আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
হাঁস-মুরগি ও মাছের সমন্বিত চাষঃ
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এখানে নদী ছাড়াও বিল, হাওর, পুকুর, খাল ইত্যাদির অভাব নাই। আমাদের দেশে পুকুরের সংখ্যা প্রায় ১৩ লক্ষের উপরে। এসব পুকুরের অধিকাংশই মজা বা অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। সম্যক জ্ঞান বা প্রশিক্ষণের অভাবে এসব পুকুরে মাছ উৎপাদন খুবই কম। অপরদিকে আমাদের দেশে হাঁস-মুরগির পালন বহুল প্রচলিত। বাংলাদেশে প্রায় ১৩৮ মিলিয়ন মোরগ-মুরগি এবং ১৩ মিলিয়ন (১০ লক্ষ = ১ মিলিয়ন) হাঁস আছে।
এসব হাঁস মুরগির বিষ্ঠা উৎপাদনমূলক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে না। এছাড়া সাধারণ মানুষের একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, মাছের সাথে হাঁস পালন করা উচিত নয়। কারণ হাঁস মাছ, মাছের পোনা খেয়ে ফেলে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে, হাঁস মাছের জন্য ক্ষতিকর কিছুতো নয়ই বরং মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
সমন্বিত হাঁস ও মাছ চাষঃ
সমন্বিত হাঁস ও মাছ চাষ একটি লাভজনক প্রকল্প। সমন্বিত হাঁস ও মাছ চাষ প্রকল্পের প্রয়োজনীয় কার্যাবলি নিম্নে বর্ণনা করা হল।
সমন্বিত হাঁস ও মাছ চাষের সুবিধাসমূহঃ
→ হাঁস মাছ একত্রে চাষে হাঁসের জন্য আলাদা জমির প্রয়োজন হয়না। একই পুকুর দুই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় বলে লাভ হয় বেশি।
→ হাঁস জলাশয় থেকে মাছের জন্য ক্ষতিকর ও অখাদ্য ঝিনুক, শামুক ও ছোট ছোট পোকামাকড় ইত্যাদি খেতে পায় বলে হাঁসকে খাদ্য কম সরবরাহ করতে হয়।
→ হাঁস পুকুরে সাঁতার কাটার ফলে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যা মাছের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। এছাড়া হাঁস ডুব দিয়ে পুকুরের তলদেশে ঠোকরিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে বলে পুকুরের তলদেশ থেকে মাছের পুষ্টিকর খাদ্য উপরে উঠে।
→ এমনকি এ পদ্ধতিতে পুকুরের তলদেশ থেকে বিষাক্ত গ্যাস মুক্ত করতে সাহায্য করে।
→ পুকুরে হাঁস প্রতি পালনে পানি ও মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায় ফলে পুকুরে প্রচুর পরিমাণে মাছের খাদ্য যেমন- উদ্ভিদ কতা, প্রাণি কতা (জুপ্লাংটন), জলজ কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি তৈরি হয়।
→ হাঁসের মলমূত্র উৎকৃষ্ট মানের জৈব সার। তাই পুকুরে সমন্বিত হাঁস ও মাছ চাষ করলে মাছ উৎপাদনের জন্য কোন অতিরিক্ত সার প্রয়োজন হয়না । হাঁসের মলমূত্র শুধু সারই নয় কিছু কিছু মাছের সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।
→ হাঁসের অপচয়কৃত বা উচ্ছিষ্ট খাদ্য মাছ অতিরিক্ত খাদ্য হিসেবে খেতে পায়।
→ শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি মাছের কতিপয় কৃমির মাধ্যমিক পোষক। এসব মাধ্যমিক পোষক হাঁস খায় ফলে মাছের কৃমি রোগ দমন হয়।
→ সর্বোপরি হাঁস মাছ একত্রে চাষে আমরা একই ফার্ম থেকে মাছ, মাংস ও ডিম সর্বোচ্চ হারে পেতে পারি।
মাছ চাষের পদ্ধতিঃ
পুকুরে হাঁস ও মাছ চাষের উদ্দেশ্য অল্প খরচে অধিক পরিমাণ মাছ উৎপাদন এবং অতিরিক্ত ফসল হিসেবে হাঁসের মাংস ও ডিম লাভ । এই উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় কার্যাবলি নিম্নে প্রদত্ত হলো।
পুকুর প্রস্তুতকরণ :
→পুকুরের পানি নিষ্কাশনের ও সমতল করার পর প্রতি শতকে ১ কেজি হিসেবে চুন ছিটিয়ে দিতে হবে।
→ পুকুরকে শুকনো করে অথবা ঘনঘন জাল টেনে পুকুরের অবাঞ্ছিত মাছ সরিয়ে ফেলা যায়।
→ পুকুর থেকে জলজ আগাছা শিকড়সহ তুলে ফেলতে হবে। পুকুরের তলদেশ হতে কাদা, পঁচাপাতা, পরিষ্কার করতে হবে।
→পুকুরে চুন প্রয়োগের ৭দিন পর পুকুরের উপর নির্মিত ঘরে হাঁসের বাচ্চা আনা যাবে। হাঁসের বাচ্চা আনার ১০-১২ দিন পর পুকুরে মাছ ছাড়তে হবে।
→ পুকুরের তলদেশ ও পুকুর পাড় উঁচু নিচু থাকলে তা সমান করে দিতে হবে। এছাড়া পুকুর পাড়ে বেশি জংগল থাকলে কিছু কেটে আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
→ পুকুরকে মাছ চাষের উপযোগী করে প্রস্তুত করতে হবে। প্রথমে পুকুর থেকে সকল রাক্ষুসে মাছ যেমন- শোল, বোয়াল, গজার, আইড়, চিতল, টাকি ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে।
মাছের প্রজাতি নির্বাচন :
পুকুরে হাঁস পালনে প্রচুর পরিমাণে মাছের খাদ্য (ফাইটোপ্লাংটন, জুপ্লাংটন, জলজ ইত্যাদি) উৎপন্ন হয়। এসব খাদ্য পুকুরের বিভিন্ন স্তরে থাকে। কাতলা ও সিলভার কার্প পুকুরের উপরের স্তরে, রুই মাছ মধ্য স্তরে এবং মৃগেল, কালবাউস, কার্পি মাছ নিচের স্তরের খাবার খেয়ে থাকে। উল্লেখ্য, নিচের স্তরের খাদ্য গ্রহণের সময় মাছ পুকুরের তলদেশে ঘোলাটে করে ফলে পুকুরের তলদেশে জমায়েত মলের সার পুকুরে ছড়িয়ে পড়ে। তাই হাঁসের সাথে মাছ চাষের জন্য উপরোক্ত পানির তিন স্তরের মাছ চাষ করা সবদিক থেকে উত্তম। এছাড়া পুকুরের পাড়ে ঘাস থাকলে গ্রাস কার্পিও ছাড়া যায়।
পুকুরে মাছের সংখ্যা :
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী একর প্রতি ৩-৪ ইঞ্চি সাইজের তিন হাজার মাছের পোনা ছাড়া যায়। তবে একটু বড় সাইজের মাছ ছাড়লে মাছের মৃত্যুর হার কমে এবং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
টেবিল : হাঁস ও মাছের একত্র চাষ পদ্ধতিতে একর প্রতি বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সংখ্যা ও আনুপাতিক হার।
ক্র/নং | মাছ | শতকরা হার | মোট সংখ্যা | বছরে সম্ভাব্য একক উৎপাদন |
১। | কাতলা/সিলভার কার্প | ৩০.০ | ৯০০ | ১.০ কেজি |
২। | রুই | ২০.০ | ৯০০ | ০.৭ কেজি |
৩। | মৃগেল/কাল বাউস/কার্পি | ৪.০ | ১২০০ | ০.৭ কেজি |
৪। | গ্রাস কার্প | ১০.০ | ৩০০ | ২.০ কেজি |
মাছের ওজন পরীক্ষা : প্রতি মাসে একবার জাল টেনে মাছের ওজন পরীক্ষা করতে হবে। মাছের দৈহিক বৃদ্ধি কম হলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ মত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মাছের রোগ দমন : মাছের রোগের চিকিৎসা বেশ জটিল। তাই বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পুকুর প্রস্তুতকরণ ও স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে পুকুরের ব্যবস্থাপনা মাছের রোগ প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। তবে মাছের রোগ দেখা দিলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন ।
মাছ বাজারজাতকরণ : সাধারণত মাছ ছাড়ার ১০-১২ মাস পর মাছ ধরে বিক্রি করে পুনরায় একই নিয়মে মাছ ছাড়া যায় ।
হাঁস পালন পদ্ধতিঃ
হাঁসের ঘর নির্মাণ :
→ হাঁসের ঘর পুকুরের পানির উপর এমন স্থানে নির্মাণ করতে হবে যেখানে সারা বছর ঘরের নিচে কমপক্ষে ১ মিটার পানির গভীরতা থাকে।
→ হাঁসের ঘর বাঁশ, ছন, তালপাতা, টিন ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা যায়। ঘরের ছাদ টিন অপেক্ষা ছন দিয়ে তৈরি অধিক সুবিধাজনক।
→ ঘরের মেঝে বাঁশের বাতা দিয়ে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন প্রতি বাতার মাঝে আধা ইঞ্চি ফাঁক থাকে। এতে বিষ্ঠা ও উচ্ছিষ্ট খাদ্য সরাসরি পানিতে পড়তে পারে।
→ ঘরে যাতে শিয়াল, বন্য বিড়াল প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
→ ঘরের উচ্চতা ৪-৫ ফুট করতে হবে। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নির্ভর করবে হাঁসের সংখ্যার উপর। প্রতিটি হাঁসের জন্য ৩-৪ বর্গ ফুট জায়গার প্রয়োজন। এই হিসেবে ১০০টি হাঁসের জন্য ৩০০-৪০০ বর্গ ফুট বিশিষ্ট ঘরের প্রয়োজন।
হাঁসের জাত নির্বাচন :
বলা বাহুল্য যে সব হাঁস ডিম দেয় বেশি এবং আমাদের আবহাওয়ায় বা পরিবেশ টিকে থাকতে সক্ষম সেসব হাঁস মাছের সাথে একত্র পালন বেশি লাভজনক। এদিক থেকে ইন্ডিয়ান রানার ও খাকী ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস সবদিক থেকে উপযুক্ত। কারণ এরা বছরে প্রায় ২৫০-৩০০টি ডিম দেয় এবং ৫ মাস বয়স থেকে ২-২.৫ বছর পর্যন্ত লাভজনক ভাবে ডিম দেয়।
হাঁসের সংখ্যা :
→ হাঁসের ডিম ছানা ফুটানোর জন্য ব্যবহার হলে পুরুষ ও স্ত্রী হাঁসের অনুপাত ১ : ৫ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
→ ডিম খাওয়ার জন্য ব্যবহার হলে ১ : ১০ – ১৫ অনুপাতে পুরুষ ও স্ত্রী হাঁস পালন করতে হবে।
→ পুকুরের আয়তন ও পানির গভীরতার উপর হাঁসের সংখ্যা নির্ভর করে। পুকুরের পানির গভীরতা ৬ ফুটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে একর প্রতি ১৮০-২০০টি হাঁস প্রতিপালন করা যায়।
→ হাঁসের বয়স ২-৩ বছর হয়ে গেলে তা বিক্রি করে পুনরায় সমপরিমাণ বাচ্চা হাঁস পালন করতে হবে।
হাঁসের খাদ্য ও পরিচর্যা :
→ প্রতিটি খাকী ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস দৈনিক ৪০-৫০ গ্রাম খাদ্য প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে এবং ১২৫-১৩০ গ্রাম অতিরিক্ত খাদ্য সরবরাহের প্রয়োজন হয়।
→ হাঁসের খাবারের গুণগত মানের উপর বিষ্ঠার গুণাগুণ নির্ভর করে। সাধারণত বাচ্চা হাঁসের খাদ্যে শতকরা ২১ ভাগ আমিষ এবং ডিম পাড়া হাঁসের খাদ্যে শতকরা ১৮ ভাগ আমিষ থাকা প্রয়োজন ।
→ হাঁসের বয়স ও উৎপাদন অনুযায়ী সুষম খাদ্য সরবরাহ করা প্রয়োজন ।
→ প্রতি ২০টি হাঁসের জন্য ৩″ × ৬″ × ৬” ইঞ্চি মাপের খাবার পাত্র প্রয়োজন।
→ হাঁসের নবজাত ছানাকে ৪-৫ বার এবং ৪ সপ্তাহ বয়সের পর ২-৩ বার করে খাবার দিতে হবে। বয়স্ক হাঁসকে দিনে দু’বার খাবার প্রদান করাই যথেষ্ঠ হয়।
→ হাঁস ভেজা খাবার পছন্দ করে তাই হাঁসের খাবার অবশ্যই পানিতে ভিজিয়ে দিতে হবে।
হাঁসের বয়স ও উৎপাদন অনুযায়ী খাদ্য তালিকা :
ক্র.নং | উপাদান | বাড়ন্ত হাঁস (উপাদান%) ফর্মূলা-১ | বাড়ন্ত হাঁস (উপাদান%) ফর্মূলা-২ | ডিম পাড়া হাঁস (উপাদান % ) ফর্মূলা-১ | ডিম পাড়া হাঁস (উপাদান % ) ফর্মূলা-২ |
১। | গম ভাঙ্গা | ৪৫ | ৪৫ | ৪৫ | ৪৫ |
২। | গমের ভূষি | ১০ | – | ১০ | – |
৩। | চাউলের কুড়া | ১৪ | ২৭ | ১৬ | ৩০ |
৪। | তিলের খৈল | ১৬ | ১৪ | ১৫ | ১২ |
৫। | শুটকি মাছের গুড়া | ১২ | ১২ | ১০ | ১০ |
৬। | ঝিনুকের গুড়া | ২.৫ | ১.৫ | ৩.৫ | ২.৫ |
৭। | লবণ | ০.৫ | ০.৫ | ০.৫ | ০.৫ |
মোট | – | ১০০ | ১০০ | ১০০ | ১০০ |
বি.দ্র. : প্রতি কেজি খাদ্যে ১-১.৫ গ্রাম ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
হাঁসের স্বাস্থ্য :
→ হাঁসের খাবার পাত্র ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।
→ হাঁস অসুস্থ হওয়া মাত্র দল থেকে পৃথক করতে হবে।
→ মৃত হাঁসকে মাটির নিচে গর্তে পুতে রাখতে হবে।
→ সময়মত রোগাক্রান্ত হাঁসকে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ মত চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনবোধে রোগাক্রান্ত হাঁস মেরে ফেলা উত্তম।
→ রোগ প্রতিরোধের জন্য সময়মত টিকা দিতে হবে।
উপসংহার :
→ বলাবাহুল্য হাঁসের সাথে মাছ চাষ অতি লাভজনক। উল্লেখ্য, বছর শেষে মাছ বাজার জাত করার পূর্বে মাছগুলোকে কয়েকদিন পরিষ্কার পানিতে রাখতে হবে। এতে মাছের শরীরে কোন রূপ দুর্গন্ধ থাকলে দূর হয়ে যায়।
→ গবেষণায় দেখা গেছে যে, সমন্বিত হাঁস ও মাছ চাষ প্রকল্পে তিনটি জাতের (Khaki Campbell, Zending and Cross (KC x L) হাঁস পালন করে প্রায় একই ধরনের দৈহিক ওজন বৃদ্ধি, মৃত্যুর হার, ডিম উৎপাদন ও লাভ পরিলক্ষিত হয়।
সমন্বিত মুরগি ও মাছ চাষঃ
হাঁস ও মাছ চাষ করার জন্য যেভাবে পুকুর তৈরি করা হয় ঠিক সেইভাবে পুকুর প্রস্তুত করে সমন্বিত মুরগি ও মাছ চাষ করা যায়।
→ পুকুরের উপর মুরগির ঘর তৈরি করা হয় বলে পৃথক জায়গার প্রয়োজন হয় না।
→ মুরগির উচ্ছিষ্ট খাদ্য ও বিষ্ঠা মাছের খাদ্য ও পুকুরের জৈব সার হিসেবে কাজ করে।
মুরগির ঘর তৈরি :
→ মুরগির ঘরের স্থানটি আলো বাতাস পূর্ণ হতে হবে এবং ঘরটি আয়তাকার হওয়া প্রয়োজন।
→ মুরগির ঘর পুকুরের গভীর পানিযুক্ত নিরিবিলি জায়গায় তৈরি করতে হয় যাতে শুকনো মৌসুমে পানি কমে গেলেও মুরগির বিষ্ঠা ও উচ্ছিষ্ট খাদ্য পানিতে পড়তে পারে ।
→ দীর্ঘস্থায়ীত্বের জন্য ঘর দো-চালা করাই উত্তম।
→ মুরগির ঘরের মেঝে বাঁশের বাতা দিয়ে এমনভাবে ফাঁক দিয়ে তৈরি করতে হবে যাতে বাতার ফাঁকে মুরগির পা ঢুকে না যায় এবং ফাঁক দিয়ে মুরগির বিষ্ঠা ও উচ্ছিষ্ট খাবার সরাসরি পানিতে পড়তে পারে।
→ ঘরের মেঝে থেকে ৪ ফুট উঁচুতে চালা দিতে হবে। ঘরের চারিদিকে মেঝে থেকে ২ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত বাঁশের শক্ত চাটাই থেকে চালা পর্যন্ত বাঁশের চটা দিয়ে ফাঁক করে ঘিরে দিতে হবে যেন ঘরে ঠিকমত আলো বাতাস চলাচল করতে পারে।
চিত্র- পুকুরে সমন্বিত মুরগি ও মাছ চাষের উপযোগী ঘর।
মুরগির জাত নির্বাচন :
→ ব্রয়লার উৎপাদনের জন্য স্টারব্র জাতের ব্রয়লার পালন উত্তম।
→ ডিম পাড়া মুরগি পালনের ক্ষেত্রে স্টারক্রস, ইসা ব্রাউন ও লোহম্যান জাতের লেয়ার নির্বাচন করা যায়
মাছের খাদ্য :
→ মুরগির যে বিষ্ঠা ও উচ্ছিষ্ট খাদ্য পানিতে পড়ে তা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়।
→ মাছের খাদ্য ও পুকুরে সারের প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করে পুকুরে মুরগির সংখ্যার উপর। প্রতি শতক পুকুরে ২টি এই হিসেবে মুরগি পালন করলে মাছ উৎপাদনের জন্য কোন প্রকার সার বা খাদ্যের প্রয়োজন হয় না।
→ মুরগির খাদ্য : ব্রয়লার ও ডিম পাড়া মুরগির খাদ্য তালিকা সংশ্লিষ্ট অংশে বর্ণনা করা হয়েছে।
সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ঃ
২০-৪০ শতাংশের একটি পুকুরে ১০০-২০০টি হাঁসের জন্য এ প্রকল্প শুরু করলে সব মিলে খরচ হবে ৫০-৬০ হাজার টাকা। সঠিক পরিচর্যা আর যত্ন নিতে পারলে প্রথম বছরে যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে ২০-৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। রোগমুক্ত, উন্নত জাতের হাঁস আধুনিক পদ্ধতি ও সঠিক নিয়ম অনুযায়ী চাষ করুন। যে কোনো পরামর্শের জন্য আপনার উপজেলা বা জেলা মৎস্য ও পশুসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
চিত্র- সমন্বিত হাঁস ও মাছ চাষের মডেল প্রকল্প: এক শত হাঁস ও মাছের যৌথ চাষ প্রকল্পের একটি রূপরেখা ও অর্থনীতি নিম্নে দেয়া হলো :

