আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
হাঁস পালনঃ
- আমাদের দেশের আবহাওয়া হাঁস পালনে খুবই উপযোগী। সমস্যা হচ্ছে হাঁসের মাংস ও ডিম মুরগির মাংসের চেয়ে জনপ্রিয় কম। তবে বর্তমানে এটি অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
- এখন হাঁস চাষ লাভজনক একটি প্রযুক্তি। অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে হাঁস চাষে এগিয়ে আসছেন এবং প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন হাঁস চাষ।
- মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মতে, পুকুরে হাঁস ও মাছের সমন্বিত চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করলে খুব সহজে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব।
- হাঁস চাষে অনেক সুবিধা রয়েছে যেমন- মাছের জন্য পুকুরে তেমন বাড়তি সার ও খাদ্য দিতে হয় না। হাঁস থাকলে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
হাঁস পালনে সুবিধাঃ
- হাঁসের রোগবালাই তুলনামুলক খুবই কম। তাছাড়া খাবারের তেমন অভাব হয় না।
- দেশি মুরগি যেখানে গড়ে বছরে ৫৫টি ডিম দেয়, দেশি হাঁস সেখানে ৯০টির বেশি ডিম দিয়ে থাকে। আর উন্নত জাত হলে বছরে ২৫০-৩০০টি ডিম দিয়ে থাকে।
- বহু প্রাচীন কাল থেকে মোরগ-মুরগির ন্যায় আমাদের দেশে হাঁস পালন হয়ে আসছে। সর্বপ্রথম মহাদেশে বন্য হাঁস ধরে গৃহে পালন করা হয়। পরবর্তীতে এই হাঁস মুরগির মতই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিকল্পিত প্রজনন ব্যবস্থার মাধ্যমে উন্নত জাতে পরিণত হয়।
- বাংলাদেশের নদীনালা হাঁস পালনের জন্য খুবই উপযোগী। তবে আমাদের দেশী জাতের একটি হাঁস বছরে মাত্র ৬০-৮০টি ডিম দেয় এবং ওজনে হালকা। অপর দিকে বিদেশি উন্নত জাতের হাঁস বছরে ৩০০টির অধিক ডিম দেয়। তাই দেশী জাতের হাঁসের চেয়ে বিদেশি উন্নত জাতের হাঁস পালন অধিক লাভজনক।
- সমগ্র পৃথিবীতে গৃহপালিত হাঁসের সংখ্যা প্রায় ৮৩০ মিলিয়ন কিন্তু বাংলাদেশে হাঁসের সংখ্যা মাত্র ১৩ মিলিয়ন। প্রধানত নিম্নোক্ত কারণে হাঁস পালন অধিক সুবিধাজনক।

যেভাবে শুরু করতে পারেনঃ
এ প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে চাইলে আপনার ৪০-৫০ শতাংশ আয়তনের একটি পুকুর লাগবে। ১০০- ২০০টি হাঁস এবং হাঁসের ঘর তৈরি করে নিতে হবে। এসব পরিকল্পিতভাবে করলে ভালো হবে। পাহারাদারের ঘরটি হাঁসের ঘরের দক্ষিণ পাশে হলে ভালো হয়।
- হাঁস জলাশয় থেকে প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ খাদ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম। তাই খাদ্য খরচ কম হয়।
- হাঁস নিরীহ প্রকৃতির পাখি। তাই পুরুষ ও স্ত্রী হাঁস এমনকি একাধিক পুরুষ হাঁস স্ত্রী হাঁসের সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করতে পারে।
- হাঁসের ডিমের খোসা ও খোসার নিচের আবরণ বেশ মোটা বলে আমাদের দেশের উষ্ণ আবহাওয়ায় ডিম সহজে নষ্ট হয়না।
- হাঁসের ঝাঁককে সহজে এক স্থানে আটকিয়ে পোষা যায় ।
- মুরগির বাচ্চা অপেক্ষা হাঁসের বাচ্চার তাপ ও আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাদির প্রয়োজন কম।
হাঁসের বহিঃদেহের বৈশিষ্ট্যঃ
- হাঁসের চষ্ণু একটি ছোট অনুভূতি সম্পন্ন পর্দা দ্বারা আবৃত এবং প্রান্ত শক্ত প্লেট দ্বারা গঠিত।
- হাঁস পানি থেকে শক্ত খাদ্য গ্রহণ করে এবং প্লেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানিটুকু ছেড়ে দেয়।
- হাঁসের বহিঃদেহের বিভিন্ন অংশ মোরগ-মুরগি থেকে পৃথক।
- হাঁসের পালক মসৃণ চর্বি মাখানোর ন্যায় চিকন এবং পালক দেহের দিকে সাজানো থাকে বলে ত্বকে পানি পৌঁছেনা ।
- হাঁসের ত্বকের নিচেই চর্বির মোটা স্তর থাকে যা দেহকে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করে।
- হাঁসের পা ছোট আকৃতির এবং লিপ্তপাদ যা সাঁতার কাটার জন্য সুবিধাজনক।

হাঁসের জাতঃ
বিশ্বে যে সব উন্নত হাঁসের জাত ও উপজাত আছে তা এশীয় জাত ও উপজাত থেকে উদ্ভূত। পৃথিবীতে ২০টির অধিক হাঁসের জাত ও উপজাত আছে বলে জানা যায়। হাঁসের জাতকে প্রধানত নিম্নোক্ত তিন ভাগে ভাগ করা যায় ।
১। মাংসল জাত (Meat breed) যেমন- পিকিন, আইলসবেরী, মাসকোভি ইত্যাদি।
২। ডিম পাড়া জাত (Layer breed) যেমন— খাকী ক্যাম্বেল, ইন্ডিয়ান রানার ইত্যাদি।
৩। সৌন্দর্যবর্ধক জাত (Ornamental breed) যেমন- শেলড্রেক, রোয়েন ইত্যাদি।
বিদেশি উন্নত জাতের হাঁসঃ
বাংলাদেশে সাধারণত যে সব উন্নত জাতের হাঁস পাওয়া যায় সে সম্পর্কে নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
১. খাকী ক্যাম্পবেল (Khaki Campbell)
→ দুই মাসে এদের ওজন প্রায় ২ কেজির কাছাকাছি হয়। এ জাতের হাঁসের চোখ উদগত বা সুস্পষ্ট এবং চটপটে দেখায়। এদের উদর মোটা ও পায়ের রং কমলা রংয়ের হয়।
→ ১৯০১ সনে বৃটেনের মিসেস কেম্বেল হাঁসের এ জাতটি উদ্ভাবন করেন। এ জাতের হাঁসের দেহের রং খাকী
→ হওয়ায় এবং মিসেস কেম্বেলের নামানুসারে জাতটির নাম হয়েছে খাকী ক্যাম্পবেল।
→ এটি একটি ডিম পাড়া হাঁসের জাত। এরা বছরে ২০০-৩০০টি ডিম দিয়ে থাকে।
চিত্র- খাকী ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস
২. ইন্ডিয়ান রানার (Indian Runner)
→ এটি একটি ডিম পাড়া জাত। বছরে ২০০টির অধিক ডিম দেয়। তবে এরা ডিমে তা দিতে বসতে চায় না।
→ এদের মাথার উপরিভাগ বেশ চওড়া এবং চোখ অধিক ডিম দেয়। তবে এরা ডিমে তা দিতে বসতে চায় না।
→ এ জাতের দেহ বেশ স্লিম এবং গলা বেশ লম্বা ।
→ এ জাতের হাঁস প্রথমে ইস্ট ইন্ডিজে উৎপত্তি। তবে এদের ডিম পাড়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে পশ্চিম ইউরোপে। এটি ভারতীয় জাতের হাঁস হলেও বর্তমানে বিভিন্ন দেশে এজাতটি পালিত হয়।
→এদের তিনটি উপজাতের মধ্যে সাদা উপজাতটি অধিক জনপ্রিয়।
৩. বেইজিং (Beijing)
→ দু’টো উপরের দিকে অবস্থিত।
→ এদের গায়ের রং সাদা এবং দেখতে আকর্ষণীয়।
→ বছরে এরা ১০০-১৫০ টি বড় আকারের ডিম দিয়ে থাকে।
→ চীন দেশের এ জাতের চাঁদ মাংসের জন্য বিখ্যাত। এদের মাংস বেশ সুস্বাদু।
→ এ জাতের পুরুষ হাঁসের ওজন ৪-৫ কেজি এবং স্ত্রী হাঁসের ওজন ৩-৪ কেজি হয়।
চিত্র- বেইজিং জাতের হাঁস
বিশেষ তথ্য :
→ খাকী ক্যাম্পবেল জাতের হাঁসের ডিম তিন দিন গুদামজাত করে ৮৪.৪% এবং ৯ দিন গুদামজাত করে ৬৯.৪% ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
→ খাকী ক্যাম্পবেল, ইন্ডিয়ান রানার ও দেশী জাতের হাঁসের তুলনামূলক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, খাকী ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস ইন্ডিয়ান রানার ও দেশী জাতের হাঁস অপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণভাবে অধিক ডিম দেয়।
চিত্র- ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁস
বাংলাদেশের হাঁস ও রাজহাঁসের জাতঃ
বাংলাদেশে প্রধানত দু’টি হাঁসের জাত আছে বলে জানা যায়। তবে এসব জাতের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে।
১. সিলেট মোটে (Sylhet Mete)
→ হালকা পিঙ্গল বর্ণের এই হাঁসের পালকের আগা কাল বর্ণের হয়।
→ বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পূর্বাংশে হাঁসের এই জাতটি পাওয়া যায়।
→ বছরে ৮০-১৫০টি ডিম দেয়।
২. নাগেশ্বরী (Nageswari)
→ এ জাতের হাঁস কালো বর্ণের তবে গলা ও বুকের কাছে রং সাদা হয়।
→ বাংলাদেশ ও ভারতের আসাম রাজ্যের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে প্রধানত এ জাতের হাঁস দেখা যায় ।
→ সিলেট মোটে জাতের তুলনায় নাগেশ্বরী আকৃতিতে বড় তবে ডিম উৎপাদন প্রায় একই রূপ।
৩. রাজহাঁস (Goose)
→ প্রধানত গ্রাম অঞ্চলে মুক্ত পালন ব্যবস্থায় সৌখিন লোকেরা রাজহাঁস পালন করে।
→ সাধারণত বাংলাদেশে সাদা ও ধূসর রংয়ের রাজহাঁস দেখা যায়।
→ রাজহাঁসের দৈহিক ওজন ৪-৬ কেজি এবং এরা বছরে ৩০-৪০টি ডিম দেয়।
চিত্র- দেশী জাতের স্ত্রী-পুরুষ রাজহাঁস
হাঁসের ঘর তৈরিঃ
- পুকুরপাড়ে কিংবা পুকুরের ওপর ঘরটি তৈরি করতে হবে। ঘরের উচ্চতা ৫-৬ ফুট হলে ভালো হয়।
- ঘর তৈরিতে বাঁশ, বেত, টিন, ছন, খড় ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ইট দিয়ে মজবুত করে ঘর তৈরি করতে পারলে ভালো হবে।
- ঘরটি খোলামেলা হতে হবে এবং সাপ ও ইঁদুর থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
- শহরে বিভিন্ন মাপের চৌবাচ্চায় হাঁস পালন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশড় ছাদ থাকলে সুবিধা বেশি। ছাদের একপাশে ঘর অপর পাশে চৌবাচ্চা নির্মাণ করতে হবে।
- প্রজননের জন্য আটটি হাঁসের সঙ্গে একটি পুরুষ হাঁস রাখা দরকার। এরপর দেশি মুরগির সাহায্যে অথবা ইনকিউবেটরে হাঁসের ডিম ফোটানো যায় ।
হাঁসের বাচ্চা পালনঃ
মুরগির বাচ্চা পালন পদ্ধতির মতই প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম উপায়ে হাঁসের বাচ্চা পালন করা যায়।
প্রাকৃতিক পদ্ধতিঃ
→ প্রথম ৫-৭ দিন একটি সীমাবদ্ধ জায়গায় ঝাঁপি বা খাঁচা দিয়ে ঢেকে রেখে বা বেড় দিয়ে আবদ্ধ জায়গায় খাবার ও পানির ব্যবস্থা করে হাঁসের বাচ্চাসহ মুরগিটি রাখতে হবে।
→ এক সপ্তাহ পরে বাচ্চাসহ মুরগি ছেড়ে দিলে বাচ্চাগুলো মুরগির সঙ্গে ঘুরে ফিরে চলে বেড়ায়।
→ এ অবস্থায় বাচ্চাগুলোকে গম ভাঙ্গা, চাউলের কুড়া ও ছোট ছোট শামুক ভেঙ্গে খাওয়ানো যায়।
→ বিদ্যুৎ লাইন নাই এরূপ গ্রামাঞ্চলে হাঁসের ১০-১৫টি বাচ্চা কুঁচে মুরগির সাহায্যে পালন করা যায়।
→ কুঁচে মুরগি দিয়ে ফুটানো হাঁসের বাচ্চা অথবা ফার্ম থেকে সংগৃহীত ১ দিনের বাচ্চা রাত্রে কুঁচে লাগা অবস্থায় মুরগির নিচে রেখে দিয়ে মুরগিকে হাঁসের বাচ্চা পালনে অভ্যস্ত করে তুলতে হয়।
→ উন্নত জাতের হাঁসের বাচ্চাকে ৪ সপ্তাহ বয়সের পূর্বে জলাশয়ের পানিতে ছেড়ে দেয়া যাবেনা।
কৃত্রিম পদ্ধতিঃ
খামারে মুরগির বাচ্চা পালনের মতই হাঁসের বাচ্চা পালন করতে হয়। তবে হাঁসের ছানা পালনের জন্য নিম্নোক্ত বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
(ক) ব্রুডার ঘর প্রস্তুত
→ হাঁসের বাচ্চাকে তাপ দেয়ার জন্য ঘরের মেঝে, দেয়াল, ব্রুডার গার্ড ভালভাবে পরিষ্কার ও জীবাণুনাশক পদার্থ দ্বারা জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
→ বাচ্চার ঘরের দেয়ালে তারের নেট থাকলে বাচ্চাকে অতিরিক্ত ঠান্ডা বা ঝড় বৃষ্টির থেকে রক্ষার জন্য তারের জালের উপর চট বা বস্তা ঝুলিয়ে দিতে হবে।
→ ধানের তুষ বা কাঠের গুড়া মেঝেতে ৫-৭ সেন্টিমিটার পুরু করে বিছিয়ে তার উপর চট বা বস্তা দিয়ে ঢেকে বাচ্চার জন্য বিছানা তৈরি করতে হবে।
→ বৈদ্যুতিক বাল্ব, বৈদ্যুতিক হিটার, গ্যাস ব্রুডার অথবা হারিকেন স্টোভের সাহায্যে হাঁসের বাচ্চাকে তাপ দেয়া যায়।
→ বৈদ্যুতিক বাল্ব লাগানোর ব্যবস্থাসহ হার্ডবোর্ড, টিন অথবা কাঠ দিয়ে ব্রুডার তৈরি করা হয়।
→ বিছানা বা লিটারের মাঝখানে ব্রুডার স্থাপন বা ঝুলিয়ে দিয়ে ব্রুডারের চারপার্শ্বে (৩০-৪৫ সেন্টিমিটার দূরে) হার্ডবোর্ড দিয়ে গোলাকার ব্রুডার গার্ড তৈরি করতে হয়।
→ ব্রুডার গার্ডের মধ্যে বাচ্চার পানাহারের জন্য ৩-৪টি করে খাদ্যের ও পানির ট্রে রাখতে হবে।
(খ) বাচ্চার জন্য তাপ সরবরাহ
→ জন্মের পর থেকে হাঁসের বাচ্চাকে তাপ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
→ প্রথম সপ্তাহ ৯০° ফাঃ তাপ দেয়া শুরু করে পরবর্তী প্রতি সপ্তাহে ৫° ফাঃ তাপ কমিয়ে দিতে হয়। চার সপ্তাহ পর আর তাপ দেয়ার প্রয়োজন হয়না।
→ সাধারণত শীতের দিনে ৪-৫ সপ্তাহ এবং গরমের দিনে ৩-৪ সপ্তাহ তাপ দিলেই চলে।
→ অন্যান্য ব্যবস্থা মুরগির বাচ্চা পালনের মতই অনুসরণ করতে হবে।
(গ) হাঁসের বাচ্চার পানাহার।
→ হাঁসের বাচ্চার জন্য পর্যাপ্ত সুষম খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
→ বাচ্চা অনেক দূর থেকে আনলে প্রথমে ব্রুডার ঘরে গ্লুকোজ পানি (৫ গ্রাম/লিটার) খাওয়াতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পানিতে পড়ে ভিজে না যায় ।
→ হাঁসের বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য শতকরা ৪৭ ভাগ গম ভাঙ্গা, ২৫ ভাগ চাউলের গুড়া, ১০ ভাগ তিলের খৈল, ১৫ ভাগ শুটকি মাছের গুড়া, ২ ভাগ ঝিনুক চূর্ণ, ০.৫ ভাগ ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স এবং ০.৫ ভাগ খাবার লবণ মিশিয়ে খাদ্য হিসেবে খাওয়ানো যায় ।
→ হাঁসের প্রতিটি বাচ্চা ১ম সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ১৫ গ্রাম, ২য় সপ্তাহে ২৫ গ্রাম, ৩য় সপ্তাহে ৩৫ গ্রাম, ৪র্থ সপ্তাহে ৪৫ গ্রাম হিসেবে খাদ্য গ্রহণ করে।
→ মুরগির ছানা পালনের মতই হাঁসের ছানার বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্রুডার গার্ড সরিয়ে জায়গা বাড়াতে হবে।
→ মুরগির বাচ্চা পালনের মতই পানির পাত্রে হাঁসের বাচ্চাকে খাবার পানি সরবরাহ করতে হবে।
→ লিটার বা বিছানার চেয়ে তারের জাল হাঁস পালনের জন্য বেশ উপযোগী।
হাঁসের খাদ্যঃ
→ হাঁস চাষে সুবিধা হলো হাঁস খাল-বিল-পুকুর থেকে তার কিছু খাবার সংগ্রহ করে নেয়। তাছাড়া বাজারে হাঁসের তৈরি খাবার কিনতে পাওয়া যায়।
→ শুকনো খাদ্য না দিয়ে হাঁসকে সবসময় ভেজা খাদ্য দেয়া উচিত।
→ খাদ্যে আমিষের পরিমাণ ডিম দেয়া হাঁসের ক্ষেত্রে ১৭-১৮ শতাংশ ও বাচ্চা হাঁসের ক্ষেত্রে ২১ শতাংশ রাখা উচিত।
→ হাঁস দানা, খইল, ভূষি, ঝিনুকের গুঁডড়ো, ডিমের খোসা, কেঁচোসহ অন্যান্য খাবার বেশি পছন্দ করে।
ডিম পাড়া হাঁস পালনঃ
→ মুরগি পালনের মতই হাঁসকে আমাদের দেশে প্রধানত মুক্ত অবস্থায়, আধাছাড়া অবস্থায় এবং ফার্মে আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা যায়।
→ গ্রামাঞ্চলে প্রধানত মুক্ত অবস্থায় হাঁস পালন করা হয়। সারাদিন হাঁস পুকুর, নালা, ডোবার পানিতে সাঁতার কাটে এবং সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরে আসে।
→ অধিকাংশ হাঁস ভোর রাত্রে ডিম পাড়ে। এছাড়া রাত্রে বন্য জন্তুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য এদের রাত্রে থাকার ঘরের প্রয়োজন হয়।
→ অল্প খরচে ছন, কাঠ বা টিনের ঘরই হাঁসের জন্য যথেষ্ট। বাড়ীর উঁচু জায়গায় ১২ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট চওড়া ঘরে ৫০- ৬০টি হাঁস পালনের জন্য যথেষ্ট।
→ ডিম পাড়া হাঁসের জন্য শতকরা ৪৫ ভাগ গম ভাঙ্গা, ১৫ ভাগ গমের ভূষি, ১২ ভাগ চাউলের কুড়া, ১১ ভাগ তিলের খৈল, ১০ ভাগ শুটকি মাছের গুড়া, ২ ভাগ অস্থির গুড়া, ৩ ভাগ ঝিনুকের গুড়া, ১ ভাগ হাঙ্গর মাছের তেল, ০.৫ ভাগ খাবার লবণ এবং ০.৫ ভাগ ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স মিশিয়ে খাদ্য তৈরি করতে হবে।
→ হাঁসকে কি পরিমাণ খাদ্য দিতে হবে তা নির্ভর করবে পালনের পদ্ধতির উপর। মুক্ত অবস্থায় হাঁস পুকুর বা জলাশয় থেকে শামুক, পোকামাকড়, শেওলা, সবুজ ঘাস ইত্যাদি খেতে পায়।
→ আবদ্ধ পদ্ধতিতে পালনে প্রতি হাঁসের জন্য প্রতি দিন প্রায় ৫০০ গ্রাম খাদ্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু মুক্ত অবস্থায় পালিত হাঁসের জন্য তার অর্ধেক খাদ্য সরবরাহ করলেই যথেষ্ট হয়।
