বিষয়:
(1) ফরয কাকে বলে?
(2) ফরযে কেফায়া কাকে বলে?
(3) ওয়াজিব কাকে বলে?
(4) সুন্নাত কাকে বলে?
(5) সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কাকে বলে?
(6) সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা কাকে বলে?
(7) মুস্তাহান কাকে বলে?
(8) মোস্তাহাব কাকে বলে?
(9) হালাল কাকে বলে?
(10) হারাম কাকে বলে?
(11) মাকরূহ তাহরীমী কাকে বলে?
(12) মাকরূহ তানযীহী কাকে বলে?|
(13) মোবাহ কাকে বলে?
(14) মাকরূহ কাকে বলে?
(15) ফরযে আইন কাকে বলে?
(1) ফরয কাকে বলে?
যা অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত এবং যা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুনিশ্চিতরূপে করার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে তাকে ফরয বলে। যেমন কালিমা, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, জেহাদ, ইল্মে দ্বীন শিক্ষা করা, সত্য কথা বলা ইত্যাদি। ফরয দুই প্রকার। ১. ফরযে আইন; ২. ফরযে কেফায়া;।
(2) ফরযে আইন কাকে বলে?
ফরযে আইন হলোো যে কাজ প্রত্যেক বালেগ বুদ্ধিমান নর-নারীর উপর সমানভাবে ফরয। যেমন পাঁচ ওয়াক্তের নামায, আবশ্যক পরিমাণ ইল্মে দ্বীন শিক্ষা করা ইত্যাদি।
(3) ফরযে কেফায়া কাকে বলে?
ফরযে কেফায়া যে কাজ কতক লোকে পালন করলে সকলেই গোনাহ থেকে বেঁচে যায়; কিন্তু কেউ পালন না করলে সকলেই ফরয তরকের জন্য পাপী হয়ে যায়। যেমন জানাজার নামায পড়া, মৃত ব্যক্তির কাফন-দাফন করা, আবশ্যক পরিমাণ অপেক্ষা অতিরিক্ত ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা ইত্যাদি।
(4) ওয়াজিব কাকে বলে?
ওয়াজিব হলোো যে কাজ ফরযের ন্যায় অবশ্য করণীয়। তবে পার্থক্য এতটুকু যে, কেউ ফরয অস্বীকার করলে কাফের হয়ে যায় কিন্তু ওয়াজিব অস্বীকার করলে কাফের হয় না, তবে ফাসেক হয়ে যায়। যেমন বেতরের নামায পড়া, কুরবানী করা, ফেতরা দেয়া ইত্যাদি।
বাংলায় ওয়াজিব এর অর্থ কর্তব্য। যার উপর আমল করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর পরিত্যাগ করলে শাস্তি পেতে হবে। কিছু ইসলামি বিশেষজ্ঞদের মতে, যা করার আদেশ জন্নী দলীল তথা ফরজের তুলনায় দুর্বল দলীল দ্বারা প্রমাণিত, তাকে ওয়াজিব বলে। ফরজের পরই ওয়াজিব এর স্থান।
(5) সুন্নাত কাকে বলে?
যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ করেছেন তাকে সুন্নাত বলে। সুন্নাত দুই প্রকার – 1. সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, 2. সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা।
সুন্নাত বা সুন্নত হলো একটি আরবী শব্দ যার আভিধানিক অর্থ হলো “ঐতিহ্য” বা “উপায়”। মুসলিমদের কাছে সুন্নাহ হলো নবী মুহাম্মাদ সাঃ কর্তৃক নির্দেশিত জীবনব্যবস্থা। মুসলিমগণ বিশ্বাস করে থাকেন যে, মুহাম্মাদ সাঃ এর জীবন হলো সর্বোত্তম আদর্শ তাদের নিজস্ব জীবনে অনুসরণ করার জন্য।[১]ইসলামী পন্ডিতগণ নবী মুহাম্মাদের জীবনী, তার পরিবারের জীবনী এবং তার সাহাবাদের জীবনী থেকে সুন্নাহর শিক্ষাগ্রহণ করে থাকেন। রাসূল কেন্দ্রিক এ সকল ঘটনাসমূহের সংকলনকে একত্রে হাদীস বলা হয়।
(6) সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কাকে বলে?
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা হলোো যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ সব সময় করেছেন, বিনা ওজরে কখনও ছাড়েননি। যেমন আযান, ইকামত, খতনা, বিবাহ ইত্যাদি। সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ওয়াজিবেরই মত গুরুত্বপূর্ণ, বিনা ওজরে তা ছাড়লে বা ছাড়ার অভ্যাস করলে পাপী হতে হয়। তবে ওজর বশতঃ কখনও ছুটে গেলে কাযা করতে হয় না।
(7) সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা কাকে বলে?
সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা হলোো যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ করেছেন তবে ওযর ছাড়াও কোন কোন সময় তরক করেছেন। সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাকে ‘সুন্নাতে যায়েদা’-ও বলে ৷ এটা করলে ছওয়াব আছে কিন্তু না করলে আযাব হবে না।
(8) মুস্তাহান কাকে বলে?
যাকে কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে পূর্ববর্তী পরবর্তী উলামায়ে কেরাম ভাল মনে করেছেন, তাকে মুস্তাহান বলে।
(9) মোস্তাহাব/মুস্তাহাব কাকে বলে?
মুস্তাহাব- অর্থ উত্তম, পছন্দনীয়। ফিকহের পরিভাষায় মুস্তাহাব বলা হয় যা আমল করলে সওয়াব রয়েছে কিন্তু ছেড়ে দিলে কোন গুনাহ নেই। যেমন, জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়া, জুমার দিন বেশি বেশি দুরুদ পড়া, প্রতিমাসে তিনটি করে রোযা থাকা ইত্যাদি।
মোস্তাহাব বা মুস্তাহাব হলোো যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ করেছেন কিন্তু সব সময় করেননি, কোন কোন সময় করেছেন। এটা করলে ছওয়াব আছে না করলে পাপ নেই। মোস্তাহাবকে ‘নফল’ এবং ‘মানদূব’ ও বলা হয়। মুস্তাহাবের বিপরীত হলো মাকরুহ (নিরুৎসাহিত)।
মুস্তাহাব কর্ম হলো তাদের যারা ইসলামী আইনে (আহকাম) মুবাহ (নিরপেক্ষ; উৎসাহিত বা নিরুৎসাহিত নয়) এবং মুজিবের (বাধ্যতামূলক) মধ্যে পড়ে।
(10) হালাল কাকে বলে?
শরী’আতের দৃষ্টিতে যেসব বস্তু ব্যবহার করা বৈধ তাকে হালাল বলা হয়। জায়েয ও হালাল সমাৰ্থবোধক।
(11) হারাম কাকে বলে?
হারাম হলো ফরযের বিপরীত অর্থাৎ, যা নিষিদ্ধ হওয়াটা অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। হারামকে হালাল মনে করলে কাফের হয়ে যায় আর বিনা ওজরে হারাম কাজ করলে কাফের হয় না তবে ফাসেক হয়ে যায়। হারাম কাজ বর্জন করা ফরয। ‘না জায়েয’ ও ‘হারাম’ সমার্থবোধক।
(12) মাকরূহ কাকে বলে?
মাকরুহ হলো এমন আমল যা পালন করার তুলনায় না করা উত্তম। অর্থাৎ যে কাজ করা জায়েজ কিন্তু না করা উত্তম। মাকরুহ কাজ করলে শাস্তি পেতে হবে না, কিন্তু এ ধরনের কাজ এড়িয়ে যেতে বলেছে ইসলাম। যেমন : আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ঐ দিনের আসরের নামাজ ছাড়া অন্য কোনো নামাজ আদায় করা।
(13) মাকরূহ তাহরীমী কাকে বলে?
মাকরূহ তাহরীমী হলো ওয়াজিবের বিপরীত, যা কেউ অস্বীকার করলে কাফের হয় না তবে ফাসেক হয়ে যায়। বিনা ওজরে মাকরূহ তাহরীমী করাও ফাসেকী।
(14) মাকরূহ তানযীহী কাকে বলে?
মাকরূহ তানযীহী হলো যা না করলেই ভালো তবে করলেও পাপ বা কবরে আযাব নেই।
(15) মোবাহ কাকে বলে?
মোবাহ হলোো যা মানুষের ইচ্ছাধীন, যে ব্যাপারে আল্লাহ মানুষকে করা বা না করার স্বাধীনতা ও এখতিয়ার দিয়েছেন। যেমন মাছ মাংস খাওয়া, পানাহার করা, কৃষি কর্ম করা, ব্যবসা-বাণিজ্য করা, দেশ ভ্রমণ করা ইত্যাদি। তবে মোবাহ কাজের সংগে যদি ভাল নিয়ত সংযুক্ত হয়, তাহলোে তা ছওয়াবের কাজ হয়ে যায়। যেমন পানাহার করল এই নিয়তে যে, এতে শরীর-স্বাস্থ্য ভাল থাকবে, তাহলোে ইবাদত, ইসলামের খেদমত, জেহাদ ইত্যাদি ভাল ভাবে করা যাবে ইত্যাদি। পক্ষান্তরে মোবাহ কাজের সঙ্গে খারাপ নিয়ত যুক্ত হলোে তা পাপের হয়ে যায়; যেমন কোথাও ভ্রমণে গেল বেগানা-নারী দর্শনের উদ্দেশ্যে বা নাজায়েয কিছু দেখা ও করার জন্য তাহলোে গোনাহ হবে।
পোষ্টটি লিখতে নিম্নক্তো বই/লেখকের লিখনী থেকে সাহায্য নেওয়া হয়েছে: আহকামে জিন্দেগী (মাকতাবাতুল আবরার প্রকাশনী) মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন শায়খুল হাদীস, জামেয়া ইসলামিয়া আরার্বিয়া, তাঁতী বাজার, ঢাকা-১১০০ মুহাদ্দিছ, জামিয়া ইসলমিয়া দারুল উূলুম মাদানিয়া, ৩১২, দক্ষীণ যাত্রাবাড়ি, ঢাকা-১২৩৬