Skip to content

 

গোসলের ফরয, সুন্নাত, মুস্তাহাব ও আদবসমূহ, কি কি কারণে গোসল ফরয হয়? যে সব কারণে গোসল ফরয হয় না, সেগুলো কি? গোসল কখন সুন্নত হয়? ফরজ গোসলের দোয়া, নিয়ত ও নিয়ম

গোসলের ফরয, সুন্নাত, মুস্তাহাব ও আদবসমূহ, কি কি কারণে গোসল ফরয হয় ফরজ গোসলের দোয়া, নিয়ত ও নিয়ম

বিষয়:
গোসলের ফরয, সুন্নাত, মোস্তাহাব ও আদবসমূহ
কি কি কারণে গোসল ফরয হয়?
যে সব কারণে গোসল ফরয হয় না, সেগুলো কি?
গোসল কখন সুন্নত হয়?
ফরজ গোসলের দোয়া, নিয়ত ও নিয়ম

গোসলের ফরজ কয়টি?

গোসলের ফরজ ৩ টি যথাঃ-

  • গড়গড়া করে কুলি করা (রোজাদার হলোে গড়গড়া করা যাবে না)
  • নাকের মধ্যে পানি দিয়ে নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছানো।
  • সমস্ত শরীর পানি দিয়ে ধৌত করা।

গোসলের সুন্নত কতটি?

গোসলের সুন্নত ৬ টি। যথাঃ-

  • উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া
  • শরীরের নাপাকি প্রথমে ধুয়ে ফেলা
  • গুপ্তস্থান ধৌত করে নাপাকি পরিষ্কার করা
  • গোসলের আগে অজু করা
  • মাথা ও শরীর তিনবার ধৌত করা
  • গোসলের স্থান হতে অন্য জায়গায় যেয়ে পা ধৌত করা।

গোসলের মুস্তাহাব কি কি?

মুস্তাহাব- অর্থ উত্তম, পছন্দনীয়। ফিকহের পরিভাষায় মুস্তাহাব বলা হয় যা আমল করলে সওয়াব রয়েছে কিন্তু ছেড়ে দিলে কোন গুনাহ নেই। গোসলের ভেতরে মুস্তাহাব কাজ ৭ টি। যথাঃ-

  • মনে মনে নিয়ত করা
  • উভয় হাত ধৌত করার সময় বিসমিল্লাহ বলা
  • সমস্ত শরীর ভালোভাবে মাজিয়া-ঘষিয়া পরিষ্কার করা
  • নির্জন স্থানে গোসল করা
  • গোসল করার সময় অযথা কথা না বলা
  • প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যবহার না করা
  • গোসলের পর গামছা বা তোয়ালে দ্বারা সারা শরীর মুছে ফেলা।

গোসলের ফরয, সুন্নাত, মোস্তাহাব ও আদবসমূহ (গোসলের যাবতীয় করণীয় বিষয় ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলো)

  • গোসলখানা নোংরা থাকলে কিংবা গোসলখানার মধ্যে পায়খানা থাকলে বাম পা দিয়ে গোসলখানায় প্রবেশ করবে। আর তার মধ্যে পায়খানা না থাকলে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে যে কোন পা দিয়ে প্রবেশ করা যায়।
  • গোসলের নিয়ত করা সুন্নাত।
  • গোসলের নিয়ত এভাবে করা যায়:

গোসলের দোয়া / গোসলের নিয়ত

গোসলের দোয়া বা গোসলের নিয়ত গোসলের ফরয, সুন্নাত, মুস্তাহাব ও আদবসমূহ, কি কি কারণে গোসল ফরয হয়? যে সব কারণে গোসল ফরয হয় না, সেগুলো কি? গোসল কখন সুন্নত হয়? ফরজ গোসলের দোয়া, নিয়ত ও নিয়ম ইসলাম

نويت الغسل من الجنابة

বাংলা উচ্চারণঃ “নাওয়াইতুল গুছলা লিরাফইল জানাবাতি।”

অর্থাৎ, আমি জানাবাত থেকে পবিত্রতা হাছেল করার জন্য গোসলের নিয়ত করছি।

  • বসে গোসল করা উত্তম।
  • আড়াল স্থানে এবং ছতর ঢেকে গোসল করা মোস্তাহাব। আড়াল স্থান হলোে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা জায়েয তবে মোস্তাহাবের খেলাফ।
  • কেবলামুখী হয়ে গোসল না করা উত্তম।
  • গোসলের শুরুতে উভয় হাতের কব্‌জি পর্যন্ত ধৌত করবে। এটা সুন্নাত।
  • তারপর পেশাব পায়খানার রাস্তা (তাতে নাপাকী না থাকলেও) ধৌত করা সুন্নাত।
  • তারপর শরীরের কোন স্থানে নাপাকী থাকলে তা ধৌত করা সুন্নাত।
  • তারপর নামাযের উযুর ন্যায় উযূ করবে। এই উযুর মধ্যে উযুর অঙ্গসমূহের দোয়া পাঠ করাটা বিতর্কিত, তবে গোসলখানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হলোে এবং তার মধ্যে পায়খানা না থাকলে দোয়াগুলো পাঠ করা যায়।

গোসলের ফরয সমূহের বর্ণনা

গোছলের ফরয ৩ টি।

১. গড়গড়াসহ কুলি করা

গোসলের প্রথম ফরজ হলোো- গড়গড়াসহ কুলি করা। মুখের ভেতর অনেক সময় খাবারের উচ্ছিষ্ট জমে থাকে। গলার ভেতরেও কফ জমে থাকে। তাই গড়গড়াসহ কুলি করলে গলার কফ ও মুখের ভেতর জমে থাকা খাবারের উচ্ছিষ্ট দূর হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ফরজ গোসলের অংশ হিসেবে কুলি করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৫৭ ও ২৬৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৫৬৬)

কুলি করা ফরয। রোযাদার না হলোে গড়গড়া করা সুন্নাত এবং তিনবার এরূপ গড়গড়াসহ কুলি করা সুন্নাত। দাঁতের মধ্যে খাদ্যকণা আঁটকে থাকলে তা অপসারণ করবে।

২. নাকে পানি দেওয়া

নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো ফরয। নাকের মধ্যে শুকনো ময়লা থাকলে তা-ও দূরীভূত করবে। তিনবার এরূপ পানি পৌঁছানো সুন্নাত।

গোসলের আরেকটি ফরজ হলোো- নাকের ভেতর পানি দেওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও নাকে পানি দিয়েছেন। এ সম্পর্কিত একাধিক হাদিস বর্ণিত রয়েছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৬৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৫৬৬) 

৩. সারা শরীরে পানি দেওয়া

সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো ফরয। মহিলাদের নাকের ও কানের ছিদ্রে অলংকার না থাকলে তার মধ্যেও পানি পৌঁছাতে হবে। অলংকার থাকলে নাড়াচাড়া দিয়ে ছিদ্রের ভিতরে পানি প্রবেশ করাবে। চুলের বেণী ও খোপা খুলে সমস্ত চুল ভিজাতে হবে। তবে কোন গাম বা আঠালো বস্তু দ্বারা মহিলাদের চুল বেণী বা খোপা করে বাঁধানো থাকলে সে ক্ষেত্রে তা না খুলে গোড়ায় পনি পৌঁছাতে পারলেও চলবে। (বেহেশতী জেওর [বাংলা])

এমনভাবে গোসল করতে হবে— যাতে শরীরের কোনো অঙ্গ শুকনো না থাকে। এ প্রসঙ্গে একাধিক হাদিস রয়েছে। সেসব হাদিস অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন গোসল করতেন, তখন তার শরীরের সব অংশ ভেজা থাকতো। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২১৭)

গোসলের সুন্নত সমূহের বর্ণনা

  • গোসল শুরুর আগে ‘বিসমিল্লাহ রাহমানির রাহিম’ পাঠ করা গোসলের সুন্নত। 
  • পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করা গোসলের সুন্নত।
  • দুই হাতের কব্জি ওযুর মতো তিনবার পরিষ্কার করা গোসলের সুন্নত।
  • কাপড় অথবা শরীরের কোথাও অপবিত্র কোনো কিছু থাকলে— গোসলের আগে তা পরিষ্কার করা গোসলের সুন্নত।
  • গোসলের আগে অজু করা। গোসলের স্থান নিচু হলোে ও পানি জমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে টাখনুসহ দুই পা পরে পরিষ্কার করা গোসলের সুন্নত।
  • ডান দিকে তিনবার, বাম দিকে তিনবার ও মাথার ওপর তিনবার পানি প্রবাহিত করা গোসলের সুন্নত। 
  • গোসলের স্থানে পানি জমা হয়-এমন স্থানে গোসল করলে গোসলের পরে অন্যত্র সরে গিয়ে পা ধোয়া সুন্নাত।
  • সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানোর সুন্নাত নিয়ম হলো:
    1. প্রথমে ভিজা হাত দ্বারা সমস্ত শরীর ভিজিয়ে নিবে।
    2. তারপর তিনবার মাথায় পানি ঢালবে।
    3. তারপর তিনবার ডান কাঁধে পানি ঢালবে।
    4. তারপর বাম কাঁধে তিনবার পানি ঢালবে।
    5. প্রতিবার পানি ঢেলে ভাল করে শরীর মর্দন করে পরিষ্কার করা সুন্নাত।
  • গোসলের পর পানি মুছে ফেলার কিছু থাকলে তা দিয়ে শরীর মুছে ফেলবে।
  • তারপর যথাসম্ভব দ্রুত কাপড় দ্বারা শরীর আবৃত করবে।
  • গোসলখানা থেকে বের হওয়ার সময় যদি বাম পা দিয়ে প্রবেশ করে থাকে, তাহলোে ডান পা দিয়ে বের হবে।
  • বের হওয়ার পর উযূর শেষে যে সব দোয়া পড়া মোস্তাহাব এখানেও সেগুলো পড়বে।
  • গোসলের পর কোন অঙ্গ ধোয়া হয়নি বা কোথাও শুকনো রয়ে গেছে মনে হলোে শুধু সেটা ধুয়ে নিলেই চলবে, পুরো গোসল দোহরানোর প্রয়োজন নেই।

কি কি কারণে গোসল ফরয হয়?

১. যৌন সম্ভোগ দ্বারা অথবা অন্য কোন কারণে জোশের সাথে মনী (বীর্য) বের হলোে।

২. পুরুষের স্বপ্নদোষ হলোে। স্বপ্ন দেখুক বা না দেখুক রাতে অথবা দিনে ঘুমন্ত অবস্থায় বীর্যপাত হলোে। তবে শয়নের কাপড়ে বা শরীরে মনীর চিহ্ন না দেখা গেলে গোসল ফরয হয় না।

৩. স্বামীর লিঙ্গের শুধু অগ্রভাগ অর্থাৎ, খৎনার স্থানটুকু স্ত্রীর গুপ্তাঙ্গে প্রবেশ করলে (যদিও কিছু বের না হয়)। যেমন সামনের রাস্তার এই হুকুম, তদ্রূপ মহাপাপ হওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ পেছনের রাস্তায় প্রবেশ করায় তবুও এই হুকুম।

৪. স্ত্রীলোকের হায়েয হওয়ার পর বা নারীদের ঋতুস্রাব অথবা পিরিয়ড হলোে, যখন রক্ত বন্ধ হয় তখন গোসল ফরয হয়।

৫. স্ত্রীলোকের নেফাসের রক্তস্রাব বন্ধ হলোে পাক হওয়ার জন্য গোসল ফরয হয়। অর্থ্যাৎ, সন্তান প্রসবের পর রক্তপাত বন্ধ হলোে।

৬. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া জীবিতদের জন্য।

৭. কোনো অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করলে।

যে সব কারণে গোসল ফরয হয় না, সেগুলো কি?

১. যদি কোন রোগের কারণে ধাতু পাতলা হয়ে বা কোন আঘাত খেয়ে বিনা উত্তেজনায় ধাতু নির্গত হয় তাতে গোসল ফরয হয় না।

২. স্বামী স্ত্রী শুধু লিঙ্গ স্পর্শ করে যদি ছেড়ে দেয়- কিছু মাত্র ভিতরে প্রবেশ না করায় এবং মনীও বের না হয়, তাতে গোসল ফরয হয় না।

৩. শুধু মযী বের হলোে তাতে কেবল উযূ ভঙ্গ হয় গোসল ফরয হয় না।

৪. ঘুম থেকে উঠার পর যদি স্বপ্ন স্মরণ থাকে কিন্তু কাপড়ে বা শরীরে কোন কিছু দেখা না যায় তবে তাতে গোসল ফরয হয় না।

৫. এস্তেহাযার রক্তের কারণে গোসল ফরয হয় না।

বিঃ দ্রঃ

যৌন সম্ভোগের সময় তৃপ্তি হওয়ার প্রাক্কালে অথবা ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলোে যা নির্গত হয় তা হলোো বীর্য। বীর্য বের হলোে গোসল করা আবশ্যক হয়।

আর পুংলিঙ্গের চটপটে ভাব দ্বারা অথবা স্ত্রীলোককে চুম্বন করায় অথবা স্ত্রীলোকের নিকটবর্তী হওয়ায় অথবা কোন খারাপ ধারণার বশবর্তী হলোে লিঙ্গের অগ্রভাগ দিয়ে পানির মত যে বস্তু বেরিয়ে আসে, তা হলো মযী। কিন্তু মযী বের হলোে গোসল করা আবশ্যক হয় না তবে উযু ভেঙ্গে যায়।

গোসল কখন সুন্নত হয়?

১. জুমার নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত।

২. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত।

৩. ইহরামের জন্য গোসল করা সুন্নত।

৪. হাজীদের আরাফায় অবস্থানের সময় গোসল করা সুন্নত।

ফরজ গোসলের দোয়া, নিয়ত ও নিয়ম কি?

গোসলের দোয়া / ফরজ গোসলের নিয়ত:

বাংলা উচ্চারণঃ “নাওয়াইতুল গুছলা লিরাফইল জানাবাতি।”

অর্থঃ “আমি নাপাকি থেকে পাক হওয়ার জন্য গোসল করছি।”

নিম্নে ফরজ গোসলের নিয়ম দেওয়া হলোো:

  1. গোসলের দোয়া পড়া।
  2. তারপর গোসলের নিয়ত করে বিসমিল্লাহ বলে দু হাত কব্জি পর্যন্ত ভালো করে ধৌত করতে হবে।
  3. এরপর শরীরের কোন জায়গায় অপবিত্র বস্তু লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করতে হবে।
  4. তারপর অজু করতে হবে। গড়গড়ার সাথে কুলি করতে হবে, রোজাদার হলোে গড়গড়া করা যাবে না। তিনবার কুলি করা সুন্নত
  5. তারপর তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে হবে
  6. অজুর পর মাথায় এমনভাবে পানি ঢালতে হবে যেন চুলের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছে যায়।
  7. এরপর ডান কাঁধে পরে বাম কাঁধে পানি ঢেলে সমস্ত শরীর ধৌত করতে হবে যেন শরীরের কোন অংশ শুকনো না থাকে।
  8. সর্বশেষে পা ধুতে হবে
  9. এরপর সারা শরীর কোন কাপড় বা গামছা দিয়ে মুছে শুকনো কাপড় পড়তে হবে।

সমাপ্ত: পোষ্টটি থেকে আমরা জানলাম- গোসলের ফরয, সুন্নাত, মোস্তাহাব ও আদবসমূহ, কি কি কারণে গোসল ফরয হয়? যে সব কারণে গোসল ফরয হয় না, সেগুলো কি? গোসল কখন সুন্নত হয়? ফরজ গোসলের দোয়া, নিয়ত ও নিয়ম।

পোষ্টটি লিখতে নিম্নক্তো বই/লেখকের লিখনী থেকে সাহায্য নেওয়া হয়েছে:
আহকামে জিন্দেগী (মাকতাবাতুল আবরার প্রকাশনী)
মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন
শায়খুল হাদীস, জামেয়া ইসলামিয়া আরার্বিয়া, তাঁতী বাজার, ঢাকা-১১০০
মুহাদ্দিছ, জামিয়া ইসলমিয়া দারুল উূলুম মাদানিয়া, ৩১২, দক্ষীণ যাত্রাবাড়ি, ঢাকা-১২৩৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright Notice

কপি করা নিষিদ্ধ!