বিষয়:
(ক) মেসওয়াক তৈরি করার নিয়ম:
(খ) মেসওয়াক ব্যবহারের নিয়ম:
(গ) মেসওয়াক করার উত্তম সময়গুলো:
(ঘ) মেসওয়াকের দোয়া ও যিকির:
(ঙ) মেসওয়াক করার নিয়ম/পদ্ধতি, মেসওয়াকের সুন্নত কয়টি? মেসওয়াক কিভাবে করা হয়?
(চ) মেসওয়াক করার উপকারিতা:
(ছ) 6 টি মেসওয়াক হাদিস, মেসওয়াক সম্পর্কে হাদিস/মেসওয়াক সম্পর্কিত হাদিস:
(জ) 10 টি মেসওয়াকের গুরুত্ব ও মেসওয়াকের ফজিলত:
(ঝ) 1 টি প্রশ্ন: ব্রাশ দিয়ে মেসওয়াক করলে সুন্নাত আদায় হবে কি?
(ঞ) মেসওয়াকের ফজিলত pdf
মেসওয়াক তৈরি করার নিয়ম:
১, মেসওয়াক পীলু বা যয়তুনের ডালের হওয়া উত্তম।
২. মেসওয়াক কনিষ্ঠ আঙ্গুলের মত মোটা হওয়া উত্তম।
৩. মেসওয়াক প্রথমে এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া উত্তম।
৪. মেসওয়াক নরম হওয়া মোনাসেব।
৫. মেসওয়াক কম গিরা সম্পন্ন হওয়া উত্তম।
৬. মেসওয়াকের ডাল কাঁচা হওয়া উত্তম।
মেসওয়াক করার ক্ষেত্রে তিনি আরাক (পিল্লু) গাছের (ডাল বা শিকড়ের) দাঁতন বা মেসওয়াক ব্যবহার করতেন। (মুসনাদে আহমাদ)
মেসওয়াক ব্যবহারের নিয়ম:
১. মেসওয়াক ডান হাতে ধরা মোস্তাহাব।
২. মেসওয়াক ধরার নিয়ম হলো: কনিষ্ঠ আঙ্গুল মেসওয়াকের নীচে, বৃদ্ধ আঙ্গুলের অগ্রভাব মেসওয়াকের উপরের দিকে নীচেয় এবং অবশিষ্ট আঙ্গুলগুলো (মধ্যের তিন আঙ্গুল) মেসওয়াকের উপরে রাখবে।
মেসওয়াক করার উত্তম সময়গুলো:
১. ঘুম থেকে ওঠার পর মেসওয়াক করা।
২. অজুতে কুলি করার আগে মেসওয়াক করা। অনেকে ওজুর শুরু করার আগে মেসওয়াক করার কথা বলেছেন।
৩. নামাজ আদায়ের আগে মেসওয়াক করা।
৪. কুরআন-হাদিস পড়ার আগে মেসওয়াক করা। কুরআন-হাদিস পড়ার আগে মেসওয়াক করাকে অনেকে মুস্তাহাব বলেছেন।
৫. মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের আগে মেওয়াক করা।
৬. কোনো মজলিসে যাওয়ার আগে মেসওয়াক করা।
৭. ঘরের প্রবেশ করে মেসওয়াক করা।
৮. মুখে দুর্গন্ধ ছড়ালে মেসওয়াক করা।
৯. দাঁতে হলোুদ আবরণ বা ময়লাযুক্ত হলোে মেসওয়াক করা।
১০. ক্ষুধা লাগলে মেসওয়াক করা।
১১. জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মেসওয়াক করা।
মেসওয়াকের দোয়া ও যিকির:
১. বিসমিল্লাহ বলে মেসওয়াক শুরু করবে।
২. মেসওয়াক শুরু করার সময় দোয়া পড়া মোস্তাহাব। দোয়াটি এই:
بسم الله اللهم اجعل سواكي هذا محيصا لذنوبى ومرضاة لك وبيض به وجهي كما بيّضت أسنائی
অর্থ: হে আল্লাহ, এই মেসওয়াক করাকে আমার পাপ মোচনকারী ও তোমার রেজামন্দীর ওছীলা বানাও, আর আমার দাঁতগুলিকে যেমনি তুমি সুন্দর করেছ, তেমনি আমার চেহারাকেও উজ্জ্বল (সুন্দর) কর।
মেসওয়াক করার নিয়ম/পদ্ধতি, মেসওয়াকের সুন্নত কয়টি? মেসওয়াক কিভাবে করা হয়?
১. মেসওয়াক শুরু করার পূর্বে ভিজিয়ে নেয়া উত্তম।
২. প্রথমে উপরের দাঁতের ডান দিক অতঃপর বাম দিক, তারপর নীচের দাঁতের ডান দিকে অতঃপর বাম দিকে, তারপর দাঁতের ভিতরের দিকে অনুরূপ ভাবে ঘষতে হবে। এভাবে তিনবার ঘষা উত্তম। প্রতিবারেই নতুন পানি দিয়ে মেসওয়াক ধুয়ে নেয়া মোস্তাহাব।
৪. মেসওয়াক দাঁতের অগ্রভাগে, উপর ও নীচের তালুর অগ্রভাগে এবং জিহবার উপরিভাগেও করা উত্তম।
৫. মেসওয়াক দাঁতের উপর চওড়াভাবে ঘষা নিয়ম। ইমাম গাযযালী (রহঃ) উপর নীচ-ভাবে ঘষার কথাও বলেছেন। কমপক্ষে চওড়াভাবে ঘষতে হবে।
৬. শোয়া অবস্থায় মেসওয়াক করা মাকরূহ।
৭. মেসওয়াক করার পর মেসওয়াক ধুয়ে দাঁড় করিয়ে রাখবে।
বিঃ দ্রঃ মেসওয়াক না থাকলে মেসওয়াকের বিকল্প হিসেবে ব্রাশ ব্যবহার করা যায়। এতে মেসওয়াকের ডাল বিষয়ক সুন্নাত আদায় না হলোেও মাজা ও পরিষ্কার করার সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। অন্যথায় হাত দিয়ে বা মোটা কাপড় দিয়ে দাঁত মেজে নিতে হবে।
৮. হাত দিয়ে মাজার নিয়ম হলো: ডান হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুল দিয়ে ডান পাশের দাঁতের উপরে অতঃপর নীচে, তারপর শাহাদাত (তর্জনী) আঙ্গুল দিয়ে বাম পাশের দাঁতের উপরে অতঃপর নীচে ঘষতে হবে।
মেসওয়াক করার উপকারিতা:
১. মেসওয়াক করে যে নামাজ আদায় করা হয়, সে নামাজে মেসওয়াকবিহীন নামাজের তুলনায় সত্তরগুন বেশী ফযীলত রয়েছে।(শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী, হাদীস নং ২৫১৯)
২.. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দাঁতন বা মেসওয়াক করায় রয়েছে মুখের পবিত্রতা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি।’ (মুসনাদে আহমাদ, দারেমি, নাসাঈ, ইবনে খুযাইমাহ, ইবনে হিব্বান, বুখারি, মিশকাত)
২. একবার হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁতন বা মেসওয়াক আনতে আদেশ করে বললেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দা যখন নামাজ পড়তে দাঁড়ায়; তখন ফেরেশতারা তার পেছনে দাঁড়িয়ে কেরাত শুনতে থাকেন। ফেরেশতারা তার কাছাকাছি হতে থাকেন। পরিশেষে ফেরেশতা নিজ মুখ তার (বান্দার) মুখে মিলিয়ে দেন! ফলে তার মুখ হতে কুরআনের যেটুকুই অংশ বের হয় সেটুকু অংশই ফেরেশতার পেটে প্রবেশ করে। সুতরাং কোরআনের জন্য তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র করো।’ (মুসনাদে বাযযার, তারগিব)
৩. নবিজী বলেছেন, ‘মেসওয়াক করে তোমরা তোমাদের মুখকে পবিত্র করো। কারণ, মুখ হলো কোরআনের পথ।’ (সিলসিলাহ)
৪. মেসওয়াক করলে মৃত্যুর সময় কালেমা নসিব হয়।
৫. মেসওয়াক আরও উপকারিতা রয়েছে যেমন:
- মিসওয়াক করার মধ্যমে আল্লাহর রিজামন্দি হাসিল হয়।
- দারিদ্র্যতা দূর হয়ে।
- সচ্ছলতা আসে এবং উপার্জন বাড়ে।
- পাকস্থলী ঠিক থাকে।
- শরীর শক্তিশালী হয়।
- স্মরণশক্তি ও জ্ঞান বাড়ে। ৭) অন্তর পবিত্র হয়।
- সৌন্দর্য বাড়ে।
- ফিরিশতা তার সঙ্গে মুসাফাহা করেন।
- নামাজে বের হলোে সম্মান করেন, নামাজ আদায় করে বের হলোে আরশ বহনকারী ফিরিশতারা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
- শয়তান অসন্তুষ্ট হয়।
- ফুলসিরাত বিজলীর ন্যায় দ্রুত পার হবেন
- ডান হাতে আমলনামা পাবে।
- ইবাদতে শক্তি পাবে।
- মৃত্যুর সময় কালিমা নসিব হবে।
- জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে।
- জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা দেয়া হবে।
- পূত-পবিত্র হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে।
- দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়।
- মুখের দুরগন্ধ দূর হয় ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত নিয়মে ও সময়ে মেসওয়াক করার তাওফিক দান করুন। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় আমলটি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত ও উপকারিতা লাভের তাওফিক দান করুন।
6 টি মেসওয়াক হাদিস, মেসওয়াক সম্পর্কে হাদিস/মেসওয়াক সম্পর্কিত হাদিস
মেসওয়াক করা রাসুল (সা.)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। মিসওয়াক হলোো গাছের কাঁচা ডাল দিয়ে দাঁত ঘষা। কাঁচা ডাল দিয়ে দাঁত ঘষার অনেক উপকার রয়েছে।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মিসওয়াকের সত্তরটিরও বেশি উপকার রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হলোো মৃত্যুর সময় কালিমা নসিব হওয়া।’ অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘যদি আমি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তবে অবশ্যই প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম’ (মিশকাত: ৩৪৬)।
রাসুল (সা.) মিসওয়াক করাকে উম্মতের আবশ্যক করে দিতে চেয়েছিলেন। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মিসওয়াক একটি ফজিলতপূর্ণ আমল। অথচ আজকাল আমরা ব্রাশ পেয়ে মিসওয়াক করাকে ভুলেই গেছি। নতুন প্রজন্মের অনেকে মিসওয়াক কী, তা-ই জানে না। মিসওয়াকের গুরুত্ব অন্য একটি হাদিস দ্বারাও বোঝা যায়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘হজরত জিবরাঈল (আ.) যখনই আমার কাছে আসতেন, তখনই মিসওয়াক করার জন্য আমাকে আদেশ করতেন। আমার মনে হচ্ছিল মিসওয়াক করা আমার ওপর ফরজ করিয়ে দেওয়া হয় কি না।’ (মিশকাত: ৩৫৫)
রাসুল (সা.) মিসওয়াক করাকে এতটাই গুরুত্ব দিতেন এবং এতটাই ভালোবাসতেন যে, তিনি মৃত্যুর সময়েও মিসওয়াক করা ছাড়েননি, বরং তিনি যখন মিসওয়াক করতে পারছিলেন না তখন হজরত আয়েশা (রা.) নিজ থেকে মিসওয়াক চিবিয়ে রাসুল (সা.)-এর মুখে তুলে দিচ্ছিলেন। আর রাসুল (সা.) তা দিয়ে মিসওয়াক করছিলেন। যদিও রাব্বে কারিম পবিত্র কুরআনে মিসওয়াক সম্পর্কে কিছুই বলেননি, তবুও মিসওয়াকের প্রতি রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা দেখেই বোঝা যায় মিসওয়াকের মধ্যে কত সওয়াব নিহিত রয়েছে।
রাসুল (সা.) মিসওয়াক করার ব্যাপারে যেমনিভাবে জোর তাগিদ দিয়েছেন, তেমনিভাবে ডাক্তারি মতেও এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। দাঁতের সঙ্গে খাদ্যকণা জমে যে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় তা দূর করার জন্যই মিসওয়াক করা একান্ত প্রয়োজন। তেতো গাছের মিসওয়াকের পরিমাণ এক বিঘতসম হওয়া বাঞ্ছনীয়। আর এর ব্যবহারের নিয়ম হলোো, ডান হাত দিয়ে মুখের ডান থেকে আড়াআড়িভাবে ঘষা। দাঁত দৈর্ঘ্যে না ঘষা এবং মেসওয়াক শেষে কাঠিটিকে ভালোভাবে ধৌত করে দাঁড় করিয়ে রাখা উচিত, যাতে পানি শুকিয়ে গিয়ে দুর্গন্ধমুক্ত থাকে।
আল্লামা নববী (রহ.) বলেন, ‘সর্বাবস্থায় মিসওয়াক করা মুস্তাহাব, তবে পাঁচটি সময় মেসওয়াক করা বিশেষ মুস্তাহাব। সেগুলো হলোো- ১. নামাজের সময়, ২. কুরআন তেলাওয়াতের সময় ৩. অজু করার সময়, ৪. নিদ্রা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর, ৫. মুখের দুর্গন্ধ দেখা দিলে।’ (শারহুন নাবাবি)
হজরত শুরাইহ ইবনে হানি (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশাকে (রা.) জিজ্ঞেস করলাম, রাসুল (সা.) যখন ঘরে প্রবেশ করতেন তখন প্রথমে কোন কাজ করতেন?’ জবাবে হজরত আয়েশা (রা.) বললেন, ‘মিসওয়াক করতেন’ (মিশকাত: ৩৪৭)। এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, রাসুল (সা.) মিসওয়াকের প্রতি অত্যধিক গুরুত্বারোপ করতেন। অজু করার সময় ছাড়াও কোনোরূপ দুর্গন্ধের আশঙ্কা করলে সঙ্গে সঙ্গে মিসওয়াক করতেন। ঘরে ফিরেই সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন। কেননা বাইরের লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তার ফলে মুখের লালা জমে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। তাই মিসওয়াক করে মুখ পরিষ্কার করে নিতেন।
প্রিয় নবীর উম্মত হিসেবে আমাদের মেসওয়াকের আমল করা খুবই দরকার। তাই আসুন, আমরা রাসুল (সা.)-এ এই সুন্নতকে অভ্যাস বানিয়ে নিই। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে ভালোবাসে সে আমাকেই ভালোবাসে, আর যে আমাকে ভালোবাসল সে আমার সঙ্গেই জান্নাতে থাকবে’ (মিশকাত)। আল্লাহ সবাইকে আমল করার তওফিক দিন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ঘন ঘন মেসওয়াক করা। হাদিসের ওপর আমল করা। মেসওয়াক করার মাধ্যমে ঘোষিত ফজিলত ও উপকারিতা অর্জন করা।
10 টি মেসওয়াকের গুরুত্ব ও মেসওয়াকের ফজিলত
১. নবিজী বলেছেন, মুমিন মুসলমানের প্রকৃতিগত কাজসমূহে একটি হলোো- মেসওয়াক করে মুখ পরিষ্কার রাখা।’ (মুসলিম, মিশকাত)
২. নবিজী বলেছেন, ‘বিশেষ করে জুমআর দিন গোসল ও মেসওয়াক করা এবং আতর ব্যবহার করা একান্ত কর্তব্য। (মুসনাদে আহমাদ, বুখারি, আবু দাউদ, জামে)
৩. নবিজী বলেন, ‘জিবরিল (আ.) আমাকে এতবেশি দাঁতন বা মেসওয়াক করতে আদেশ করেছেন, যাতে আমি আমার দাঁত ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা করছি।’
৪. অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘এতে আমার ভয় হয় যে, দাঁতন বা মেসওয়াক করা আমার উপর ফরয করে দেওয়া হবে।’ (জামে)
৫. নবিজী বলেন, ‘বাড়িতে ঢুকামাত্রই তিনি প্রথম যে কাজ করতেন, তা হলো দাঁতন বা মেসওয়াক করা।’ (মুসলিম)
৬. নবিজী আরও বলেন, ‘তাহাজ্জুদ পড়তে উঠলেই তিনি দাঁতন বা মেসওয়াক করেই দাঁত মাজতেন।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
৭. নবিজী বলেন, নামাজ ছাড়াও রাতের অন্যান্য সময়েও যখন তিনি জেগে উঠতেন; তখনও মেসওয়াক করতেন। আর এই কারণেই রাতে শোয়ার সময় তিনি শিথানে মাথার কাছে দাঁতন বা মেসওয়াক রেখে নিতেন।’ (জামে)
৮. ‘আমি আমার উম্মতের পক্ষে কষ্টকর না জানলে (প্রত্যেক) ওযুর সাথে দাঁতন বা মেসওয়াক করাকে ফরজ করতাম এবং ইশার নামাজ অর্ধেক রাত পর্যন্ত দেরি করে আদায় করতাম।’ (মুসতাদরাকে হাকেম, বায়হাকি,জামে)
৯. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম মেসওয়াক। নবিজী বলেন, ‘জিবরিল আলাইহিস সালাম অহি নিয়ে এসেছেন আর মেসওয়াকের কথা বলেননি- এমনটি কখনো হয়নি। তাই অবস্থা এমন মনে হতো যেন, মেসওয়াক করতে থাকার কারণে আমার মুখের অগ্রভাগ ছিলে যায়। (বুখারি, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)
১০. এ কারণেই হজরত জায়েদ বিন খালেদ জুহানি রাদিয়াল্লাহুআনহু মসজিদে নামাজ পড়তে হাজির হওয়ার সময়ও তাঁর দাঁতন বা মেসওয়াককে কলমের মতো করে কানে গুঁজে রাখতেন। নামাজে সময় হলোে তিনি মেসওয়াক করতেন তারপর আবার কানে গুঁজে রাখতেন।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে মেসওয়াকের গুরুত্ব এতবেশি ছিল যে, তাঁর ইন্তেকালের আগ মুহূর্তেও তিনি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার দাঁতে চিবিয়ে নরম করে দেওয়া দাঁতন দিয়ে মেসওয়াক করেছেন।’ (বুখারি, মিশকাত)
1 টি প্রশ্ন: ব্রাশ দিয়ে মেসওয়াক করলে সুন্নাত আদায় হবে কি?
হ্যাঁ, অবশ্যই সুন্নাত আদায় হবে। মেসওয়াক আরবি শব্দ এর ইংরেজি অনুবাদ হলোো ব্রাশ। এর মাধ্যমে যদি কেউ দাত মাজে বা মেসওয়াক করে, তাহলোে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এ ক্ষেত্রে যদি কেউ কাঠের ব্রাশ ব্যবহার করে সেটাও তার জন্য জায়েজ রয়েছে। এটি জায়েজ বা বাধ্যতামূলক বিষয় নয় অথবা ফরজ বা ওয়াজিব এমন বিষয় নয়। সময়ের পরিবর্তনে মূলত এই জিনিসগুলো পরিবর্তনশীল।
ওলামায়ে কেরামের মতে একটি মাসয়ালা সাব্যস্ত হয়েছে। সেটি হলোো— অবস্থার পরিবর্তন যখন দেখা দেয়, তখন আহকামের পরিবর্তন হয়। যেসব আহকাম বিভিন্ন প্রথার সাথে জড়িয়ে আছে, অবস্থার পরিবর্তনের সাথে এগুলোর হুকুমের পরিবর্তন হয়।
রাসুল (সা.) হাদিসের মধ্যে স্পষ্ট করেছেন, মেসওয়াক করা হয় মুখকে পরিচ্ছন্ন-পবিত্র করার জন্য। মুখের মধ্যে অপবিত্র অপরিচ্ছন্ন কিছু যেন না থাকে, সেটাকেই রাসুল (সা.) মেসওয়াকের প্রথম উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তাই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, উদ্দেশ্য হাসিল হলোেই মেসওয়াক হয়ে যাবে।
মেসওয়াকের ফজিলত pdf
উপসংহার
মেসওয়াক হলোো মুসলমানদের দাঁত মাজার উপকরণ যা একটি গাছের ডাল, কাঠ বা শিকড়ও হতে পারে। এটি মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সুন্নাহ পদ্ধতি। السواك (মিসওয়াক) শব্দটি ساك (সিওয়াক) শব্দমূল থেকে এসেছে। এর আভিধানিক অর্থ হলো ঘষা, মাজা বা মর্দন করা। এর সবচেয়ে কাছাকাছি বাংলা প্রতিশব্দ হলো দাঁতন। ইসলামি পরিভাষায়, দাঁত থেকে হলোুদ বর্ণ বা এ জাতীয় ময়লা দূর করার জন্য কাঠ বা গাছের ডাল ব্যবহার করাকে মিসওয়াক বলে। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হওয়ায় এটি বাংলা ভাষার’ও একটি শব্দ। এটি ‘মেসওয়াক’ নামে আত্তীকৃত হয়েছে।
একে অনেক ঐতিহাসিকেরা ব্রাশের প্রাথমিক রূপ মনে করেন। কারণ তখনকার যুগে এটিই ছিল দাঁত মাজার একমাত্র মাধ্যম। ইসলামে মেসওয়াক একটি বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে। অযু ও গোসলের পূর্বে মেসওয়াক করা সুন্নত। এছাড়া যেকোন ভালো কাজের পূর্বে নবীজি মেসওয়াক করতেন।
সমাপ্ত: পোষ্টটি থেকে আমরা জানলাম- মেসওয়াক করার নিয়ম/পদ্ধতি, মেসওয়াক তৈরি করার নিয়ম, মেসওয়াক ধরার নিয়ম/পদ্ধতি, মেসওয়াকের দোয়া ও যিকির।
পোষ্টটি লিখতে নিম্নক্তো বই/লেখকের লিখনী থেকে সাহায্য নেওয়া হয়েছে: আহকামে জিন্দেগী (মাকতাবাতুল আবরার প্রকাশনী) মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন শায়খুল হাদীস, জামেয়া ইসলামিয়া আরার্বিয়া, তাঁতী বাজার, ঢাকা-১১০০ মুহাদ্দিছ, জামিয়া ইসলমিয়া দারুল উূলুম মাদানিয়া, ৩১২, দক্ষীণ যাত্রাবাড়ি, ঢাকা-১২৩৬