আলোচনার বিষয়:
এবরশন/গর্ভপাত ও এম আর বিষয়ক মাসায়েল মাসায়েল।
প্রসবকালীন সময়ের কয়েকটি মাসআলা মাসায়েল।
প্রসূতি সম্পর্কে কয়েকটি মাসআলা মাসায়েল।
গর্ভপাত ও এম আর বিষয়ক মাসায়েল মাসায়েল
- দৈব কোন কারণে অর্থ্যাৎ, (অনিচ্ছাকৃত) গর্ভ পড়ে/এবরশন/গর্ভপাত হয়ে গেলে তার জন্য গোনাহ হয় না।
- এম আর’ অর্থ মাসিক নিয়মিত করণ অর্থাৎ, যে কোন কারণে মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে যান্ত্রিক উপায়ে গর্ভস্থ রক্ত ইত্যাদি বের করে দেয়ার মাধ্যমে মাসিক নিয়মিত করণ। গর্ভে সন্তান আসার পর গর্ভপাত হলোে বা এম আর করলে তার মাসআলা হলো:
- এবরশন/গর্ভপাত হলোে বা এম আর করা হলোে যদি সন্তানের মধ্যে হাত, পা, নখ, প্রভৃতি মানবের কোন অঙ্গ তৈরী হয়ে থাকে, তাহলোে সেটাকে বাচ্চা ধরা হবে এবং যে রক্ত বের হবে সেটাকে নেফাসের রক্ত বলে গণ্য করা হবে। এ অবস্থায় নেফাসের আহকাম চালু হবে এবং সন্তানকে গোসল ও কাফন-দাফন দিতে হবে। আর যদি কোন অঙ্গ প্রকাশ না হয়ে থাকে তাহলোে সেটার গোসল ও কাফনের প্রয়োজন নেই বা নিয়ম মত দাফনও করা হবে না। তবে যেহেতু সেটা মানুষের অঙ্গ তাই যেখানে সেখানে ফেলে না দিয়ে সম্মানের সাথে কোথাও মাটিতে গেড়ে দেয়া উচিত। আর এ অবস্থায় যে রক্ত বের হবে সেটা নেফাসের রক্ত বলে গণ্য হবে না বরং দেখতে হবে এর পূর্বে যে হায়েয হয়েছে তা যদি পনের দিন বা বেশী পূর্বে হয়ে থাকে এবং এখনকার রক্ত কমপক্ষে তিন দিন দীর্ঘায়িত হয়, তাহলোে এটা হায়েযের রক্ত বলে গণ্য হবে। কিন্তু যদি এর পূর্বের হায়েয পনের দিনের কম সময় আগে হয়ে থাকে বা এখনকার রক্ত তিন দিনের কম দীর্ঘায়িত হয় তাহলোে এটা এস্তেহাযার রক্ত বলে গণ্য হবে এবং এ অবস্থায় এস্তেহাযার হুকুম জারী হবে।
- উল্লেখ্য যে, বাচ্চার অঙ্গ প্রকাশ পাওয়ার পর (যার মেয়াদ ১২০ দিন) গর্ভপাত করানো জায়েয নয়।
প্রসবকালীন সময়ের কয়েকটি মাসআলা মাসায়েল
- প্রসবের সময় প্রসব কাজে প্রত্যক্ষভাবে লিপ্ত ধাত্রী বা নার্সের সামনে শরীরের এতটুকু খোলা জায়েয, যতটুকু না খুললে নয়। এমনিভাবে প্রসবের সময় বা অন্য কোন সময় ঔষধ লাগানোর স্বার্থেও ততটুকু পরিমাণই খোলা জায়েয- সম্পূর্ণ উলঙ্গ হওয়া জায়েয নয়। এর জন্য উত্তম সূরত হলো চাদর দ্বারা প্রসূতির শরীর ঢেকে দিয়ে শুধু প্রয়োজনীয় স্থানটুকু ধাত্রী খুলে প্রয়োজন সেরে নিবে।
- প্রসব কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত নয়-এমন কারও সামনে শরীর খোলা জায়েয নয়। অন্যান্য মহিলাদের জন্যও সামনে এসে তার সতর দেখা হারাম।
- ধাত্রীর দ্বারা পেট মর্দন করাতে হলোে চাদর বা কাপড়ের নীচ দিয়ে হাত প্রবেশ করিয়ে মর্দন করাবে। নাভীর নীচে কাপড় উন্মুক্ত করে দেয়া জায়েয নয়।
- ধাত্রী বা নার্স যদি অমুসলিম হয়, তাহলোে অমুসলিম মহিলাদের সামনে যেহেতু মুখ, হাতের কবজি পর্যন্ত এবং পায়ের টাখনু পর্যন্ত ব্যতীত শরীরের অন্য স্থান খোলা জায়েয নয়, তাই প্রসবের প্রয়োজনে যতটুকু না খুললে নয় তা ব্যতীত মাথা, হাত, চুল প্রভৃতি কোন অঙ্গ পর্দা মুক্ত করা জায়েয হবে না।
- নিম্নোক্ত আয়াত লিখে প্রসূতির বাম রানে বেঁধে দিলে আল্লাহ চাহেতো আছানীর সাথে প্রসব হবে। প্রসব হওয়ার সাথে সাথে সেটি খুলে দিবে। আয়াতটি এই-
সূরা আল-ইনশিকাক আরবী:
১) إِذَا ٱلسَّمَآءُ ٱنشَقَّتْ ২) أَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَحُقَّتْ ৩) إِذَا ٱلْأَرْضُ مُدَّتْ ৪) أَلْقَتْ مَا فِيهَا وَتَخَلَّتْ
(সূরা ইন্শিকাকঃ ১-৪)
প্রসূতি সম্পর্কে কয়েকটি মাসআলা মাসায়েল
- প্রসূতিকে অস্যুৎ/অপবিত্র মনে করা ভিত্তিহীন। প্রসূতি কোন পাত্রে পানাহার করলে বা কোন পাত্র স্পর্শ করলে সেটা না ধুয়ে তাতে পানাহার করা যাবে না- এরূপ ধারণা ভিত্তিহীন।
- নেফাসের রক্ত বন্ধ হয়ে গেলেও ৪০ দিন পর্যন্ত নামায পড়া যাবে না- এটাও ভুল ধারণা। ৪০ দিন হলো নেফাসের সর্বোচ্চ মেয়াদ, এর পূর্বেও রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে গোসল করে নামায পড়া শুরু করবে। গোসলে ক্ষতির আশংকা থাকলে তাইয়াম্মুম করে নামায পড়বে। অনেকে মনে করে ৪০ দিন যাওয়ার পূর্বে নামায পড়তে হয় না, এ ধারণা ভুল।
- প্রসূতি গোসল না করা পর্যন্ত তার হাতের কোন কিছু খাওয়া যাবে না- এই ধারণা ভুল।
- ৪০ দিন পর্যন্ত স্বামী প্রসূতি-ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না- এটা আমাদের সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণা।
- যে স্থান দেখা জায়েয নয় প্রসূতিকে গোসল দেয়ার সময় ধাত্রী বা অন্য কোন নারীও সে স্থানে সরাসরি হাত লাগিয়ে মর্দন করে দিতে পারবে না বা সে স্থান দেখতে পারবে না। প্রয়োজনে হাতে গেলাফ লাগিয়ে বা কোন কাপড় পেঁচিয়ে কাপড়ের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে মর্দন করে দিতে পারবে।
- প্রসূতিকে গোসল দেয়ার সময় ধুমধাম করা, নাচ গান করা বা হৈ হুল্লোড় করা সবই কুসংস্কার ও গোনাহের কাজ।
- অনেক স্থানে প্রচলন আছে ৬ দিনের দিন প্রসূতিকে গোসল দিতেই হবে- এই প্রচলন ভিত্তিহীন।
- অনেক স্থানে প্রসিদ্ধ আছে যে, প্রসূতি ঘরে প্রসূতি নারী মারা গেলে তার আৱা প্ৰেতাৱা হয়ে যায়। এ ধারণা ভুল। বরং হাদীসে এসেছে এ অবস্থায় মৃত্যু হওয়া ফযীলতের। এ অবস্থায় মারা গেলে সে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করে। অতএব যে অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ হয়, সেটা কখনও খারাপ অবস্থা হতে পারে না।
বিঃ দ্রঃ স্ত্রীলোকের জরায়ু প্রবাহনের ফলে সে রস নির্গত হয়, এতে গোসল করা আবশ্যক হয় না। তবে এরূপ ক্ষেত্রে প্রত্যেক নামাযের সময় নতুন উযূ করে নামায আদায় করে নিবে এবং উযূর পূর্বে ধৌত করে নিবে।
সমাপ্ত
উপরিক্ত আলোচনা থেকে আমরা যা শিখলাম:
এবরশন/গর্ভপাত ও এম আর বিষয়ক মাসায়েল মাসায়েল।
প্রসবকালীন সময়ের কয়েকটি মাসআলা মাসায়েল।
প্রসূতি সম্পর্কে কয়েকটি মাসআলা মাসায়েল।
পোষ্টটি লিখতে নিম্নক্তো বই/লেখকের লিখনী থেকে সাহায্য নেওয়া হয়েছে: আহকামে জিন্দেগী (মাকতাবাতুল আবরার প্রকাশনী) মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন শায়খুল হাদীস, জামেয়া ইসলামিয়া আরার্বিয়া, তাঁতী বাজার, ঢাকা-১১০০ মুহাদ্দিছ, জামিয়া ইসলমিয়া দারুল উূলুম মাদানিয়া, ৩১২, দক্ষীণ যাত্রাবাড়ি, ঢাকা-১২৩৬