Skip to content

 

Wait...❤😘 Show love? ⬇⬇⬇

আযান এর বাংলা অনুবাদ, আযানের জবাব/উত্তর, আযানের দোয়া ও অর্থ, আযানের ফযীলত

আযান এর বাংলা অনুবাদ, আযানের জবাব/উত্তর, আযানের দোয়া ও অর্থ, আযানের ফযীলত
Table of contents

বিষয়: আযান এর বাংলা অনুবাদ, আযানের জবাব/উত্তর, আযানের দোয়া ও অর্থ এবং আযানের ফযীলত।

আযান এর বাংলা অনুবাদ

আজান শব্দের অর্থ হচ্ছে ডাকা, আহবান করা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় জামাআতের সহিত নামাজ আদায় করার লক্ষ্যে মানুষকে মসজিদে একত্রিত করার জন্য আরবি নির্দিষ্ট শব্দ ও বাক্যের মাধ্যমে উচ্চকণ্ঠে ডাক দেয়া বা ঘোষণা করাকেই আজান বলা হয়।

১. আল্লাহু আকবার (৪ বার)১. আল্লাহ সর্বশক্তিমান
২. আশহাদু-আল লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ (২ বার)২. আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই
৩. আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্ (২ বার)৩. আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর প্রেরিত রাসূল
৪. হাইয়া ‘আলাছ ছালাহ্ (২ বার)৪. নামাজের জন্য এসো
৫. হাইয়া ‘আলাল ফালাহ্ (২ বার)৫. সাফল্যের জন্য এসো
আছছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম (শুধু ফজর এর আযান এর সময় ২ বার)ঘুম হতে নামাজ উত্তম (শুধু ফজর এর আযান এর সময় ১ বার)
৬. আল্লাহু আকবার (২ বার)৬. আল্লাহ্ মহান
৭. লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ্ (১ বার)৭. আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই

আযানের জবাব / আযানের উত্তর

আজানের উত্তর দেওয়া কি?
আজানের উত্তর দেওয়া মুস্তাহাব।

আযানের সময়:
মুয়াজ্জিন- اَللهُ اَكْبَرْ (আল্লাহু আকবার) ৪ বার
শ্রবণকারী- اَللهُ اَكْبَرْ (আল্লাহু আকবার) ৪ বার
মুয়াজ্জিন- اَشْهَدُ اَنْ لَا اِلَهَ اِلَّا الله (আশহাদু আল লাইলাহা ইল্লাল্লাহ) ২ বার
শ্রবণকারী- اَشْهَدُ اَنْ لَا اِلَهَ اِلَّا الله (আশহাদু আললা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ২ বার
মুয়াজ্জিন- اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ (আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ) ২ বার
শ্রবণকারী- اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ (আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ) ২ বার
মুয়াজ্জিন- حَيَّ عَلَي الصَّلوةِ (হাইয়্যা আলাস সালাহ) ২ বার
শ্রবণকারী- لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ (লা হাওলা ওয়া লা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ) ২ বার
মুয়াজ্জিন- حَيَّ عَلَي الفَلَاحِ (হাইয়্যা আলাল ফালাহ) ২ বার
শ্রবণকারী- لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ (লা হাওলা ওয়া লা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ) ২ বার
ফজরের আজানের সময়:
মুয়াজ্জিন- اَلصّلَوةُ خَيْرٌمِّنَ النَّوْمِ (আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম) ২ বার
শ্রবণকারী- صَدَقْتَ وَ بَرَرْتَ (সাদাক্বতা ও বারারতা) ২ বার
ইকামতের সময়:
মুয়াজ্জিন- قَدْ قَامَتِ الصَّلَوة (ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ) ২ বার
শ্রবণকারী- دْ قَامَتِ الصَّلَوة (ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ) ২ বার
মুয়াজ্জিন- اَللهُ اَكْبَرْ আল্লাহু আকবার (২ বার)
শ্রবণকারী- اَللهُ اَكْبَرْ আল্লাহু আকবার (২ বার)
মুয়াজ্জিন- لَا اِلَهَ اِلَّا الله (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ১ বার
শ্রবণকারী- لَا اِلَهَ اِلَّا الله (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ১ বার

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আজানের জবাবে অনুরূপ বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম শরীফ)

সুতরাং আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আজান ও ইক্বামাতে মুয়াজ্জিনের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আযানের দোয়া ও অর্থ

আযান শেষ হওয়ার পর দুরুদ শরীফ পাঠ করে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তে হয়:

আযানের জবাব দান শেষে প্রথমে দরূদ পড়বে। অতঃপর আযানের দো‘আ পড়বে।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন ‘যে ব্যক্তি আযান শুনে এই দো‘আ পাঠ করবে, তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হবে’। [37]

ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺭَﺏَّ ﻫٰﺬِﻩِ ﺍﻟﺪَّﻋْﻮَﺓِ ﺍﻟﺘَّﺎﻣَّﺔِ، ﻭَﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﺍﻟْﻘَﺎﺋِﻤَﺔِ، ﺁﺕِ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﻥِ ﺍﻟْﻮَﺳِﻴْﻠَﺔَ ﻭَﺍﻟْﻔَﻀِﻴْﻠَﺔَ، ﻭَﺍﺑْﻌَﺜْﻪُ ﻣَﻘَﺎﻣًﺎ ﻣَّﺤْﻤُﻮْﺩًﺍ ﺍﻟَّﺬِﻯْ ﻭَﻋَﺪْﺗَﻪُ

আযানের দোয়ার উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা রববা হা-যিহিদ দা‘ওয়াতিত তা-ম্মাহ, ওয়াছ ছলা-তিল ক্বা-য়েমাহ, আ-তে মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাহ, ওয়াব‘আছ্হু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আদ্তাহ’।

আযানের দোয়ার অর্থ: হে আল্লাহ! (তাওহীদের) এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত ছালাতের তুমি প্রভু। মুহাম্মাদ (ছাঃ) – কে তুমি দান কর ‘অসীলা’ (নামক জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান) ও মর্যাদা এবং পৌঁছে দাও তাঁকে (শাফা‘আতের) প্রশংসিত স্থান ‘মাক্বামে মাহমূদে’ যার ওয়াদা তুমি তাঁকে করেছ’। [38] মনে রাখা আবশ্যক যে, আযান উচ্চৈঃস্বরে দেওয়া সুন্নাত।

কিন্তু উচ্চৈঃস্বরে আযানের দো‘আ পাঠ করা বিদ‘আত। অতএব মাইকে আযানের দো‘আ পাঠের রীতি অবশ্যই বর্জনীয়। আযানের অন্য
দো‘আও রয়েছে।

আযানের ফযীলত:

(১) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
ﻻَ ﻳَﺴْﻤَﻊُ ﻣَﺪَﻯ ﺻَﻮْﺕِ ﺍﻟْﻤُﺆَﺫِّﻥِ ﺟِﻦٌّ ﻭَّﻻَ ﺇِﻧْﺲٌ ﻭَّ ﻻَ ﺷَﻴْﺊٌ ﺇِﻻَّ ﺷَﻬِﺪَ ﻟَﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱُّ
অর্থ: ‘মুওয়ায্যিনের আযানের ধ্বনি জিন ও ইনসান সহ যত প্রাণী শুনবে, ক্বিয়ামতের দিন সকলে তার জন্য সাক্ষ্য প্রদান করবে’।

(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, ‘ক্বিয়ামতের দিন মুওয়ায্যিনের গর্দান সবচেয়ে উঁচু হবে’।

(৩) মুওয়ায্যিনের আযান ধ্বনির শেষ সীমা পর্যন্ত সজীব ও নির্জীব সকল বস্ত্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ও সাক্ষ্য প্রদান করে।

(৪) ‘আযান ও এক্বামতের ধ্বনি শুনলে শয়তান ছুটে পালিয়ে যায় ও পরে ফিরে আসে’।

(৫) যে ব্যক্তি বার বছর যাবৎ আযান দিল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। তার প্রতি আযানের জন্য ৬০ নেকী ও এক্বামতের জন্য ৩০ নেকী
লেখা হয়’।

(৬) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ইমাম হ’ল (মুছল্লীদের ছালাতের) যামিন ও মুওয়ায্যিন হ’ল (তাদের ছালাতের) আমানতদার। অতঃপর তিনি তাদের জন্য দো‘আ করে বলেন, হে আল্লাহ! তুমি ইমামদের সুপথ প্রদর্শন কর ও মুওয়ায্যিনদের ক্ষমা কর।

(৬) আযান হওয়ার পর এবং ইকামত হওয়ার পূর্বের সময়ে দোয়া কবুল হয়ে থাকে। তাই এই সময় দুনিয়া ও আখেরাতের মঙ্গল আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা উচিৎ। (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ৫২১নং, তিরমিযী, সুনান)।

আযান কি?

আযান বা আজান হচ্ছে মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য ইসলামি আহ্বান বা ডাকধ্বনি।

আজান শব্দের অর্থ হচ্ছে ডাকা, আহবান করা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় জামাআতের সহিত নামাজ আদায় করার লক্ষ্যে মানুষকে মসজিদে একত্রিত করার জন্য আরবি নির্দিষ্ট শব্দ ও বাক্যের মাধ্যমে উচ্চকণ্ঠে ডাক দেয়া বা ঘোষণা করাকেই আজান বলা হয়।

দিনের নির্ধারিত সময়ে একজন মুয়াজ্জিন আযান দেন। মুসলমানদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য দৈনিক পাঁচবার মিনার থেকে উচ্চস্বরে আযান দেওয়া হয়।

বিলাল ইবনে রাবাহ ইসলামের ইতিহাসে প্রথম আযান দেন। মুহাম্মদের নির্দেশে তিনিই প্রথম মদিনার মসজিদে নববীতে আযান প্রদান করেন উল্লেখ্য মুহাম্মাদ মক্কায় আযান ও ইকামত ছাড়া নামাজ পড়েছেন।

আযান ইকামতের মাসায়েল:

  • সমস্ত ফরযে আইন নামাযের জন্য পুরুষদের একবার আযান দেয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া। শুধুমাত্র জুমুআর জন্য দুই বার আযান দেয়া আবশ্যক।
  • জেহাদ ইত্যাদি ধর্মীয় কাজে লিপ্ত থাকার দরুণ বা গায়রে এখতিয়ারী (অনিচ্ছাকৃত) কোন কারণ বশতঃ সর্বসাধারণের নামায কাযা হয়ে থাকলে সে নামাযের জন্যও উচ্চস্বরে আযান ইকামত বলা সুন্নাত।
  • অলসতা বা বে-খেয়ালি বশতঃ নামায কাযা হয়ে থাকলে সে নামায যেহেতু চুপে চুপে পড়া উচিৎ, তাই তার জন্য আযান ইকামত উচ্চস্বরে নয় বরং চুপে চুপে বলতে হবে, যাতে অন্য লোকেরা নামায কাযা করার মত একটি গোনাহের কথা জানতে না পারে।
  • কয়েক ওয়াক্তের নামায এক সাথে কাযা করলে প্রথম ওয়াক্তের জন্য আযান দেয়া সুন্নাত আর বাকী ওয়াক্তগুলোর জন্য পৃথক পৃথক আযান দেয়া সুন্নাত নয় বরং মোস্তাহাব। তবে ইকামত সব ওয়াক্তের জন্যই পৃথক পৃথক সুন্নাত।
  • সফর অবস্থায় কাফেলার সমস্ত লোক উপস্থিত থাকলে তাদের জন্য আযান দেয়া মোস্তাহাব, সুন্নাতে মোয়াক্কাদা নয়। তবে ইকামত সকলে উপস্থিত থাকুক বা না থাকুক সর্বাবস্থায় সুন্নাত।
  • বাড়িতে, দোকানে, মাঠে বা বিলে একাকী বা জামা’আতে নামায পড়লে আযান দেয়া মোস্তাহাব এবং ইকামত দেয়া সুন্নাত।
  • স্ত্রীলোকের আযান ইকামত বলা মাকরূহ। (বেহেশতি জেওর থেকে গৃহীত)

আযানের শর্ত সমূহ

১. ওয়াক্ত হওয়ার পর আযান দিতে হবে-ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে আযান দিলে সে আযান সহীহ হবে না, ওয়াক্ত হওয়ার পর পুনরায় আযান দিতে হবে।

২. আযান আরবী ভাষায় এবং যে সব শব্দে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রুত ও বর্ণিত হয়েছে সেভাবে হতে হবে।

৩. আযানের শব্দসমূহ দীর্ঘ বিরতি ব্যতীত একটি শেষ হওয়ার পর পরই অন্যটি বলতে হবে। একটির পর আর একটি বলার মাঝে এতটুকু বিরতি থাকবে যাতে শ্রোতা জবাব দিতে পারে।

৪. আযানের শব্দাবলী সহীহ তারতীবে আদায় করতে হবে। তারতীবের খেলাফ হলোে আযান মাকরূহ হবে, সে আযান দোহরাতে হবে।

আযান দেয়ার সময়

প্রতি দিন-রাতে বিভিন্ন সময়ে পাঁচ বার আযান দেওয়া হয়। আর আযান তখনই দেওয়া হয় যখন নামাযের সময় হয়।

১। ফজর:সবহে সাদিক উদিত হলোে। সূর্য পূর্ব আকাশে উদিত হওয়ার আগ মুহূর্তে।

২। যোহর: সূর্য পশ্চিম আকাশে একটু ঢলে গেলে।

৩। আছর:সূর্যের প্রখরতা থাকতে।

৪। মাগরিব:সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে।

৫। এশা: সূর্য অস্ত যাওয়ার পর রাতের এক তৃতীয়াংশে।

সপ্তাহে একদিন শুক্রবার একটি অতিরিক্ত আজান হয় জুমআর খুতবার পূর্বে।

আযান ইকামতের সুন্নাত ও মোস্তাহাব সমূহ

১. মুআযিনের ছোট-বড় সব নাপাকী থেকে পবিত্র হওয়া।

২. মুআযিনের সজ্ঞান বালেগ হওয়া। বুঝমান বালক হলোেও চলে, তবে মাকরূহ তানযীহী। আর পাগল বা অবুঝ বালক আযান দিলে সে আযান দোহরাতে হবে।

৩. মুআযিনের আওয়াজ আকর্ষণীয় ও উচ্চ হওয়া।

৪. মুআফ্ফিনের দ্বীনদার পরহেযগার হওয়া।

৫. মসজিদের বাইরে উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে আযান দেয়া এবং ইকামত মসজিদের ভিতরে দেয়া। মসজিদের ভিতরে আযান দেয়া মাকরূহ তানযীহী। জুমুআর দ্বিতীয় আযানের হুকুম ভিন্ন-সেটা মসজিদের ভিতরেই হবে।

(মসজিদের বাইরে এবং উঁচু স্থানে আযান দেয়ার উদ্দেশ্য হলো আওয়াজ ছড়িয়ে দেয়া। বর্তমানে মাইকে আযান দেয়ার ব্যাপক প্রচলন ঘটেছে এবং মসজিদের মধ্যে থেকেই সাধারণতঃ মাইকে আযান দেয়া হয়। যেহেতু মাইকে আযান দিলে আওয়াজ এমনিতেই দূরে পৌছে যায় এবং বাইরে উঁচু স্থানে আযান দেয়ার যে উদ্দেশ্য তা হাছিল হয়ে যায়, এ প্রেক্ষিতে মসজিদের বাইরে থেকে আযান দেয়ার যে উদ্দেশ্য তা হাছিল হয়ে যায়, এ প্রেক্ষিতে মসজিদের ভিতরে থেকে আযান দিলে মাকরূহ হবে না বলে মনে হয়। তবে মসজিদের ভিতর এত জোরে আওয়াজ করাটা খেলাফে আদব মনে হয়, তাই সম্ভব হলোে মসজিদের বাইরে থেকেই মাইকে আযানের ব্যাবস্থা করা উত্তম।)

৬. কোন ওজর না থাকলে দাঁড়িয়ে আযান দেয়া।

৭. কেবলামুখী হয়ে আযান ইকামত দেয়া। তবে গাড়ি বা যানবাহনে আযান দেয়ার সময় কেবলামুখী না হলোেও সুন্নাতের পরিপন্থী হবে না।

৮. আযান দেয়ার সময় দুই শাহাদাত আঙ্গুল দুই কানের ছিদ্রে প্রবেশ করানো মোস্তাহাব। কানের উপর হাত রেখে ছিদ্র বন্ধ করলেও চলে। ইকামতের মধ্যে কানে আঙ্গুল দেয়া জায়েয তবে সুন্নাত নয়।

৯. আযান ইকামত, ইভয়টিতে حي على الصلاة বলার সময় ডান দিকে মুখ ফিরানো এবংحي على الفلاح বলার সময় বাম দিকে মুখ ফিরানো সুন্নাত। সীনা বা পাঁ ঘুরবে না। মাইকে আযান ইকামত দিলেও এটা করা সুন্নাত।

১০. আযানের শব্দগুলো টেনে টেনে এবং থেমে থেমে বলা সুন্নাত আর ইকামতের শব্দগুলো জলদী জলদী বলা সুন্নাত।

১১. বিনা প্রয়োজনে এদিক ওদিক না দাঁড়িয়ে বরং ইমামের বরাবর পেছনে দাঁড়িয়ে ইকামত বলা উত্তম।

আযান ও ইকামতের মাঝে সময়ের ব্যবধান কতটুকু হবে?

  • সুন্নাত হচ্ছে আযান ও ইকামতের মাঝে এতটুকু সময়ের ব্যবধান করা, যাতে নিয়মিতভাবে যেসব মুসল্লী জামা’আতে শরীক হয়ে থাকে তারা যেন জামা’আতে শরীক হওয়ার জন্য মসজিদে এসে পৌঁছতে পারে।
  • মাগরিবের নামাযের আযান ইকামতের মাঝে ছোট তিন আয়াত তিলাওয়াত পরিমাণ সময়ের ব্যবধান রাখতে বলা হয়েছে।

(ফযরের নামাজের আযানের শেষভাগে “হাইয়া আলাল ফালাহ” দুই বার বলার পরে “আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম (الصلوۃ خیر من النوم)” বাক্যটি দুই বার বলতে হয়। এর পর যথারীতি “আল্লাহু আকবার”, “আল্লাহু আকবার”, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে আজান শেষ হয়। এছাড়া ছানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে ও ইমামের সম্মুখে দেয়া হয়।)

ইকামতের বাক্য সমূহ ও অর্থ

‘ইকামত’ (الإقامة) অর্থ দাঁড় করানো। উপস্থিত মুছল্লীদেরকে ছালাতে দাঁড়িয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারী শুনানোর জন্য ‘এক্বামত’ দিতে হয়। জামা‘আতে হউক বা একাকী হউক সকল অবস্থায় ফরয ছালাতে আযান ও এক্বামত দেওয়া সুন্নাত।

যাতে আজানের চেয়ে একটি বাক্য অতিরিক্ত রয়েছে। তা হলোো- قد قامت الصَّلوة (ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ)। মৌখিকভাবে মুয়াজ্জিনের সঙ্গে শ্রবণকারীদের জন্য আজানের উত্তর দেয়া সুন্নাত।

জামাতে সালাত আদায়ের সময় ইকামত কে দেবে?

ইমাম ও মুক্তাদীগণের মধ্যে যে কেউ ইকামত দিতে পারে। যে আযান দিয়েছে তারই ইকামত দেওয়া জরুরী নয়।

১. আল্লাহু আকবার (৪ বার)১. আল্লাহ সর্বশক্তিমান
২. আশহাদু-আল লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ (২ বার)২. আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই
৩. আশহাদু-আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (২ বার)৩. আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর প্রেরিত দূত
৪. হাইয়া আলাছ ছালাহ্ (২ বার)৪. নামাজের জন্য এসো
৫. হাইয়া আলাল ফালাহ্ (২ বার)৫. সাফল্যের জন্য এসো
৬. ক্বদ ক্বামাতিস্‌ সালাহ (২ বার)৬. নামাজ আরম্ভ হলোো
৭. আল্লাহু আকবার (২ বার)৭. আল্লাহ্ মহান
৮. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ (১ বার)৮. আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই

আযানের দোআয় বাড়তি বিষয় সমূহ

আযানের দো‘আয় কয়েকটি বিষয় বাড়তিভাবে চালু হয়েছে, যা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নামে মিথ্যারোপ করল, সে জাহান্নামে তার ঠিকানা করে নিল’।

ছাহাবী বারা বিন আযেব (রাঃ) রাতে শয়নকালে রাসূল (ছাঃ)-এর শিখানো একটি দো‘আয় ‘আ-মানতু বে নাবিইয়েকাল্লাযী আরসালতা’ -এর স্থলে ‘বে রাসূলেকা’ বলেছিলেন। তাতেই রাসূল (ছাঃ) রেগে ওঠেন ও তার বুকে ধাক্কা দিয়ে ‘বে নাবিইয়েকা’ বলার তাকীদ করেন। অথচ সেখানে অর্থের কোন তারতম্য ছিল না।

প্রকাশ থাকে যে, আযান একটি ইবাদত। এতে কোনরূপ কমবেশী করা জায়েয নয়। তবুও আযানের দোআয় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শব্দ ও
বাক্য যোগ হয়েছে, যার কিছু নিম্নরূপ:

(১) বায়হাক্বীতে (১ম খন্ড ৪১০ পৃ:) বর্ণিত আযানের দো‘আর শুরুতে ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস-আলুকা বে হাকক্বে হা-যিহিদ দাওয়াতে’ (২) একই হাদীসের শেষে বর্ণিত ‘ইন্নাকা লা তুখ্লিফুল মী‘আ-দ’ (৩) ইমাম ত্বাহাভীর ‘শারহু মা‘আনিল আছার’ –য়ে বর্ণিত ‘আ-তে সাইয়িদানা মুহাম্মাদান’ (৪) ইবনুস সুন্নীর ‘ফী আমালিল ইয়াওমে ওয়াল লায়লাহ’ –তে ‘ওয়াদ্দারাজাতার রাফী‘আতা’ (৫) রাফেঈ প্রণীত ‘আল-মুহার্রির’ -য়ে আযানের দোআর শেষে বর্ণিত ‘ইয়া আরহামার রা-হেমীন’। (৬) আযান বা ইক্বামতে ‘আশহাদু আন্না সাইয়েদানা মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলা। (৭) বর্তমানে রেডিও বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে প্রচারিত আযানের দো‘আয় ‘ওয়ারঝুক্বনা শাফা‘আতাহূ ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাহ’ বাক্যটি যোগ করা হচ্ছে। যার কোন শারঈ ভিত্তি জানা যায় না। এছাড়া ওয়াল ফাযীলাতা -র পরে ওয়াদ্দারাজাতার রাফী‘আতা এবং শেষে ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী‘আ-দ যোগ করা হয়, যা পরিত্যাজ্য। (৮) মাইকে আযানের দো‘আ পাঠ করা, অতঃপর শেষে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হ, ছাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলা।

আযানের অন্যান্য পরিত্যাজ্য বিষয়

(১) আযানের আগে ও পরে উচ্চৈঃস্বরে যিকর:

জুম‘আর দিনে এবং অন্যান্য ছালাতে বিশেষ করে ফজরের আযানের আগে ও পরে বিভিন্ন মসজিদে মাইকে বলা হয়।

  • (ক) ‘বিসমিল্লা-হ, আছ্ছালাতু ওয়াসসালা-মু ‘আলায়কা ইয়া রাসূলাল্লা-হ … ইয়া হাবীবাল্লাহ, … ইয়া রহমাতাল লিল ‘আ-লামীন। এভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সালাম দেওয়ার পরে সরাসরি আল্লাহকেই সালাম দিয়ে বলা হয়, আছ্ছালাতু ওয়াসসালামু ‘আলায়কা ইয়া রববাল ‘আ- লামীন’। এটা বিদ‘আত তো বটেই, বরং চরম মূর্খতা। কেননা আল্লাহ নিজেই ‘সালাম’। তাকে কে সালাম দিবে? তাছাড়া হাদীসে আল্লাহকে সালাম দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
  • (খ) আযানের পরে পুনরায় ‘আছছালা-তু রাহেমাকুমুল্লা-হ’ বলে বারবার উঁচু স্বরে আহবান করা (ইরওয়া ১/২৫৫)।
  • (গ) এতদ্ব্যতীত হামদ, না‘ত, তাসবীহ, দরূদ, কুরআন তেলাওয়াত, ওয়ায, গযল ইত্যাদি শোনানো। অথচ কেবলমাত্র ‘আযান’ ব্যতীত এসময় বাকী সবকিছুই বর্জনীয়।

এমনকি আযানের পরে পুনরায় ‘আছছালাত, আছছালাত’ বলে ডাকাও হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীগণ ‘বিদ‘আত’ বলেছেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ কাউকে ছালাতের জন্য ডাকেন বা জাগিয়ে দেন, তাতে তিনি অবশ্যই নেকী পাবেন।

(২) তাকাল্লুফ করা:

যেমন- আযানের দো‘আটি ‘বাংলাদেশ বেতারের’ কথক এমন ভঙ্গিতে পড়েন, যাতে প্রার্থনার আকুতি থাকেনা। যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কারণ নিজস্ব স্বাভাবিক সুরের বাইরে যাবতীয় তাকাল্লুফ বা ভান করা ইসলামে দারুণভাবে অপসন্দনীয়।

(৩) গানের সুরে আযান দেওয়া:

গানের সুরে আযান দিলে একদা আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) জনৈক মুওয়ায্যিনকে ভীষণভাবে ধমক দিয়ে বলেছিলেন ﺇِﻧِّﻲْ ﻟَﺄُﺑْﻐِﻀُﻚَ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠﻪِ ‘আমি তোমার সাথে অবশ্যই বিদ্বেষ করব আল্লাহর জন্য’।

(৪) আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখ রগড়ানো:

আযান ও এক্বামতের সময় ‘মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ শুনে বিশেষ দো‘আ সহ আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখ রগড়ানো, আযান শেষে দুই হাত তুলে আযানের দোআ পড়া কিংবা উচ্চৈঃস্বরে তা পাঠ করা ও মুখে হাত মোছা ইত্যাদির কোন শারঈ ভিত্তি নেই।

(৫) বিপদে আযান দেওয়া:

বালা-মুছীবতের সময় বিশেষভাবে আযান দেওয়ারও কোন দলীল নেই। কেননা আযান কেবল ফরয ছালাতের জন্যই হয়ে থাকে, অন্য কিছুর জন্য নয়।

(৬) আযানের আগে বা পরে মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে মাইকে বাজানো:

এতদ্ব্যতীত শেষরাতে ফজরের আযানের আগে বা পরে মসজিদে মাইকে উচ্চৈঃস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করা, ওয়ায করা ও এভাবে মানুষের
ঘুম নষ্ট করা ও রোগীদের কষ্ট দেওয়া এবং তাহাজ্জুদে বিঘ্ন সৃষ্টি করা কঠিন গোনাহের কাজ।

আযানের অন্যান্য মাসায়েল:

(১) মুওয়াযযিন ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে আযান দিবে। দুই কানে আংগুল প্রবেশ করাবে, যাতে আযানে জোর হয়। ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ ও ফালা-হ’ বলার সময় যথাক্রমে ডাইনে ও বামে মুখ ঘুরাবে, দেহ নয়।[51] অসুস্থ হ’লে বসেও আযান দেওয়া যাবে।

(২) যে ব্যক্তি আযান হওয়ার পর (কোন যরূরী প্রয়োজন ছাড়াই) মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল, সে ব্যক্তি আবুল ক্বাসেম [মুহাম্মাদ (ছাঃ)]-এর অবাধ্যতা করল।

(৩) যিনি আযান দিবেন, তিনিই এক্বামত দিবেন। অন্যেও দিতে পারেন। অবশ্য মসজিদে নির্দিষ্ট মুওয়াযযিন থাকলে তার অনুমতি নিয়ে অন্যের আযান ও এক্বামত দেওয়া উচিত। তবে সময় চলে যাওয়ার উপক্রম হ’লে যে কেউ আযান দিতে পারেন।

(৪) আযানের উদ্দেশ্য হবে স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এজন্য কোন মজুরী চাওয়া যাবে না। তবে বিনা চাওয়ায় ‘সম্মানী’ গ্রহণ করা যাবে। কেননা নিয়মিত ইমাম ও মুওয়াযযিনের সম্মানজনক জীবিকার দায়িত্ব গ্রহণ করা সমাজ ও সরকারের উপরে অপরিহার্য কর্তব্য।

(৫) আযান ওযূ অবস্থায় দেওয়া উচিত। তবে বে-ওযূ অবস্থায় দেওয়াও জায়েয আছে। আযানের জবাব বা অনুরূপ যেকোন তাসবীহ, তাহলোীল ও দো‘আ সমূহ এমনকি নাপাক অবস্থায়ও পাঠ করা জায়েয আছে।

(৬) এক্বামতের পরে দীর্ঘ বিরতি হ’লেও পুনরায় এক্বামত দিতে হবে না।

(৭) আযান ও জামা‘আত শেষে কেউ মসজিদে এলে কেবল এক্বামত দিয়েই জামা‘আত ও ছালাত আদায় করবে।

(৮) ক্বাযা ছালাত জামা‘আত সহকারে আদায়ের জন্য আযান আবশ্যিক নয়। কেবল এক্বামতই যথেষ্ট হবে।

সমাপ্ত: পোষ্টটি থেকে আমরা যা জানলাম- আযান এর বাংলা অনুবাদ, আযানের জবাব/উত্তর, আযানের দোয়া ও অর্থ, আযানের ফযীলত।

পোষ্টটি লিখতে নিম্নক্তো বই/লেখকের লিখনী থেকে সাহায্য নেওয়া হয়েছে:
আহকামে জিন্দেগী (মাকতাবাতুল আবরার প্রকাশনী)
মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন
শায়খুল হাদীস, জামেয়া ইসলামিয়া আরার্বিয়া, তাঁতী বাজার, ঢাকা-১১০০
মুহাদ্দিছ, জামিয়া ইসলমিয়া দারুল উূলুম মাদানিয়া, ৩১২, দক্ষীণ যাত্রাবাড়ি, ঢাকা-১২৩৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!