্বার দিক থেকে আঙ্গুলের এক কড়া পরিমাণ ছাঁটা জরুরী; সাবধানতার জন্য একটু বেশী হেঁটে নিতে হবে। পুরুষের চুল যদি এত ছোট হয় যে, আঙ্গুলের এক কড়া পরিমাণ ছাঁটা যায় না, তাহলে মুন্ডানো জরুরী। মাথায় চুল একেবারে না থাকলে মাথার উপর দিয়ে ক্ষুর বা ব্লেড শুধু চালিয়ে নিতে হবে।
* মাথা মুন্ডানো বা চুল ছাঁটার সময় কেবলামুখী হয়ে বসে নিজের ডান দিক থেকে মুন্ডানো বা ছাঁটানো শুরু করতে বা করাতে পারলে উত্তম।
* নাপিত দ্বারা বা নিজেই চুল মুন্ডানো বা ছাঁটা যায়। আপনার মত যার এখন মাথা মুন্ডিয়ে বা চুল ছেঁটে হালাল হওয়ার মুহূর্ত, তার দ্বারাও মুন্ডানো বা ছাঁটানো যায় ৷
* হলক বা কছর করা হলেই এহরাম শেষ হয়ে যাবে। এখন ইহরামের অবস্থায় যা নিষিদ্ধ ছিল তা হালাল হয়ে যাবে।
৮ই যিলহজ্জ মিনায় গমন ও তথায় অবস্থানের মাসায়েলঃ
* ৭ই যিলহজ্জ জোহর বা জুমুআর নামাযের পর হারাম শরীফে হজ্জের নিময়মাবলীর উপর খুতবা দেয়া হলে তা শুনুন এবং মর্ম বুঝতে না পারলে কারও থেকে বুঝে নিন।
* ৮ই যিলহজ্জ থেকে হজ্জের প্রস্তুতি শুরু হবে। হজ্জের এহরাম বাধা না থাকলে এহরাম বাধতে হবে। এহরাম বাধার নিয়ম পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। মসজিদে হারামে গিয়ে এই এহরাম বাধা মোস্তাহাব। এহরাম বেধে মিনায় যেতে হবে। আজকাল ৭ই যিলহজ্জ দিবাগত রাতেই মুআল্লিমের গাড়ীতে হাজীদেরকে মিনায় পৌঁছানোর কাজ শুরু হয়, তাই যারা মুআল্লিমের গাড়ীতে মিনায় যাবেন তারা ৭ই তারিখেই ইহরাম বেধে নিবেন। ইহরামের পর তালবিয়া শুরু হবে। তওয়াফে জিয়ারত-এর পর (ওয়াজিব) সায়ী করার সময় প্রচণ্ড ভীড় হতে পারে, সেই ভীড়ে সায়ী করতে না চাইলে এখন এহরামের পর একটি নফল তওয়াফ করে সেই সায়ী অগ্রিম করে নিতে পারেন। এরূপ করলে পুরুষদের জন্য এই নফল তওয়াফে রমল ও এজতেবাও করতে হবে। তবে তামাত্তু ও ইফরাদ হজ্জকারীর জন্য তওয়াফে জিয়ারতের সায়ী অগ্রিম না করে তওয়াফে জিয়ারতের পরেই করা উত্তম।
* ৮ই যিলহজ্জের জোহর, আসর মাগরিব, ইশা এবং ৯ই যিলহজ্জের ফজর সর্বমোট এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায মিনায় পড়া মোস্তাহাব এবং এ সময়ে মিনায় অবস্থান করা সুন্নাত। মিনায় যথাসম্ভব মসজিদে খায়েফের কাছাকাছি অবস্থান করা উত্তম।
* ৮ই যিলহজ্জের পূর্বে যদি আপনি মক্কা শরীফে মুকীম হিসেবে অন্ততঃ ১৫ দিন অবস্থান করে থাকেন তাহলে মিনায় এমনিভাবে আরাফায় এবং মুদালিফায়ও পুরা নামায পড়বেন, আর তা না হলে এসব স্থানেও কছরের বিধান চলবে।
৯ই যিলহজ্জ আরাফায় গমন ও উকূফে আরাফার মাসায়েল
* ৯ই যিলহজ্জ পূর্বের আকাশ বেশ উজালা হওয়ার পর ফজরের নামায পড়ে সূর্যোদয়ের সামান্য কিছু পর আরাফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হবে। এখানে আরও একটি মাসআলা স্মরণ রাখতে হবে- ৯ই যিলহজ্জ থেকে ১৩ই যিলহজ্জের আসর পর্যন্ত সর্বমোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব।নামাযের পর প্রথম তাকবীরে তাশরীক বলবেন তারপর তালবিয়া পড়বেন।
* আরাফায় যাওয়ার পথে তালবিয়া পড়তে পড়তে, দোয়া ও যিকির করতে করতে, অত্যন্ত খুশু খুযুর সাথে চলতে থাকুন।
* আরাফার ময়দানে অবস্থিত জাবালে রহমতের উপর দৃষ্টি পড়তেই এই দোয়া পড়া মোস্তাহাব-
اللهم إني توجهت إليك ، وعليك توكلت ، ووجهك أردت ، اللهم
اغفرلي وتب على ، واعطني سؤلي ، و وجه لي الخير حيث توجهت
سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر
* এ সময় দোয়া করুন। এটা দোয়া কবূল হওয়ার সময়।
* তারপর তালবিয়া পড়তে পড়তে আরাফার ময়দানে প্রবেশ করুন।
* আরাফার ময়দানে জাবালে রহমত পাহাড়ের কাছাকাছি অবস্থান করতে পারলে ভাল, তবে পাহাড়ে আরোহণ করবেন না। ‘ধানে উর্না’ (আরাফার ময়দানের একটি অংশের নাম, যার কিছু অংশ মসজিদে নামিয়ার ভিতর কেবলার দিকে পড়েছে) ব্যতীত আরাফার যে কোন স্থানে অবস্থান করা যায়।
* সূর্য ঢলা থেকে উকূফে আরাফা শুরু এবং সূর্য অস্ত গেলে উকৃফে আরাফা শেষ হবে। উকৃফে আরাফা হজ্জের অন্যতম ফরয।
* আরাফায় পৌঁছার পর তালবিয়া, দোয়া ও দুরূদ শরীফ পাঠ বেশী বেশী করতে থাকবেন, সূর্য ঢলার পূর্বেই খানা পিনা থেকে ফারেগ হয়ে যাবেন। সূর্য ঢলার পর গোসল করা উত্তম, না পারলে অন্ততঃ উযূ করে নিবেন 1
* যারা তাবুতে নামায পড়বেন তারা জোহরের ওয়াক্তে জোহর এবং আসরের ওয়াক্তে আসরের নামায পড়বেন। মসজিদে নামিরায় জোহরের এবং আসরের নামায একত্রে জোহরের ওয়াক্তে পড়ে নেয়া হয়, কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে এরূপ করা জায়েয। তবে আজকাল মিনা, আরাফা ও মুযদালিফায় সৌদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ইমাম মুকীম হওয়া সত্ত্বেও কসর পড়ে থাকেন, এরূপ অবস্থায় হানাফী মাযহাব অনুসারীদের নামায তাদের পিছনে সহীহ হবে না।
* উকূফে আরাফার সময় যথা সম্ভব দাঁড়িয়ে থাকা এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তালবিয়া, তাসবীহ-তাহলীল, দুরূদ পাঠ ও দোয়া করতে থাকা মোস্তাহাব। না পারলে বসে বসে বা শুয়ে শুয়ে এগুলো করলেও চলবে। নিদ্রা এসে গেলেও অসুবিধা নেই, তবে বিনা ওজরে নিদ্রা যাওয়া মাকরূহ।
* মহিলাগণ হায়েয/নিফাস অবস্থায় থাকলেও উকূফে আরাফা করে নিবেন, এতে কোন অসুবিধা নেই।
* সূর্যাস্তের পূর্বে কোনক্রমেই আরাফা ময়দানের সীমানা ত্যাগ করা যাবে না। তাহলে দম দিতে হবে।
* সূর্যাস্ত গেলে মাগরিবের নামায না পড়ে যথাসম্ভব বিলম্ব না করেই মুযদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হবে। বিনা ওজরে রওনা দিতে বিলম্ব করা মাকরূহ। এই মাগরিবের নামায মুযদালিফায় গিয়ে ইশার ওয়াক্তে পড়তে হবে।
মুযদালিফায় গমন ও উকূফে মুযদালিফার মাসায়েল
* (৯ই যিলহজ্জ) সূর্যাস্ত যাওয়ার পর আরাফায় বা রাস্তায় কোথাও মাগরিবের নামায না পড়ে সোজা মুযদালিফার দিকে চলুন। তালবিয়া, তাকবীর, দুরূদ ও দোয়া পাঠ করতে করতে চলুন।
* ধাক্কাধাক্কিতে কারও কষ্ট হওয়ার আশংকা না থাকলে কিছু দ্রুত গতিতে লা উত্তম। গাড়ীতেও যাওয়া যায়।
* মুযদালিফার নিকটবর্তী যেয়ে গাড়ীতে এসে থাকলে নেমে পায়ে হেটে যদালিফায় প্রবেশ করা মোস্তাহাব। সম্ভব হলে মুযদালিফায় প্রবেশের পূর্বে গোসল করে নেয়া মোস্তাহাব। মুযদালিফায় পৌঁছে ইশার ওয়াক্ত হলে এক আযান ও এক ইকামতে প্রথমে মাগরিবের ফরয তারপর ইশার ফরয পড়ুন তারপর মাগরিবের ও ইশার সুন্নাত এবং বেতর পড়ুন। (প্রত্যেক ফরয নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক পড়ার কথাও স্মরণ রাখবেন) এখানে মাগরিবের নামায ইশার ওয়াক্তে পড়া হলেও কাযার নিয়ত নয় বরং ওয়াক্তিয়ার নিয়ত করবেন। এখানে উভয় ওয়াক্তের নামায জামা’আত সহকারে পড়া উত্তম।
* মাগরিব ও ইশার নামায পড়ার পর সুবহে সাদেক পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করা সুন্নাতে মুআক্কাদা। এ রাতে জাগরণ করা এবং নামায, তিলাওয়াত, দোয়া ইত্যাদিতে মশগুল থাকা মোস্তাহাব। কারও কারও মতে এ রাতে শবে কদর অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ।
* সুব্হে সাদেক থেকে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত অন্ততঃ কিছু সময় মুযদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। (মহিলা, বৃদ্ধ ও মা’যূরদের জন্য ওয়াজিব নয়।) সুবহে সাদেক হওয়ার পর উকূফে মুযদালিফার জন্য গোসল করা মোস্তাহাব।
* সুবহে সাদেক হওয়ার পর আওয়াল ওয়াক্তে ফজরের নামায পড়ে নেয়া উত্তম এবং জামাআত সহকারে পড়া উত্তম। নামাযের পর যিকির এস্তেগফার ও মুনাজাতে মশগুল থাকবেন। সূর্যোদয়ের ২/৪ মিনিট পূর্বে মুযদালিফা থেকে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হবে।
* পুরুষগণ সুবহে সাদেকের পূর্বে মুযদালিফা ত্যাগ করলে ওয়াজিব তরক হওয়ার কারণে গোনাহ হবে এবং দর্শও দিতে হবে।
* মুযদালিফা থেকে ছোলা-বুটের সমান ৭০টি কংকর সংগ্রহ করে নিয়ে যাবেন, এগুলো মিনায় জামরাতে নিক্ষেপ করা হবে। এ কংকর মিনা থেকেও সংগ্রহ করা যায়, তবে কংকর নিক্ষেপের জায়গা থেকে নেয়া নিষেধ।
১০ই যিলহজ্জ থেকে ১৩ই যিলহজ্জ পর্যন্ত সময়ের আহকাম
* ১০ই যিলহজ্জ সূর্যোদয়ের কিছু পূর্বে মুযদালিফা থেকে রওনা হয়ে মিনায় এসে সামানপত্র সাথে থাকলে তা হেফাযতে রেখে বড় জামরায় (যা মসজিদে খায়েফ থেকে দূরবর্তী এবং মক্কা শরীফের দিকে নিকটবর্তী) ৭টি কংকর নিক্ষেপ করতে হবে। এই কংকর নিক্ষেপ করার সুন্নাত সময় হল ১০ই যিলহজ্জ সূর্যোদয় থেকে সূর্য ঢলার পূর্ব পর্যন্ত, আর সূর্য ঢলার পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত হল জায়েয সময় এবং সূর্যাস্ত যাওয়ার পর থেকে পরবর্তী সুবহে সাদেক পর্যন্ত মাকরূহ সময়, তবে মহিলা ও মায়ূরদের জন্য মাকরূহ নয়।
* কংকর নিক্ষেপের মোস্তাহাব নিয়ম হল : কংকর নিক্ষেপের সময় যে স্তম্ভে কংকর নিক্ষেপ করা হবে তার দক্ষিণ দিকে দাঁড়িয়ে মিনাকে ডান দিকে এবং কা’বা শরীফকে বাম দিকে রেখে স্তম্ভের অন্ততঃ পাঁচ হাত দূরে দাঁড়িয়ে (এর চেয়ে কাছে দাঁড়িয়ে কংকর মারা মাকরূহ) ডান হাতের শাহাদাত ও বৃদ্ধাঙ্গুলী দ্বারা এক একটি কংকর ধরে হাত এতটুকু উঁচু করে নিক্ষেপ করবেন যেন বগল দেখা যায়। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলবেন। পারলে আরও কয়েকটি বাক্য যোগে নিম্নোক্ত দোয়া পড়বেন-
الله الله أكبر رغما للشيطان ورضى للرحمن اللهم اجعله حجا بسم مبرورا وذنبا مغفورا وسعيا مشكورا
অর্থ : মহান আল্লাহর নামে কংকর মারছি। শয়তানকে অসন্তুষ্ট এবং আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার জন্য এটা করছি। হে আল্লাহ! আমার এই হজ্জ কবূল কর, গোনাহ মাফ কর এবং চেষ্টাকে সাফল্যমন্ডিত কর।
* প্রথম কংকর নিক্ষেপের পূর্ব মুহূর্ত থেকে তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দিতে হবে। এরপর আর তালবিয়া নেই।
* কংকর নিক্ষেপের সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন স্তম্ভের নীচের দিকে চারপাশে কিছুটা উঁচু করে দেয়াল দিয়ে যে ঘেরা আছে কংকরটি তার বাইরে না পড়ে বা সজোরে স্তম্ভে লেগে বাইরে ছিটকে না যায়। যে কংকরটি এ ঘেরার মধ্যে না পড়বে সেটি বাদ বলে গণ্য হবে।
* উপর থেকে বা যে কোন দিক থেকে কংকর নিক্ষেপ করলেও জায়েয় হবে।
* ভীড়ের ভয়ে বা কিছুটা কষ্টের ভয়ে অন্যের মাধ্যমে কংকর নিক্ষেপ করালে ওয়াজিব আদায় হবে না। তাহলে দম দিতে হবে। অন্যের দ্বারা কংকর নিক্ষেপ করানো কেবল তখনই সহীহ হবে, যখন কংকর নিক্ষেপের স্থানে যাওয়ার মত শক্তি সামর্থ্য না থাকে অর্থাৎ, এমন পর্যায়ের অক্ষম যে, শরী’আতের দৃষ্টিতে বসে নামায পড়া তার জন্য জায়েয হয়। এ পর্যায়ের অপারগ ব্যতীত অন্য কারও পক্ষে অপরের দ্বারা কংকর নিক্ষেপ করানোর অনুমতি নেই। কংকর নিক্ষেপের পর জামরার নিকট বিলম্ব না করেই নিজ স্থানে চলে আসবেন।
* কংকর নিক্ষেপের পর দমে শোকর বা হজ্জের শোকর স্বরূপ কুরবানী করা ওয়াজিব। কুরবানী নিজে গিয়েও করা যায়, কাউকে পাঠিয়েও করানো যায়। তবে ১০ই যিলহজ্জ বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পূর্বে কুরবানী করা যায় না, করলে দম ওয়াজিব হবে। ইফরাদ হজ্জকারীদের জন্য এই কুরবানী ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব। কুরবানীর অন্যান্য মাসায়েল সাধারণ ঈদুল আযহার কুরবানীর ন্যায়।
* উল্লেখ্য যে, ৭ বা ৮ তারিখ মিনায় রওনা হওয়ার পূর্বে কেউ যদি মক্কায় ১৫ দিন বা তার বেশী অবস্থানের কারণে মুকীম হয়ে গিয়ে থাকে এবং সে ছাহেবে নেছাব হয়, তাহলে হজ্জের কুরবানী ব্যতীত ঈদুল আযহার কুরবানী ও তার উপর ওয়াজিব হবে।
* দমে শোকর বা হজ্জের কুরবানী করার পর হলক (মাথা মুণ্ডানো) বা কছর করা (চুল ছাঁটা) ওয়াজিব। এই হলক বা কছর বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপ ও কুরবানী করার পরে করা ওয়াজিব, পূর্বে করা যাবে না, করলে দম দিতে হবে। এই হলক বা কছর করার পর ইহরামের পোশাক খোলা যাবে এবং ইহরামের অবস্থায় যা যা নিষিদ্ধ ছিল তা জায়েয হয়ে যাবে। শুধু তওয়াফে জিয়ারত করার পূর্বে স্ত্রী সম্ভোগ হালাল হবে না।
* তওয়াফে জিয়ারত করা ফরয। ১০ই যিলহজ্জ সুবহে সাদেক থেকে ১২ই যিলহজ্জ সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত এই তওয়াফ করা যায়। তার পরে করলে মাকরূহ তাহরীমী হবে এবং দম দিতে হবে। তবে মহিলাগণ এই সময়ের মধ্যে হায়েয অবস্থায় থাকার কারণে তওয়াফ করতে না পারলে পরে করবেন, তাতে তাদেরকে দম দিতে হবে না। এই তওয়াফ ১০ই যিলহজ্জেই করে নেয়া উত্তম। তওয়াফের নিয়ম ও অন্যান্য মাসায়েল পূর্বে যা বর্ণিত হয়েছে এ তওয়াফের বেলায়ও তা চলবে।
* তওয়াফে জিয়ারতের সায়ী করা ওয়াজিব। তবে পূর্বে তামাত্তুকারী নফল তওয়াফ করে বা ইফরাদ ও কেরানকারী তওয়াফে কুদূমের পর এই সায়ী অগ্রিম করে থাকলে আর এখন সায়ী করতে হবে না। যদি পূর্বে এই সায়ী করা হয়ে থাকে তাহলে তওয়াফে জিয়ারতের পর সায়ী থাকবে না, তাই তখন তওয়াফে জিয়ারতে রমলও করতে হবে না। আর তওয়াফে জিয়ারতের পূর্বে ইহরামের কাপড় খুলে থাকলে এজতেবাও নেই। সায়ীর অন্যান্য মাসায়েল পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।
* ১০ই যিলহজ্জ দিবাগত রাত মিনায় থাকা সুন্নাত। তাই এই রাতে তওয়াফে জিয়ারত করলে তওয়াফ সেরে মিনায় ফিরে যাবেন।
* ১১ই যিলহজ্জ পর্যায়ক্রমে ছোট জামরা (সর্ব পূর্বের জামরা) তারপর মধ্যম জামরা, তারপর বড় জামরায় ৭টি করে কংকর নিক্ষেপ করবেন। এই কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। ছোট জামরা ও মধ্যম জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর ভীড় থেকে একটু দূরে সরে কেবলামুখী হয়ে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার ইত্যাদি পড়বেন এবং দোয়া করবেন। তবে বড় জামরায় নিক্ষেপের পর এরূপ করবেন না।
* ১১ই যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপের সময় শুরু হবে সূর্য ঢলার পর থেকে, এর পূর্বে করলে আদায় হবে না। সূর্য ঢলার পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত হল সুন্নাত সময়, আর সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত মাকরূহ সময়। তবে দুর্বল, মা’যূর ও মহিলাদের জন্য মাকরূহ নয়। কংকর নিক্ষেপের নিয়ম ও মাসায়েল পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। ১১ই যিলহজ্জ দিবাগত রাতও মিনায় থাকবেন।
* ১২ই যিলহজ্জ তারিখও ১১ই যিলহজ্জের ন্যায় তিন জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। অনেকেই ১২ই যিলহজ্জ তারিখে জলদি জলদি মক্কায় ফিরে যাওয়ার জন্য সূর্য ঢলার পূর্বেই কংকর নিক্ষেপ করে ফেলেন, অথচ এটা না জায়েয। এরূপ করলে পুনরায় সূর্য ঢলার পর তাদেরকে কংকর নিক্ষেপ করতে হবে, নতুবা দম দিতে হবে।
* ১২ই যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপ করে মক্কায় ফিরে যাওয়া জায়েয, তবে ১৩ই যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপ করে তারপর মক্কায় ফিরে যাওয়া উত্তম। ১২ই যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপ করে মক্কায় ফিরতে চাইলে সূর্যাস্তের পুর্বেই মিনা থেকে বের হয়ে যাবেন। সূর্যাস্তের পর ফিরা মাকরূহ। তবে দুর্বল, মা’যূর ও মহিলাগণ সুবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত কারাহাত ছাড়াই ফিরতে পারেন। আর যদি মিনার সীমানাতেই সুবহে সাদেক হয়ে যায়, তাহলে সকলেরই জন্যে ১৩ তারিখেও তিন জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব হয়ে যায়- না করলে দম দিতে হবে।
* ১৩ই যিলহজ্জ যদি সূর্য ঢলার পূর্বেই কংকর নিক্ষেপ করে মক্কায় ফিরতে চান তা করতে পারেন, কিন্তু তা উত্তম নয় মাকরূহ। এ তারিখেও কংকর নিক্ষেপ করার সুন্নাত সময় হল সূর্য ঢলার পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। এ দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর সময় একেবারেই শেষ হয়ে যায়। অতএব এ দিনের কংকর অবশ্যই সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বেই করে নিতে হবে। ১২ বা ১৩ই যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপের পর মক্কায় ফেরার সময় সুন্নাত হল ‘মুহাসাব’ নামক স্থানে (বতৃমান নাম মু‘আবাদ) কিছুক্ষণ অবস্থান করা। বরং পূর্ণ সুন্নাত হল সেখানে জোহর, আসর, মাগরিব ও ইশার নামায পড়া। অনন্তর কিছুক্ষণ শুয়ে বা নিদ্রা যেয়ে তারপর মক্কায় ফিরে যাওয়া। মক্কায় পৌছার পর বিদায়ী তওয়াফ ছাড়া হজ্জের আর কোন জরুরী কাজ বাকী নেই।
* বিদায়ী তওয়াফ করা ওয়াজিব। হায়েয নেফাস সম্পন্ন মহিলাদের জন্য ওয়াজিব নয়, তবে মক্কা থেকে বের হওয়ার পূর্বে পবিত্র হয়ে গেলে ওয়াজিব হয়ে যায়। এ তওয়াফে রমল ও এজতেবা করতে হয় না। এ তওয়াফের পর সায়ীও নেই ৷ মক্কা শরীফ থেকে বিদায়ের পূর্ব মুহূর্তে এ তওয়াফ করতে হয়। তওয়াফ শেষে মুল্তাযাম, কা’বা শরীফের দরজা, হাতীম প্রভৃতি স্থানে দোয়া ও যমযমের পানি পান করে সর্বশেষ মুহূর্তে বিরহের বেদনা নিয়ে দোয়া করুন, বিশেষভাবে এটাই যেন বায়তুল্লাহর শেষ জিয়ারত না হয়-আবারও যেন আসার তওফীক হয় এই মর্মে দোয়া করে বিদায় নিন। মহিলাদের হায়েযের দিনগুলিতে রওয়ানা হতে হলে, বিদায়ী তওয়াফ না করেই রওয়ানা হবে, তাতে দম দিতে হবেনা। এ অবস্থায় তারা মসজিদে হারামে প্রবেশ না করে যে কোন দরজার দিকে বাইরে দাঁড়িয়ে দোয়া করে নিবেন। এভাবে দূর থেকেই কা’বা শরীফের জিয়ারত করে বিদায় নিবে।
* তওয়াফে জিয়ারতের পর কোন নফল তওয়াফ করে থাকলেও বিদায়ী তওয়াফের ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়।
* বিদায়ী তওয়াফের পর আর মসজিদে হারামে যাওয়া যায় না- এ কথাটি ভুল বরং নামাযের সময় হলে সেখানে গিয়ে নামায আদায় করা, সময় সুযোগ হলে আরও নফল তওয়াফ করা জায়েয। অযথা নিজেকে এই বরকত থেকে বঞ্চিত রাখা ঠিক নয়। তবে বিদায়ী তওয়াফের পর রওয়ানা করতে বিলম্ব হয়ে গেলে রওয়ানা হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে আবার বিদায়ী তওয়াফ করে নেয়া মোস্তাহাব ও উত্তম।
বদলী হজ্জের মাসায়েল
* হজ্জ ফরয হওয়ার পর যে হজ্জ করেনি বা দরিদ্র হয়ে যাওয়ার কারণে বা পঙ্গু, অন্ধ, লেংড়া প্রভৃতি রোগ কিংবা যানবাহনে বসতে অক্ষম হওয়ার মত বৃদ্ধ হওয়ার কারণে বা পথ নিরাপদ না থাকার কারণে বা মহিলার মাহরাম না পাওয়ার কারণে হজ্জ করতে পারেনি মৃত্যুর পূর্বে তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ করানোর ওছিয়াত করে যাওয়া ওয়াজিব। ওছিয়াত না করলে পাপ হবে। সামান্য অর্থের মায়ায় পড়ে হজ্জ ত্যাগ করা বা ওছিয়াত ত্যাগ করা বড়ই বোকামী।
* মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের মধ্যে যদি বদলী হজ্জ করানো সম্ভব হয়, তাহলে ওয়ারিছদের উপর ওছিয়াত মোতাবেক বদলী হজ্জ করানো ওয়াজিব। আর এর চেয়ে বেশী অর্থের প্রয়োজন হলে ওয়ারিছগণ রাজী খুশী হয়ে সে পরিমাণ দিতে পারে। মৃত ব্যক্তি ওছিয়াত না করে গেলেও যদি তার পক্ষ থেকে তার ওয়ারিছ বা কেউ স্বেচ্ছায় নিজের অর্থ দিয়ে বদলী হজ্জ করায় তবুও আশা করা যায় মৃত ব্যক্তির হজ্জ আদায় হয়ে যাবে।
* বদলী হজ্জ পুরুষদের দ্বারা করানো উত্তম এমন আলেম দ্বারা করানো উত্তম যার আমল ভাল, যিনি হজ্জের মাসায়েল সম্পর্কে ভাল অবগত এবং যিনি নিজের ফরয হজ্জ পূর্বে আদায় করেছেন। মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে নফল হজ্জ বা নফল উমরা অন্যের দ্বারা করানো যায়। এমনকি জীবিত সক্ষম ব্যক্তির পক্ষ থেকেও নফল হজ্জ বা উমরা অন্যের দ্বারা করানো যায়।
* বদলী হজ্জে ইফরাদ হজ্জ করতে হবে। হজ্জ করানেওয়ালা অনুমতি দিলে কেরান হজ্জও করতে পারবে। কিন্তু কেরান হজ্জ করলে কুরবানী (দমে শোকর) হজ্জকারীর নিজের অর্থ থেকে করতে হবে। হজ্জওয়ালা অনুমতি দিলে তার অর্থ থেকেও করা যায়। হজ্জ করানেওয়ালা অনুমতি দিলে বদলী হজ্জে তামাত্তু হজ্জও করা যায়। দলীলের ভিত্তিতে এমতটিই প্রাধান্য পাওয়ার যোগ্য। তবে এ ব্যাপারে ভিন্ন মতও রয়েছে বিধায় এহরাম লম্বা হওয়া জনিত পরিস্থিতি সইতে পারা যাবে না— এমন না হলে তামাত্তু করা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।
* বদলী হজ্জে ইহরাম বাঁধার সময় কার পক্ষ থেকে হজ্জের এহরাম বাধা হচ্ছে মুখে সেটা বলে নেয়া উত্তম, যদিও শুধু অন্তরে নিয়ত থাকলেও যথেষ্ঠ।
নফল উমরা ও নফল তওয়াফের মাসায়েল
* বৎসরের পাঁচ দিন ব্যতীত যে কোন উমরার ইহরাম বাধা যায়। উক্ত পাঁচ দিন হল ৯ই যিলহজ্জ থেকে ১৩ই যিলহজ্জ।
* রমযানে উমরা করা মোস্তাহাব ও উত্তম। হাদীস শরীফে এসেছেঃ রমযানে উমরা করা হজ্জের সমতুল্য।
তামাত্তু হজ্জকারী ব্যক্তি ওয়াজিব উমরা থেকে ফারেগ হওয়ার পর হজ্জের পূর্বে নফল উমরা করতে পারেন।
* ইহরাম মুক্ত অবস্থায় যত বেশী সম্ভব নফল তওয়াফ করা উত্তম বরং হাজীদের জন্য নফল উমরার চেয়ে নফল তওয়াফ করা অধিক উত্তম।
* নফল তওয়াফে রমল ও এজতেবা নেই এবং তওয়াফের পর সায়ীও নেই। তবে তওয়াফের পর সালাতুত্তাওয়াফ দুই রাকআত নামায পড়তে হবে।
* নিজের জন্য বা জীবিত কিংবা মৃত পিতা-মাতা, আৰীয়-স্বজন, উস্তাদ, পীর বুযুর্গ বা যে কোন ব্যক্তিকে ছওয়াব পৌঁছানোর জন্য উমরা ও তওয়াফ করা যেতে পারে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বিবিদের নামেও নফল উমরা বা নফল তওয়াফ করা যেতে পারে।
বিঃ দ্রঃ উমরা ও তওয়াফের অন্যান্য মাসায়েল পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।
যেসব কারণে দম বা সদকা দিতে হয়
* হজ্জ বা উমরার মধ্যে কিছু এমন ভুল-ত্রুটিও হতে পারে যার কারণে দম দেয়া ওয়াজিব হয়ে যায়। আবার এমন কিছু ভুল-ত্রুটিও হয় যার কারণে দম ওয়াজিব হয় না তবে সদকা ওয়াজিব হয়। “দম” বলতে সাধারণভাবে একটা পর্ণি বকরী বা ভেড়া বা দুম্বা, কিংবা গরু, মহিষ ও উটের এক সপ্তমাংশ বোঝায়। আর “সদকা” বলতে সাধারণভাবে একটা ফিতরা পরিমাণ দান করাকে বোঝায় এবং একজন ফকীরকে এই পরিমাণের চেয়ে কম দেয়া যাবে না। এই দম-এর প্রাণী হারামের সীমানার মধ্যে জবাই হওয়া জরুরী এবং কুরবানীর যোগ্য হয়ে যাওয়া জরুরী।
* এহরাম অবস্থায় মাথা, চেহারা, দাড়ি, হাত, হাতের তালু, পায়ের গোছা, রান ইত্যাদি বড় অঙ্গের পূর্ণ স্থানে খুশবু লাগালে দম ওয়াজিব হয়। নাক, কান, গোঁপ, আঙ্গুল প্রভৃতি ছোট অঙ্গেও বেশী পরিমাণ খুশবু লাগালে দম ওয়াজিব হয়। তবে ছোট অঙ্গে অল্প পরিমাণ খুশবু লাগালে দম নয় বরং সদকা ওয়াজিব হয়।
* শরীরের বিভিন্ন স্থানে খুশবু লাগালে দেখতে হবে যদি তা একত্রিত করলে বড় অঙ্গের সমপরিমাণ হয়ে যেত বলে মনে হয়, তাহলেও দম দিতে হবে।
* যদি কাপড়ে খুশবু লাগায় বা খুশবু লাগানো কাপড় পরিধান করে, তাহলে খুশবুর পরিমাণ এক বর্গবিঘত বা তার বেশী হলে এবং পূর্ণ এক রাত বা পুর্ণ একদিন পরিধান করলে দম ওয়াজিব হবে। আর খুশবুর পরিমাণ তার চেয়ে কম হলে বা পুর্ণ একরাত কিংবা পূর্ণ একদিনের চেয়ে কম সময় পরিধান করলে সদকা ওয়াজিব হবে।
* জাফরান বা কুসুম রঙ্গের কাপড় পূর্ণ একদিন বা পূর্ণ একরাত পরিধান করলে দম ওয়াজিব হবে। আর তার চেয়ে কম সময় পরিধান করলে সদকা ওয়াজিব হবে।
* এহরাম অবস্থায় মহিলাগণ হাতে মেহেদি লাগালে দম ওয়াজিব হয়। পুরুষগণ পূর্ণ হাতের তালু বা সমস্ত দাড়িতে মেহেদি লাগালে দম ওয়াজিব হবে।
* পুরুষগণ শরীরের পরিমাপে বানানো হয়েছে এমন সেলাইযুক্ত পোশাক এহরামের সময় স্বাভাবিক নিয়মে পূর্ণ একদিন বা পূর্ণ একরাত পরিমাণ সময় বা তার চেয়ে বেশী সময় পরিধান করলে দম ওয়াজিব হবে। তার চেয়ে কম সময় (সর্বনিম্ন এক ঘন্টা) পরিধান করলে সদকা ওয়াজিব হবে। আর এক ঘন্টার চেয়ে কম সময় পরিধান করলে নিয়মিত সদকা নয় বরং এক মুষ্টি গম সদকা করলে (অর্থাৎ, সামান্য কিছু পয়সা দান করলে) চলবে।
* পুরুষগণ এহরাম অবস্থায় পায়ের মধ্যবর্তী উঁচু হাড় ঢাকা পড়ে-এমন জুড়া, বুট বা মোজা পূর্ণ একদিন বা পূর্ণ একরাত পরিমাণ সময় পরিধান করে থাকলে দম ওয়াজিব হবে। তার চেয়ে কম সময় হলে সদকা ওয়াজিব হবে।
* এহরাম অবস্থায় পূর্ণ একদিন বা পূর্ণ একরাত কিংবা তার চেয়ে বেশী পরিমাণ সময় পুরো মাথা বা পুরো চেহারা কিংবা অন্ততঃ চার ভাগের একভাগ কোন কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখলে দম ওয়াজিব হবে। আর তার চেয়ে কম সময় হলে সদকা ওয়াজিব হবে। মহিলাদের চেহারায় কাপড় লাগানোর ক্ষেত্রেও অনুরূপ মাসআলা, তবে বরতন টুকরি ইত্যাদি- যা দ্বারা স্বাভাবিক ভাবে ঢাকা হয় না- এরূপ কিছু দ্বারা ঢাকলে (পূর্ণ মাথা, চেহারা ঢাকুক বা কম) কিছু ওয়াজিব হবে না।
* ইহরাম অবস্থায় (এহরাম খোলার সময় হওয়ার পূর্বে) মাথা বা দাড়ির চুলের এক চতুর্থাংশ কিংবা তার চেয়ে বেশী পরিমাণ মুন্ডন করলে বা কাটলে বা উপড়ালে বা কোন কিছু দ্বারা দূর করলে দম ওয়াজিব হবে। আর তার চেয়ে কম পরিমাণ হলে সদকা ওয়াজিব হবে।
* পূর্ণ ঘাড় বা পূর্ণ একটা বগল বা নাভির নীচের পশম দুর করলে দম ওয়াজেব হবে। আর তার চেয়ে কম পরিমাণ হলে সদকা ওয়াজিব হবে।
* উযূ করতে যেয়ে বা কোন ভাবে মাথা কিংবা দাড়ির তিনটি চুল পড়ে গেলে এক মুষ্টি গম (পরিমাণ) সদকা করবে, আর ইচ্ছাকৃত উপড়ালে প্রত্যেক চুলের বিনিময়ে এক মুষ্টি পরিমাণ দিতে হবে। আর তিনের অধিক চুল উপড়ালে পূর্ণ সদকা দিতে হবে।
* পূর্ণ সীনা বা পূর্ণ পায়ের নলার চুল মুন্ডালে সদকা ওয়াজিব হয়। রান্না করতে গিয়ে কিছু চুল জ্বলে গেলে সদকা করবে।
* রোগের কারণে চুল পড়ে গেলে বা ঘুমন্ত অবস্থায় জ্বলে গেলে কিছু ওয়াজিব হয় না।
* এহরামের অবস্থায় হালাল ব্যক্তির মাথা মুন্ডন করে দিলে মুরিম (ইহরাম রত) ব্যক্তি যৎ সামান্য কিছু দান করবে।
* কোন মুহরিম (ইহরাম রত ব্যক্তি) অন্য কোন মুর্রিম বা হালাল ব্যক্তির গোঁপ মুন্ডন করে বা কেটে দিলে কিংবা নখ কেটে দিলেও কিছু পরিমাণ (যা ইচ্ছা হয়) সদকা করে দিবে।
* ইহরাম অবস্থায় এক হাত বা এক পা, কিংবা দুই হাত বা দুই পা, অথবা চার হাত পায়ের নখ একই মজলিসে কাটলে একটা দম ওয়াজিব হয়। চার মজলিসে চার অঙ্গের নখ কাটলে চারটা দম ওয়াজিব হয়। দুই মজলিসে দুই হাতের নখ কাটলে দুটো দম ওয়াজিব হয়।
* পাঁচ আঙ্গুলের কম নখ কাটলে বা পাঁচ আঙ্গুলের নখ ভিন্ন ভিন্ন মজলিসে কাটলে বা বিচ্ছিন্ন ভাবে চার হাত পায়ের ষোলটা নখ কাটলে প্রত্যেকটা নখের বদলে এক একটা সদকা দিতে হবে। অবশ্য সবগুলো সদকার মূল্য একত্রে একটা দমের মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে গেলে কিছুটা কম করে দিবে।
* ভাঙ্গা নখ কাটলে কিছু দেয়া ওয়াজিব হয় না।
* শাহওয়াত (উত্তেজনা) সহকারে কোন নারী বা বালককে চুমু দিলে কিংবা পরস্পরে লজ্জাস্থান মিলিত করলে দয ওয়াজিব হয়, বীর্যপাত হোক বা না হোক। তবে হজ্জ ফাসেদ হয় না।
* শাহওয়াত (উত্তেজনা) সহকারে কোন নারীর প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে বা মনে মনে কল্পনা করার কারণে বীর্যপাত হলে বা স্বপ্নেদোষ হলে কিছু ওয়াজিব হয় না। তবে গোসল ওয়াজিব হয়।
* হস্তমৈথুন করে বীর্যপাত ঘটালে কিংবা কোন প্রাণী কিংবা শাহওয়াতের অযোগ্য ছোট মেয়ের সাথে সঙ্গম করলে এবং বীর্যপাত হলে দম ওয়াজিব হবে। বীর্যপাত না হলে কিছু ওয়াজিব হবে না। তবে গোনাহতো হবেই।
* উকূফে আরাফা-র পূর্বে সঙ্গম করলে বীর্যপাত হোক বা না হোক দম ওয়াজিব হবে। নারী পুরুষ উভয়ে মুর্রিম হলে উভয়ের উপর পৃথক পৃথক দম ওয়াজিব হবে। এমতাবস্থায় হজ্জ ফাসেদ হয়ে যাবে। তবে এ বৎসরও অবশিষ্ট হজ্জের ক্রিয়াদি যথারীতি আদায় করতে হবে। পরবর্তী বৎসর হজ্জের কাযা আদায় করতে হবে।
* উকূফে আরাফা-র পর মাথা হলক বা কছর ও তওয়াফে জিয়ারত করার পূর্বে সঙ্গম করলে হজ্জ ফাসেদ হবে না তবে পূর্ণ একটা গরু বা উট দম দিতে হবে। মাথা হলক বা কছর করার পর এবং তওয়াফে জিয়ারতের পূর্বে সঙ্গম হলেও মুহাক্কিক উলামায়ে কেরামের মতে অনুরূপ পূর্ণ একটা গরু বা উট দম দিতে হবে।.
* জানাবাত বা হায়েয নেফাস অবস্থায় তওয়াফে জিয়ারত করলে পূর্ণ গরু বা উট দম দিতে হবে।
* কারেন (কেরান হজ্জকারী) ব্যক্তি উমরা-র তওয়াফ এবং উকৃষ্ণে আরাফা-র পূর্বে সঙ্গম করলে হজ্জ উমরা উভয়টা ফাসেদ হয়ে যাবে এবং দুটো দম ওয়াজিব হবে। আর আগামীতে হজ্জ উমরা উভয়টা কাযা করতে হবে।
* উমরা করনেওয়ালা তওয়াফের পর সায়ীর পূর্বে কিংবা তওয়াফ ও সায়ীর পর মাথা হলক বা কছর করার পূর্বে সঙ্গম করলে উমরা ফাসেদ হয় না তবে দম দিতে হয়।
* এহরাম অবস্থায় একটা উকুন মারলে রুটির এক টুকরা অথবা একটা খেজুর দান করবে এবং দুটো বা তিনটা উকুন মারলে এক মুষ্টি গম (এর পরিমাণ) দান করবে। আর তিনের অধিক উকুন মারলে পূর্ণ একটা সদকা দিতে হবে। উকুন মারার জন্য কাপড় রৌদ্রে দিলে বা উকুন মারার উদ্দেশ্যে কাপড় ধৌত করলে এবং উকুন মারা গেলেও একই মাসায়েল। অন্যের দ্বারা উকুন মারানো বা ধরে মাটিতে জীবিত ছেড়ে দেয়াও অনুরূপ।
* ৯ই যিলহজ্জ সূর্যাস্তের পূর্বে আরাফা ময়দানের সীমানা ত্যাগ করলে দম দিতে হবে।
* পুরুষগণ সুব্হে সাদেক হওয়ার পূর্বে মুযদালেফা ময়দান ত্যাগ করলে দম দিতে হবে।
* যদি কেউ সব কয়দিনের রমী (কংকর নিক্ষেপ) পরিত্যাগ করে অথবা এক দিনের রমী পূর্ণ পরিত্যাগ করে কিংবা এক দিনের রমী-র অধিকাংশ পরিত্যাগ করে (যেমন দশ তারিখে ৪টা কংকর কম নিক্ষেপ করল কিংবা অন্য যে কোন দিন ১১টা কংকর কম নিক্ষেপ করল) তাহলে এ সকল অবস্থায় দম ওয়াজিব হবে। আর যদি এক দিনের রমী থেকে অল্প সংখ্যক কংকর কম থেকে যায় তাহলে প্রত্যেক ছুটে যাওয়া কংকরের বদলায় একটা পূর্ণ সদকা ওয়াজিব হবে। তবে সব সদকা একত্রে একটা দম-এর সমমূল্যের হয়ে গেলে কিছুটা কম করে দিবে।
* কেরান ও তামাত্তু হজ্জকারীদের জন্য দমে শোকর বা হজ্জের কুরবানী করা ওয়াজিব। না করলে দম দিতে হবে।
* কেরান ও তামাত্তু হজ্জকারীদের জন্য ১০ই যিলহজ্জ প্রথম বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপ, তারপর কুরবানী ও তারপর মাথা মুন্ডানো-এই তারতীব রক্ষা করা ওয়াজিব এবং ইফরাদ হজ্জকারী-র জন্য প্রথমে কংকর নিক্ষেপ তারপর মাথা মুন্ডানো-এই তারতীব রক্ষা করা ওয়াজিব। এই তারতীবের মধ্যে ওলট পালট হলে দম ওয়াজিব হবে।
* ১১ও ১২ই যিলহজ্জ সূর্য ঢলার পূর্বেই কংকর নিক্ষেপ করলে পুনরায় সূর্য ঢলার পর কংকর নিক্ষেপ করতে হবে। না করলে দম দিতে হবে।
* মীনার সীমানাতেই ১৩ই যিলহজ্জের সুবহে সাদেক হয়ে গেলে ১৩ই তারিখেও তিন জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। না করলে দম দিতে হবে।
* বিদায়ী তওয়াফ করা ওয়াজেব। না করলে দম দিতে হবে।
* ইহরাম অবস্থায় হারামের সীমানার ভিতরে বা বাইরে যে কোন স্থানে স্থলভাগে জন্মগ্রহণকারী প্রাণী শিকার করা হারাম। আর এহরাম অবস্থায় না থাকলে শুধু হারামের সীমানার ভিতরে এরূপ প্রাণী শিকার করা হারাম। এরূপ (হারাম) শিকার করলে উক্ত প্রাণীর স্থানীয় মূল্য (যা শিকারী ব্যতীত অন্য দু’জন বা একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি তখনকার বাজার দর হিসেবে নির্ধারণ করবে।) গরীব সিমকীনদেরকে দান করবে অথবা তা দ্বারা প্রাণী ক্রয় করে হারামের সীমানার ভিতরে জবাই করে দিবে কিংবা তা দ্বারা গম ক্রয় করে মিসকীনদেরকে দিবে। এই টাকা বা গম দেয়ার ক্ষেত্রে একজনকে এক ফিতরা পরিমাণ দিবে। অবশিষ্ট কিছু এক ফিতরা পরিমাণের চেয়ে কম রয়ে গেলে বা শিকারকৃত প্রাণীর মূল্যই এত কম হলে তা-ই একজনকে দিবে। একজন মিসকীনকে দেয় পরিমাণের বদলে একটা করে রোযা রাখলেও চলবে। এ রোযা যে কোন স্থানে রাখা চলে।
* যে সমস্ত গাছ সাধারণতঃ কেউ রোপন করেনা- এমন কোন গাছ হারাম শরীফের সীমানার মধ্যে আপনা আপনি জন্মালে তা কাটা বা ভাঙ্গা নিষেধ। কাটলে বা ভাঙ্গলে তার মূল্য দান করা ওয়াজিব। বিঃ দ্রঃ যে সব ভুল-ত্রুটির কারণে দম ওয়াজিব হওয়ার কথা বর্ণনা করা হয়েছে তা যদি কোন ওজর বশতঃ হয়, তাহলে দম-এর পরিবর্তে ছয়টা ফিতরা পরিমাণ অর্থ ছয়জন মিসকীনকে দান করলে বা তিনটা রোযা রাখলেও চলবে। তবে বিনা ওজরে হলে দমই দিতে হবে। আর যেসব ভুল-ত্রুটির কারণে সদকা ওয়াজিব হওয়ার বর্ণনা করা হয়েছে তা যদি ওজর বশতঃ হয়, তাহলে
‘সদকা’-এর পরিবর্তে তিনটা রোযা রাখলেও চলবে, তবে বিনা ওজরে হলে ,সদকাই দিতে হবে। ওজর বলতে বোঝানো হয়েছে :
(১) যে কোন ধরনের জ্বর,
(২) প্রচন্ড গরম বা প্রচন্ড শীত,
(৩) জখম,
(৪) পূর্ণ মাথায় বা অর্ধেকে বেদনা,
(৫) মাথায় খুব বেশী উকুন হওয়া,
(৬) ঢুস লাগানো,
(৭) রোগ বা শীতের কারণে মৃত্যুর প্রবল ধারণা হয়ে যাওয়া এবং
(৮) যুদ্ধের জন্য অস্ত্রসজ্জিত হওয়া।
প্রিয় পাঠক, আশাকরি এই পোষ্টটি থেকে হজ্জ এর A টু Z সকল নিয়ম, হজ্জ কত প্রকার? কি কি? কোন হজ্জে কি কি করতে হয়? কি কি করা যায় না? হজ্জের সকল নিয়মনীতি ও মাসায়েল জানতে পেরেছেন। আল্লাহ ামাদের সঠিক নিয়ম মেনে হজ্জ পালন করার তৈফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।
সূত্রঃ আহকামে জিন্দেগী।