⭐⭐⭐⭐⭐
বিষয়: হাঁসের খাদ্য তালিকা/হাঁসের খাবার তৈরি/উন্নত জাতের হাসের খামার পরিচালনা/হাস পালন পদ্ধতি/হাঁস পালন প্রশিক্ষণ।
হ্যাশট্যাগ: #হাঁসের খাদ্য তালিকা #হাঁসের খাবার তৈরি #উন্নত জাতের হাসের খামার #হাস পালন পদ্ধতি #হাঁস পালন প্রশিক্ষণ।
প্রিয় খামারিয়ান বন্ধুরা, আসসলামু আলইকুম, পূর্ববর্তী পোষ্টে আমরা হাঁসের উন্নত জাতের নাম ও পরিচিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনার অনেকেই উন্নত জাতের হাঁসের খামার করতে আগ্রহী রয়েছেন এবং হাঁসের খাদ্য তালিকার ফর্মুলা দেওয়ার জন্য অনেকেই কমেন্ট বক্সে অনুরোধ করেছিলেন। অবশেষে আজকে হাজির হলাম হাঁসের খাদ্য তালিকায় বিষয়ক আলোচান নিয়ে। আমরা অনেক সময় ব্যয় করে আপনাদের জন্য কন্টেন্ট তৈরি করি ও লিখি। এ ধরণের কন্টেন্ট আরও তৈরি করতে, আশা করে আমাদের আরও উৎসাহিত করবেন। চলুন আজকের পোষ্টটি শুরু করা যায়।
হাঁসের খাদ্য তালিকার ধারণা
- হাঁস উদর সর্বস্ব প্রাণী। হাঁসকে এমন মিশ্র খাদ্য দেয়া উচিত যে খাদ্য শেষ করতে ওদের বড় একটা দেরী হয় না।
- শামুক হাঁসের একটি প্রিয় খাদ্য।
- খৈল ও মাছের গুঁড়ো হাঁস বেশ পছন্দ করে। হাঁসের খাদ্য তালিকায় দানা অথবা মিশ্র খাদ্য যা কিছু হাঁসকে খেতে দেয়া হোক না কেন সব কিছু পানিতে ভিজিয়ে ভালোভাবে গরম করে হাঁসকে খেতে দেয়া উচিত।
- হাঁসের খাদ্য তালিকার হাঁসের খাদ্য কোন সময়ই মাটিতে ছড়িয়ে দেয়া উচিত নয়। কারণ ওদের ঠোট চ্যাপ্টা চোংগার মত বলে ওরা খুটে খেতে পারে না।
- একটি পূর্ণ বয়স্ক হাঁসের জন্য প্রতিদিন ১৩০-১৪৫ গ্রাম খাবারের হাঁসের খাদ্য তালিকা থাকা প্রয়োজন।
- তবে ওরা পুকুরে বা ডোবায় চড়ে খেলে এদেরকে তেমন খাবার দেয়া লাগে না।
- হাঁস নিজেদের খাবারের প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ নিজেরাই সংগ্রহ করে কায়।
- গৃহস্থবাড়িতে যে সব খাদ্য দ্রব্য ফেলে দেয়া হয় তা সবটাই হাঁসের পক্ষে ভালো খাদ্য।
- মানুষের খাদ্যের ন্যায় হাঁসের খাদ্য তালিকাতেও ৬টি উপাদান যেমন-আমিষ, শর্করা, স্নেহ বা তৈল, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও পানি থাকে।
হাঁসের খাদ্য তালিকায় থাকা খাদ্যের উৎস
- আমিষ-মাছের গুড়া, শামুক, ঝিনুকের ভিতরের অংশ ইত্যাদি। শর্করা-গম, ধান, গমের ভূসি, চাউলের কুড়া ইত্যাদি। স্নেহ বা তৈল-তিলের বা অন্যান্য খৈল, সরিষা ইত্যাদি
- লবণ বা খনিজ দ্রব্য লবণ শতকরা ০.৫ ভাগ এবং ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস অস্থি গঠন ও ডিমের খোসা তৈরীর জন্য দরকার। ভিটামিন-গুড়া ভিটামিন যেমন এমবাভিট, সুপারফেকজি, সবুজ শাক সবজি, মাছের তৈল (সার্ক লিভার ওয়েল) ইত্যাদি।
হাঁসের খাদ্য তালিকায় আমিষের শতকরা ভাগ
- বাচ্চার খাদ্য ( ১ দিন হতে ২ মাস) ২০%
- বাড়ন্ত বাচ্চা (২ মাস হতে ৫ মাস পর্যন্ত) ১৮%
- ডিম পাড়া হাঁসি ১৬%
- প্রজননের ডিম পাড়া হাঁসির জন্য ১৮%

হাঁসের খাদ্য তালিকা-১
১। গম= ৪০%
২। গমের ভূষি= ১৫%
৩। চাউলের কুড়া= ১২%
৪। তিলের খৈল= ২০%
৫। মাছের গুড়া= ৫%
৬। ঝিনুকচূর্ণ= ৭.২৫%
৭। লবণ= ০.৫০%
৮। ভিটামিন= ০.২৫%
এই হলো হাঁসের খাদ্য তালিকায় মোট= ১০০ ভাগের মিশ্রণ।
সর্বদা আবদ্ধ অবস্থায় হাঁস পালন করলে এবং সম্পূর্ণ খাবার সরবরাহ করতে হলে উপরের লিখিত ফর্মূলার খাবার তৈরী করতে হবে। ছাড়া অবস্থায় হাঁস পালন করলে উক্ত হাঁসের খাদ্য তালিকার ফরমুলায় খাবার তৈরী করার দরকার নেই। এ অবস্থায় প্রয়োজন মত গম, গমের ভূষি ও চাউলের কুড়া সরবরাহ করলেই চলবে।
হাঁসের খাদ্য তালিকা-২
১০০০ কেজি ৯৬% ডিম পাড়া হাঁসির জন্যঃ
খাদ্যের উপাদান | আমিষের পরিমাণ | সরবরাহকৃত উপাদান (কেজি) | |
১। গম ভাঙ্গা | ১২% | ৪০ | ৪.৮ |
২। চাউলের কুড়া | ১৪% | ২০ | ২.৮ |
৩। গমের ভূষি | ১২% | ১৫ | ১.৮ |
৪। তিলের খৈল | ৩০% | ১২ | ৩.৬ |
৫। মাছের গুড়া | ৫০% | ৫ | ৩.০ |
৬। ঝিনুকচূর্ণ | _ | ৭.২৫ | _ |
৭। লবণ | _ | ০.৫ | _ |
৮। ভিটামিন (গুড়া) | _ | ০.২৫ | _ |
হাঁসের খাদ্য তালিকা-৩
বয়স অনুযায়ী একটি খাকী ক্যাম্পবেল হাঁসের খাদ্য তালিকায় দৈনিক খাদ্যের পরিমাণঃ
বয়স (সপ্তাহ) | গড় খাবারের পরিমাণ |
৯ ১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯ ২০ ২১ প্রাপ্ত বয়স্ক | ১০০ গ্রাম ১১০ গ্রাম ১২০ গ্রাম ১৩০ গ্রাম ১৩৫ গ্রাম ১৪৫ গ্রাম ১৪৫ গ্রাম ১৪৫ গ্রাম ১৪০ গ্রাম ১৪০ গ্রাম ১৪০ গ্রাম ১৪০ গ্রাম ১৪০ গ্রাম ১৮০-১৬০ গ্রাম |

হাঁসের খাদ্য তালিকার বিভিন্ন উপাদানঃ
খাদ্যের মধ্যে আমিষ জাতীয় উপাদান অত্যাধিক প্রয়োজন। আমিষের অভাবে শরীরের পুষ্টিহীনতা, দুর্বলতা, আমিষ উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
সাধারণত আমিষ সমৃদ্ধ খাদ্য উপকরণের মূল্য অত্যাধিক বেশি। সেজন্যে হাঁস মুরগির খাদ্যে সর্বনিম্ন পরিমাণ আমিষের প্রয়োজনীয়তা আমাদের জানা দরকার যার মাধ্যমে শরীরের পুষ্টি ও উৎপাদন ক্ষমতা বজায় থাকে এবং উৎপাদন বাড়ানো যায়।
সাধারণত হাঁস মুরগির খাদ্যে মোট আমিষের শতকরা ২৫ ভাগ প্রাণীজ আমিষ অবশ্যই প্রয়োজন।
এখানে প্রাণীজ আমিষের সর্বনিম্ন পরিমাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কম মূল্যে এবং সহজ লভ্য হলে প্রাণীজ অথবা উভয় জাতীয় আমিষের পরিমাণ বাড়ানো যায়।
আমিষ জাতীয় খাদ্যকে তার উৎস অনুসারে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে যেমন (ক) প্রাণীজ আমিষ ও (খ) উদ্ভিজ আমিষ।
হাঁসের খাদ্য তালিকায় প্রাণীজ আমিষঃ
১. ফিশমিল
- বিভিন্ন প্রকার মাছ শুকিয়ে গুড়া করে এই খাদ্য উপকরণ তৈরী করা হয়। ভালো শুটকী মাছের গুড়া ময়লা আবর্জনা ও ধুলাবালি শুন্য হওয়া উচিৎ।
- ভালো শুটকী মাছে ৬০ হতে ৭০ ভাগ পর্যন্ত আমিষ থাকে।
- বিদেশে বাতাস শুন্য যন্ত্রে বৈদ্যুতিক তাপের সাহায্যে শুটকী করা হয় বলে উন্নতমানের আমিষ পাওয়া যায়। আমাদের দেশে সাধারণত রোদে শুকানো হয়ে থাকে।
- সুটকী মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খনিজ পদার্থ, বিভিটামিন (রিবোল্ফাডিন নিয়াসিন, পেনটোথেনিক এসিড এবং কোলিন) থাকে।
- শুটকী গুড়া ভালো করে শুকিয়ে পলিথিন ব্যাগে সংরক্ষণ করা হয়। ফলে বর্ষাকালে আবহাওয়া হতে জলীয়বাষ্প গ্রহণ করে পচন ধরে না।
- ‘ম্যাশ’ খাদ্যে শতকরা ৫ ভাগ হতে ২০ ভাগ পর্যন্ত মিশ্রণ করতে হয়। কাঁচা মাছে ৩০ হতে ৩৫ ভাগ আমিষ উপাদান থাকে। কাঁচা মাছ পর্যাপ্ত পাওয়া গেলে আধা সিদ্ধ কবে হাঁস মুরগীকে খাওয়ানো যায়।
২. মাংস
- কাঁচা মাংসে শতকরা ২০ হতে ৩০ ভাগ আমিষ থাকে।
- কোন মাংসের উচ্ছিষ্ট যেমনন-মুরগি, ছাগল, গরু ইত্যাদির নাড়ি ভুড়ি কাঁচা অবস্থায় সুলভ মূল্যে সরবরাহ পাওয়া গেলে সিদ্ধ করে ১০০ ভাগ ম্যাশ খাদ্যের সাথে শতকরা ৪০ হতে ৪৫ ভাগ মিশিয়ে অথবা পরিমাণমত আলাদা পাত্রে খাওয়ানো যায়।
- আমাদের দেশে প্রতি বছর শতকরা ১০ ভাগ গবাদি পশু ও অন্যান্য প্রাণী সংক্রামক রোগ ছাড়াও বিভিন্নভাবে মারা যায়। উন্নত দেশের মত এই সমস্ত মাংস শতকরা ৩ হতে ৭ ভাগ লবণ মিশিয়ে সিদ্ধ করে শুকিয়ে অথবা প্রসেস করে হাঁস মুরগির জন্য আমিষ খাদ্য তৈরী করা হয়।
- শহরাঞ্চলে হোটেল বা রেস্তোরায় প্রতিদিন যে সমস্ত মুরগি জবাই হয় যার নাড়ি ভুড়ি, চামড়া, ঠোঁট, পালক, পা ইত্যাদি নষ্ট করে ফেলা হয়। চিংড়ি প্রসেসিং কেন্দ্রে ছোট চিংড়ি, চিংড়ির খোলা এবং তার সাথে বেশ খানিকটা করে মাংস শুধু শুধু ফেলে দেওয়া হয়। এদের চিংড়ির চাষ বৃদ্ধির সাথে সাথে এর অপচয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যারা মুরগির চাষ করে আস্ত মুরগি বিক্রির পরিবর্তে মাংস বিক্রি করেন তারা তার উচ্ছিষ্ট অংশ সগ্রহ করতে পারেন।
- এ সমস্ত প্রসেস করার ব্যবস্থা নিলে হাঁস মুরগি চাষের জন্য সস্তায় অফুরন্ত পরিমান আমিষ খাদ্য তৈরী করা সম্ভব।
- গ্রামাঞ্চলে শামুক, ঝিনুক পুড়িয়ে চুন তৈরী করা হয়। জীবিত ঝিনুক মাংস গুরো করে আমিষ খাদ্য হয়। শামুক বা ঝিনুকের মাংস কাঁচা সিদ্ধ করে হাঁস মুরগিকে দেয়া যায়।
- কাঁচা চামরার কারখানায় চামড়া টেনিং করার সময় চামড়া হতে মাংস কেটে ফেলে দেয়। তার পরিমানও কম নয়। এ সমস্ত সংগ্রহ করে হাঁস মুরগির আমিষ খাদ্য তৈরী করা যায়।
- কসাই খানায় প্রতিদিন যে সমস্ত গবাদি পশু জবেহ করা হয় তার রক্ত হাঁস মুরগির ভালো খাদ্য। রক্তে শতকরা ৭০ হতে ৭৫ ভাগ আমিষ থাকে। এই খাদ্য সিদ্ধ করে কাঁচা খাওয়ানো যায় বা শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু রক্ত ভালো হজম হয় না বলে “ম্যাশ” খাদ্যের সাথে শতকরা ৫ হতে ১০ ভাগের বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়।
৪. যকৃত চূর্ণ
যকৃত বা মেটে হাঁস মুরগির উত্তম আমিষ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রাণীর যকৃত সিদ্ধ করে শুকিয়ে হাঁস মুরগির খাদ্য হিসাবে সংরক্ষন করা যায়। এই খাদ্যে শতকরা ৬০ হতে ৭০ ভাগ আমিষ, প্রচুর ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও উৎপাদন শক্তি আছে। খুব মুল্যবান খাদ্য বলে ম্যাশের সাথে শতকরা ৩ থেকে ৫ ভাগের বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়।
৫. দুগ্ধজাত খাদ্য
মাখন তোলা দুধ হাঁস মুরগির আমিষ খাদ্য হিসেবে খাওয়ানো যায়। বিশেষ করে বাচ্চার জন্য খুবই উপযোগী খাদ্য। বিদেশে শুকনো গুড়া দুধ হাঁস মুরগির বাচ্চার আমিষ খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। গুড়াদুধে শতকরা ৩০ ভাগ আমিষ আছে।
৬. ডিম
ডিম ফোটানো যন্ত্র হতে বাদ দেওয়া ডিম অথবা যেকোন খারাপ ডিম সিদ্ধ করে হাঁস মুরগির বাচ্চাকে খাওয়ানো যায়। এই খাদ্যে শতকরা ৩৫ ভাগ আমিষ আছে।
সমস্ত নষ্ট ডিম সিদ্ধ করে শুকিয়ে ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করা যায়।
৭. উই পোকা, লালশে লাল পিপড়া ও তাদের ডিম
এগুলোও হাঁস মুরগির ভালো উপাদেয় খাদ্য। এতে শতকরা ২০ হতে ৩০ ভাগ আমিষ থাকে। আলাদা করে বাচ্চাদের খাওয়ানো যায়।
৮. গবাদি পশুর পাকস্থলিস্থ
- পোকা ও জীবানু গবাদি পশুর পাকস্থলিস্থ পোকা জীবানু ইত্যাদি শুখানোর ফলে পোকা ও জীবানু মরে প্রাণীজ আমিষে পরিণত হয়। এ ছাড়াও এ খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি পাওয়া যায়।
- গোবর ফারমেন্টেশন হয়ে এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ তৈরী হয় যা বাচ্চাদের তাড়াতাড়ি বাড়ার শক্তি দেয়। এই গোবরের মধ্যে থাকে এই হরমুন মুরগির বাচ্চার মাথায় ঝুঁটি বা বৈল বৃদ্ধি করে।
- ডিম পাড়া মুরগিকে এই খাদ্য খাওয়ানো হলে ডিমের ভিতরে এক প্রকার পদার্থের সৃষ্টি হয়—যা তাদের বাচ্চাদের তাড়াতাড়ি বাড়তে সাহায্য করে। ম্যাশের সাথে শতকরা ৫ হতে ১৫ ভাগ মিশিয়ে মুরগি ও তার বাচ্চাদের খাওয়ানো যায়।
৯. মাছের কাটা, আশ ও উচ্ছৃষ্ট
জালের পাত্রে রোদে ভালো করে শুকিয়ে গুড়া করে হাঁস মুরগির খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
বাড়িতে একটা হামান দিস্তা থাকলে এগুলো গুড়া করে পারিবারিক খামারের মুরগিদের দেওয়া যায় অথবা ম্যাশ খাদ্যের সাথে শতকরা ৩ থেকে ৫ ভাগ হারে মিশিয়ে খাওয়ানো যায়।
এই খাদ্যে শতকরা ১৫ হতে ২০ ভাগ আমিষ আছে। বাড়িতে এবং কাছাকাছি হোটেল রেস্তোরা থেকেও এ সমস্ত উপকরণ সংগ্রহ করা যায়।
হাঁসের খাদ্য তালিকায় উদ্ভিদ জাতীয় আমিষঃ
১. তৈল জাতীয় দ্রব্যের খইল
এই সমস্ত খাদ্যের মধ্যে অত্যাধিক পরিমানে উদ্ভিদ জাতীয় আমিষ পাওয়া যায়। নারিকেল খৈল হাঁস মুরগির জন্য অত্যাধিক উপাদেয়। পলিথিন ব্যাগের মধ্যে বাতাস শূন্য অবস্থায় রাখতে হয়। আমাদের দেশের জন্য সুলভ মূল্যে তিল ও নারিকেল খৈল ভালো।
সহজ খাদ্য হলে অন্যান্য খৈল ব্যবহার করা যায়। ম্যাশ খাদ্যের সাথে শতকরা ৮ হতে ২০ ভাগ পর্যন্ত মিশানো যায়।
২. ডাল জাতীয় খাদ্য
ছোলা, মটর শুটী, কলাই, সিম, অড়হর, খেসারী ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিদ জাতীয় আমিষ আছে। সস্তা এবং সহজ লভ্য হলে এই সমস্ত ডাল আধাভাঙ্গা করে ম্যাশের সাথে শতকরা ২০ ভাগ হার পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
এই সমস্ত ডালের দানা মিশ্রিত ভূষি শতকরা ৫ হতে ১৫ ভাগ ম্যাশের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হয়। এই খাদ্যে শতকরা ২৫ হতে ৩৫ ভাগ আমিষ থাকে।
৩. গমের ভূষি
গম শর্করা জাতীয় খাদ্য। কিন্তু গমের ভূষিতে শতকরা আমিষের হার ১৫ ভাগ। গমের ভূষিতে উৎপাদন শক্তি কম বলে ‘ম্যাশের’ সাথে শতকরা ২০ ভাগের বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়।
৪. দানা মিশ্রিত গমের ভূষি
গমের সরু ভূষির সাথে গমের দানা মিশ্রিত থাকে। এই খাদ্যে উৎপাদন শক্তির পরিমাণ বেশি এবং আমিষের পরিমাণ শতকরা ১৫ ভাগ। হাঁস মুরগির খাদ্য হিসাবে এই খাদ্যে ভিটামিন “ই” পাওয়া যায়।
৫. চাউলের কুড়া
ধানের উপরের খোষা বাদ দিলে চাউলের সাথে কুড়া। এই খাদ্য প্রচুর পরিমাণে বি ভিটামিন ছাড়াও খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। আমিষের পরিমাণ শতকরা ১২ ভাগ এবং উৎপাদন শক্তিও প্রচুর। হাঁস মুরগির খাদ্য হিসাবে এই খাদ্যের ব্যবহার প্রচুর। ম্যাশের মধ্যে শতকরা ২৫ হতে ৪০ ভাগ পর্যন্ত দেওয়া যায়।
৬. টমেটো
শীতের শেষে সস্তাদামে প্রচুর টমেটো পাওয়া যায়। এগুলো হাঁস মুরগিকে খাওয়ানো যায়। শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। তাজা অবস্থায় আমিষের পরিমাণ শতকরা ১০.৯ ভাগ এবং শুকনা অবস্থায় শতকরা ১৫ হতে ২০ ভাগ। ক্যামারীতে বাই-প্রোডাকট হিসাবে যে সমস্ত ফলের উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলে দেওয়া হয় সেগুলোও শুকিয়ে হাঁস মুরগির খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
৭. বিভিন্ন প্রকার তরিতরকারী ও ফলমুল
বিভিন্ন প্রকার ফল বা তরিতরকারীর উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলে না দিয়ে হাঁস মুরগিকে খাওয়ানো যায়।
পারিবারিক খামারের জন্য কাঁচাকলা, পাকা কলা, বেগুন, পটল, লাউ, চিচিঙ্গা, কুমড়া, তরমুজ ইত্যাদি ফল বা তরিতরকারীর উচ্ছিষ্ট অংশ বা খোসা ছোট করে কেটে দিলে উদ্ভিদ জাতীয় আমিষ পাওয়া যায়।
বিভিন্ন শাকসব্জি যেমন বাঁধা কপির পাতা, ইপিল ইপলের পাতা, লেটুস ইত্যাদি শুকিয়ে রেখে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়।
সবুজ শাকসব্জি মাইলেজ করে রেখে সারা বৎসর হাঁসের জন্য ভাতের মাড় বিভিন্ন প্রকার তরিতরকারীর উচ্ছিষ্ট শাকসব্জি ইত্যাদি একসাথে সিদ্ধ করে দিলে উপাদেয় খাদ্য তৈরী হয়।

হাঁসের খাদ্য তালিকায় শর্করা বা শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য উপাদানঃ
এ জাতীয় খাদ্য উপাদানে শরীরে তাপ উৎপাদন করে উৎপাদনও কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এর অভাবে হাঁস মুরগি নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং উৎপাদন ক্ষমতা হারায়।
১. গম
শর্করা খাদ্য হিসাবে আধাভাঙ্গা গম মিশ্রণ খাদ্যের সাথে শতকরা ৩০ হতে ৫০ ভাগ পর্যন্ত মিশিয়ে খাওয়াতে হয়। আবার দানা বেশি গুড়া করে আটা হয়ে গেলে মুরগিতে কম খায় এবং স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। তাই যেকোন দানাদার খাদ্য আধাভাঙ্গা করে দেওয়া উচিৎ।
২. ভুট্টা
হাঁস মুরগির শর্করা এবং দানাদার খাদ্যের মধ্যে ভুট্টা খুবই উপাদেয় এবং তুলনামুলক হারে গমের চেয়ে সস্তা খাবার, গমের পরিবর্তে বা গমের সাথে যেকোন হারে মিশিয়ে সর্বমোট ৩০ হতে ৫০ ভাগ পর্যন্ত আধাভাঙ্গা করে খাওয়ানো যায়।
৩. ধান বা চাউল
পারিবারিক খামারের জন্য ছড়ানো ছিটানো ধান মৌসুমের সময় গ্রামাঞ্চলে ব্যবহার করা হয়।
চাউলের ক্ষুদ হাঁস মুরগির খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়। বাচ্চার জন্য ব্রুডার ম্যাশ তৈরী করতে চাইলের ক্ষুদ্র ব্যবহার করা যায়।
৪. গোল আলু
সিদ্ধ করে ভিজা ম্যাম খাদ্যে শতকরা ২০ ভাগ হারে খাওয়ানো যায়। শুকিয়ে গুড়া করে ম্যাশ খাদ্যের সাথে শতকরা ২০ ভাগ হারে দেওয়া যায় এবং সেই পরিমাণে গম বা দানাদার খাদ্য কম দিতে হয়।
৫. মিষ্টি আলু
দামে সস্তা এবং সহজ লভ্য হলে গমের সাথে ম্যাশ খাদ্যে গোলআলুর ন্যায় ব্যবহার করা যায়।
৬. বিভিন্ন প্রকার সিম
সিমের বীচি শুকিয়ে ম্যাশ খাদ্যে শতকরা ১০ হতে ১৫ ভাগ মিশিয়ে খাওয়ানো যায়।
আমিষের পরিমাণ শতকরা ২৫ হতে ৩০ ভাগ।
৭. ঝোলাগুড় বা মোলাসেম
‘আখের গুড় হতে তৈরী মোলাসেস হাঁস মুরগির উপাদেয় খাদ্য।
মোলাসেসের আমিষ ৩.২% আর শর্করা উপাদান ৬৫.৬৪% তাছাড়াও প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ আছে।
খাদ্যে উৎপাদন শক্তি বাড়ানোর জন্য শতকরা ৩ থেকে ৪ ভাগ হারে শুকনা ম্যাশ খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হয়।
অনেকে সর্বাধিক শতকরা ১০ ভাগ পর্যন্ত খাদ্যের সাথে মিশিয়ে বাড়ন্ত বাচ্চাকে খাইয়ে সন্তোষজনক ফল পেয়েছেন।
হাঁসের খাদ্য তালিকায় চর্বি বা স্নেহ জাতীয় খাদ্য-উপাদানঃ
শরীরের শক্তি উৎপাদন ও তাপ সংরক্ষণের জন্য এই জাতীয় খাদ্য উৎপাদনের প্রয়োজন।
চর্বি দেহের লাবণ্যতা রক্ষা করে ও তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। মাংস, মাংসের উচ্ছিষ্ট, শুটকী মাছ, তৈল জাতীয় বীজের খৈল-(যেমন তিল, নারিকেল, তিসি, সোয়াবিন, তুলার বীজ ইত্যাদির খৈল) শাকসব্জি ইত্যাদিতে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান থাকে।
হাঁসের খাদ্য তালিকা থেকে প্রাপ্ত উৎপাদন শক্তির প্রয়োজনীয়তাঃ
মুরগির মাংস পেশী সঞ্চালন, অঙ্গ প্রত্যঙ্গের দৈনন্দিন কাৰ্য্য সম্পাদন ডিম উৎপাদন ও মাংস বৃদ্ধি ইত্যাদিতে শক্তির ক্ষয় সাধিত হয়ে থাকে। শীতকালে এই প্রক্রিয়ার আরো বৃদ্ধি ঘটে।
শরীর হতে প্রতিনিয়ত এই তাপ সঞ্চারণের মানে শক্তির ক্ষয় সাধিত হওয়া। এই ক্ষয় পূরণের জন্য খাদ্য হতে শক্তি আহরণ যদি সমপরিমাণ না হয় তাহলে শক্তির ঘাটতি পড়ে।
শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা সঠিক রাখার জন্য শরীরের জন্য মেটাবোলিক কার্যকলাপ বাড়তে থাকে। আর শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় অর্থ-মৃত্যুর পথে ধাবিত হওয়া।
মেটাবোলাইজাবল শক্তি
হাঁস মুরগি বা কোন প্রাণীকে খাদ্য খাওয়ানোর পর তার মল মূত্র সম্পূর্ণ পোড়ানোর পর যে শক্তি পাওয়া যায় তা ঐ খাদ্যের সর্বমোট শক্তি হতে বাদ দিলে মেটাবোলিক শক্তি পাওয়া যায়।
উৎপাদক শক্তি
হাঁস মুরগির শরীরে সবটুকু মেটাবোলিক শক্তি ব্যবহৃত হতে পারে না। তার কারণ কিছু অংশ তাপ আকারে পারিপার্শ্বিক আবহাওয়াতে বিকিরণ হয়ে যায়। অবশিষ্ট শক্তি শরীরে চর্বি ও আমিষ আকারে জমা হয়ে বাংলাদেশী সঞ্চালন কর্মক্ষমতা ও ডিম উৎপাদনে সহায়তা করে।
খাদ্যে উৎপাদন শক্তি
হাঁস মুরগি বা বাচ্চা তাদের শরীরে প্রয়োজনীয় উৎপাদন শক্তির চাহিদা পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত খাদ্য খেতেই থেকে তবুও তাদের খাদ্য মেটে না। অর্থাৎ উৎপাদন শক্তি যে খাদ্যে কম থাকে সে খাদ্য তারা পরিমাণে বেশি খায় ৷
সমাপ্ত: হাঁসের খাদ্য তালিকা/হাঁসের খাবার তৈরি/উন্নত জাতের হাসের খামার পরিচালনা/হাস পালন পদ্ধতি/হাঁস পালন প্রশিক্ষণ।