⭐⭐⭐⭐⭐
বিষয়: হাঁস পালন পদ্ধতি কয় প্রকার? হাঁস পালন পদ্ধতি pdf, হাঁস পালনের সহজ পদ্ধতি কোনটি, হাঁস পালন পদ্ধতিগুলোর নাম লিখ, হাঁস পালন প্রশিক্ষণ, উন্নত জাতের হাঁসের খামার করব কিভাবে?
হ্যাশট্যাগ: #হাঁস পালন পদ্ধতি কত প্রকার #হাঁস পালনের নিয়ম #হাঁস পালন পদ্ধতি #হাঁস পালন পদ্ধতি কয় প্রকার #হাঁস পালন পদ্ধতি pdf, #হাঁস পালন প্রশিক্ষণ #উন্নত জাতের হাঁস পালন।
হাঁস পালন পদ্ধতি/নিয়ম-১: হাঁসের বাসস্থান
- হাঁসের থাকার বাসস্থান হবে খোলামেলা।
- আলো-বাতাস চলাচলের যেন অভাব না থাকে। ঘর কিছুটা মজবুত হওয়াও দরকার—যাতে ঝড় বা বৃষ্টিতে কোন ক্ষতি না হয়।.
- রাতে কুকুর শিয়াল প্রভৃতি ঘরের কাছে এলে হাঁস ভীষণভাবে ভয় পায়। ফলে ডিম পাড়া কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে হাঁসেরা ডিম দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। তাছাড়া ওদের স্বাস্থ্যও খারাপ হয়ে যায়।

হাঁস পালন পদ্ধতি/নিয়ম-২: হাঁসের ঘর তৈরী
- ঘরের ওপরে টালির অথবা টিনের চাল, বাঁশের দরমা দিয়ে দেওয়াল, আর্থিক সুবিধা থাকলে সিমেন্ট বালি অথবা কাদা দিয়ে ইটের গাঁথনি করলে ভালো হয়।
- ঘরের উচ্চতা চার থেকে পাঁচ ফুটের বেশি যেন না হয়। কারণ এর থেকে বেশি উঁচু করলে খরচ বেড়ে যাবে।
- ঘরের মেঝে অনেকে কাঁচা করে থাকে। এটা মোটেই উচিত নয়। কারণ রাতভর হাঁস যে মলত্যাগ করে, মাটির মেঝে হলে সেটা পরিষ্কার করার খুবই অসুবিধা হয়।
- সিমেন্টের মেঝে সেদিক থেকে আদর্শ। তাছাড়া ঘরে কোন রকম দুর্গন্ধ হয় না।
- পূর্ণবয়স্ক একটি হাঁসের জন্যে গড়ে জায়গার প্রয়োজন হয় ৪ বর্গফুটের কাছাকাছি। কাজেই, এই হিসাবে দেখা গেছে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য × ১৬ ফুট চওড়া ঘরে এবং ৫ ফুট উচ্চতায় প্রায় ৪০ থেকে ৪৫টি হাঁসকে ভালোভাবে রাখা যেতে পারে।
- ডিম পাড়ার সুবিধার জন্যে ওদের ঘরের সাথে খানিকটা জায়গা থাকলে ভালো হয়। সেই জায়গা বেড়া বা লোহার তারের জাল দিয়ে ঘিরে রাখা দরকার। এই বেড়া দেড় ফুট থেকে দু ফুট উঁচু করলেই যথেষ্ট।
- হাঁসের ঘর তৈরি করতে হলে উপযুক্ত জমি নির্বাচন করা দরকার। মাটিতে ছিদ্রতা থাকার ফলে জল ও ময়লা সব নিচে নেমে যায়।
- শক্ত মাটি হলে ময়লা নিচে যায় না। ফলে ওপরে মল-মূত্র জমতে জমতে সেটা ক্রমে ওদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায়। যেখানে বালিমাটি নেই সেখানে বালি মিশিয়ে তৈরি করে নিতে হয় ৷

হাঁস পালন পদ্ধতি/নিয়ম-২: ডিম সংগ্রহ করা
- হাঁস জলচর প্রাণী। কাজেই, জলে নামার আগেই তারা ডিম পেড়ে থাকে।
- একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে যে, হাঁস সাধারণভাবে শেষ রাতের দিকেই ডিম পাড়ে।
- শতকরা হিসাবে ডিমের প্রায় ৮৫ ভাগ পাওয়া যায় সকাল ৭টার মধ্যে, বাকী ১৫ ভাগ পাওয়া যায় সকাল ৯টার মধ্যে। কাজেই, সকাল ৯টার পর ওদের জলে ছেড়ে দিলে আর ডিম নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে না। তারপর সকল ডিম সংগ্র করে নিতে হয়।
হাঁস পালন পদ্ধতি/নিয়ম-৩: হাঁসের যত্ন ও পরিচর্যা
- সকালে এদের কোন রকম খাবার না দিলেও চলে। ডিম সংগ্রহের পর ছেড়ে দিলে জলে চলে বেড়ায় এবং সেখান থেকে শামুক, জলজ উদ্ভিদ প্রভৃতি খেয়ে পেট ভরিয়ে ফেলে।
- অবশ্য কৃত্রিম জলাশয় হলে অন্য ব্যবস্থা করতে হবে। এটা কেবলমাত্র যেখানে নালা, ডোবা, পুকুর, নদী প্রভৃতি খামারের কাছে আছে সেখানে চলবে।
- বিকেলে সূর্য ডোবার আধ ঘণ্টা আগেই ওদের জল থেকে তুলে আনা দরকার। তার কারণ সন্ধ্যে হয়ে গেলে শিয়াল, কুকুর প্রভৃতি জন্তু-জানোয়ার ওদের ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলতে পারে।
- বিকেলে চরে আসার পর কিছু খেতে দেওয়া দরকার। খাওয়া শেষ হলে তবেই ঘরে তোলা উচিত।
- হাঁসকে রোজ যে খাবার দেওয়া হবে সেটা যেন একজন লোকের হাতে ভার থাকে। কারণ হাঁসেদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে ওরা মালিকের গলার আওয়াজ ভালোভাবেই চিনতে পারে। কাজেই, যে খাবার দেয় সে ডাক দিলেই খাবারের লোভে জল থেকে উঠে আসে।
- সকালে ঘর থেকে হাঁস চরতে বার হলে ঘরের মেঝে জল দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে দিতে হয়। সপ্তাহে একদিন কোন জীবাণুনাশক ওষুধ দিয়ে ধুয়ে দিলে আরও ভালো হয়। তাহলে সহসা ওদের মধ্যে কোন রোগ-বালাই হবার সম্ভাবনা থাকে না।

হাঁস পালনের বিভিন্ন পদ্ধতি-৪: পাঁচ প্রকার হাঁস পালন
আমাদের দেশে বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন জাতের হাঁস পালনের পদ্ধতি চালু আছে। কয়েকটি পদ্ধতি আলোচনা করা হল।
১. বয়স্ক হাঁস পালন
- হাঁস পালনের জন্য মোরগ মুরগির ন্যায় উন্নত মানের খাবার ও ঘরের ব্যবস্থাপনা না করলেও চলে।
- পুকুর বিল ছাড়াও হাঁস পালন করা যায়। তবে ডিম উৎপাদন কিছুটা উঠা-নামা করে অর্থাৎ কখনো বেশি ডিম দেয় আবার কখনো কম ডিম দেয়। কিন্তু গড়ে ডিম উৎপাদন সমান থাকে।
- সর্বদা আবদ্ধ অবস্থায় হাঁস পালন করলে ঘর ও হাঁসের দেহ কিছুটা নোংরা হয়। তাই আবদ্ধ অবস্থায় ঘরের সংগে নর্দমার মত তৈরী করে কিছু পানির ব্যবস্থা করত হবে। এইরূপ অবস্থায় হাঁস ঘরের বাইরে খাবার ও পানি খেয়ে শুধু রাত্রে ঘরে উঠে থাকে।
- বয়স্ক হাঁস করা খুবই সহজ। এতে কোন জটিলতা নেই। বয়স্ক হাঁসের ঘর সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত।। এতে ঠিকমত খাবার ও পানি সরবরাহ করা দরকার।
- বয়স্ক হাঁসের সচরাচর রোগ ব্যাধি হয় না। তবে নিয়মিত হাঁসের প্লেগ এবং কলেরা রোগের প্রতিষেধক ইনজেকশন দিতে হবে।

২. ছাড়া অবস্থায় হাঁস পালন
- প্রতি একর জলাভূমিতে ২০০০ হাঁস পালন করা যায়। রাত্রিতে থাকার জন্য হাঁস প্রতি ২ বর্গফুট জায়গা হিসাব করে ঘর তৈরী করা উচিত।
- জলাশয়ে প্রচুর পরিমাণ খাবার পেলে ছাড়া অবস্থায় হাঁস পালনের জন্য অতিরিক্ত তৈরী খাবার খুব বেশি একটা সরবরাহ না করলেও চলে। তবে সন্ধ্যায় কিছু দানা জাতীয় খাবার যেমন ধান, গম, ইত্যাদি সরবরাহ করা ভালো।
- যদি ছাড়া অবস্থায় আনুমানিক অর্ধেক খাবার পায় তবে প্রতি হাঁসের ৭০-৮০ গ্রাম খাবার সরবরাহ করতে হবে।
- ছাড়া অবস্থায় যদি পানিতে চড়ে বেড়ায় এবং জলাশয় কোন খাবার না পায় তবে প্রতি হাঁসের জন্য ১৪০-১৬০ গ্রাম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। ভোরে একবার এবং সকাল নটার দিকে আর একবার ডিম সংগ্রহের পর হাঁস ঘরের বাইরে ছেড়ে দিতে হয়।
৩. অর্ধ ছাড়া অবস্থায় হাঁস পালন
এ অবস্থায় প্রতিটি হাঁসের জন্য ঘরে ২ বর্গফুট জায়গা রাখা উচিত। এ ছাড়া ঘরের বাইরে হাঁস প্রতি ১০ বর্গফুট জায়গা রাখা দরকার। অর্ধ ছাড়া অবস্থায় হাঁস পালনের জন্য হাঁসের ঘরের সংগে কিছু পানিরর ব্যবস্থা রাখতে হয়।

৪. বিল হাওড়ে হাঁস পালন
- হাঁস সাধারণত ৪ মাস হতে ৫ মাসের মধ্যে ডিম দেয়া শুরু করে।
- ডিম দেয়া হাঁসগুলোকে সকাল ৯টায় বিলে বা হাওড়ে ছেড়ে দেয়া হয়। কেননা ঐ সময়ের পূর্বেই এরা ডিম পাড়তে পারে।
- যদি ছাড়তে বেশিক্ষণ দেরী করা হয় তাহলে এরা গরমে অস্থির হয়ে পড়ে। হাঁস তাদের জীবনে সামান্যতম পরিবর্তনে ও সংবেদনশীল।
- হাঁসগুলোকে সকালে ছাড়া ও বিকেলে ঘরে তোলা প্রভৃতি কাজে সময়ের ঘন ঘন পরিবর্তন ঘটালে এরা কখনো প্রচুর ডিম দেয় না। এরূপ ব্যতিক্রমধর্মী পরিবর্তনে মাদী হাঁস ডিমপাড়া বন্ধ করতে পারে।
- হাঁসকে তাদের নিজেদের খাদ্য খুঁজে নিতে যথা সম্ভব প্রচুর সময় দেয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যখন হাঁসকে বিল বা হাওড় হতে চরিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় তখন সামান্য পরিমাণে খাদ্য ও পানি খেতে দিলে ভালো হয়।
- হাঁসের সারাদিন খাদ্য সংগ্রহের পর এতে তাড়াতাড়ি ফিরতে উৎসাহিত করে। সন্ধ্যার বেশ আগে হাঁসকে আশ্রয় স্থলে ঢুকানো উচিত নয়। যদি অনেক আগেভাবেই ঢুকানো হয় তবে এরা ভীত হয়ে পড়ে ও আশ্রয় স্থানে ফেরা পরিহার করে হাওড়ে বা বিলে গিয়ে ঘুমুতে পারে।

৫. চরাঞ্চলে হাঁস পালন
- চর এলাকার ধান কাটার মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাঁসগুলোকে কর্দমাক্ত জমিতে নিয়ে পালন করা হয়। যেখানে ধান জন্মে না, এসব জায়গায় হাঁস, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে।
- ধান কাটা শেষ হয়ে গেলে এদেরকে মাঠে নিয়ে আসা উচিত। সেখানে এরা সারাদিন ঝরে পড়া ধান খুঁজে খুঁজে খায়।
- কখনো কখনো হাঁসদের ৩-৪ মাস খাওয়ার উপযোগী ঝরা ধান চর এলাকার জমিতে থেকে যায়। এ ধান খেয়ে হাঁস কোন সম্পূরক খাদ্য ছাড়াই প্রচুর ডিম দেয়।
- মাঠে যখন ঝরা ধান ফুরিয়ে আসে তখন হাঁসকে অল্প করে সুষম খাদ্য খাওয়ানো উচিত।
- এপ্রিলের দিকে বৃষ্টিপাত শুরু হলে চরাঞ্চলে ছোট কাঁকড়া গর্ত থেকে বেরিয়ে আসা শুরু করে এবং প্রচুর শামুক ও ঝিনুক পাওয়া যায়। এ ধরনের খাবার খেয়ে হাঁস আবার ধান কাটার মওসুম শুরু হওয়া পর্যন্ত কোন সম্পূরক খাদ্য ছাড়াই প্রচুর ডিম দিয়ে থাকে।
- একজন পরিশ্রমী চাষী চর এলাকায় কোন খাদ্য ক্রয় না করে ২০০ থেকে ৪০০ পর্যন্ত একটি হাঁসের ঝাঁক পালন করতে পারে। হাঁস পালন করে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে হলে প্রতি ১০টি হাঁসীর জন্য ১টি হাঁসা অবশ্যই পালন করতে হবে।
(3 সেট) হাঁসের খাদ্য তালিকা
হাঁসের জাতের নাম ও পরিচিতি নাম
সমাপ্ত: হাঁস পালন পদ্ধতি কয় প্রকার? হাঁস পালন পদ্ধতি pdf, হাঁস পালনের সহজ পদ্ধতি কোনটি, হাঁস পালন পদ্ধতিগুলোর নাম লিখ, হাঁস পালন প্রশিক্ষণ, উন্নত জাতের হাঁসের খামার করব কিভাবে?