ছাগলের সাধারণ রোগ এবং প্রতিকারঃ
যেহেতু ছাগল একটা প্রাণী, তাই তার জন্যেও এ সমস্ত রোগব্যাধি ও দুর্ঘটনা অস্বীকার করা যায় না। পশু বা ছাগল পালনকারীর সমস্ত প্রকার যৌথ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তখন সাধারণত পশু চিকিৎসা বা ভেষজবিদদের স্মরণাপন্ন হতে হয়।
আমরা ইচ্ছে করলে রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস্, ব্যাক্টেরিয়া বা পরজীবী ধ্বংস করতে পারি না। আমাদের সমস্ত সম্পদ ও প্রচেষ্টা নিয়োগ করলেও তা ধ্বংস করা অসম্ভব। সুতরাং আমাদের প্রস্তুত থাকতে হয় ওষুধপত্র, ভ্যাক্সিন, সিরাম এবং অন্যান্য জীবাণুনাশকসহ-যা দ্বারা এ সমস্ত রোগের লক্ষণ উপশম করা যায় এবং রোদের নিমিত্ত জীবাণুগুলোকে নিস্তেজ, দমন ও সাময়িকভাবে ধ্বংস করা যায়।
তবে তুলনামূলকভাবে ছাগলের রোগব্যাধি অনেক কম। তারা অনেক বিষাক্ত লতা-পাতা বা কাঁটাগুল্ম নিষ্ক্রিয় করে সহজে হজম করতে পারে। এখানে মোটামুটি ছাগলের কিছু রোগব্যাধি ও সাধারণ দুর্ঘটনা ও তার প্রতিকারের বিষয়ে আলোচনা করা হলোঃ
১. এসিটোনেমিয়া
লক্ষণসমূহঃ
ছাগলের দানাদার খাদ্য খেতে অনীহা প্রকাশ করে এবং ঘাস ও আঁশ জাতীয় খাদ্য খেতে চায়। দুধ উৎপাদন হঠাৎ করে কমে যায়। অনিয়মিতভাবে জাবর কাটে, পায়খানার রঙ কালো হয় এবং আঠালো ও শ্লেষ্মা জাতীয় পদার্থের অস্তিত্ব দেখা যায়। শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে তবে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ে। সাধারণত বাচ্চা প্রসবের ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে এ রোগ দেখা দেয়। যে সমস্ত ছাগী বেশি দুধ দেয়, সাধারণত তারাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
প্রতিকারঃ
সঠিক খাদ্য ব্যবস্থা এবং অধিক শক্তিসম্পন্ন খাদ্য দেওয়া হলে এ রোগ হয় না।
২. অন্ধত্ব
লক্ষণসমূহঃ
এক বা উভয় চক্ষুদ্বারা পানি পড়তে থাকে। চোখের মণি ঘোলাটে বা ধূসর হয়। মণির ওপরে সাদা বিন্দু দেখা যায়। বিন্দু ক্রমান্বয়ের বড় হতে থাকে এবং রক্তবর্ণ ধারণ করে। পরে ফেটে গেলে চোখের গোলক সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।
কারণসমূহঃ
সাধারণত মাছির দ্বারা জীবাণু সংক্রামিত হয়। পরে আক্রান্ত চক্ষু হতে ভালো চক্ষুতে বিস্তার লাভ করে থাকে। পালের মধ্যে একাধিক ছাগলও আক্রান্ত হতে পারে।
৩. পেট ফাপা
লক্ষণসমূহঃ
পেটের মধ্যে গ্যাস সৃষ্টির ফলে পেট ফুলে ওঠে। যখন পেটের স্ফীতি খুব বেড়ে যায় তখন হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের ওপরে চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয় ও হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে ছাগল মারা যায়।
কারণসমূহঃ
শরৎ ও বসন্তকালের শিশির ভেজা ঘাস খেয়ে অথবা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পাকস্থলীস্থ খাদ্য হজম হতে বাধাপ্রাপ্ত হলে পেটের মধ্যে গ্যাস সৃষ্টি হয়। অনেক সময় খাদ্যের সাথে আবর্জনা মিশ্রিত থাকলে অথবা বিষক্রিয়া হলে এ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে।
প্রতিরোধঃ
সারাদিনের খাবার একবারে না দিয়ে বিভিন্ন সময়ের জন্য ভাগ করে দিতে হয়। ফলে তারা যাবর কাটার জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়। খাদ্য পরিমিত ও সুষম হওয়া উচিৎ।
৪. পেট ব্যথা
লক্ষণসমূহঃ
খাদ্য পরিপাকতন্ত্রে সাধারণত এ ব্যথা দেখা দেয়। এ ব্যথা আরম্ভ হলে ছাগল অর্ধেক বসা অবস্থায় ও দাঁড়িয়ে অস্থিরতা প্রকাশ করতে থাকে। হঠাৎ খাদ্য গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। পেটের বাম পাশে অনেক সময় ফেঁপে ওঠে। ক্রমান্বয়ে কষ্ট বাড়তে থাকে। যদি সময়মতো কিশোর বয়সের ছাগলের এ রোগ হয়। পেটের কৃমির আধিক্য অথবা অধিক পরমাণে দানাদার খাদ্য গ্রহণ করলে এ ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে। দানাদার খাদ্য খাওয়ার পর অত্যধিক ঠাণ্ডা পানি পান করলে পেটের ব্যথা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলেও এ ব্যথা হতে পারে।
প্রতিকারঃ
সঠিক খাদ্য ব্যবস্থা এবং খাওয়ার পর নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পানি পান করলে এ উপসর্গ দেখা দেয় না।
৫. পাতলা পায়খানা
ডায়রিয়া আসলে কোনো রোগ নয় বরং বিভিন্ন পেটের পীড়াজনিত লক্ষণ। ক্রিমি, কক্সিডিয়া, এন্টারোটেক্সিমিয়া, সাল্মোনিয়া এবং অন্যান্য ব্যাক্টেরিয়া, বদহজম ও অতি ভোজনজনিত কারণে পাতলা পায়খানা হতে পারে। ছাগলের বাচ্চাদের অনিয়মিত খাদ্য দান ও দুধ পান করানোর পাত্র অপরিষ্কার থাকলে অথবা ঠাণ্ডা দুধ পান করালে এ উপসর্গ দেখা দিতে পারে। রোগের কারণ অনুসন্ধান করে তার প্রতিকার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হয়।
৬. একজিমা
ছাগলের শরীরে বিভিন্ন প্রকারের চর্ম রোগ দেখা দিতে পারে তার মধ্যে একজিমা একটি। ছাগলের চামড়ার ওপরে দু ভাবে আবির্ভূত হতে পারে। যেমন : Contagious pastular Darmatitis এবং ছাগলের বসন্ত বা Goat pox.
লক্ষণসমূহঃ
সাধারণত নাক ও মুখের চারদিকে ফুসকুঁড়ি আকারে দেখা দেয়। অনেক সময় চোখ, মলদ্বার ও পায়ের খুরের চারদিকেও ফুসকুঁড়ি বের হয়। পরে ফোসকা ফেটে গেলে পানির মতো আঠালো পদার্থ ঝরতে থাকে। আস্তে আস্তে শুকিয়ে মামড়ি বা খোস ঝরে পড়ে। এ রোগ ওলানেও দেখা দেয়। সমস্ত বয়সের বিশেষ করে কিশোর ছাগল ও ভেড়ার এ রোগ দেখা দেয়।
প্রতিকারঃ
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এ রোগের প্রধান প্রতিকার। স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাধীনে ছাগল পালন করলে সাধারণত এ রোগ হয় না। বিদেশে এ রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ভ্যাক্সিন ব্যবহার করা হয়। তবে খুশির বিষয়, এ রোগের প্রাদুর্ভাব আমাদের দেশে তেমন নেই বললেই চলে।
৭. বসন্ত
লক্ষণসমূহঃ
ছাগলের ওলানে এক ধরনের ফুসকুঁড়ি বের হয় এবং পরে তা ফোসকায় পরিণত হয়। ফোসকার ওপরে আঠালো মামড়ি তৈরি হয়। এ মামড়ি তুলে ফেললে রসক্ষরণ হতে থাকে। এ রোগের ব্যাপকতা অত্যধিক এবং মৃত্যুহারও বেশি। সম্প্রতি আমাদের দেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাবে (১৯৮০-৮৪) প্রচুর ছাগল মারা গেছে। বিদেশ হতে ভ্যাক্সিন্ আমদানি করে রোগ দমন করা সম্ভব হয়েছিল।
প্রতিকারঃ
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। আক্রান্ত ছাগীকে সাথে সাথে আলাদা করে ফেলতে হবে। ফলে রোগ সংক্রামিত হতে পারে না। এ রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ভ্যাকসিন্ ব্যবহার করতে হয়। চাহিদার ভিত্তিতে সরকারিভাবে ভ্যাক্সিন্ সরবরাহ করা হয়।
৮. গর্ভকালিন বিষক্রিয়া
লক্ষণসমূহঃ
গর্ভজাত বিষক্রিয়ার ফলে ১২ হতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রথমে নিষ্প্রভ ও নিস্তেজ ভাব দেখা দেয়। খাদ্যের প্রতি কোনো আগ্রহ থাকে না। হঠাৎ করে পতিত হয় এবং মৃত্যুবরণ করে।
কারণসমূহঃ
গর্ভাবস্থায় শেষের ৬ সপ্তাহ খাদ্যে অনিয়ম ঘটলে এবং সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় শারীরিক ব্যায়াম না হলে এ অবস্থা ঘটতে পারে।
প্রতিকারঃ
সঠিক খাদ্য ব্যবস্থা ও পরিচর্যা বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় শেষের ৬ সপ্তাহ কর্মশক্তি বাড়ানোর জন্য খাদ্যমান উন্নত, প্রয়োজনীয় ও নিয়মিত শরীর চর্চার ব্যবস্থা করা দরকার।
৯. দাঁদ (Warm)
লক্ষণসমূহঃ
শুষ্ক খোসযুক্ত ছোট দানা দানা ফুসকুঁড়ি একত্রে চামড়ার ওপরে যে-কোনো স্থানে গোল চক্রাকারের ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এ দাঁত মানুষের মধ্যেও সংক্রামিত হয়।
কারণসমূহঃ
এক ধরনের ছত্রাক এ রোগের প্রধান কারণ।
প্রতিকার এবং চিকিৎসাঃ
খাদ্যের সাথে বা আলাদাভাবে (Fulcin) ব্যবহার করা যায়। কাপড় ধোয়ার সোডা দ্বারা ক্ষত পরিষ্কার করে (Creosote) ব্যবহার করা যায়। সাবান বা অন্য কোনো জীবাণুনাশক (Savlon, Dettol) ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
১০. ধনুস্টংকার
লক্ষণসমূহঃ
শরীরের ভিতরে চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দেহ অঙ্গভঙ্গির উদ্বিগ্ন ভাব, ঘাড় প্রসারিত, কান খাড়া ও উপরের ঠোঁট উল্টিয়ে দাঁত খিচিয়ে রুক্ষ শব্দ করে। মুখে ফেনা বের হয়। লেজ খাড়া হয়ে ওঠে, কাঠের ঘোড়ার মতো পা শক্ত ও অনমনীয় হয়, পেট ফুলে ওঠে, অবশেষে মৃত্যু ঘটে।
কারণসমূহঃ
শরীরের যে-কোনো স্থানে ছোট বা গভীর যে-কোনো প্রকারের ক্ষতের মধ্য দিয়ে টিটেনাস্ রোগের জীবাণু (Cl-tetany) প্রবেশ করে এ রোগের সৃষ্টি করে।
প্রতিকারঃ
শরীরে কোনো ক্ষত সৃষ্টি হলে (Tetanus antiserum) ইনজেক্শন্ অথবা টিটেনাস্ ভ্যাক্সিন্ প্রোগ্রাম অনুযায়ী সমস্ত ছাগলকে পূর্ব থেকে দেওয়া থাকলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
১১. দুধেল বা ঘাস টিটানী
লক্ষণসমূহঃ
উদ্বেগপূর্ণ চাহনী ও অঙ্গ-প্রতঙ্গের অসংযত আন্দোলন এ রোগের প্রধান লক্ষণ। শরীরের মাংসপেশির প্রবল আক্ষেপণ হতে থাকে এবং আকস্মিকভাবে শরীরের ক্রিয়াশক্তি লোপ পায়। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে মৃত্যু ঘটতে পারে।
কারণসমূহঃ
গর্ভবতী অবস্থায় বসন্ত বা শরতের আকস্মিক উদ্দীপ্ত চারণভূমিতে চরার ফলে এবং খাদ্যে ম্যাগনেশিয়াম নামক খনিজ পদার্থের অভাবজনিত কারণে এ উপসর্গ দেখা যায়।
প্রতিকারঃ
সঠিক সুষম খাদ্য ব্যবস্থা ও পরিচর্যা করা হলে বিশেষ করে বাচ্চা জন্ম গ্রহণের ২ সপ্তাহ খাদ্যে ম্যাগনেসিয়ামের অবস্থান নিশ্চিত হলে এ উপসর্গ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
১২. দুধজ্বর
লক্ষণসমূহঃ
শরীরের অসংযত অবস্থা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের টলটলায়মান অবস্থা পরিলক্ষিত এবং উঠে দাঁড়াতে পারে না। মাথা শরীরের দিকে ফেরানো থাকে। সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ক্রমান্বয়ে নিস্তেজ হয়েঅবশেষে মৃত্যু ঘটে।
কারণসমূহঃ
বাচ্চা প্রসবের ১ মাস পূর্ব হতেই ছাগী দুর্বল হতে শুরু করে এবং বাচ্চা প্রসবের পর লক্ষণ প্রকাশ পায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চা প্রসবের ২-৩ দিনের মধ্যে অবস্থা প্রকট হয়ে পড়ে। যে সমস্ত ছাগীর দুধের উৎপাদন বেশি হয় তাদের এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি দেখা দেয়। সাধারণত খাদ্যে ক্যাল্সিয়াম নামক খনিজ পদার্থের অভাব ঘটলে অথবা শরীরে ক্যাল্সিয়াম সঠিক মাত্রায় বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় বাধাপ্রাপ্ত হলে এ সমস্ত উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়। পুরুষ ছাগলের শরীরে ক্যাল্সিয়ামের অভাব ঘটলে অস্থিরতা দেখা দেয় এবং আকস্মিকভাবে দ্রুত লক্ষ্যহীনভাবে ছুটতে থাকে। পরে পড়ে গিয়ে ডাকতে থাকে এবং হঠাৎ করে মৃত্যু ঘটে। শরীরে মধ্যে ক্যাসিয়াম বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে কি না বাইরের কোনো লক্ষণ দেখে উপলব্ধি করা কঠিন। অনেক সময় দেখা যায়, সুষম খাদ্য দেওয়ার পরও এ সমস্ত রোগ হয়ে থাকে। সাধারণত থাইরয়েড গ্লান্ডের কার্যকারিতার অনিয়ম ঘটলে অথবা শরীরে কোবাল্টের অভাব ঘটলে অথবা ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাসের আনুপাতিক হার অ- সামঞ্জস্য হলে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
প্রতিকারঃ
খাদ্যের মধ্যে সঠিক মাত্রায় খনিজ পদার্থের উপস্থিতি বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
১৩. পরিশোধিত দুধ
বাচ্চা প্রসবের পর দুধের মধ্যে রক্ত কণিকা বিশেষ করে প্রথম বাচ্চা প্রসবের পর এ অবস্থা হয়। সাধারণত প্রসবের সময় কোনো রক্তশিরা জখম হলে এ অবস্থা ঘটতে পারে। এগুলো তেমন তারতম্যের মধ্যে পড়ে না। যদি এ অবস্থা বেশি দিন ধরে থাকে অথবা এর সাথে অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয় তবে বুঝতে হবে শরীরে ক্যাল্সিয়ামের ঘাটতি হয়েছে অথবা খাদ্যের মধ্যে ফসফরাসের পরিমাণ বেশি হয়েছে।
১৪. নিউমোনিয়া
লক্ষণসমূহঃ
শরীরে জ্বর থাকে। নিষ্প্রভ আচরণ। খাদ্যের প্রতি অনীহা। পিঠ বাঁকা করে দাঁড়ানো, সাধারণ অবস্থার চেয়ে দ্রুত এবং কষ্টকর শ্বাস-প্রশ্বাস ইত্যাদি নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ। নাক দিয়ে অনেক সময় শ্লেষ্মা ঝরে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে একটা শব্দের সৃষ্টি হতে পারে।
১৫. ছাগলের আভ্যন্তরীণ কৃমি
ছাগলের শরীরে আভ্যন্তরীণ কৃমির মধ্যে গোলকৃমি, ফিতেকৃমি, পাতাকৃমি, ফুসফুসের সুতাকৃমি, ফুসফুসের চুলকৃমি কক্সিডিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। দেখা যায় যে, ছাগল মাত্র এক জাতীয় কৃমির দ্বারা আক্রান্ত হয় না। তারা একই সাথে বিভিন্ন পদের কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত পরীক্ষাগারে ছাগলের পায়খানা পরীক্ষা করলে কৃমির জাত চিহ্নিত করা যায়।
গোলকৃমিঃ
পায়খানা নরম থাকে। ছাগলের থুনির নিচে স্ফীতি লক্ষ্য করা যায়। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। চামড়া রুক্ষ হয়ে ওঠে। যে-কোনো বয়সে এবং বছরের যে- কোনো সময় এ কৃমির আক্রমণ ঘটতে পারে।
ফিতাকৃমিঃ
সাধারণত মার্চ ও অক্টোবর মাসে ছাগলের বাচ্চা এ কৃমির দ্বারা আক্রান্ত হয়। শরীরে একবার ঢুকে বিভিন্ন স্থানে বাসা তৈরি করে এবং সেই সমস্ত স্থানে স্ফীত দেখা যায়। মাথার তালুতে হাড়ের নিচে যখন বাসা বাঁধে তখন ছাগল একটা নির্দিষ্ট স্থানে ঘুরতে এবং যন্ত্রণায় ডাকতে থাকে। এ অবস্থাকে ‘গিট’ বলে। স্বাস্থ্যের হঠাৎ তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটে না। তবে রিকেট বা ভঙুর হাড় এবং ক্রমান্বয়ে তার স্বাস্থ্যহানি ঘটতে থাকে।
পাতাকৃমিঃ
মারাত্মক রোগ ও সঙ্কটজনক আক্রমণ ঘটলে ছাগলকে নিষ্প্রভ ও দুর্বল দেখায়। পেট তুলনামূলকভাবে বড় দেখা যায় এবং পেটে ব্যথা থাকে। বুকের ও পাঁজরের হাড় টিপলে ব্যথা অনুভব করে। পায়খানা পাতলা হয় এবং ছাগলের মৃত্যু ঘটে।
দীর্ঘস্থায়ী ও সঙ্কটজনক অবস্থায় নিস্তেজ ভাব থাকে এবং সেই সাথে শরীরে রক্তশূন্যতার সৃষ্টি হয়। থুত্নীর নিচে স্ফীত দেখা যায়। দাঁতের মাড়ি ফ্যাকাসে ধারণ করে। পেটের স্ফীতিও বেড়ে যায়। যে-কোনো বয়সের ছাগল এতে আক্রান্ত হতে পারে।
ফুসফুসের ফিতাকৃমিঃ
এ কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হলে ছাগল খুক খুক করে কর্কশ ভাষায় কাশে ও সেই সাথে আঠালো শ্লেষ্মা নাক দিয়ে ঝরতে থাকে। ক্রমান্বয়ে অবস্থা ক্ষীণ হয়ে পড়ে। বাচ্চাদের জন্যে অবস্থা বেশি মারাত্মক হয়। বড়দের জন্য তেমন মারাত্মক নয়। সাধারণত ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে চারণভূমিতে চরলে এ কৃমির দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ফুসফুসের চুলকৃমিঃ
শুষ্ক কাশী থাকে এবং কোনো প্রকার শ্লেষ্মা থাকে না। বছরের যে-কোনো সময় এবং শুধু বড় ছাগল আক্রান্ত হয়। এটা তেমন মারাত্মক নয়।
১৬. কসিডিয়া
সাধারণত বর্ষা ও ভেজা আবহাওয়াতে কক্সিডিয়া দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। কক্সিডিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে পাতনো আম মিশ্রিত পায়খানা হয়। অনেক সময় রক্ত মিশ্রিত থাকে। কোনো ক্ষুধা বা খাদ্যের প্রতি চাহিদা থাকে না। বেশি সঙ্কটজনক অবস্থায় ৪-৫ দিন ভোগার পর ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে মারা যায়। দীর্ঘস্থায়ী ও অল্প মারাত্মক অবস্থায় কিছুদিন ভোগার পর সুস্থ হয়ে ওঠে এব পুনরায় ২ সপ্তাহ পরে আক্রান্ত হয়। স্বাস্থ্য ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং দীর্ঘদিন ভুগতে ভুগতে অবশেষে মারা যায়।
১৭. ছাগলের শরীরের বাইরের পরজীবী
লক্ষণসমূহঃ
এ সমস্ত পরজীবী বা উকুন ছাগলের জন্য একটা সাধারণ উপদ্রব। এ পরজীবীর মধ্যে লাইস্, মেন্জ, মাইট, মাছি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তারা শরীরের লোমের গোড়ায় ডিম পাড়ে এবং রক্ত শুষে খেয়ে জীবনধারণ করে। ফলে চুলকায়, লোম পড়ে যায় এবং ক্ষতের সৃষ্টি করে। শরীর হতে রক্ত শুষে খাওয়ার ফলে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। এ সমস্ত পরজীবী অত্যন্ত সংক্রামক এবং যে-কোনো বয়সের ছাগল এদের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
কারণসমূহঃ
যে সমস্ত ছাগলের ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল করে না এবং ব্যবস্থাপনা অনুন্নত সে সমস্ত ছাগল এ পরজীবী দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয়। বৃষ্টিপাত বেশি হলে, আবহাওয়া ভেজা স্যাঁতসেঁতে হলে এদের বংশ বৃদ্ধির পরিবেশ অনুকূলে আসে।
প্রতিকার ও চিকিৎসাঃ
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। ছাগলের ঘরকে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ বায়ু চলাচলের উপযোগী করতে হবে এবং নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। খামারে পশু-পাখির এ সমস্ত পরজীবী ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন প্রকার ওষুধ যেমন এসান্টোল ৫০, বল্ফেন, ডি.ডি.টি. গ্যাসক্সিন ইত্যাদি সাধারণত ১% সলুশন্ ব্যবহার করা নিয়ম। এ সমস্ত বিষাক্ত ওষুধ ব্যবহারের সময় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন যেন চোখে না যায় অথবা না খেয়ে ফেলে। তা হলে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সংঘটিত হতে পারে।
১৮. দুর্ঘটনাজনিত ক্ষত
যে-কোনো ধরনের ক্ষত বড় বা ছোট হোক বিশেষভাবে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। ক্ষত বড় হলে সেলাই করার ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্ষত সাধারণত বিভিন্ন প্রকার জীবাণু দ্বারা দূষিত হতে পারে ফলে ভালো হয়ে উঠতে সময় লাগে। তাই ক্ষত সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জীবাণুনাশক ওষুধ দ্বারা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
রক্তক্ষরণ হতে থাকলে রক্ত বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। রক্তের শিরায় সেলাই দিয়ে এবং রক্ত জমাট বাঁধার ওষুধ প্রয়োগ করে রক্ত বন্ধ করা যায়।
ক্ষত পরিষ্কার করে সেলাই দেওয়ার পর Tr benzine, Tr lodin অথবা Antibiotic ক্রিম লাগিয়ে ওপরে ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে দেওয়া ভালো। ওলান বা দুধের বাটে ক্ষত সৃষ্টি হলে অবশ্যই সেলাই করা উচিৎ। পরে দুধ দহনের সময় হয়তো ক্ষত খুলে যেতে পারে।
ক্ষত পরিষ্কার করে বিশেষ করে বাটের ক্ষতের জন্য ভিতরে ও বাইরে Antiseptic cream লাগাতে হবে এবং ইন্জেক্শন দিতে হবে যেন কোনো প্রকারেই বাট বা ওলানের প্রদাহ সৃষ্টি হতে না পারে।