Skip to content

 

Wait...❤😘 Show love? ⬇⬇⬇

(40টি) গরু মহিষের যত্ন ও পরিচর্যাঃ- ১১টি আসন্ন প্রসবা গাভীর যত্ন ও পরিচর্যা, ৮টি প্রসবকালীন গাভীর যত্ন ও পরিচর্যা, ৯টি বাছুরের যত্ন ও পরিচর্যা এবং ১০টি পশুপালনে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যত্ন ও পরিচর্যা সমূহ।

(40টি) গরু মহিষের যত্ন ও পরিচর্যাঃ- ১১টি আসন্ন প্রসবা গাভীর যত্ন ও পরিচর্যা, ৮টি প্রসবকালীন গাভীর যত্ন ও পরিচর্যা, ৯টি বাছুরের যত্ন ও পরিচর্যা এবং ১০টি পশুপালনে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যত্ন ও পরিচর্যা সমূহ।

ভূমিকাঃ

▪ যত্ন ও পরিচর্যা শব্দ দুটি প্রায় এক রকম মনে হলেও আসলে পুরোপুরি এক নয়। সমার্থক না হলেও দুটো বিষয় প্রায় কাছাকাছি।

▪ স্বাভাবিক ভাবে যত্ন কথাটি বলার সাথে সাথে তা সুস্থ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ অবস্থার সাথে জড়িত। অনেকটা ব্যবস্থাপনা ধরণের। আর পরিচর্যা কথাটি বলার সাথে সাথে অসুস্থ কোন কিছুর চেহারা ভেসে উঠে অর্থাৎ ঐ কর্মকাণ্ডটির সম্পৃক্ততা অনেকাংশেই অসুস্থ অবস্থার সাথে। নানা ভাবে এর ব্যাখ্যা হতে পারে।

▪ এখানে যত্ন বলতে বুঝতে হবে স্বাভাবিক ভাবে ঐ পশুটির সুস্বাস্থ্য ও আরামদায়ক পরিবেশ বজায় রাখতে কিছু করণীয় কাজ। অন্যদিকে পরিচর্যা বলতে বুঝতে হবে কোন অসুস্থ পশুকে সুস্থ করে তোলার স্থানে চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে চিকিৎসা নয় এমন কিছু কাজ যা পশুর সুস্থতা ও আরামদায়ক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক।

▪ যত্ন ও পরিচর্যার কার্যক্রমগুলো একটার সাথে আরেকটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সবগুলি কাজকে যত্ন বলা যাবে না আবার পরিচর্যাও বলা যাবে না। আবার একটা থেকে আরেকটিকে পৃথক করাও অনেকাংশে কষ্টকর। তাই দুটোকে একত্রেই আলোচনা করা যেতে পারে।

▪ বাছুর পূর্ণবয়স্ক অবস্থা, গর্ভবর্তী গাভী, দুগ্ধবতী গাভী, ষাড় ইত্যাদি মিলে গরু মহিষের নানাবিধ অবস্থা ভেদে যত্ন ও পরিচর্যা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আবার ছাগল বা অন্যান্য পশুর যত্ন ও পরিচর্যা হতে থাকে গরু-মহিষের থেকে আলাদা প্রকৃতির।

গরু মহিষের যত্ন ও পরিচর্যাঃ

গরু-মহিষের বিভিন্ন বয়সগত অবস্থা বা দশা থাকে আবার স্বাস্থ্যগত অবস্থারও ভিন্নতা থাকে। তবে ষাড়/বলদের ব্যাপারে স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনাই যথেষ্ট, বিশেষ যত্ন ও পরিচর্যার তেমন আবশ্যকতা নেই। বয়স এবং স্বাস্থ্যগত দিকে বিবেচনা করে গরু-মহিষের যত্ন ও পরিচর্যা ব্যবস্থাপনার আলোচনা করা হলো।

আসন্ন প্রসবা গাভীর যত্ন ও পরিচর্যাঃ

আসন্ন প্রসবা গাভীর শারীরিক অবস্থা সঠিক পর্যায়ে রাখা অত্যাবশ্যক। আর তা রাখতে হলে আসন্ন প্রসবা গাভীর কতিপয় যত্ন নিতে হয়। যেমন-

১. প্রসবের অন্তত মাসখানেক আগেই গাভীকে আলাদাভাবে নিরাপদ ঘরে সরিয়ে নিতে হবে।

২. ঘরের মেঝেতে শুকনো পরিষ্কার খড়কুটো সুন্দরভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে যাতে গাভী আরাম করে শুতে পারে।

৩. ঠাণ্ডা বা অতিরিক্ত গরম থেকে গাভীকে রক্ষা করতে হবে।

৪. মশা-মাছির উপদ্রব থেকে গাভীকে রক্ষা করতে হবে?।

৫. বৃষ্টির পানি পড়ে যাতে ঘরে পানি বা কাদা হতে না পারে তার সুব্যবস্থা করতে হবে।

See also  গরু মুহিষের জাত উন্নয়ন (3টি পদ্ধতি ও 6টি মূলনীতি) এবং গরু মহিষের জাত উন্নয়নের পদ্ধতি ও মূলনীতি।

৬. শিয়াল কুকুর এসব হিংস্র পশুর আক্রমণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৭. আসন্নপ্রসবা গাভীকে দিয়ে শ্রমের কাজ করানো উচিত নয়।

৮. গাভীকে সর্বদা চোখে চোখে রাখা উচিত। যাতে কোনো কারণে ভয় না পায় বা অন্য কোনো পশুর সাথে গুঁতোগুঁতি করতে না পারে। কেননা, এসব কারণে গাভীর অকাল গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে।

৯. গর্ভবতী গাভীকে অন্যান্য পশুর সাথে একস্থানে যাতে চরতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

১০. প্রত্যহ সবুজ তাজা ঘাস ও দানাপানি, লবণসহ খেতে দিতে এবং প্রচুর বিশুদ্ধ পানি সবসময় তার নাগালের মধ্যে রাখতে হবে।

১১. প্রসবের ২/১ দিন আগে থেকে রাতে পাহারা দিতে হবে। কেননা, প্রসব হয়ে গেলে প্রসূতি গর্ভফুল (Placenta) পড়ামাত্র খেয়ে গাভী ফেলতে পারে। এতে গাভীর মারাত্মক ক্ষতি হবে।

প্রসবকালীন গাভীর যত্ন ও পরিচর্যাঃ

প্রসবকালীন সময়টা গাভীর জন্যে অত্যন্ত জটিল ও নাজুক। সামান্য যত্ন ও পরিচর্যার অভাব গাভীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আবার যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যমে গাভীর বাচ্চা প্রসব নিরাপদে হতে পারে। গরু গর্ভিনী থাকে ২৮০ দিন এবং মহিষ গর্ভিনী থাকে ৩১০ দিন। গরু-মহিষের প্রসবকালীন কতিপয় যত্ন ও পরিচর্যা নিতে হয়। যেমন-

  1. প্রসবের সময় হলে তাকে খোলামেলা নিরিবিলি স্থানে রাখতে হবে।
  2. প্রসবের সময় শিয়াল-কুকুর যাতে আক্রমণ না করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  3. প্রসবে কোন জটিলতা দেখা দিলে সাথে সাথে পশু ডাক্তার ডাকতে হবে।
  4. প্রসবিত গাভীর বাচ্চাকে সাবধানে আস্তে আস্তে টান দিয়ে প্রসবে সাহায্য করতে হবে।
  5. প্রসরের পর বাচ্চাকে নরম পরিষ্কার চটের উপর রাখতে হবে।
  6. ফুল পড়া পর্যন্ত পাহারায় থাকতে হবে এবং তা পড়া মাত্র সরিয়ে ফেলতে হবে।
  7. নবজাতক বাচ্চাকে মায়ের দুধ খেতে সাহায্য করতে হবে।
  8. ওঠা বসায় যাতে মা ও বাচ্চা ব্যথা না পায় তা খেয়াল রাখতে হবে।

বাছুরের যত্ন ও পরিচর্যাঃ

বাছুর মানব শিশুর মতোই কোমল। তাই বাছুরের ভালো যত্ন ও পরিচর্যার ব্যবস্থা নিতে হবে। যত্ন ও পরিচর্যার কাজটি শুরু হয় তার জন্মলগ্ন থেকে এবং তা চলতে থাকে ৫০-৬০ সপ্তাহ পর্যন্ত। বাছুরের জন্যে নিম্নের যত্ন ও পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। যেমন-

১. বাচ্চা প্রসবের সময় একজন সাহায্যকারী কাছে রাখতে হবে যাতে তা মাটিতে পড়ে আঘাত না পায়।

২. ভূমিষ্ঠ হবার পর নবজাত বাছুরকে একটি পরিষ্কার চটের উপর রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. বাছুরের গায়ে পিচ্ছিল শ্লেষা জাতীয় পদার্থ লেগে থাকলে তা মা-ই চেটে পরিষ্কার করে দেবে। যদি গাভী না চাটে তবে বাছুরের গায়ের পিচ্ছিল পদার্থের উপর সামান্য লবণ ছিটিয়ে দিলে গাভীটি চেটে বাছুরের শরীর পরীষ্কার করে ফেলবে। তারপরেও যদি গায়ে কিছুটা লেগে থাকে তবে পরিষ্কার ন্যাকড়া দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।

See also  গাভীর গর্ভফুল বের করার নিয়ম কি? গর্ভফুল নিচে থাকলে করনীয় কি?

৪. বাছুর জন্মাবার সাথে সাথে শ্বাস প্রশ্বাস না নিলে কৃত্রিম ভাবে তার ব্যবস্থা করতে হবে। আর তা করতে হলে বাছুরের মাথা নিচু করে পিছনের পা দুটো ধরে মাটি থেকে কয়েকবার উপরে তুলতে হবে। পর্যায়ক্রমে বুকের পাঁজরায় চাপ এবং চাপমুক্তি বাছুরটির শ্বাস-প্রশ্বাসে সাহায্য করবে। শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হলে নাভিদেশ পরিষ্কার করতে হবে।

৫. বাছুরের নাড়িতে আয়োডিন লাগাতে হবে। নাড়ির দুই জায়গা সুতো দিয়ে বেঁধে দিয়ে দুই বাঁধের মাঝখানে নতুন ব্লেড দ্বারা কেটে দিতে হবে।

৬. বাছুর শাল দুধ খাবার ২ ঘন্টার মধ্য পায়খানা না করলে বুঝতে হবে কোন একটা গন্ডগোল আছে। এবার পায়খানার ছিদ্র পরীক্ষা করে দেখতে হবে ওটা ঠিক আছে কিনা।

৭. পায়খানার ছিদ্র না থাকলে ডাক্তার ডেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর ঠিক থেকে পায়খানা না হলে ১ লিটার গরম জলে আধা চা চামচ কাপড়-কাঁচা সোডা মিশিয়ে ঠাণ্ডা করে পায়খানার ছিদ্র দিয়ে সিরিঞ্জ দ্বারা ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে হবে। অল্পক্ষণের মধ্যেই পায়খানা হয়ে যাবে। দ্বিতীয়বারের পায়খানার প্রতিও একই ভাবে খেয়াল রাখতে হবে। পায়খানা ঠিকমতো হয়ে গেলে তারপর নিচের যেকোন একটা ঔষধ খাইয়ে দিলে বৃদ্ধি বেশি হবে এবং দুধ দেয়া ও উৎপাদন ভালো হবে।

৮. গরু-মহিষ পরস্পরকে গুতোগুতি করে আহত হতে পারে যার পরিস্থিতিতে দুরারোগ্য শিং ক্যান্সার (Horn Cancer) হতে পারে। তাই বাছুরের বয়স ৭-২০ দিন থাকতেই শিং তুলে ফেলতে হবে। প্রথমে শিং গজাবার স্থান থেকে লোম তুলে ফেলে জায়গাটা পরিষ্কার করতে হবে। এবার চামড়ার ধার ঘেষে করাত দিয়ে গজানো শিং কেটে ফেলতে হবে। রক্ত বের হলে টারনিকেট (Turnicat) লাগিয়ে দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।

৯. যদি বকনা বাছুরের চারটির বেশি বাট (Tear) দেখা যায়, তবে ১-২ মাস বয়স থাকতে অতিরিক্ত বাট কেটে ফেলতে হবে।

পশুপালনে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যত্ন ও পরিচর্যাঃ

১. সমস্ত পশুকে নিয়মিত স্নান করাতে হবে।

২. স্নানের সময় মোটা চটের টুকরো দিয়ে ময়লা, গোবর, মাটি রগড়িয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

৩. লোহার তৈরী চিরুনি (Curry Comb) আস্তে আস্তে সমস্ত শরীরে চালিয়ে যাবতীয়

৪. ময়লা পরিষ্কার করতে হয়। এর ফলে উকুন, ডাস ইত্যাদি পড়ে যায়।

See also  গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনা: গরুর খাবার দেওয়ার নিয়ম কি? গরুর খাবার নিয়ম গরুর খাবারের নিয়ম

৫. প্রয়োজনমতো সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। স্নানের পর একটা তালের ব্রাশ অথবা মোটা চটের টুকরো দিয়ে মৃদুভাবে পশুর সারা শরীর মুছে ফেলতে হবে। ব্রাশ দিয়ে শরীরের পশম পরিষ্কার করার কাজকে গ্রুমিং (Grooming) বলা হয়। গ্রুমিং-এ পশম সতেজ হয়। রঙ-এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। মাংসের বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সব জায়গায় রক্তচলাচল বৃদ্ধি পায়। উকুন (Lice) ও ডাস (Gnats) বিতাড়িত হয় এবং চর্মরোগ হতে পারে না। পশু খুব আরাম বোধ করে। দুষ্ট পশুও এতে সহজে বশে এসে যায়।

৬. পশুর ঘর নিয়মিত ঝাড় দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং যেসব স্থানে পোকামাকড় বা ইঁদুর আশ্রয় নেয় সেসব আশ্রয়স্থল সরিয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার করতে হবে। ড্রেনের যেসব স্থানে ময়লা জমে বন্ধ হয়ে যায়, প্রতি ৩/৪ দিন পরপর রোটিন করে সেসব ময়লা সরিয়ে ফেলতে হবে।

৭. যেখানে ময়লা পানি জমে থাকে এবং মশার বংশ বৃদ্ধি পায় সেখানে মাটি ভরে দিতে হবে এবং সম্ভব হলে মশার ওষুধ ছিটাতে হবে।

৮. গোয়ালঘর পরিষ্কার করে ফিনাইল ছিটাতে হবে।

৯. গোয়ালঘরে মাঝে মাঝে ব্লো ল্যাম্প (Blow lamp) দিয়ে বাতাস শোধন করে নিতে হবে। কেননা, কাঠের ছিদ্রে, পুরনো বাক্সের মধ্যে ও কাগজপত্রের বান্ডিলে পোকা ও ইঁদুর বসতি করে।

১০. যেসব জায়গায় অনেক পশু একত্রে গাদাগাদি করে অবস্থান করে, সেসব জায়গায় সাধারণত অনেক জাতের কৃমি ও ডিম ছড়িয়ে থাকে। সপ্তাহে অন্তত একবার কৃমি ধ্বংসকারী ওষুধ ছিটিয়ে সেগুলোকে দমন করতে হবে।

১১. খামারের সমস্ত গবাদিপশুকে মাসে একবার কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে। যেসব পশুর গায়ে ক্ষত থাকে সেগুলোকে শুকিয়ে নিয়ে ওষুধ, পাউডার অথবা মলম ব্যবহার করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!