আজকে আমরা আলোচনা করবঃ
ছাগলের জাতসমূহঃ ( Breeds of goat)
◾ পৃথিবীতে প্রায় ৩০০ জাত ও টাইপের ছাগল রয়েছে এবং গ্রীষ্মপ্রধান ও গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের নিকটবর্তী অঞ্চলে অধিকাংশ ছাগলের বাস। প্রায় ৭০ জাতের ছাগল রয়েছে আফ্রিকায় এবং ২২ জাতের ছাগল রয়েছে দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায়। অধিকাংশ ছাগল রয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে।
দুধ, মাংস, তন্তু প্রভৃতি উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন জাতের ছাগলকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে।
১। দুধাল ছাগলের জাত (Dairy breed) : দুধাল জাতের ছাগল দুধ উৎপাদনের জন্য বেশ জনপ্রিয়। মাংসের পাশাপাশি দুধ পাওয়া যায়। যেমন- স্যানেন (Saanen), অ্যালপিন (Alpine), যমুনাপাড়ী (Jamunapari), বিটাল (Beetal), বারবারি (Barbari), মালাবারি (Malabari), সুরতি (Surti) ইত্যাদি।
২। মাংসল ছাগলের জাত (Meat breed) : মাংসল জাত মূলত : মাংসের জন্য পালন করা হয়। তবে এজাত থেকে সামান্য পরিমান দুধও পাওয়া যায়। যেমন- ব্লাক বেঙ্গল গোট (Black Bengal goat), মারওয়ারি (Marwari), কাশ্মীর (Kashmiri), চেণ্ড (Chegu), সিনোহি (Sinohi), জালাওয়াদি (Zalawadi), ওসমানাবাদি (Osmanabadi), কূটছি (Kutchi), মেহসানা (Mehsana) ইত্যাদি।
৩। তন্তু জাত (Fibre breed) : কতিপয় ছাগলের মেষের ন্যায় পশম পোশাক শিল্পে ব্যবহার হয়। যেমন- এ্যানগোর (Angora), গাদ্দি (Gaddi), পাশমিনা (Pashmina), চেগু (Chegu) ইত্যাদি।
◾ কতিপয় বিশিষ্ট জাতের ছাগল মোহের, পাশমিনা (কশিমিরি) ও চামড়া উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। মারাডি জাতের ছাগল চামড়ার জন্য প্রসিদ্ধ।
◾ দামাসকাস (সাইপ্রাস), বারবারি, মালাবার এবং যমুনাপাড়ী (ভারত), ব্লাক বেদুইন (ইসরাইল), দেরা দিন পানহ ও কামোরি (পাকিস্তান) এবং নিউবিয়ান (সুদান) ইত্যাদি জাতের ছাগল ১.৩ থেকে ৩.০ কেজি পর্যন্ত দুধ দেয়।
ছাগলের শরীরের বিভিন্ন অংশঃ

চিত্র- ছাগীর বহিঃদেশের বিভিন্ন অংশের নাম। ১ = নাক, ২ = মুখ, ৩ = চোখ, ৪ = শিং, ৫ = কান, ৬ = ঘাড়, ৭ = স্কন্ধ, ৮ = হিপ, ৯ = লেজ, ১০ = বক্ষস্থল, ১১ = পা, ১২ = পদতল, ১৩ = রিব, ১৪ = উরু, ১৫ = পিছনের পা, ১৬ = প্যাস্ট্রান, ১৭ = ওলান, ১৮ = বাঁট।
ছাগলের জাত পরিচিতিঃ
১। ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের জাত পরিচিতি (Black Bengal goat)
- এ জাতের ছাগলের দেহ ৫১-৬৩ সেন্টিমিটার লম্বা, বুকের বেড় ৫৯-৭২ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১৪-৩২ কেজি।
- দেহের গড়ন আঁটসাঁট, ছোট পা, পাসহ সমগ্র দেহে ছোট নরম লোমে আবৃত (চিত্র-৫), শরীরের বর্ণ প্রধানত কালো, তাই এ জাতের ছাগলের নামকরণ হয়েছে ‘ব্লাক বেঙ্গল গোট’, তবে ব্রাউন, ধূসর সাদা এবং এসব রংয়ের মিশ্রণও দেখা যায় ।
- সাধারণত ১২ থেকে ১৪ মাসের মধ্যে বাচ্চা দেয়, প্রতিবারে সাধারণত ১ থেকে ৩টি বাচ্চা দিয়ে থাকে। এক
- বিয়ানে ৫টি বাচ্চা দেওয়ার ইতিহাস আছে।
- স্কন্ধ এবং কোমরের উচ্চতা প্রায় সমান, বক্ষস্থল চওড়া, কান কিছুটা উপরের দিকে থাকে, শিং ছোট থেকে মাঝারি আকৃতির (৫-১০ সেন্টিমিটার)। শিং উপরের দিক হয়ে পিছনে বাঁকানো থাকে।
- দেশ বিদেশে এ জাতের ছাগলের মাংস ও চামড়ার কদর রয়েছে, তবে দুধ খুব কম দেয় (০.৪ লিটার/দিন)।
চিত্র- ব্লাক বেঙ্গল

২। যমুনাপাড়ী ছাগলের জাত পরিচিতি (Jamunapari)
- শিং ছোট ও চ্যাপ্টা, লেজ ছোট ও পাতলা। এ জাতের পাঁঠার ওজন ৫০ থেকে ৬০ কেজি এবং ছাগীর ওজন ৪০ থেকে ৫০ কেজি।
- সাধারণত বছরে একবার বাচ্চা দেয়, প্রায় ৫৭% ছাগী বিয়ানে একটি এবং ৪৩% ছাগী দু’টি বাচ্চা দেয়। ওলান ও বাঁট বেশ বড়সড়।
- দুধ ও মাংস উভয়ের জন্য পালন করা হয়, গড়ে প্রতিদিন ১.৫ থেকে ২.০ কেজি দুধ দেয় এবং এক বিয়ানে প্রায় ২০০ কেজি দুধ হয়।
- সাধারণত এ জাতের ছাগল একই বর্ণের হয়না। সাদা বা হালকা হলুদ বর্ণের (Light yellowish) দেহের ষাড় ও মুখমন্ডলে হালকা বাদামী বর্ণের ছাপ থাকে।
- দেহ লম্বাকৃতির, পা লম্বা, পিছনের পায়ে ঘন লম্বা লোম থাকে, কান লম্বা (২৫-৩১ সেন্টিমিটার), চ্যাপ্টা ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে।

চিত্র- যমুনাপাড়ী
৩। দেশী বা অ-জাতভুক্ত ছাগলের জাত পরিচিতি (Deshi or Non-descriptive goats)
- এসব ছাগল কাল ও সাদা বর্ণের এবং মাঝারি আকারের এবং এসব ছাগল মূলত মাংস ও চামড়ার জন্য পাল করা হয়।
- বাংলাদেশ ও ভারতের শতকরা ৮০ ভাগই ছাগল দেশী ছাগল হিসেবে বিবেচিত।
- এসব দেশী ছাগল খুব সামান্য দুধ দেয়। তবে উন্নত জাতের ছাগলের সাথে ক্রস-বিডিংয়ের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় ।

চিত্ৰ- দেশী বা অ-জাতভুক্ত ছাগল
৪। বিটাল ছাগলের জাত পরিচিতি (Beetal)
- পাঁঠার দৈহিক ওজন ৫০ থেকে ৬২ কেজি, ছাগীর ওজন ৩৫ থেকে ৪০ কেজি।
- কালো (৯০%) ও বাদামী (১০%) বর্ণের। কান লম্বা, চ্যাপ্টা, কোঁকড়ানো ও ঝুলন্ত থাকে, শিং মাঝারি আকৃতির।
- একটি ছাগী প্রতিদিন ২ কেজি হিসেবে এক বিয়ানে ১৫০ থেকে ১৯০ কেজি দুধ দেয়।

চিত্র- বিটাল
৫। বারবারি ছাগলের জাত পরিচিতি (Barbari)
- শিং উপর ও পিছনের দিকে বাঁকা থাকে। পাঁঠার ওজন ৫০ থেকে ৬০ কেজি এবং খাসীর ওজন ৪০ থেকে ৫০ কেজি।
- ছাগীর ছোট গোল আকৃতির ওলান। ১২-১৫ মাস সময়ে ২ মাস সময়ে ২ বার বাচ্চা দেয়। প্রতিদিন একটি ছাগী ১ থেকে ২ কেজি দুধ দেয়। এক বিয়ানে ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি দুধ দেয়।
- ছোট আঁটসাঁট দেহ, ছোট পা এবং খুব নিরহ প্রকৃতির। ছোট খাঁড়া কান। শরীর খুব সুন্দর ছোট লোমে আবৃত।
- গাত্র বর্ণ সাদা, লাল বা কালো। তবে তাতে হালকা বাদামী রংয়ের ছোপ থাকে।

চিত্র- বারবারি
৬। টোগেন বার্গ ছাগলের জাত পরিচিতি (Taggen Burgh)
- ভাল সামঞ্জস্যপূর্ণ ওলান এবং অনেক ছাগী গর্ভাধারণ না করেই প্রায় ২ বছর দুধ দেয়।
- উন্নতমানের একটি ছাগী ১৫০ থেকে ২০০ দিনে ৮০০ থেকে ১০০০ লিটার দুধ দেয়
- এ জাতের ছাগল বেশ শক্তসমর্থ এবং একটি উন্নতমানের দুধাল জাত। মাঝারী আকারে দেহ, বেশ সবল ও কষ্ট সহিষ্ণু ।
- দেহের বর্ণ হালকা বাদামী থেকে ঘোর বাদামী বা তামাটে, মুখ মণ্ডলের দু’পার্শ্বে সাদা ছাপ আছে। হাঁটুর নিচ সাদা বর্ণের।
- সাধারণত শিং থাকেনা। সোজা বা ডিশ আকৃতির নাক। খাড়া কান।
- একটি ছাগীর (Champaian doe) ৩০৫ দিন দুধদানকালীন সময়ে ২৬১৩ কেজি দুধ দেবার তথ্য রয়েছে।
- পাঁঠার দৈহিক ওজন ৬০ থেকে ৯০ কেজি এবং একটি ছাগী ওজন ৫০ থেকে ৮৫ কেজি হয়।

চিত্র- টোগেন বার্গ
৭। স্যানেন ছাগলের জাত পরিচিতি (Saanen)
- এ জাতের একটি ছাগী দৈনিক ২ থেকে ৫ কেজি দুধ দেয়। দুধে চর্বির পরিমাণ ৩ থেকে ৪%।
- দুগ্ধদান কালে (৮-১০ মাস) প্রায় ১০০০ লিটার দুধ দেয়।
- হালকা পীতবর্ণ থেকে সাদা বর্ণের হয়। শিং থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে। তবে শিংহীন স্ট্রেন অধিক পালন উপযোগী।
- ছাগলের যত জাত আছে তার মধ্যে এই জাতটিকে ‘দুগ্ধ রাণী’ (Milk queen) বলা হয় ।

চিত্র-স্যানেন
৮। নিউবিয়ান ছাগলের জাত পরিচিতি (Nubian)
- গাত্র বর্ণ সাদা থেকে কাল বা লাল থেকে তাম্রবর্ণ অথবা যে কোন রংয়ের মিশ্রণ হয়।
- পাঠার ওজন প্রায় ৮০ কেজি এবং ছাগীর ওজন ৬৪ কেজি পর্যন্ত হয়।
- নিউবিয়ান ছাগলকে ‘জার্সি’ ছাগলও বলা হয় কারণ এ জাতের ছাগলের দুধে উচ্চ মাত্রায় চর্বি থাকে।
- এ জাতের ছাগল বেশ বড়, লম্বা পা এবং কষ্টসহিষ্ণু, কান বড় ও রোম্যান নাক।
- প্রশস্ত ও ঝুলন্ত ওলান এবং এক বিয়ানে ১০০০ থেকে ১২০০ লিটার দুধ দেয়। তবে সর্বোচ্চ ২,০০৯ কেজি দুধ উৎপাদনের তথ্য রয়েছে।

চিত্র- নিউবিয়ান
৯। অ্যালপিন ছাগলের জাত পরিচিতি (Alpine)
- সাধারণত শিং থাকে। পাঁঠার ওজন গড়ে ৮০ কেজি ও ছাগীর ওজন ৫০ থেকে ৬০ কেজি।
- প্রতিদিন ২.৫ কেজি হিসেবে এক বিয়ানে (২৭১ দিন) প্রায় ৫৯০ কেজি দুধ দেয় এবং দুধে ৩ থেকে ৪% চর্বি থাকে।
- একটি চ্যাম্পিয়ন ছাগীর এক বিয়ানে ২,১৯৪ কেজি দুধ উৎপাদনের তথ্য রয়েছে।
- ফ্রেঞ্চ বা ফরাসি জাতের এ ছাগলের কান উন্নত, মুখমণ্ডল কিছুটা ডিস আকৃতির ও বিভিন্ন বর্ণের হয়।
- এ জাতের ছাগল সাদা বর্ণের হয় তবে অন্যান্য বর্ণের ছোপ থাকতে পারে।

চিত্র- অ্যালপিন
১০। এ্যানগোরা ছাগলের জাত পরিচিতি (Angora)
- সাধারণত বছরে দু’বার লোম কাটা হয়। তবে সাধারণত একটি ছাগী থেকে বছরে গড়ে ৩.৫ কেজি এবং পাঁঠ থেকে ৫ কেজি লোম পাওয়া যায়।
- লোম উৎপাদন ছাড়াও এ জাতের ছাগল মাংস উৎপাদনের জন্য উপযোগী ।
- এ জাতের ছাগলের পাঁঠার ওজন ৬০ থেকে ৮০ কেজি এবং ছাগীর ওজন ৪০ থেকে ৫০ কেজি।
- মোহের (Mohair) উৎপাদনের জন্য এ জাতের ছাগল বিখ্যাত। রাসায়নিক গঠনের দিক দিয়ে ছাগলের মোহের তন্তু ভেড়ীর পশমের মতই। তবে মোহের তন্তু অধিক মসৃণ।
- মোহেয়ার তন্তু খুব শক্ত। তবে পশমের ন্যায় গরম নয়। তাই মোহের গ্রীষ্মকালীন পোশাক প্রস্তুতে ব্যবহার হয়।

চিত্র- এ্যানগোরা
১১। মেহসানা ছাগলের জাত পরিচিতি (Mehsana)
- মাংস ও দুধের জন্য পালিত হয়, প্রতিদিন একটি ছাগী প্রায় এক কেজি দুধ দেয়।
- গভীর চওড়া উদ্গত পাঞ্জরাস্থি।
- লম্বা ঢালু নিতম্ব।
- প্রশস্ত স্থিতিস্থাপক ওলান ও বাঁট ।
- উদর বা পেটের নিচে সুস্পষ্ট দুগ্ধশিরা ।
- শরীরের রং কালো, তবে চোখের গোড়ায় সাদা ছাপ থাকে। সর্বদা কান সাদা হয়, শিং ভাঁজযুক্ত প্রথমে উপে ও পরে পিছনে বেঁকে থাকে।
- পাঁঠার ওজন প্রায় ৩৬ কেজি এবং ছাগীর ওজন ৩২ কেজি হয়।

চিত্র- মেহসানা
ছাগলের বিভিন্ন নামকরণঃ
◾ ছাগল ছানা (Kid) – স্ত্রী-পুরুষ উভয় ছাগল ছানাকে বোঝায় (১ বছরের কম বয়সী)।
◾ খাসী (Castrated goat) – প্রজনন শক্তি রহিত পুরুষ ছাগল যা মাংসের জন্য পালন করা হয়।
◾ ছাগী (Doe / Nanny) – অন্তত একবার বাচ্চা প্রসবকারী স্ত্রী ছাগলকে বোঝায়।
◾ বাকলিং (Buckling) – অপ্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ছাগল (১ বছরের ঊর্ধ্বে কিন্তু দুই বছরের অধিক বয়স নয়)।
◾ গোটলিং (Goatling) – অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চা ছাগী (১ বছরের অধিক কিন্তু দুই বছরের অধিক নয়)।
◾ ছাগল (Goat) – স্ত্রী-পুরুষ উভয় ছাগলকে বোঝায়।
◾ পাঁঠা (Buck/Billy) – পূর্ণ বয়স্ক প্রজননক্ষম পুরুষ ছাগল।
◾ ছাগল পাল (Goat flock) – ছাগলের পালকে গোট ফ্লক বলা হয়।◾ চিভোন (Chevon) – ছাগলের মাংস।
উপসংহারঃ
◾ ছাগল আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ পশুসম্পদ। দেশের দরিদ্র জনগোষ্টির আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। বেকার বা দরিদ্র কমাতে মাংস উৎপাদন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য ছাগল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। আমাদের দেশে ছাগল পালন অত্যন্ত লাভজনক হিসেবে স্বীকৃত এবং গ্রাম্য অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
◾ ছাগল পালনে বিশেষ কিছু গুরুত্ব রয়েছে যেমন- বিভিন্ন আবহাওয়ায় ছাগল পালন করা যায়, বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের প্রাপ্য খাদ্যে জীবন ধারণ করতে পারে, উচ্চ উর্বরতা এবং সংক্ষিপ্ত গর্ভাবস্থার মধ্যবর্তী কাল, ছাগলের মাংস ও উৎপাদিত দ্রব্যের ক্ষেত্রে কোন ধর্মে তেমন বিধিনিষেধ নেই প্রভৃতি।
◾ বাংলাদেশের ছাগীকে গরীবের গাভী (‘Poor man’s cow’) বলা হয়। বস্তুত : খাদ্য মানের দিক থেকে ছাগীর দুধ কোন অংশে গাভীর দুধের তুলনায় কম নয়। ছাগীর দুধে ফ্যাট গ্লোবুলস গাভীর দুধ অপেক্ষা ছোট। একারণে ছাগীর দুধ সহজপাচ্য। আবার ছাগীর দুধে গাভীর দুধ অপেক্ষা খনিজ পদার্থের (ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন) পরিমাণ অধিক থাকে। ছাগীর দুধ ক্ষারীয় প্রকৃতির। তাই যারা অম্লত্বে ভুগেন তাদের জন্য ছাগলের দুধ বেশ উপকারী।
বস্তুত :
◾ ছাগদুদ্ধ শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীর জন্য বিশেষ উপযোগী। গাভীর থেকে ছাগল পোষা অনেক সহজ। গ্রাম অঞ্চলে দরিদ্র মানুষের যেমন গাভী কেনা ও পোষার সামর্থ্য থাকে না তেমনি দুধ কিনে খাবার সামর্থ্যও তাদের নেই। এদিক থেকে কম খরচে ছাগী কেনাও পালা অনেক সহজ। ছাগলের গরু অপেক্ষা রোগ বালাই কম। এছাড়া ছাগল পালনের সুবিধা এই যে, ছাগল রাখার জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়না। আবার খাদ্য খরচ নেই বললেই চলে।
◾ গ্রামের পথঘাট, মাঠ, বাগান, উঠোন ইত্যাদির ঘাস লতাপাতা খেয়েই ছাগল দিব্বি স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠে। আর গরু অপেক্ষা ছাগলের মাংসের চাহিদা বেশি। তাই আমাদের দেশের ছাগলের মাংসের মূল্য অধিক, প্রায় দ্বিগুণ। পারিবারিক ক্ষেত্রে ছাগল পালন করে পরিবারের দুধের চাহিদা যেমন মেটে, তেমন ছাগল বিক্রি করে অর্থ উপার্জনও করা যায়। তাই গাভী অপেক্ষা ছাগী পালন অধিক লাভজনক। ছাগলের জাত চিহ্নিতকরণ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নির্বাচনের জন্য শরীরের বিভিন্ন অংশের নাম ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।